পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

পিয়ালী বসু ঘোষ


সাঁঝবিহান (চতুর্থ পর্ব ) 


এপ্রিলের শেষ একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে চৈত্র বিদায়ের পর এটাই অঞ্চলে প্রথম বৈশাখী বৃষ্টি বাড়ির হাতার মধ্যে কতগুলি গেন্ডুলি গাছ এখনো যেন চুপচুপে ভিজে আছে সন্ধ্যের চাঁদডোবা আলোয় দেখলে একেক সময় এদের বিবসনা কোনও যুবতী মনে হয় মনটা কেমন মিশ্র অনুভূতিতে ভরে যায় এখনো তেমনি গাছের জল ধোয়া শরীরের গন্ধে মজে আজ এই নির্মল সকালে বসে সতীশ ভাবছে এই বুনো জায়গায় এই পরিবেশে হঠাৎই একটা চাকরি নিয়ে এসে এই যে একটা বেপরোয়া জীবন বেছে নিয়েছে ,এই যে নির্জনবাস,এই একাকী বয়ে যাওয়া ,অভ্যস্ত হয়ে ওঠা সবকিছুর নামই বোধহয় অ্যাক্লেমেটাইজেশান শাল্মলী বলছিলো সেদিন মনে মনে একচোট হেসে ভাবল আজ দুপুরে কাগজি লেবু আর মুসুর ডাল দিয়ে চটকে ভাত খেয়ে ,হাতে লেবুর গন্ধ নিয়ে ছেলেবেলার সেই ফুলফুল কাগজে যেমন ওরা প্রেমিকাকে চিঠি লিখত তেমনি একটা কাগজে শাল্মলীকে লিখবে তারপর ফজিরামের হাতে তুলে দেবে সে চিঠি পরদিন সকালের ডাকে শহরে পৌঁছে দেবার জন্য চিঠিতে থাকবে লেবুর গন্ধ চিঠি পড়া শেষ হলে বুকের ভাঁজে লুকিয়ে রাখবে সে চিঠি আর ওর স্তনসন্ধির ভাঁজে মাখামাখি হয়ে থাকবে ওর হাতের স্পর্শ আর লেবু লেবু গন্ধটা ফজিরাম বলে, "একটা ফোন করে নিলেই তো পারো বাবু " কিন্তু চিঠি লিখতেই ভালো লাগে সতীশের চিঠি পেতেও যার উদ্দ্যেশ্যে চিঠি লেখা তার গলার স্বর শুনলে সতীশ কেমন ভুলে যায় কী কী বলার ছিল


কিন্তু গতরাতে কলমি' ঘর থেকে আসার পর থেকে মনটা কেমন বেবস হয়ে আছে ওর ওর শার্টের হাতায় এখনো লেগে আছে বুনো একটা মিষ্টি গন্ধ সাঁঝের চুলের গন্ধ কি একটা তেল দিয়ে খুব শক্ত করে কলমি ওর চুলটা টেনে উঁচু করে বেঁধে দিয়েছিল অসহায় সাঁঝ ওই শক্ত বাঁধুনিতে কষ্ট পেয়ে ছটফট করছিল বড্ড মায়া হল ওর কাছে গিয়ে ওর ঘাড়ের নীচে হাত দিয়ে ওকে বসিয়ে চুলটা খুলে দিতেই এক ঢাল কালো চুল ছড়িয়ে পড়ল ওর পিঠে আর একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ পেয়ে সম্বিত হারাতে বসেছিল এই প্রথম সতীশ খুব লজ্জিত বোধ করল সাঁঝকে ছুঁয়ে
প্রতিদিনের মত কালও সতীশ গিয়েছিলো ওকে দেখতে একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছে সাঁঝ গেলেই বৈচি ঝিনুকের কালো হরিণের মত চোখগুলোতে কেমন আলো জ্বলে ওঠে অন্য আলো কলমিকেও তখন বড্ড নিশ্চিন্ত লাগে বোঝে সতীশ
সাঁঝের চুল খুলে দেবার সময় কলমি হঠাৎ ঢুকে পরায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল সতীশ কলমিকে বলে ,"কাল থেকে চুলটা আরও হাল্কা করে বাঁধবে ,ওর কষ্ট হচ্ছিল বোধহয় তাই খুলে দিলাম "
কলমি খিঁচিয়ে ওঠেবলে, "মেয়েমানুষের চুলই তার শত্তুর গো ,তাছাড়া এই চুল নিয়ে কি করবে বলো ডাগতার বাবু !"
সতীশ বোঝে কি বলতে চায় কলমি তবু গম্ভীর হয়ে বলে ,"আহ !কলমি থামো প্রতিদিন একই কথা বললে ওর তো আর মনের জোরই বাড়বেনা বাঁচবার ইচ্ছেই তো থাকবেনা ওর "
কলমি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বলে ," মরেই যাক গো বাবু ,মরেই যাক মেয়েকে ঘরে রেখে কি করব আমি ?" 
সতীশ চুপ করে থাকে আড়চোখে দেখে সাঁঝের পুঁইডাটার মত আঙুলগুলো তিরতির করে কাঁপছে সবই ভাবছিল বসে ভাবছিল জড়িয়ে যাচ্ছে ,এক অমোঘ টানে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু এসব বলা হবেনা কাউকে অনুভব একান্ত ওর নিজের এসব কথা জড়ো হতে থাকে শাল্মলীর জন্য না লেখা চিঠির পাতায় শুধু ডাকে দেয়া হয়না জানে এই ঘনিষ্ঠতা ভালোচোখে দেখবে না শাল্মলী
(ক্রমশঃ ) 


ছবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার : চন্দ্রাণী বসু 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন