পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭

যুগান্তর মিত্র


ইতিহাসের কাগজকুচি

বাবলুর ছোটো কাকা খুব সুন্দর পড়ায়। মাঝে মাঝে গল্পও বলে। খুব ভালো লাগে তাপুর। ছোটো কাকাকে বাবলু ডাকে কাকাই। তাপুও তাই কাকাই ডাকে।
ফাইভে ওঠার পর থেকে প্রতিদিনই বাবলুদের বাড়িতে সন্ধ্যায় পড়তে যায়। বাবা কিছুতেই মাস্টার রাখবে না। আবার দেখিয়েও দেয় না পড়া। মা তো পারেই না কিছু বলতে। তাই ছোটকা যখন বলল আমার কাছে পড়তে আসিস, আমি পড়া বুঝিয়ে দেবো, তখন খুব আনন্দ হল তাপুর। বাবাকে বলে পড়তে যায় ওখানে। বাবা যা রাগী ! সবসময় বকাঝকা করে। তবুও রাজি হয়ে গেছে বলে তাপুর ডবল আনন্দ। কাকাই শনি-রবি ছুটি দেয়। তবু ছুটির দিনেও ওখানে যায় তাপু। কাকাইকে ওর খুব ভালো লাগে।
এক সন্ধ্যায় গল্প করতে করতে কাকাই বলল, আজ তোদের একটা ছবি দেখাচ্ছি। দেখ তো চিনতে পারিস কিনা। বলেই একটা সাদা-কালো ছবি মেলে ধরল। সেটার উপর উপুড় হয়ে পড়ল বাবলু আর তাপু। বাবলু বলল, আমাদের বাড়ির লোক এরা ?
~ না রে। দুজনেই খুব বিখ্যাত লোক আমাদের দেশের। একজনের ছবি তো প্রায় রোজই দেখিস। বলতো কে কে আছেন ?
বাবলু আবার ঝুঁকে পড়ল। একজনকে খুব চেনা চেনা লাগছে ওর। টাকমাথা খালি গায়ের লোকটাকে দেখেছে ও। কোথায় ছবি দেখেছে মনে করতে পারছে না। বাবলুর মনে হচ্ছে সাদা-কালো ছবি না-হলে ঠিক পারত।
বাবলু যখন এইসব ভাবছে, তখন তাপু টাকমাথা লোকটাকে দেখিয়ে বলল, এটা হল খানকির বাচ্চা। আর কোট পরা লোকটার গায়ে আঙুল রেখে বলল, আর এটা হল বাঞ্চোৎ।
~ এসব কী বলছিস তাপু ? কে শেখাল তোকে এসব কথা ?
~ কেউ শেখায়নি। আমি নিজে নিজেই শিখেছি।
চোখ গোল গোল করে কাকাই বলল, নিজে নিজে ? আচ্ছা বেশ। মনে করে বলতো কার মুখে শুনেছিস ?
~ বাবা-মার মুখে।
~ বলিস কিরে ? তোর বাবা-মা এসব বলে নাকি তোর সামনে ?
তাপু খুব চিন্তায় পড়ে গেল। দুটো শব্দ বলেছি। তাতে কী এমন খারাপ হল ? আমি ভাবলাম কাকাই রোজ নতুন নতুন গল্প বলে। আমি আজ নতুন দুটো কথা বলব, তাতে কাকাই খুশি হবে। তার বদলে এতকিছু জানতে চায় কেন ?
~ কী রে, বললি না ? তোর বাবা-মা তোর সামনে এসব বলে ? কবে বলেছে ? কাল রাতে ? ঘটনাটা বলতো বাবু একটু।
বাবলু দুজনের কথা শুনে খুব অবাক হয়। কী যেন একটা বলল তাপু ছবি দেখিয়ে। ভালো করে শুনেও উঠতে পারিনি। তারপরই কাকাইয়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল আর নানা কথা জিজ্ঞাসা শুরু করল তাপুকে। ছবিটাও কেড়ে নিল হাত থেকে। কথাটা নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ছিল। ভাবে বাবলু।
~ কাল রাতে বাবা আর মা ঝগড়া করছিল। তখন বাবা মাকে বলল খানকির বাচ্চা, মাগী। আর তা শুনে মা বাবাকে বলল বাঞ্চোৎ।
~ তুই তখন কী করছিলি ?
~ শুয়েছিলাম। বাবা-মা ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে আছি।
~ তা বাবা-মার ঝগড়ার কথাগুলো এখানে বললি কেন ? ঝগড়ার সময় কত কথাই তো হয়। সব কথা কি ছোটোদের বলতে হয় ?
তাপু এবার বুঝতে পারে নিশ্চয়ই কথাগুলো ভালো না। তাই কাকাই এসব বলছে। তবু বলার কারণ হিসাবে যুক্তি দিল নিজের মতো করে, তুমি রোজ কী দারুণ দারুণ গল্প বলো। আমি তাই ভাবলাম দুটো নতুন কথা
~ মানে দুটো নতুন শব্দ বলে বাহাদুরি কিনতে গেলি, তাই তো ?
কথাটা বলা যে খুবই ভুল হয়ে গেছে এবার আরও স্পষ্ট হল তাপুর কাছে। তাই মাথা নীচু করে থাকে সে।
~ শোন বাবা, এসব খারাপ কথা। ছোটোদের বলতে নেই। বড়দেরও বলতে নেই। তবে রাগের মাথায় অনেকে বলে। না-বললেই ভালো হয়।
আবার ছবিটা মেলে ধরল সামনে। টাকমাথা লোকটাকে দেখিয়ে স্বরূপ বলল, দেখ বাবলু, ইনি হলেন জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী। পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। টাকায় ওনার ছবি দেখেছিস তুই। আর ইনি হলেন জওহরলাল নেহরু। ইনি ছিলেন আমাদের দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
বাবলুর মনে পড়ে গেলো টাকমাথা লোকটার ছবি টাকাতেই দেখেছে। সাদা-কালো বলে বুঝতে পারেনি। তবে কোট পরা লোকটার ছবি এই প্রথম দেখল। এরপর কাকাই আর কোনো গল্প বলেনি। শুধু পড়িয়ে গেছে। এই নিয়ে বাবলুর খুব রাগ হল তাপুর উপর। কী সব বড়দের কথা বলল আর আমাদের গল্পই শোনা হল না !
(২)
~ বিষ্টুদা একটা কথা ছিল।
তাপুর বাবা স্বরূপের কথা শুনে থমকে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে বলল, আমাকে কিছু বলবি ?
~ হ্যাঁ, তোমাকেই। ঐ তাপুর ব্যাপারে।
~ তাপুর ব্যাপারে ?
এরপর গতকাল রাতের ঘটনা মোটামুটি গুছিয়ে বলল স্বরূপ। শুনে নাকটা এবার কুঁচকে গেল বিষ্টুর। স্বরূপের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল, তোর বরদা ট্রেনে যাতায়াতের সময় তিন তাস খেলত পয়সা দিয়ে, জানিস ? তোর সেই সুমি পিসির কথা মনে আছে ? পেট বাঁধিয়ে আত্মহত্যা করেছিল না ? তোর বাড়িতে এতসব কেচ্ছা, আর তুই ক্যালানে হঠাৎ সতীপানা দেখাচ্ছিস ? বেশি জ্ঞান মারাতে এসো না আমার কাছে বলে দিলাম।
~ এসব তুমি কী বলছ বিষ্টুদা ? আমার দাদাকে আমি চিনি। মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনোদিন অসততা করেনি বড়দা। আর যে পিসির কথা বলছ তিনি আমার জন্মের আগেই এখান থেকে চলে গেছেন। কোথায় গেছেন, বেঁচে আছেন কিনা তাও জানি না। আমি তাপুর কথা বলছিলাম। তোমার ছেলে খিস্তি শিখছে। ও খুব ভালো ছেলে দাদা। ভীষণ ব্রিলিয়ান্ট ! ওর যেন কোনো ক্ষতি না-হয় সেজন্যই বলছিলাম। আর তুমি কিনা
~ আর বেশি কথা বলিস না খোকা। আমার মুখ খোলাস না বলে দিলাম। তুই বলে এতক্ষণ খিস্তি দিইনি। অন্য কেউ হলে চোদ্দগুষ্টির লাশ টেনে আনতাম চিতা থেকে বাঞ্চোৎ। আমার বাড়িতে আমি কী ভাষায় কথা বলব সেটা তোর থেকে শিখব ?
এরপর আর কথা বাড়ানো চলে না বোঝে স্বরূপ। তাই মাথা নীচু করে চলে আসে। পিছন থেকে শুনতে পায় বিষ্টুর গলা, বিনে পয়সায় পড়াচ্ছিস বলে আমাকে জ্ঞান ঝাড়বি আর তাই শুনে যেতে হবে ? শুনে রাখ, আজ থেকেই ও আর তোর কাছে পড়তে যাবে না। আমার ছেলের ব্যাপার আমি বুঝে নেবো। তোর চোদ্দগুষ্টির খবর আমার জানা আছে
কথাগুলো স্বরূপের কানে সীসার মতো ঢোকে। কিছুটা আঁতকেও ওঠে। কী ভালো মাথা তাপুর, একবার বললেই যায়। বিষ্টুদা যা লোক কোনো মাস্টার রেখে পড়াবে না তাপুকে। একবার বৌদিকে বুঝিয়ে বলতে হবে। ভাবে স্বরূপ।
সকালের ব্যাপারটা সারাদিনই মাথায় বিনবিন করছিল। বৌদিকে বলাটা ঠিক হবে কিনা ভাবছিল সে। দুপুরের খানিকটা পরে পুকুরপাড়ে গেল স্বরূপ। ঝরুদার চায়ের দোকানে বসে দুই বন্ধু আড্ডা মারে মাঝেসাঝে। বাঁশের মাচার তৈরি বেঞ্চ। বিধানকে ফোনে এখানেই আসতে বলেছে স্বরূপ। এই সময়টা ঝরুদার দোকান বন্ধ থাকে। বিধানকে পুরো ঘটনাটা বলল স্বরূপ। বিধান ওর একমাত্র বন্ধু, যাকে সব মনের কথা বলা যায়, যে-কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করা যায়।
প্রথমে বিধান খুব হাসল। হাসতে হাসতেই বলল, বাচ্চা ছেলে বলেছে। কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি রে স্বরূপ। ঐ দুটোই ছিল মহা হারামি। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কম নখরাবাজি করেনি। অসহযোগ আন্দোলনের সময়ই তো দেশ স্বাধীনের সুযোগ ছিল। চৌরিচৌরার ঘটনার অজুহাতে আন্দোলন তুলে না-নিলে কবেই ভারত স্বাধীন হয়ে যায় ! আরও নানা কাণ্ড আছে। আর নেহরুর কথা কে না জানে !
~ ইতিহাস শোনাচ্ছিস কেন ? আমি তো তাপুর কথা বলছিলাম।
~ হ্যাঁ, ওর কথাতেই বললাম আর কি !  দেখ স্বরূপ, বিষ্টুদাকে বলার পরও তোর শিক্ষা হয়নি ? আবার বৌদিকেও বলতে হবে ?
~ কিন্তু ছেলেটা নষ্ট হয়ে যাবে। এটা কি ঠিক ?
~ ওসব ঠিক ভুল তোকে বুঝতে হবে না। ভুবনের ভার তোর হাতে কেউ দেয়নি স্বরূপ। চেপে যা।
কথাটা স্বরূপের কানে লাগল। কিন্তু বিধানের সঙ্গে তর্ক করতেও ইচ্ছে করছে না ওর। জানে কোনো লাভ নেই।
~ ওঠ। বাড়ি যা। এবেলা টিউশনি নেই তোর ?
~ হ্যাঁ আছে। সাড়ে ছটায়। 
~ আচ্ছা। তাহলে বাড়ি যা। আমার একটু কাজ আছে। আমি আসছি
~ কাজ মানে তো মল্লিকার সঙ্গে দেখা করা। স্মিত হাসে স্বরূপ।
~ ঐ আর কি। সবদিন তো দেখা হয় না। মাঝে মাঝে
~ এত ব্যাখ্যা দিতে হবে না। তুই যা। আমি একটু বসি এখানে। তারপর পড়াতে যাব।
বিধান চলে যায়। স্বরূপ কিছুক্ষণ বসে থাকে বন্ধ চায়ের দোকানের ফাঁকা বেঞ্চে। ঝরুদার মা মারা গেছে বলে কদিন চায়ের দোকান বন্ধ। কিছুক্ষণ পরেই টিউশনি বাড়ির পথ ধরে স্বরূপ।
(৩)
টিউশনি করে ফেরার সময় চোখ চলে যায় বিষ্টুদের বাড়ির দিকে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধে হয়। ভেবেছিল আর এ নিয়ে মাথা ঘামাবে না। কিন্তু ঠিক চোখ চলে গেলো ওদিকে আর বিষ্টুর মুখোমুখি পড়ে গেল সে।
~ শোন খোকা, তোর সঙ্গে একটা কথা ছিল।
আমার সঙ্গে কথা ? তবে কি বিষ্টুদা মত পাল্টাল ? চোখ চকচক করে ওঠে স্বরূপের।
~ বলো কী বলবে।
~ বলছি সকালে খুব তো সতীগিরি মারাচ্ছিলি। তা তোর বউদিকে প্রতিদিন কে একজন ছেড়ে দিয়ে যায় বাইকে। তোর বউদি বলছিল। সেটা কে রে ?
~ বউদির এক কলিগ। বউদি কমলেশদাকে ফোঁটা দেয়। আমাদের বাড়িরই একজনের মতো কমলেশদা।
~ অ। ভাইফোঁটা দেয়। তা দেখিস ভাইফোঁটা দিতে গিয়ে অন্য কোথাও ফোঁটা দিয়ে দেয় না যেন।
~ কী বলছ বিষ্টুদা ! তোমার মুখ তো নয়, যেন কর্পোরেশনের হাইড্রেন !
খ্যাক খ্যাক করে হাসে বিষ্টু। ইয়েতে লেগে গেলো মাইরি ? ঐ কী যেন বলে শাল্লা, মাল খেলে সব ভুলে যাই। খিঃ খিঃ খিঃ
হনহন করে হেঁটে চলে যায় স্বরূপ। তখনও বিষ্টুদার অশ্লীল কথা ভেসে আসছে তার কানে। মাথায় রক্ত চড়ে যায়। মনে হয় হাতের কাছে যা পাবে তাই দিয়েই বিষ্টুর মাথায় দড়াম করে মারে। কিন্তু বহু কষ্টে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সেখান থেকে দ্রুত চলে যায় বাড়ির দিকে।
কিছুক্ষণ পরেই বিষ্টুর চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসে। মদ খেয়ে চুর হয়ে আছে। কীসব যেন ছুঁড়ে মারছে মনে হল। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে বলে, এসব কী হচ্ছে ? এটা ভদ্রলোকের পাড়া। কিন্তু এবারও রাগ সামলে নেয়। বউদিও ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওদের বাড়ির দিকে। আর অস্ফুটে বলে, ডিসগাসটিং !
~ এদের কেউ কিছু বলে না কেন বউদি ?
~ কে কী বলবে বলো। বিষ্টুর যা মুখ ও কি কারও মানসম্মান রাখে ? তুমি তো নতুন এসেছ এখানে। কিছুদিন যাক, তোমারও অভ্যেস হয়ে যাবে।
স্বরূপ চুপ করে যায়। সবাই জানে বোঝে, তবু খিস্তিখেউরের ভয়ে কেউ কিছু বলবে না ! ওর মনে হয়, মেজোপিসির বাড়িতে যে থাকত ছোটোবেলা থেকে, সেখানে এসব দেখেনি কোনোদিন ! বনেদি পাড়া। অত্যন্ত ভদ্র রুচি সবারই। দাদা মারা যাওয়ার পর মা অনেক বুঝিয়ে এখানে এনেছে। বাবা নেই। দাদাও চলে গেলো। এই অবস্থায় বাড়িতে একজন পুরুষ মানুষ থাকা খুব দরকার। এইসব বুঝিয়েছে মা। না-হলে এখানে ও একবেলার জন্য আসত। পিসির ছেলেমেয়ে নেই। পিসি আর পিসিমশাই ওকে ছেলের মতোই দেখে। ওখানে গিয়ে সেভেনে ভর্তি হল। এমএ পাশ করে পিসিমশাইয়ের ব্যবসা দেখবে ঠিক ছিল। কিন্তু পরপর তিন মাসের মধ্যে বাবা আর দাদা মারা যাওয়ায় এখানে আসতেই হল ওকে। কিছুতেই মন টেকে না। বিধানই ওর একমাত্র বন্ধু যার সঙ্গে একটু কথাবার্তা বা আড্ডা দিতে পারে।
স্বরূপ বোঝে, তাপুকে ভালো মানুষ করা যাবে না কিছুতেই। ভাইপো বাবলুকেও কি রক্ষা করা যাবে এই পরিবেশ থেকে ?
~ সব কেমন চুপচাপ লাগছে বউদি। কী ব্যাপার বলো তো ?
চা দিতে এসেছিল বউদি। চায়ের কাপ টেবিলে নামিয়ে রেখে বলল, কী আবার হবে ? মদ গিলে নষ্টামি করবে বাড়িতে এসে। এখন আবার গেছে কোথাও। এ তো প্রতিদিনের ব্যাপার।
~ কই, আমি তো মাসখানেক হল আছি। এইরকম তো
আরও কিছুদিন যাক খোকা, সব বুঝতে পারবে। কদিন ছিল না ওরা। কোন বিয়ে বাড়ি না কোথায় গেছিল। তাছাড়া তুমি কোণের ঘরে পড়াও ওদের। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।
তা ঠিক। সন্ধ্যায় পড়িয়ে এসে বাবলু আর তাপুকে কোণের ঘরে দরজা বন্ধ করে পড়ায়। তাই হয়তো এতদিন চোখে পড়েনি এইসব। ভাবে স্বরূপ।
সে রাতে আর কোনো ঝুটঝামেলা হয়নি। কোনো আওয়াজ পাওয়া যায়নি ওদের বাড়ি থেকে। কিন্তু স্বরূপের মনটা খচখচ করতে থাকে। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। তাপুর কথা ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে।
 (৪)
তাপুর হাত ধরে এগিয়ে যায় স্বরূপ। হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট। আলো-আঁধারি পথে চলেছে তারা।
~ তোর ব্যাগে কী রে ? জামাকাপড় নিয়েছিস তো কিছু ?
~ না তো। জামাকাপড় কী হবে কাকাই ?
~ আমরা তো পালিয়ে যাচ্ছি। কোথায় যাব তা তো জানি না। যেখানে যাব সেখানে থাকতে হবে, তোকে অনেক পড়াশুনা করতে হবে। অনেক বড় হতে হবে।
~ হ্যাঁ কাকাই, আমি অনেক পড়াশুনা করব। অনেক বড় হব।
~ ঠিক বলেছিস তাপু। তা তোর প্যাকেটে কী আছে বললি না তো !
~ বাবার তাক থেকে একটা পুরানো বই পেলাম কাকাই। ইতিহাসের বই। সেটা কুচি কুচি করে ছিঁড়েছি। এই দেখো। 
তাপু প্যাকেট থেকে টুকরো টুকরো কাগজ বের করে আনে আর উড়িয়ে দেয়। হাওয়ায় ভাসতে থাকে সেই ইতিহাসের ছেঁড়া পাতা। আর স্বরূপ সেই কাগজের ভেসে যাওয়া টুকরো লাফিয়ে লাফিয়ে ধরার চেষ্টা করে।
~ এসব কী করছিস তাপু ?
~ হা হা হা সব উড়িয়ে দিলাম কাকাই। সব
~ ইতিহাস এভাবে ওড়ানো যায় না তাপু। থেকে যায়। যা সত্যি তা থেকে যায় . চিৎকার করে বলে স্বরূপ।

আচমকা ঘুম ভেঙে যায় স্বরূপের। লাফিয়ে উঠে বসে বিছানায়। তখনও যেন হাওয়ায় ভাসছে কাগজের টুকরোগুলো। স্বরূপ লাফ দিয়ে খাট থেকে নামে। হাওয়ায় ভাসতে থাকা কাগজকুচি ধরতে চায়। কিন্তু কোনো কুচিই ধরতে পারে না। কিছুতেই পারে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন