পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭

রিয়া চক্রবর্তী


বর্ষা বিলাস
রাতের হাজার তারাদের বুকে লুকিয়ে সারারাত বৃষ্টি রিমঝিম। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে শুনি তখনও বৃষ্টির টুপটাপ।বিছানায় শুয়েই তাকিয়ে আছি জানলার বাইরে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইছি তোর সাথে। কাপাসিয়া মেঘের চোখে কাজলের ঘনঘটা। ঠিক তক্ষুনি শহরে দক্ষিনের হাওয়ায় গেয়ে উঠলো মন "আষাঢ় কোথা থেকে পেলি আজ ছাড়া। " আর ঠিক তক্ষুনি বেয়াক্কেলের মতো বেজে উঠলো এলার্ম। আর আমি সব ভুলে বন্ধ করে দিলাম ঘড়ির ঘন্টা
এমন বৃষ্টি স্নাত স্নিগ্ধ সকালেও অস্থির লাগে কারো?উঠে পরলাম চটপট।  মনে হয় যেন কতকিছু করার ছিলো, করা হয়নি কখনো, অনেক স্বপ্ন ছিলো যা অধরাই রয়ে গেছে, অনেক চাওয়া ছিলো যেগুলো অর্জনের জন্য প্রচেষ্টাও করতে পারা যায়নি! আয়নায় তাকিয়ে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মুখ দেখে আবিষ্কার করলাম গালে দুটো ব্রণ জ্বলজ্বল করছে।তথচ কোন ক্রীম বা মেক আপ তো ব্যবহার করিনা, তাহলে? ভোরের আলো সুন্দর, যেমনই তাতে আছে নতুন করে আশায় বুক বাঁধার স্বস্তি, তেমনি আছে অস্থির এক ভালোলাগা। পৃথিবীর এমন ভোরগুলো ভীষণ সুন্দর।  এক অদ্ভুত সুন্দর, স্নিগ্ধ
দুপুর নেমে আসে পাহাড়ে ঘোরানো পাকদন্ডি বেয়ে বেয়ে। আমের-আচার,ডালের বড়ি, আলু পোস্ত, আর মাছের ঝোলে।পোস্ত আমার চিরকালের পছন্দের জিনিস। তারপর! তারপর কল্পনায় মাটি লেপা দাওয়া থেকে শাপলা পানা হাত। আর ঠিক তখনই তুই এক ঝলকে তুলে নিবি চোখ ভর্তি রোদ।অগোছালো কপালে   সমুদ্র পরিয়ে দেবে চিকচিকে টিপ।সন্ধ্যের শুকতারা থেকে ঝিনুকের কোলে ঝরে পড়বে এক ফোঁটা মুক্তো।  আর অনেক দূরের থেকে তুই তখন এক ঝটকায় ফিরিয়ে দিবি আমার উথাল পাথাল গান।আর ঠিক তখনই পাড়ের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে যেতে যেতে কান ফুসফুস খেলে নেবে নদী। তুলসিতলায় জ্বলে উঠবে সাঁঝের প্রদীপ। হাওয়ায় হাওয়ায় জোনাকিরা সাজাবে আলপথ।বৃষ্টির ঝিম ধরা আলো ঘিরে নেবে উড়ে উড়ে ঘুরতে থাকা বাদল পোকারা। আর আমি তখন চুপচাপ বাতাস থেকে উপচে নেবো তোর মেহেক।
মাঠে  আনাচে কানাচে ঘাসেরা সব বিছিয়ে নেবে বৃষ্টি ধোয়া সবুজ চাদর। আমি তখন রাত ঘুমে
পরেরদিন আবার ভোরে জেগে ওঠা। পাখিরা ডানায় বয়ে আনবে এক পশমিনা সকাল।সূর্য্যের অফুরান আলো নিয়ে নিঃশ্বাসে, ঝরে পড়বে একটা একটা পাতা।ধিরে ধিরে সিঁড়ি বেয়ে গঙ্গা নাইতে যাবেন ঈশ্বরী। ওঁ জবাকুসুম শঙ্কাশং। আর আমি তখন ভোরের স্বপ্নে সত্যি করব তোকে।আর তুই তখন এক এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিবি ইচ্ছে-বেলুন।কুয়াশারা হাত ধরাধরি করে মুছে দেবে পাহাড়ি নদীর উপরের সাঁকো। মোতির দানার মতো টিপটিপ করে পাতায় পাতায় ঝরে পড়বে বারিষ। জানলা খুলে দেব আমি। বুকে ভরে নেবো ভিজে মাটির আতর।ঠিক তক্ষুনি, খিলখিলে হাসির মেয়েটাকে দেখে নিষ্পাপ মনে ভালোবেসে ফেলবে কেউ।ঠিক তক্ষুনি, দস্যি অথচ শান্ত মেয়েটাকে হেসে ফেলবে কেউ। একা একা কতকি যে ভাবি! এমন অনেক অর্থহীন লেখা, দিনলিপি, রোজনামচা, বিচ্ছিন্ন আবেগের টুকরো কথা, কত্তো কি। এইসব মিলেমিশে একটাই আরাধনা তৈরি করে হৃদয়ে। তোর বুকে মাথা রেখে বাঁচতে চায় মন


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন