পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭

পিয়ালী বসু ঘোষ


সাঁঝবিহান


লন্ঠনের অস্পষ্ট আলোয় ওকে কেমন কল্পলোকের রাধা বলে মনে হচ্ছিলো যেন সতীশ স্বপ্ন দেখছিযেন এক অসম্ভব প্রত্যাশায়,অপ্রাপ্যর তপস্যায়, অনন্ত প্রতীক্ষার সংকল্প নিয়ে বসে আছে  কোনো এক শুক্লপক্ষের চাঁদের গায়ে হেলান দিয়ে ঘরের ভিতরে সাঁঝ আর বাইরে দাওয়ায় প্রতীক্ষারত সতীশ
কলমি গিয়েছে পাশের গ্রামের বনবিবির থানে মেলা দেখাতে ছোট মেয়ে  দুটোকে নিয়ে মেয়ে দুটোর তো কোনও আনন্দ নেই সাঁঝ পঙ্গু হয়ে যেন ওদের সকলকেই পঙ্গু করে দিয়েছে মেয়ে দুটো সারাদিন মুখ কালো করে বসে থাকে সতীশ ওদের বলে "খেলিস না কেন তোরা ?"
কলমি গলায় ভয়ের শিহরণ তুলে বলে "আর খেলতে লাগবেনা বাবু ,মেয়ে মানুষ কি থেকে আবার কি হয় ! এমনিতেই আমার মেয়েদের সবাই কেমন আড়াল চোখে দেখে "
সতীশ চুপ করে থাকে কলমির ওই মায়ের মনটাকে খরগোশের মতো ভয়ে চঞ্চল হতে দেখে অহেতুক ওর গায়েই কাঁটা দিয়ে ওঠে
- বলে কলমিকে "আজ আসার সময় দেখলাম,সকলে বনবিবির থানে মেলা দেখতে যাচ্ছে ,তুমি তবে মেয়েদুটোকে নিয়ে ঘুরে এসো " ওদের ভালো লাগবে
কলমির প্রশ্নবোধক চোখকে আশ্বাস দিয়ে বলল,"তোমরা না ফেরা পর্যন্ত আমি সাঁঝকে দেখবো ,এখন যদি তুমি বিশ্বাস করে আমার কাছে ওকে ছেড়ে যেতে পারো "
কলমি ঝাঁঝিয়ে ওঠে সতীশকে বলে,"তুমি থামো ডাগদার, এসব বলোনা
সেই কোন ছোট্টবেলায় বে করে এসেছি ,দুদিনে সংসারে মন উঠে গেলে সাঁঝের বাপ টা যখন চলে গেলো তারপর থেকে পুরুষের চোখ আমার অনেক দেখা বাবু ,যে চোখে চিতার মতো লোভ থাকে আড়াল থেকে ঝাঁপিয়ে পরে নিঃশব্দে শিকার করার পরও রক্ত চুষে একেবারে ছিবড়ে করে ছেড়ে দেবার পরও তাচ্ছিল্য প্রতিহিংসা থাকে তুমি তো আমাদের ভরসা গো বাবু "এই বলে এই প্রথম এগিয়ে এসে ওর থুতনি ধরে চুমু খেল  মায়ের মতো তারপর মেয়ে দুটোকে নিয়ে ঝর্ণার মতো চকিতে বেরিয়ে গেলো

সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হলে পথঘাট জনমানব শূন্য হতে থাকে তাই ওদের একটু তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বলে দিয়েছে সতীশ কিন্তু সন্ধ্যা উতরে গেছে অনেকক্ষন বারবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে সতীশ নির্মল স্বচ্ছ আকাশের গায়ে একটা একটা করে উজ্জ্বল তারা ফুটে উঠতে দেখছে বারান্দায় বসে থাকতে আর ভালোলাগছিলোনা বেশ দেরি করছে কলমিরা একটা আলগা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ভাবছে ঘরে গিয়ে লন্ঠনটা ভালো করে উসকে দিয়ে খানিক সাঁঝের পাশে গিয়ে বসে
ওমন সময় ভয়ানক এক চিত্কারে ঘরের ভিতরে ছুটে গিয়ে সতীশ দেখে সাঁঝের বিস্ফারিত চোখ পশ্চিমের জানলার দিকে কি যেন নির্দেশ করছে
সতীশ ছুটে গিয়ে জানলার ধারে দাঁড়াতেই দেখে একটা ধুতি পরা লোক ভাঙা একটা সাইকেলে জলদি প্যাডেল করতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছে তবুও তড়িৎ গতিতে ছুটছে



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন