পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

পিয়ালি বসুঘোষ


 .সাঁঝবিহান
পর্ব -৬

সকালের রোদ উপচে পড়ছে ন্যাড়া ছাদটার গায়ে ।কাল দুপুরে দেওয়া গয়না বড়ি গুলো এই সুযোগে একটু উল্টে পালটে দিতে ছাদে নিয়ে এসেছে শাল্মলী।কদিন আকাশ কেমন ভার ভার ।যখন তখন বৃষ্টি নামার ইঙ্গিত দেয় ।আগে ও এসব নিয়ে ভাবতে গিয়ে আনমনা হয়ে যেতো ।এখন হয়না আর ।বুঝে নিয়েছে সময় তার খেয়ালখুশিতেই চলবে আর তার লেজ ধরেই চলবে শাল্মলীর উলুবনের মত মন ।

মাস কয়েক সতীশের কোনো চিঠি নেই ।সে এখন নিকট অতীত ।বসার ঘরে বিবেকানন্দ বা মা দুর্গার ছবির পাশে একদিন ওরও স্থান হবে একথা এখন বেশ বোঝে শাল্মলী ।অবশ্য সাথে  এটাও ভাবে সতীশই বা কি করবে ?সমাজ স্বীকৃত সম্পর্ক তো ওদের নয়।কজন পুরুষই বা এমন করে বুকের মধ্যে মেটে রঙা প্রেমিকাকে লালন করে কুণ্ডলী পাকানো জীবনে বাঁচতে চায় ।সে এক যুগ ছিলো যখন সতীশ সব নিয়ম ভেঙে ফেলতে চাইতো ।শ্বেতকেতুর ওপরে তার খুব রাগ ছিলো বিবাহ নামক এই প্রতিষ্ঠানটি সৃষ্টি করার জন্য ।অথচ আজ সব ওয়েস্টার্ন মিউজিকের ডিনুয়েণ্ডোজ ফর্মের মতো অধোগামী ।
আসলে বয়স কম থাকলে যৌবন অতি সপ্রতিভ হয়ে ওঠে ।নিজের স্পর্ধার ওপর নিজেরই অধিকার থাকেনা । ঠুনকো সামাজিক সম্মানবোধের খাঁচায় নিজেকে আটকে না রাখার সাহস দেখানো মুখের কথা নয় ।

এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ছাদের কোণের ফণিমনসা গাছটার গায়ে হাত বুলিয়ে নীচে নামতে যাবে এমন সময় দেখে ফুলপিসিমার সাথে নীচের রোয়াকে দাঁড়িয়ে কথা বলছে সতীশ ।অজান্তেই পা টা হড়কে গেছে শাল্মলীর। বুকের মধ্যে যাবতীয় দ্বিধা,দোলাচল,পিছুটান অতিক্রম করে মন ছুটছে লোকটার দিকে এক অমোঘ আকর্ষণে ।সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নেমে ঝুলবারান্দা দিয়ে হেঁটে আড়াল থেকে লক্ষ্য করে ও সতীশকে ।ঠিক আগের মতো নেই তো ও ।একটা সাদা পাথর নেমে আসে যেন বুকে ।ভারী লাগে বুক । তারপর অজান্তেই শয়তানের হাসির মতো কি যেন একটা ইশারা খেলে যায় ওর ঠোঁটে ।

রাতে খাবার শেষে ছাদে গিয়ে মাদুর বিছায় ও ।জানে রাত ঘন হলে সতীশ আসবে ঠিক ওর খোঁজে ।সারাদিন এ ঘরে ও ঘরে খিচুড়ি আলুভাজা,ডিমভাজা,মোরগকোরমা খেয়ে সন্ধ্যের দিকে একটু অস্থির করছিলো শরীর ।কিন্তু বাড়ীর ছেলেকে কাছে পেয়ে মা পিসিরা ছাড়বেই বা কেন ?একটু জোয়ান নিয়ে একবার ও সতীশ কে খুঁজতে গিয়েছিলো কিন্তু মা কাকীরা এমন ঘিরে রেখেছিলো ছেলেকে যে সেই ভীড়ে ওকে খেয়ালই করলোনা ও।

আজ শাল্মলীর জন্যই যেন গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে আছে চাঁদ।চোখের কোটরে ঠিকরে আসছে চন্দ্রাহত বর্ণমালা।বুঁদ হয়ে বসে আছে ও বাউলানীর মতো সতীশের অপেক্ষায় ।একসময় পাতাপোড়া মত একটা গন্ধ নাকে আসতেই ধ্যান
ভাঙলো ওর ।আকাশের দিকে চেয়ে সময়টা বোঝার চেষ্টা করলো ।অনেক রাত হলো ।নাহ! আসবেনা সতীশ।আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মাদুরটা গুটিয়ে নামতে যাবে এমন সময় দেখে চিলেকোঠার ঘরের সামনে সতীশ দাঁড়িয়ে আছে শরৎ উপন্যাসের নায়কের মত ।আচমকাই বাঁধ ভেঙে গেলো ওর ।সতীশ কে কোনওরকম সুযোগ না দিয়েওর উষ্ণ ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো ।টের পেলো একটা নোনতা জল সতীশের গাল বেয়ে নামছে ।এক ঝটকায় ও সোজা হয়ে সতীশকে দেখেই চমকে উঠলো।একটা ধু ধু মরুভূমি বুকে নিয়ে এক একলা পুরুষ তখন স্পর্শে গন্ধে
শাল্মলীর কাছে ধরা দিচ্ছে শেষবারের মত ফুরিয়ে যাবে বলেই ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন