পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

অনিমেষ সরকার







চতুর্ভূজ


আর কিছুক্ষন তারপরই পৌছে যাব এয়ারপোর্টে ৷ হাতঘড়িতে সময় দেখল রুবেল 11.35  আর পৌছতে 15মিনিট ৷ গাড়ি দুরন্ত গতিতে ড্রাইভ করছে ড্রাইভার ৷ বাগডোগরা এয়ার পোর্ট থেকে ডিরেক্ট কোলকাতা ৷ তারপর দুইদিন থেকে চলে যাবে সিঙ্গাপুর৷ অফিস থেকে সিঙ্গাপুরের ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার পেয়েছে রুবেল৷ রুবেল চক্রবর্তী 26বছর বয়স৷ কম বয়সেই অ্যাচিভমেন্ট নামি কোম্পানির সফ্টেয়ার ইঞ্জিনিয়ার৷ এয়ারপোর্টে এসে পৌচেছে ওয়েটিং রুমে বসে আছে ৷ আর ততক্ষনে ওর মনে,প্রবল বেগে ঝড় উঠেছে ৷ ওর সাফল্য একদিকে আর এক দিকে স্বাতী ৷ ও স্বাতীকে ভালোবাসে কিন্তু বলতে,পারেনি এখনো পর্যন্ত৷ কারনটা স্বাভাবিক s.i.t এ পড়াকালিন স্বাতী 1বছরের জুনিয়র ছিল রুবেলের চেয়ে ৷ তখন  থেকেই পরিচয় ক্যাম্পাস কখনো সিসিটি কখনো একসঙ্গে সেভিং কিংডম, কখনো বা সাইন্স সিটি ৷ এইভাবেই ছাত্র জীবন কাটিয়েছে ৷ তারপরেও চাকরি পাওয়ার পরও ওদের মধ্যে কেউ কাউকে মনের কথা বলতে পারেনি৷  ইতিমধ্যে চেকিংএর অ্যানাউন্সমেন্ট শুরু হয়েছে ৷ ধৈর্য রাখতে পারছেনা ৷ একবার সিঙ্গাপুর চলে গেলে ওর কবে ফেরা হবে না হবে তারপর আদৌ ততদিন স্বাতী ওর জন্য অপেক্ষা করবে কি না৷ এই ভেবে ওর দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই৷ ও সেখানে তলে গেলেও স্বাতীকে না বলতে পারার আপশোষটা থেকেই যাবে ৷ যার জন্য এতকিছু তাকেই যদি পাশে না পেলো এসবের মানে কি? ও তো ভারতে থেকেও এসব পেতে পারত৷ বাবা মা কে দেখতে পারত৷  না ও যাবেনা আগে স্বাতী তারপর সব৷ দরকার পড়লে চাকরি ছেড়ে দেবে৷  রুবেল বেরিয়ে পড়ল আর কিছু না ভেবে গন্তব্য স্বাতীর অফিস ৷
স্বাতী শিলিগুড়িতেই আছে অফিসের কাজ৷
ওকে এখানেই পাওয়া যাবে৷
রুবেল ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়িতে ফোন করে জানালো ও কলকাতা যায়নি৷ রুবেলের ট্যাক্সি স্বাতীর অফিসের সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ ও ফোন দিল স্বাতীর নম্বরে ৷'' স্বাতী কোথায় তুমি?''
অফিসে৷ ''নিচে এস একবার প্লীজ কিছু কথা আছে''৷
''কি বলার জন্য ডাকলে?''
'' একটা কথা ছিল''
সেটা তো জানি কিন্তু এমন কথা যা প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বলতে পারছনা''?
''একটু সময় দরকার'' কোলকাতা গেলেনা সিঙ্গাপুরের যাচ্ছনা কারনটা কি?
রুবেলের নাভিঃশ্বাস ওঠার উপক্রম৷ অবস্থা এমন গলায় এসে ঠেকেছে কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা৷ অজানা ভয় কাজ করছে স্বাতী যদি না বলে দেয়৷ ওর যদি রুবেলকে ভালোই না লাগত তাহলে এতবছর ধরে ওর সাথে এরকম একটা সম্পর্কে থাকত কি? যেখানে আছে বন্ধুত্ব তার চেয়েও বেশি একে অপরকে শ্রদ্ধা দুজন দুজনের প্রতি ভরসা , খুঁটিনাটি সব জানে একে অপরের যেখানে দুজনের দুজনকে ছারা চলেনা৷ বেশ কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবেল মনে সাহস 500হর্সপাওয়ারের সঞ্চয় করে বলেই ফেলল''স্বাতী দেখো আমরা এতদিন ধরে আছি সাথে মানে এতদিন ধরে মনিটর আর সিপিইউ এর মত সাথে আছি দুজন অ্যান্টিভাইরাসের মতন ইনস্টল করা জীবনের সম্পর্কে৷এখানে কি মনে হয়না আমাদের সম্পর্কটা একে অপরের পরিপূরক যেখানে আমাদের ছাড়া কম্পিউটার অচল? ''
'' কি বলছ এসব? নতুন কোনো সফ্টেয়ারের কাজ পেয়েছ নাকি?''
''উহু সেটা না আসলে  i am deeply mad in love with u''
হুম কি বলছ?
হ্যাঁ সত্যি বলছি তোমার কি আমাকে ভালোলাগেনা?''
আরে বুদ্ধু এইভাবে কেউ প্রোপোজ করে?
তাহলে কিভাবে করে?
সেটা বলে দিতে হবে?
google এ সার্চ করে দেখতে হবে৷
এই তোমার সাথে এতগুলো ফিল্ম দেখলাম কি করে বলতে হয় জানো না?
না আমি তো শুধু তোমায় দেখতাম ৷
ওলে বাবালে i love you rubu .
সত্যি? হ্যা সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি৷
তাহলে আমায় বিয়ে করবে স্বাতী? ''কবে বলো?'' ''যদি বলি আজ ই''?হ্যাঁ আমি রাজি৷
বিয়েটা দুই পরিবার কে ডেকে সেভকের কালী মন্দিরে সেরে নিল ৷ আর আইনি মতে বিয়ে 1সপ্তাহ পর হল ৷ বেশ সুখেই ভরপুর চলছিল৷
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং -
হ্যালো কে বলছেন? আচ্ছা হ্যাঁ অবশ্যই ,না না এবার আমি যাবই৷ ভালো থেকো তোমরা৷ ফোনে কথা বলে রুবেল ফোনটা নামিয়ে রাখল৷ ''স্বাতী স্বাতী? কফিটা দাও'' কথাটা বলার পর চুপচাপ হয়ে গেলো রুবেল৷ মনটা ক্রমশ বিষন্নতায় ভড়ে উঠল৷ এটা কি বলছে ও স্বাতী তো! দরজায়  কলিং বেলের শব্দে হুঁশ ফিরল রুবেলের ৷ ধীরে ধীরে উঠে দরজাটা গিয়ে খুললো৷ আরে তুই? হ্যাঁ ভুলেই গেছিস নাকি বস? না না আয় আয়৷
তা কবে এলি শহরে? কালই তো এলাম তারপর শুনলাম সবই , কি হয়েছে রুবেল ভাই সব বল ৷
কি বলার বাকি আছে বল? কিছুটা হয়তো আমার ই ভুল আচ্ছা বল কফি নিবি না চা?
''চা'' আমি কিন্তু কফি ,
তাহলে আমার জন্যেও নিয়ে আয়৷ রুবেল কিচেনের দিকে গেলো৷ সৌম রুবেলের বন্ধু ৷ কোলকাতায় এসে রুবেলের সাথে দেখা করতে হল৷ সৌম নামী এক কোম্পানির ম্যানেজার৷ ''এই নে তোর কফি '' বলে সৌমোর সোজাসুজি বসল রুবেল ৷ ''থ্যাঙ্ক ইউ ''
''আমার সাথে ফরম্যালিটি''
''কি হয়েছিল রুবেল ? তুই শেষ 2বছরে শিলিগুড়ি যাস নি''?
''এমনি''
''এমনি কেনো? আঙ্কল আন্টি কত চোখের জল ফেলেন তোর জন্য , স্বাতীর জন্য''
''আমি কি চোখের জল ফেলিনি''
''কি হয়েছিল বল না কথাগুলো ''
'' আমাদের ঠিক বিয়ের 1বছর পর ''
-= 3বছর আগে
''বিয়ের পর চাকরিটা ছাড়েনি স্বাতী, আমিও মানা করিনি দুজনই কোলকাতা চলে আসি এই বিয়ের একবছরে সব ঠিকঠাক চলছিল ৷ পরিবর্তন এলো স্বাতীর নতুন অফিসে জয়েনিং করার পর৷ সেই কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মারওয়ারি ভদ্রলোক বললে কম হবে যুবক  সম্প্রীত আগারওয়াল ৷ অফিসে বেশ ভালো পরিচিত হয়ে যায় স্বাতী আর সম্প্রীত ৷ একটু রাত পর্যন্ত কাজ চলত ওদের ৷ওরা ধীরে ধীরে ভালো বন্ধু হয়ে উঠছিল একদিন পার্টি ক্লাব নিয়ে মাতামাতি ওদের কিন্তু আমার প্রতি ওর ভালোবাসা একটুও কমেনি৷ সারাক্ষন শুধু ওর মুখে সম্প্রীত এই করে ওই করে ওর কত গুণ ওর গার্লফ্রেন্ডকে এই গিফ্ট দেয় লং ড্রাইভে যায় একদিন ওকেও লংড্রাইভ অফার করেছিল এবং ওরা গিয়েছিল৷ প্রথম প্রথম আমার ভালোলাগত এসব সম্প্রীতের আমার বাড়িতে আসা যাওয়া বাড়তে শুরু করল এক ফরেন ট্রিপে ওরা দুজন গিয়েছিল জার্মানি তে ৷ ফিরে এসে স্বাতীর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করি ৷
''একদিন রাত্রে আমরা ডিনার করে শুয়ে পড়েছি কিছুক্ষন পরে হাল্কা আভাসে ঘুমটা ভেস্তে যায় পাশ ফিরে দেখি স্বাতী ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে ফিসফিস করে সন্দেহের ডানা অনেকদিন আগেই মেলেছিল তবে সেদিন শুধু প্রমানের দরকার ছিল৷ ও ফোনটা কেটে শুয়ে পড়লে ৷ মোবাইলটা আমি নিয়ে কল লগ ঘেটে দেখি শেষ ফোনটা 45মিনিট আগে হয়েছে কথপকথনের সময় ঠিক 45মিনিট কোনো নম্বর ডিলিটের সুযোগই নেই৷ সেদিন রাত্রে আর কিছু বলিনি৷ পরেরদিন বিকেলে আমরা বেরিয়েছিলাম ঘুরতে হঠাৎ একটা ফোন এল আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্প্রীত যোগ দিল আমাদের সাথে৷ সেই ঘটনাটা মেনে নিতে পারিনি ওদের কথার মাঝে ক্রমশ একা লাগছিল নিজেকে যেন  মেমোরি কার্ডের সমস্ত ফাইল থেকে স্পেস ফাঁকা করতে ডিলিট করে দিলে শুধু একটি ফাইল পড়ে থাকে তেমনি৷ ওদের মাঝে নিজেকে অস্তীত্বহীন লাগছিল ৷ ওরা কথা বলতে বলতে কিছুটা এগিয়ে যায় আমাকে ফেলে রেখে কি আমি পিছিয়ে পড়েছিলাম৷ লক্ষ্য করেনি ওরা খুব হাসিখুশি দুজনে আমার আর সহ্য হয়নি আমি ওদের ডিস্টার্ব না করে ফ্ল্যাটে ফিরে আসি৷ ও প্রায় 2ঘন্টা পর আসে৷ কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই আমার প্রতি এসে কফি দিয়ে আরএক ঘরে ল্যাপি নিয়ে চলে গেলো৷ আমি নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম আমি কি এতটাই অপ্রয়জনীয় হয়ে পড়েছি স্বাতীর জীবনে? সম্প্রীত আর সম্পর্ক আমি আর স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছিলাম না ৷ একদিন সকালে নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে ওকে বলে বসলাম সম্প্রীত কতটা খুশি করল ? জার্মানি তে তোমাকে? কথাটা ভালোভাবে কোনো মহিলাই নেবেনা ৷ সেখানে যদি তোমার স্ত্রী হয় ৷তুমি অসুস্থ রুবেল , নাহলে কেউ এভাবে কাউকে দোষারোপ করে না আমরা বন্ধু শুধু , নিজেকে ঠিক,রাখতে না পেরে চর মেরে বসলাম স্বাতীর গালে ৷ কিছুক্ষন পর বেরিয়ে পরলাম ঘর থেকে ৷ নিজেকে বোঝালাম আমি এটা কি করলাম , স্বাতীকে অবিশ্বাস করাটা ঠিক হয়নি ঘরে ফিরে এসে ওকে পাইনি পেলাম একটা চিঠি ৷''তোমার সাথে একঘরের নিচে থাকা সম্ভব নয় আর আমি ভুল করেছিলাম তোমাকে ভালোবেসে, যে নিজের স্ত্রীয়ের উপর বিশ্বাস করতে পারেনা আর একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ককে কালিমালিপ্ত করে যার মুখে আমাকে বেশ্যা শব্দটা উচ্চারন করতে ইত্স্তত করলনা সে আর যাই হোক সুস্থ না , আমাকে খোঁজার চেস্টাও করোনা ''
চিঠিটা পড়ার পর কিছুক্ষনের জন্য মেনটাল ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলি৷ দেখতে পারিনি পাশে টেবিলের রাখা অ্যাকোরিয়াম টা  মাথাটা ঝিনঝিন করে ওঠে শুধু মাথায় ঘুরপাক করছিল লাট্টুর মতন ''এটা আমি কি করলাম? স্বাতী কে অবিশ্বাস ও সেই মেয়ে যাকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়েছিলাম ও তে চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিল আমি করতে বলেছিলাম তারপর তারপর '' ৷ নিজেকে সামলে নিয়ে কনট্যাক্ট লিস্টের সব নম্বরে কল করলাম যাদের সাথে স্বাতীর ওঠা বসা ৷ ফোন পর্যন্ত করলাম সম্প্রীতকে কিন্তু কোনো উত্তর নেই, শহর ঘুরে ঘুরে বাড়িতে ফোন করলাম , তখন ই মনে আসল স্বাতী কে খুঁজতে না বলেছে ,তার মানে ও গা ঢাকা দিয়েছে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দিলোনা ৷ অবশেষে ক্লান্ত শরীরে পুলিস স্টেশনে পৌছে নাম ঠিকানা ছবি দিয়ে মিসিং ডায়েরি করালাম যদিও ভুলটা করে ফেলেছিলাম নিজের লোকালিটির থানায় না করে অন্য থানায় করেছিলাম যদিও জিরো এফ আই আরের জন্য অসুবিধে হয়নি ডিআইজি কমিশনার পর্যন্ত যোগাযোগ করেছি লাভ হয়নি৷ স্বাতীর বাড়ির লোক ও আমার বাড়ির লোক ফিরে যায় হতাশ হয়ে, যদিও স্বাতীর পরিবার আমাকে কোনো দোষারোপ করেনি সবটাই ভাগ্যের লিখন মেনে নিয়েছিলেন আমি সেই লেখা লিখেছিলাম , যা ঘটছিল দায়ী আমি তার জন্য , (3বছর পর - বর্তমান সময়ে)
 শেষ 3বছরে যা ঘটে গিয়েছিল এক সময় আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম তবে সেদিন একটা ফোন এল পুলিশ স্টেশন থেকে ৷
একটা নাকি পচা গলা ডেডবডি পাওয়া গিয়েছিল  জঙ্গলে কিছু কাঠ কুড়ানিরা  বডি টা দেখতে  পেয়েছিল৷
 ''মুখটা চেনা যাচ্ছিল না স্বাতীর৷ মাথাটা কেউ থেতলে দিয়েছিল৷  পরে ডি এন এ টেস্ট করে জানা যায় ওটা স্বাতীর দেহ না ৷ তাহলে? স্বাতী কোথায় গেলো ৷ প্রশ্নটা সবার মনে উঠতে শুরু করে আমিও তাই ভাবছিলাম৷ আমার খোঁজ শুরু হল ৷ এবার আমি কিছুটা শান্ত হয়ে পড়েছিলাম৷ স্বাতীর সাথে যেটা আমি করেছি একদম ভুল করেছি৷ কিন্তু তাই বলে কেউ এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়? সেদিন ফোন এলো সম্প্রীত শিভলকর সুইসাইড করেছে৷ কারন টা কি? পুলিশের তদন্তে উঠে এলো প্রেম সংক্রান্ত খুন৷কিন্তু আমি এখনো স্বাতীর খোঁজ পেলাম না ও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক৷'' পুরো ঘটনা টা বলে ফেলল রুবেল৷ ''এখন কি বলছে পুলিশ''?
 ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা৷  আর তুই কি করবি এখন?
স্বাতীর স্মৃতি  বুকে নিয়ে চলে যাব সিঙ্গাপুর ৷ এ দেশে আর ফিরছিনা পরের সপ্তাহে ফ্লাইট আছে৷ বলে কফির কাপ গুলো রাখতে কিচেনের দিকে পা বাড়ালো রুবেল৷
বাথরুমে ফ্রেশ হতে ঢুকল সৌম৷  বাথরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে চুল আঁচরাতে যেতেই লাল দাগ দেখতে পেল  ওয়ার্ডড্রবের নিচে৷ যেটা সোজাসুজি রয়েছে৷ আঙ্গুল দিয়ে খোঁটাটেই সেটা যে রক্ত বুঝতে পারল সৌম৷ ওয়ার্ডড্রবটা খুলতেই যা দেখল এক ধাক্কায় সরে এল পেছনে  স্বাতীর দেহ পড়ে আছে তার ভেতরে৷সৌম অজ্ঞান হয়ে পড়ল৷ চোখ যখন খুলল দেখতে পেলো ওর সামনে বসা রুবেল হাতে পিস্তল ৷ ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ ''রুবেল স্বাতী কে তুই মেরেছিস?'' ''হ্যাঁ ''
''কিন্তু কেনো''?
সৌমোর সামনে পিস্তল হাতে রুবেল৷ ঘটনাটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি৷ ''রুবেল তুই এটা করতে পারিস না আমরা ছোটবেলার বন্ধু ভুলে গেছিস? আর তুই কেনো খুন করলি স্বাতী কে?'' ''না ভুলিনি তবে দেখ তোকে তো মরতে হবে ভাই এখন না হোক পরে আমার হাতেই তুই জেনে গেছিস যে খুনটা আমি করেছি সুতারাং তোকে বাঁচিয়ে রেখে নিজের কপাল নিজে পোড়াতে চাইনা ৷''ভাই তুই যে স্বাতীকে ভালোবাসিস তাহলে''? ভালোবাসি ? ভালোবাসতাম খুব বাসতাম তবে এখন না ৷ ''কেনো রুবেল ওকে তো তুই খুঁজে ছিলিস তাহলে ওকে পেলি কোথায়?'' ''হুম ফ্ল্যাসব্যাকে ফেরা যাক!3বছর আগে? ''যেদিন স্বাতী বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তারকিছুদিন ওকে অনেক খুঁজেছি 1বছর অপেক্ষা করার পর যখন ওকে পেলাম না আশা ছেঁড়ে দিয়েছিলাম৷ একদিন সম্প্রীত শিভলকরের গার্লফ্রেন্ড লিনা আমার বাড়িতে এসেছিলো৷ কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলতে৷ ওর দিকে প্রথমত খেয়াল না দিলেও ও বলছিল ওর সাথে নাকি সম্প্রীতের সম্পর্ক দিনদিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে স্বাতীর আসায় ওদের মাঝে৷ কিন্তু স্বাতী সম্প্রীতকে শুধু বন্ধু মানত৷ ধীরে ধীরে একে অপরকে সহযোগীতা করতে গিয়ে আমি আর লিনা একে অপরের প্রতি আকর্ষন অনুভব করি ৷হোটেল গ্ল্যান্ডফ্লোরার 18নম্বর ঘরে আমরা রাত কাটিয়েছি ৷ সম্প্রীত সেই হোটেলে ব্যাবসার কাজে এসেছিল রেজিস্টারে সই করার সময় লিনা আর আমার নামটা দেখে ফেলে সন্দেহ দুর করার জন্য  রুমের বাইরে থেকে ডাকতে থাকে রুমবয় কে অস্ত্র করে দরজাটা লীনা খুলে দেয় সম্প্রীত ওর সঙ্গে আমাকেও দেখে ফেলে সে রাতে ও কিছু বলেনা সেখান থেকে চলে যায়৷ লীনাকে ও সম্পর্কে থাকাকালীন  অনেক টাকা দিয়েছিল৷ ও সম্পর্কে থাকতে চাইছিলনা তাই দেওয়া টাকাগুলো ফেরত চাইছিল ৷ লীনা অতটাকা দিতে পারতনা ৷ আর সম্প্রীতের যেহেতু কেউ ছিলনা সেক্ষেত্রে ওরা ঠিক করেছিল বিয়ে করবে ৷ বিয়ে না করলেও সম্প্রীতের যদি কিছু হয়ে যায় সম্পত্তি সব লীনার নামে দান হয়ে যাবে৷ আখেরে লীনাই লাভবান হত৷ এবং উইলটা পরিবর্তন করতে চাইছিল সম্প্রীত  ৷ আমরা প্ল্যান করি সম্প্রীতকে খুন করতে হবে এবং সেটা সেদিনই৷
''খুন করাটা কোনোদিনই সহজ বিষয় নয় আমরা যতটা ভাবি ততটা তো নয়ই ৷এই প্রসঙ্গে সৌম্য তোকে একটা কবিতা বলি শোন মনে পড়ল ''খুন তো শারীরীক  হয়না - হয় মানসিক ভাবে , কিছু চরিত্রের মেলবন্ধনে  , বিষ মিশিয়ে দাও এমন তরে ,
সাপ ও যাবে উপর ঘরে
তুমিও রবে নিশ্চিন্তে'' হা হা হা হা  সারা ঘরে অট্টহাসি ফেটে পড়ল৷ সৌম্যর গলা শুকিয়ে কাঠ বোঝার বাইরে সব কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল ভাই কিভাবে খুন করলি ?  রুবেল রাগে  উঠে পড়ল - তোর ভয় করছে না আর কিছুক্ষন পর ভগবানের কাছে চলে যাবি''?  হুম ভয় , তুই এমনি আমাকে মেরে দিবি রুবেল যা বুঝছি তবে কথাগুলো বলে যা ,শুনেই মরি ৷ ''চল তোর কথা রাখছি, শোন এবার''- অনেক ভেবেও খুন করার পদ্ধতি ভেবে পাচ্ছিলাম না লিনা আর আমি তখন দুঃশ্চিন্তায় মগ্ন৷  লিনা সম্প্রীতের কাছাকাছিও যেতে পারছিল না৷ কিভাবে ওকে হত্যা করা যায় ভাবতে ভাবতে সুযোগ এসে গেলো , বলতে পারিস চ্যাম্পিয়ন্সদের ভাগ্য সবসময় সহায় হয়৷সেদিন সম্প্রীত সল্টলেকের ওর প্রিয় হোটেলের চৌত্রিশ নম্বর রুমে ছিল৷ আমাকে হোটেলের ম্যানেজার সহ কেউ চিনত না , আর ওর সাথে সেদিন সাক্ষাত করার কথা ছিল প্রীতম দেশাইয়ের সুদূর লন্ডনে থাকা প্রবাসী ভারতীয়৷যার বয়েস 56-57এর কাছাকাছি ৷ লিনা আগেই নিজের যৌবনের মধু দিয়ে দেশাই কে কব্জা করে নেয় সেটা কিভাবে লিনা একমাত্র জানে , আর সমস্ত পুরুষের আকর্ষন জানিসই তো তারপর সমস্ত তথ্য আমরা হাতিয়ে নিলাম প্রীতম দেশাইয়ের ছদ্মবেশে হোটেলে প্রবেশ করলাম ৷ কারো মনে কোনো সন্দেহ হয়নি ৷ সম্প্রীত কে  ইনজেকশন পুশ করলাম পঙ্গু করার সমস্ত শরীর ওর অসাড় হয়ে গেলো এতে আমি ওর সমস্ত তথ্য সরিয়ে নিলাম , আর  একজন হ্যান্ডরাইটিং বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ওরই হাতের লেখার মতন একটি সুইসাইড নোট ওর বিছানার উপর ছেড়ে দিলাম৷ আর প্রথমে আমরা যে কফি খেয়েছিলাম ইনজেকশন পুশ করার আগে তাতে ঘুমের ওষুধ হাইপাওয়ারের মিশিয়ে দিয়েছিলাম , আর একই জায়গায় আর একটা ইনজেকশন দিলাম যখন ও ঘুমে কাতর আর পঙ্গুত্বে ভূগছে রক্তে পটাসিয়াম সাইনায়েডের মিশ্রন৷ব্যস সব শেষ ৷ পুলিশের রিপোর্টে এলো  সম্প্রীত আত্মহত্যা করেছে , প্রেমে প্রত্যাখ্যান হয়ে যেখানে ঘুমের ওষুধেরই শুধু উল্লেখ ছিল , ফরেন্সিক ডক্টর দিবাকর চৌধুরিকে টাকা খাইয়ে কাজ হাসিল করে নিলাম৷
তারপর? তারপর আর    কি লিনাকে সংবাদ মাধ্যম কোনো মাতামাতি করেনি কারন লিনার সম্পর্কে উকিল   ছারা আর কেউ জানতনা৷ কিন্তু কি আর হবে সম্পত্তি পেতে পেতে একবছর হয়ে গেলো৷ সমস্ত টাকা আগামীকাল সকালে লিনার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হবে৷আমার কাল ফ্লাইট আছে সিঙ্গাপুরের বদলিটা অবশেষে নিলাম৷ আমি  আর লিনা সোজা সিঙ্গাপুর তারপর ওখানে বিয়ে সারব৷ যেহেতু লিনারও কেউ নেই সেক্ষেত্রে ওর কিছু হয়ে গেলে সব সম্পত্তি আমার নামে হয়ে যাবে৷ this is a big game my boy৷ আমার মা বাবার কথা বাদ দে ওনাদের আমি ওখানে নিয়ে যাব৷ তবে সব কাজ শেষ হওয়ার পর৷ ''তুই মানুষ?''  ''না-আমি অমানুষ''
প্রথমে স্বাতী তারপর সম্প্রীত তারপর লিনা?
ভূল বললি সম্প্রীতের পর আরও একজন সিকিউরিটি ইনচার্জ আমাদের বিল্ডিংএর তারপর তুই তারপর হচ্ছে গিয়ে লিনা৷ হা হা হা হা সারা ঘরময় হাসির কলরব ৷সৌম এবার কিছুটা গুটিয়ে যেতে থাকল৷''কিভাবে স্বাতী?'' ঘটনাটা দিন চারেক আগের হঠাৎ সিকিউরিটি ইনচার্জ ধ্রুবেশ ফোন করে বলল ''স্যার স্বাতী ম্যাডামকো আভি মার্কেট মে দেখা উয়ো বিল্ডিং কে তরফ যা রাহি হে'' আমার মাথায়  ঘুরতে থাকল এবার কি করব ৷ সব প্ল্যান তো তৈরী তারপর স্বাতী৷ লিনা আমার জীবনে না আসলে হয়ত এসব হত না তবে টাকা মানুষকে বদলে দেয়৷ স্বাতী এল যথাসময়ে সে সময় ও সাইন করে এসেছিল গেটে৷ও ঘরে ঢুকতেই কিছু না ভেবে ফুলদানি দিয়ে মাথায় মারলাম৷ ঘর সঙ্গে সঙ্গে রক্তে ভরে গেলো৷কি করব আর না করব ভেবে ওর মৃতদেহটা ওয়ার্ডড্রবে রাখলাম৷দুদিন ধরে ঘরেই ছিল বডি রক্তটা যে ওয়ার্ডড্রবের নিচে পড়ে আছে চোখে পড়েনি৷ সেদিন  ধ্রুবেশ খুঁজতে খুঁজতে এলো ও বুঝে গিয়েছিল স্বাতী ফিরে এসেছে অবশ্য কেউ জানলনা ও যে নজর রাখছে জানতাম না ৷ সব ভিডিও রেকর্ড করে আমাকে দেখাতে এসেছিল৷টাকা দিয়ে ওর মুখ বন্ধ করেছিলাম৷ রেজিস্টার খাতা থেকে ওর নাম সরিয়েছিলাম৷ গতকাল প্রিন্সেপ ঘাটে আমাকে ডেকে আরও টাকা চাইছিল৷আমি ওকে টাকা না দিলে ও পুলিশকে বলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিল তারপর আর কি ওর সাথেও তাই হল৷মেরে দিলাম ওকে একই ফর্মুলায়৷বডিটা পুঁতে দিলাম পাশের অঞ্চলে৷ আমি ফিরে এলাম ৷ স্বাতীর বডিটা আজ ফেলার কথা৷যাই হোক ৷ আগামীকাল ফ্লাইট আমার ৷ আমি আর লিনা -হুঁশ করে বিদেশে৷ সরি সৌম ক্ষমা করিস ভাই৷টাকা জিনিসটাই এমন বন্ধুর হাতে বন্ধুর খুন করিয়ে দেয়৷স্বর্গে ভালো থাকিস৷
সৌমর দেহটা পড়ে গেল বিছানার ওপরে৷ বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো থাকায় শব্দ পেলো না কেউ৷ শুধু  টাকার স্বপ্নে বিভোর রুবেল জানতে পারল৷সৌম স্বাতী ধ্রুবেশ বলে কেউ ছিল আর আগামীতে লিনার নামটাও এইভাবে হারিয়ে যাবে৷
#সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন