পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শিরিষ কাগজ

একটা স্বীকারোক্তি:

এতো দৌড়াঝাঁপ হতো যে সন্ধ্যে বেলায় পড়তে বসলেই চুড়ান্ত ক্লান্তিতে দুচোখ বুজে আসতো। আর ঠিক তখনই সপাটে একটা কাঠের হলুদ স্কেলের বাড়ি হাঁটুতে, বাহুতে, পিঠে। চোখ তো খুলতো কিন্তু অক্ষর গুলি অস্ফুটই থেকে যেতো। এভাবে আমার জীবন 13বছরেই ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। 

বছরে বেশ কয়েকবার মামাবাড়ি যাওয়া হতো। মা আবদার করতেন বাবার কাছে, কতদিন সে তার মা বাবাকে দেখেন নি আর আমরা দুই ভাই আধো আধো কন্ঠে দাদু দিদার আকুন্ঠ আদর অনুভব করার ভান করে বাবাকে তিস্তাতোর্ষায় টিকিট কাটতে বাধ্য করতাম। 

সেবার মামাবাড়িতে সবাই এসেছিলেন। চার মামা তিন মামি সঙ্গে তিন মাসি মেসো। ওফ সে এক দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমার মামাবাড়ি উত্তরবঙ্গের একদম শেষ প্রান্তে। উত্তরে অসম দেশ দক্ষিণে বঙ্গপ্রদেশ পূর্বে ভুটান পাহাড় আর পশ্চিমে জাম্পু ও ঘোড়ামারা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত একটি ছোট্ট আংশিক আধুনিক কসবা যার নাম কামাখ্যাগুড়ি। চৌপতি, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র আর একটা যাত্রী হীন স্টেশন। প্রসঙ্গত বলে রাখি আমার জন্ম এই কামাখ্যাগুড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই। তাই হয়তো আজ ও চুড়ান্ত মাটির টান অনুভব করি পাহাড়ী পাথরের রাস্তা, কুপির আলোতে অতিথি আপ্যায়ন, বেথো শাক, কলকল করে বয়ে যাওয়া জলরাশি আরো কত্ত কি!! 

আমি বেশ কদিন মনের আনন্দে এখানে সেখানে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতাম। কেও চেনে না যানে না কোনো ভয় নেই। শুধু খিদে পেলেই ঘরে ফিরে আসতাম। সেদিন নদীতে লাফিয়ে লাফিয়ে স্নান করেছি। কিছু জায়গায় হাঁটু জল তো কিছু জায়গায় গলা জল। স্নান করতে করতে একবার হিসু পেয়ে ছিল। উঠে গিয়ে জঙ্গলে 'বিসর্জন' দিচ্ছি হঠাৎ দেখি এইসা বড় সাপ, বিলো দা বেল্ট তাকিয়ে আছে। আমি অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই এক দৌড়ে আবার নদীতে নেমে আসি। বাসায় ফিরে আসার সময় ভেজা গামছার এক প্রান্তে পাথর বেঁধে নন্দদের বাড়ির পেয়ারা গাছের ডাল নামিয়ে একটা ডাসা পেয়ারা ছিঁড়ে পালিয়ে ছিলাম। দাঁতে কাটতে যাবো মনে পরলো স্নান করে উঠেই ফল খেতে নেই। পরিজনদের অমঙ্গল হয়। মা সতর্ক করেছেন অনেকবার। গামছায় বেঁধে বাসায় এনে ছিলাম। বিকেলে বাঁ হাতের তালুতে খানিকটা বিট নুন রেখে প্রতি কামড়ের সাথে হালকা হালকা মাখিয়ে চরম মজা করে খেয়েছি।

ঘটনাটা ঘটলো সেইদিন রাতেই। পরের দিন বাড়ি ফিরে আসছি। বিষন্ন চিত্তে শয্যায় গেছি। চোখের কাছে সব এক এক করে সব জলছবির মতো ভেসে উঠছে। মাঠ ঘাট, খোলান, স্টেশন বাজার নদী জঙ্গল আর যা যা করছি সব। আমার ডান পাশে গভীর নিদ্রা মগ্ন ছোটো মাসির বছর চারেকের ছেলে পটা। ও বেশ গাঢ় ঘুমে অচেতন। আমি এই সমস্ত ভাবতে ভাবতে স্বপ্নময় জগতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। মাঝরাতে বেশ একটা নিরিবিলি জায়গায় হিসু করছি। উত্তপ্ত জলরাশি ফোয়ারার মত স্বশব্দে  সজোরে মাটিতে আঁছড়ে পরছে। প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, ওমন্নি ঘুমটা পাতলা হয়ে এসে ভেঙে গেলো। আচ্ছন্নতা একটু কাটতেই বুঝলাম অবচেতন মনে বিছানা ভাসিয়েছি। এত্ত বিরক্ত লাগছে যে নিজেকে নিজেই ঘৃনা করতে ইচ্ছে করছে। ভাবলাম বাকিটুকুর জন্য এই মাঝরাতে কোথায় যাবো; কাজেই পূর্ণ চেতনায় ওখানেই 'বিসর্জন' দিলাম বাকিটুকু। এবার বেশ হালকা হালকা অনুভব করলাম। 

কিছুকাল হতভম্বের মতই পড়ে রইলাম। চারদিক কেমন যানি অজানা হয়ে আসছে। কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।এককথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়।এমন একটা অপরাধ করেছি যার প্রায়শ্চিত্ত আমাকেই করতে হবে। তার উপর জানাজানি হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা। মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। সঙ্গে মামার পেটানি তো আছেই। অবস্থানের কোনো পরিবর্তন না করে চিন্তা করছি কি করা যায়। চোখ পড়লো পটার দিকে। এই পৃথিবীতে যে এতো বড় একটা জঘন্য ঘটনা ঘটে গেছে তাতে ওর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। এহেন আস্পর্ধায় আমার মধ্যে ক্রোধের সঞ্চার হলো।

খুব সন্তরপনে ওকে টেনেটুনে আমার জায়গায় আনলাম। এবার ওবু করিয়ে যগ থেকে কিছুটা জল হাফপ্যান্ট পরিধেয় স্থিতিতেই নিতম্ব তে ঢেলে বেশ ভেজা ভেজা করে চিত করে শুইয়ে দিলাম। আর আমি বাঁ দিক করে দেওয়াল ঘেঁষে শুয়ে পড়লাম। 

বেশ কিছুকাল চোখের পাতা বন্ধ করতে পারছিলাম না। ধীরে ধীরে শেষ রাতে ঘুম এসে ছিলো গা জড়িয়ে।

সকালে পটা কাঁদতে কাঁদতে ওর মাকে বলছিলো, 'আমি যে কখন করেছি তা মনেই করতে পারছি না'।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন