.................................................................................................
‘অব
কে বিছড়ে হ্যায় তো শায়দ কভি খ্বাবোঁ মে মিলে
‘
জিস তরহ সুখে হুয়ে ফুল কিতাবোঁ মিলে..’
#
‘পুরুষপুর’ বললে চিনতে হয়ত অসুবিধা হবে, তবে ‘পেশোয়ার’ বললে সবাই চিনবেন।
পাকিস্তানের ‘খাইবার পাখতুনখাওয়া’ রাজ্যের রাজধানী। ১৯৩০ সালের ২৩ এপ্রিল
সীমান্ত গান্ধী ‘খান আব্দুল গফফর খানে’র নেতৃত্বে পেশোয়ারের ‘কিসস্যা খাওয়ানি
বাজারে’ হাজার হাজার মানুষ ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে অহিংস আইন-অমান্য আন্দোলনের জন্য
একত্রিত হয়। এই অহিংস আন্দোলনের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ব্রিটিশ ঘোড়সওয়ার
বাহিনি।কয়েকশো মানুষ মারা যায়।মানবেতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের অকুস্থল হয়ে ওঠে
পেশোয়ার। নিরীহ, অসহায় মানুষের মৃত্যু কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে
পারেনি। আরো তীব্র হয়ে উঠেছে, ছড়িয়ে পড়েছে ‘খাইবার পাখতুনখাওয়া’র দিকে দিকে।এরকমই
অগ্নিগর্ভ সময়ে ১৯৩১ সালের চোদ্দই জানুয়ারি এই রাজ্যের নওশেরার কোহাটে জন্ম হয় কবি
আহমেদ ফরাজের।
#
আহমেদ ফরাজ জন্মসূত্রে পেশোয়ারের সম্মানিত সৈয়দ পরিবারের সদস্য ছিলেন। ‘কোহাটে’র বিখ্যাত পীর ‘হাজি বাহাদরে’র উত্তরাধিকারী হিসেবে এই পরিবারের প্রতি স্থানীয় মানুষের বিপুল শ্রদ্ধামিশ্রিত আস্থা ছিল।‘ফরাজ’ এই নামটি ছিল ওঁর ছদ্মনাম, উর্দু শায়েররা যা হামেশাই নিয়ে থাকেন।উর্দুতে বলা হয়, ‘তখল্লুস’।প্রকৃত নাম বা পরিবারদত্ত নাম হল সৈয়দ আহমেদ শাহ।পিতা বা ‘ওয়ালিদ’ আগা সৈয়দ মুহম্মদ শাহও ছিলেন কবি বা শায়র। তো, ছোটবেলা থেকেই ফরাজ এক শায়রানা আন্দাজে বড় হয়েছেন। খুব ছোট যখন তিনি, বাবা ঈদের নতুন জামা ইত্যাদি নিয়ে এলেন, সবাইকে দিলেন। ছোট্ট ফরাজের খুব একটা পছন্দ হয়নি সেই উপহার। তো তিনিও বাপকা বেটা! তাঁর স্বরচিত প্রথম শেরটি তাৎক্ষণিক তৈরি করে বাবাকে বললেন, ‘লায়ে হ্যায় সবকে লিয়ে কপড়ে সেল সে/লায়ে হ্যায় হমারে লিয়ে কম্বল জেল সে’...আর এই রসবোধ আমৃত্যু তিনি বহন করেছেন। তিনিই তো লিখবেন, ‘ওহাঁ সে এক পানি কি বুঁদ না নিকল সকি ফরাজ/ তমাম ওম্র জিন আখোঁকো হম ঝিল লিখতে রহেঁ’।( একফোঁটা জলও বেরোল না ওখান থেকে/ সারাজীবন যে চোখদুটোকে আমি ঝিল লিখে এলাম)
#
·
ফরাজের পরিবার পেশোয়ারে চলে আসে কিছুদিন পরে। ফরাজ বিখ্যাত এডওয়ার্ড কলেজে
ভর্তি হন।পোস্টগ্রাজুয়েশন করেন পেশোয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে। তাঁর বিষয় ছিল,উর্দু আর
ফার্সি।ছাত্র থাকা কালীন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ তনহা তনহা’ প্রকাশিত হয়।কলেজ
জীবনেই আহমেদ ফরাজ বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং তখনকার দুই বিখ্যাত বামপন্থী
কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ আর আলি সরদার জাফরির সংস্পর্শে আসেন। ফয়েজকে তাঁর মেন্টরও বলা
চলে।১৯৪৭-এ যখন ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হতে চলেছে, ফরাজের বয়েস তখন ষোলো
বছর।কিশোর ফরাজ তখনই শের শায়েরির দিকে ঢলে পড়েছেন।ঠিক এগারো বছর আগে লক্ষ্ণৌ-এ
গঠিত হয়েছে গঠিত হয়েছে ‘ The
All India Writers' Association.’ এই
সংগঠনের পাকিস্তানী শাখার সঙ্গে ফরাজ ভবিষ্যতে জড়িয়ে যাবেন।
#
এমন নয় যে হঠাৎ ক’রে এই সংগঠন গজিয়ে উঠেছিল।ভারতের
প্রগতিশীল সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা হয়
১৯৩২ সালে লক্ষ্ণৌ থেকে ‘অঙ্গারে’ নামের গল্প সংগ্রহ বেরোবার পর থেকে। ১৯৩৩ সালে
এই বইটিকে নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। বইটিতে গল্প লিখেছিলেন, আহমেদ আলি, সাজ্জাদ জাহির, রাশিদ জাহান এবং মাহমুদুজ
জাফর। ১৯৩৫ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘The Indian Progressive
Writers' Association’ , ১৯৩৬
সালে কলকাতায় তৈরি হয় ‘The
Progressive Writers' Association’, একইসঙ্গে উর্দু সাহিত্যিকদের সংগঠন
কাজ করছিল, ‘আঞ্জুমান তরক্কি পসন্দ মুসন্নিফিন’ নাম নিয়ে। এদের ঘোষিত আদর্শ ছিল
সমাজতন্ত্র। ১৯৩৬ সালে লক্ষ্ণৌতে এই সংগঠনগুলি এক হয়ে যায়। গঠিত হয়,
‘The All India Writers' Association’ গড়ে ওঠে।
নেতৃত্বে থাকেন সৈয়দ সাজ্জাদ জাহির, আহমেদ আলি। একে একে এই এসোসিয়েশনে তখনকার
অগ্রণী লেখক, কবিরা যোগ দিতে থাকেন। সৈয়দ ফকরুদ্দিন বেলে, হামিদ আখতার, ফয়েজ আহমেদ
ফয়েজ, আহমেদ কাসিম সহ উর্দুসাহিত্যের প্রথম সারির ব্যক্তিত্বরা এসোশিয়েসনের প্রথম
সম্মেলনে যোগ দেন। মুন্সি প্রেমচাঁদ এই সম্মেলনের উদবোধন করেন।রবীন্দ্রনাথ
শুভেচ্ছাপত্র পাঠান। যাইহোক এই সংগঠনই দেশভাগের পরে পাকিস্তানে ‘The All Pakistan Progressive Writers Association’ নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।তরুন আহমেদ ফরাজ এই সংগঠনে যোগ দেন এবং শায়েরি
লিখতে থাকেন ‘ফরাজ কমিউনিস্ট’ নাম নিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন