পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

রীনা রায়


পরিবর্তন'
*********
(চতুর্থ পর্ব)

জীবন যে কাকে কখন কোন পথে নিয়ে যাবে কেউ জানেনা।
ঠিক যখনি মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, হঠাৎ আসা ঝড় তখন সব এলোমেলো করে দিয়ে যায়।
পুরোনো জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে অনন্যার চোখদুটোয় কখন যে ঘুম নেমে এসেছিলো, ঘুম ভাঙলো একটা গোঙানির শব্দে। প্রথমে চোখ মেলে ও বোঝার চেষ্টা করলো আওয়াজটা ঠিক কোথা থেকে এলো।
অনেক রাত হয়েছে, ট্রেন মোটামুটি ফাঁকাই। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো সামনে দুজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন। ভদ্রমহিলা ছাড়া বাকি দুজন ট্রেনের দুলুনিতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ভদ্রমহিলা একমনে বই পড়ছেন, অন্য কোনোদিকে হুঁশ নেই ওনার। অনন্যার পাশে দুটো সিটই ফাঁকা, একটু আগেও ছিল, কখন তারা নেমে গেছে অনন্যা দেখেনি। অন্যদিকে তাকিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা মেয়ে আর পাশে প্রৌঢ় একজন মানুষ বসে,হয়তো বাচ্চাটির বাবা হবে।ওদিকে আর কেউ নেই।
কিন্তু অনন্যার মনটা কেমন খচখচ করতে লাগলো, আওয়াজটা মনে হলো যেন বাচ্চাটিই করেছিলো।
মনে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে ও চোখ কান খোলা রেখে বসে থাকলো।
আবার একটা ''উঁ উঁ উঁ উ' গোঙানির শব্দ!
অনন্যার এবার আর কোনো সন্দেহ রইলো না, ও প্রায় একলাফেই ওদিকে দৌড়ে গেল, আর গিয়ে যা দেখলো তাতে ও রাগে,বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেলো। তারপর চেতনা ফিরতেই চিৎকার করে উঠলো।
"কি করছেন আপনি? ও কে হয় আপনার?"
বলামাত্রই লোকটা সেখান থেকে দৌড়ে অন্য কামরায় চলে গেল। অনন্যা ওর পিছু ধাওয়া করতে যাবার আগেই বাচ্চা মেয়েটা সিট থেকে নেমে ওকে জড়িয়ে ধরলো, মেয়েটা ভয়েতে কাঁপছিলো।
আশ্চর্য, ট্রেনে এতগুলো মানুষ থাকা সত্বেও কেউ কোনো কথা বললো না!
মেয়েটা ওকে আঁকড়ে ধরে আছে, কিছুতেই ছাড়ছে না।
ও মেয়েটাকে সিটে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে থাকলো।
নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে, লোকটা পালালো কেন? মেয়েটা কি তবে ওর কেউ নয়? মেয়েটা একা কেন?
কিছু জিজ্ঞেস করলেও বাচ্চাটা কিছুই বলছেনা।
অনন্যা কি করবে এখন ওকে নিয়ে!
এত রাতে মেয়েটাকে একা রেখে যেতে মন চাইছে না, আবার এতটুকু বাচ্চা মেয়েটাকে পুলিশের হেফাজতে দিতেও মন চাইছেনা।
ও তো এখন দাদার বাড়ি যাচ্ছে, বৌদি কি এই অজানা, অচেনা মেয়েটাকে রাত্রে বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি হবে?
এইসব ভাবতে ভাবতেই দেখলো ট্রেন প্লাটফর্ম এ ঢুকছে।
অনন্যা নিজের ব্যাগটা নেবার জন্য উঠবার উপক্রম করতেই বাচ্চাটাও ওর সাথে উঠে এলো।ও বুঝেছে, এই মুহূর্তে অনন্যা ছাড়া ওর শুভাকাঙ্খী আর কেউ নেই।
ইস, মেয়েটার মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে, ওকে আগে কিছু খাওয়াতে হবে।
রাত প্রায় এগারোটা,কিন্তু হাওড়া স্টেশন বেশ জমজমাট।
অনন্যা বাচ্চাটাকে খাওয়াতে নিয়ে গেলে ও প্রথমে কিছুতেই খেতে চাইলোনা, অনন্যার হাত দুটো টিপে ধরে বসে থাকলো।
অনন্যা অনেক বুঝিয়ে জোর করেই ওকে খাওয়াতে পারলো, কি জানি বৌদি যদি খেতে না দেয়!
ট্রেনে ওঠার আগে ও ফোন করে দিয়েছিলো, তাই ওর খাবার থাকবে, কিন্তু মেয়েটাকে খেতে না দিলে অনন্যা কি করে খাবে!
আপাতত মেয়েটাকে নিয়ে ও বাড়ি যাওয়াই মনস্থ করলো।
ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করে একটা ক্যাব ডেকে নিলো।
(ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন