পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮

সুজাতা বন্দ‍্যোপাধ্যায়


আজ হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীর ধর্ম নিয়ে এত বিরোধ কেন?ধর্ম?সে তো মানুষের।বিরোধ?সে তো মতের অমিলের।বিরোধ যেটা তা হলো স্বধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও অন‍্যধর্মকে ঘৃণা করা।বিরোধ জাতির সঙ্গে জাতির।কোন ধর্মই সেই শিক্ষা দেয় না।
ধর্ম কি?যা ধারণ করে তাই ধর্ম।যা কিছু গ্রহণীয়, যা কিছু বিশ্বাসযোগ্য,যা কিছু শ্বাশত এবং চিরন্তন তাই তো ধর্ম।শ্রীকৃষ্ণকে দুর্যোধন বললেন,
"জানামিং ধর্মং নচমে প্রবৃত্তিঃ
জানামিং অধর্মং নচমে নিবৃত্তিঃ
ত্বয়া হৃষীকেষঃ হৃদেন স্হিতঃ
যথা নিযুক্ত অস্থিঃ তথা করৌ।"
-হে প্রভু!আমি ধর্ম জানি কিন্তু প্রবৃত্তি কে ছাড়তে পারি না।আমি অধর্মও জানি কিন্তু সেখান থেকে নিবৃত্তি হতে পারি না।তুমি আমার হৃদয়ে অবস্থান করে আমাকে যা নির্দেশ দিয়েছ তাই আমি পালন করেছি প্রভু।
আবার কোরান বলছে,"যদি তোমরা সত্যবাদী হও ,তবে প্রমাণ উপস্থাপন করো"।তাই সমাজে সংসারে ন‍্যায়-অন‍্যায়, সৎ-অসৎ, থাকবেই।তাই তো বলি,'ধর্ম ধোয় মনের ময়লা
       অহংকার ধোয় শ্রম
      আত্মা ধোয় ভগবান
       গর্ব করাই ভ্রম।'
একটি মানুষ তো কেবলমাত্র শরীর ও মনের অধিকারী নন।তিনি একটি আত্মারও অধিকারী।যে আধারে আত্মা ধারণ হচ্ছে সেই ধারণকারী পরমাত্মাই তো ভগবানের অংশ।মানুষ যদি অমৃতস‍্য পুত্রই হন তবে প্রতিটি মানুষের অন্তরেই সেই চিরন্তন আত্মা বিরাজমান।এই আত্মার আত্মজ্ঞানকে পরিশুদ্ধ করেন স্বয়ং ভগবান।
প্রতিটি ধর্মের প্রধান লক্ষ্য আধ‍্যাত্মিক ভাবনা ও চেতনার বিকাশ ঘটানো।বিশ্বের তিনটি প্রধান ধর্মের কথাই যদি ধরি ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম এবং খ্রিস্টান ধর্ম-এই তিন ধর্মের প্রবতকই ছিলেন তিন রাখাল রাজা।হজরতমহম্মদ চরাতেন ডাম্বা বা ভেড়া, শ্রীকৃষ্ণ চরাতেন গরু, আর যীশুখ্রীষ্ট চরাতেন মেষ।ব‍্যাপক অর্থে বলতেই পারি চেতনার ছড়ি ঘুরিয়ে বিশ্ববাসীকে বাগে আনাই ছিল যেন তাদের কাজ।
ধার্মিক, পরিশ্রমী মানুষ সত‍্যনিষ্ট ও বিনয়ী হন।কঠোর পরিশ্রমে তার অত্মরাত্মা সংযত, পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে ওঠে।আমি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথাই বলি-work is worship -যাদের কাছে তারা শুধু মনে করেন'Duty is god and god is duty'-তাদের কাছে কর্মই ধর্ম।রতন টাটা, আব্দুল কালাম স‍্যারের, মতো প্রতিটি  মানুষই কাজকেই তার ঈশ্বর, আল্লাহ বলে মেনেছেন।
মনুষ্যত্বই মানুষের পরিচয়।যদি মানুষের মধ্যে ক্ষমতার দম্ভ, অহংকার, গর্ব, লোভ থাকে তবে তা সদাচারী আত্মার সঠিক আধার প্রস্তুতিতে বাধার সৃষ্টি হয়।সঠিক কর্মপথে, সুঅভ‍্যাসে মানুষ সেই আধারকে পরিশুদ্ধ করে কখনো পরিশ্রমের মাধ্যমে, সেবার মাধ্যমে, কখনো জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধির মাধ্যমে।

ভারতবর্ষ মাত্র এমন এক দেশ যেখানে একসাথে অধ‍্যাত্মবাদ, ভক্তি বাদ, সুফিবাদ, গুরুবাদ প্রমুখের সহাবস্থান।আজও দেশের অনেক জায়গা আছে যেখানে ধর্ম নিয়ে গোঁড়ামি নেই।যেখানে সাধারণ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, মানুষ ভারতবাসীর বাস একসাথে।শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে বিলাসিতা নেই আছে মনুষ্যত্বের গর্ব।সেখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, পার্শী একসাথে পিকনিক বানায়,উৎসব-পর্বে একসাথে মহানন্দে মেতে ওঠে।আরও নানা উদাহরণ দিয়ে বক্তব্যকে দীর্ঘ ও গতিপথের অন‍্যমনস্কতা বাড়াতে চাই না।মোদ্দা কথা হলো ধর্মের নামে নাগাড়া বাজানোর খুব প্রয়োজন আছে কি?প্রতিটি ধর্ম সেবার কথা বলে।দানের কথা বলে।আমরা প্রত‍্যেকেই নিজের ধর্মের পাশাপাশি অন‍্যের ধর্মকেও সম্মান জানাতে পারি।সেটাই উচিত।আজ সর্বধর্মসমন্বয়ের দেশ এই ভারতের ধর্ম হোক-ধর্ম হোক ভালোবাসার, ধর্ম হোক সেবার,ধর্ম হোক মনুষ্যত্বের

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন