পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

কাকলি দাস



দিদানার অষ্টমঙ্গলা

--------------------
আমার মামার বাড়ির দাদুভাই (মিহির চন্দ্র দাস) এর সবে নতুন বিয়ে হয়েছে। দিদানা( মীরা - আমার দিদা) কে নিয়ে অষ্টমঙ্গলাতে গেছে।দিদানার বাপের বাড়ি টালিগঞ্জে।এখন যেখানে টালিগঞ্জ ট্রামডিপো তার পাশেই ছিল দু মানুষ উঁচু পাঁচিল ঘেরা কয়েক বিঘা বাগান বাড়ি সহ সাহেবদের ফ্যাক্টরী(রবার্ট ম্যাকলিন)।সেই ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার ছিলেন দিদানার বাবা (যতীন মোহন দাস)।সেই সুবাদে পাঁচিলের ভিতরে বাগানের মাঝে দো মহল্লা তিনতলা বাড়িটিই তার কোয়ার্টার।ঠাকুর, চাকর, মালি, দারোয়ান, ড্রাইভার, সবাই তাদের পরিবার নিয়ে ওখানেই থাকে।আম বাগান, পেয়ারা বাগান, লিচু বাগান, তারই মাঝে ব্যাটমিন্টনের কোর্ট।বাড়ির চারদিকে  চওড়া বারান্দা।সারি দিয়ে পরপর ঘর... শেষ প্রান্তে গিয়ে সিঁড়ি।তবে বাড়ির পিছন দিকেও একটা ঘোরানো সিঁড়ি ছিল।সেটা কেউ কশ্মিনকালেও ব্যবহার করতো না।নোংরা আগাছা হয়ে পরে আছে।
যতিন বাবু নিজের চারছেলে আর দুই মেয়ে ও স্ত্রী কে নিয়ে তাঁর সংসার সেখানেই।আমার দিদানা তাঁর বড় মেয়ে।দিদানার আগে দুই দাদা আর পরে বোন ও ছোট দুই ভাই।তবে তখন কারোর বিয়ে হয়নি।তাই শালা শালীদের নিয়ে দাদুভাই রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ১২ টার পর শুতে গেছে।প্রায় রাত দুটো নাগাধ দাদুভাই টয়লেটে যাবে বলে উঠেছে।ঘর থেকে বেড়িয়েই বুঝতে পারলো কেউ একজন বারান্দার পাঁচিলে বসে আছে সামনের দিকে মুখ করে।দাদুভাই ভেবেছে চোর টোর হবে। তাই বেশ জোড়েই বলেছে " কে ওখানে? " সাদা কাপড়ে ঘোমটা দেওয়া লোকটা পাঁচিল থেকে নেমে বারান্দা ধরে সোজা হাঁটতে শুরু করে দিল বেশ দ্রুত গতিতে।দাদুভাই( দাদুভাইএর কোন কিছুতে কোনদিন ভয় ছিল না) তাকে ধরবার জন্যে জোড়ে প্রায় ছুটে যেতে চেষ্টা করলো।কিন্তু দাদুভাই যত স্পীড বাড়ায় সেই লোকটা তার দ্বিগুন জোড়ে এগোয়।এভাবে ক্রমশ বাড়ির পিছনের দিকে চলে গেল সেই ঘোরানো সিঁড়ির দিকে।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করলো,দাদুভাইও তার পেছনে... দোতলা ছেড়ে তিনতলা ছেড়ে  ছাদে পৌঁছে গেল।লোকটা এবার দৌড়তে শুরু করেছে...দাদুভাইও প্রাণপণ দৌড়চ্ছে..।লোকটা ছাদের পাঁচিল পর্যন্ত গিয়ে একবার পিছন ফিরে দেখলো,দাদুভাই হাত বাড়াতেই ভ্যানিশ....।তখন দাদুভাই ভয়ে ঘেমে গেছে মুহূর্তে।ওখানে দাঁড়িয়েই চিৎকার করতে শুরু করেছে.... " মীরাআআআ... বড়দাআআ.... বাবাআআ...."
দাদুভাইএর গলা পেয়ে সবাই ঘুম থেকে ধরমর করে উঠে আওয়াজ লক্ষ্য করে ছাদে উঠেছে।সবারই একটা প্রশ্ন " তুমি এসময় এখানে? " 
নীচে নেমে দাদুভাই সমস্ত ঘটনা বলল সবাইকে।দিদানার বাবা সেদিন বললো " কাল কথা হবে,আজ শুয়ে পরো।"
পরদিন সকালে চায়ের আসরে বললেন তিনি " বাবাজীবন তুমি না জেনে একটা অন্যায় করেছো।সে যাক,তুমি সন্ধ্যে বেলাতে টিউবওয়েলের চাতালে ধুপ আর বাতাসা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিও।" দাদুভাই জানতে চাইলো তখন সব কিছু...
যতিন বাবু বললেন " ওঁরা কিছু ক্ষতি করেনা।তবে ওদের পেছনে লাগলে ওরা কি ছাড়বে?  আসলে বোঝোইতো সাহেবদের কারখানা তারা যে কর্মচারীর উপরে বিরক্ত হয় যখনই খুন করে এই বাগানেই পুঁতে ফেলে।কেউ কোনদিন হদিশ পায়না আর।তারাই এঁরা।"
দিদানার বাপের বাড়িতে এক পুরোনো চাকর ছিল তার নাম গঙ্গা।সবাই গঙ্গা বুড়ো বলে ডাকত।সেদিনেই রাতে সবার খাবার পরে গঙ্গাবুড়ো বাসন নিয়ে সবে টিউবওয়েলের নীচে রেখেছে।মাজবে বলে,সামনের পেয়ারা গাছের ডাল থেকে কে যেন বলে উঠলো " কিঁরেঁ গঁঙ্গা খাঁওয়াঁ হঁলোঁ? " গঙ্গা বুড়োর যেন প্রতিবেশীনী... সেও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় " হ্যাঁ রে মুকপুরি হলো..... তা রোজ রোজ তোর এত দরকার কি লা? দেখবি ঝাঁটার বারি দেব? " সে তখুনি হিঁ হিঁ করে হেসে পালায়...... দাদুভাই সেটা উপরের বারান্দা থেকে লক্ষ্য করে পরের দিনে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে গঙ্গা বুড়োর সাথে রোজই ওই পেত্নি পীড়িত করতে আসে নাকি।
]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন