পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯

রীনা রায়





"সিদ্ধান্ত"
*******
কেন জানিনা, আজ আর কান্না আসছেনা। চোখের জল শুকিয়ে গেছে বোধহয়।
বহুতল এপার্টমেন্টের তেরো তলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টা আজ নিয়েই নিলো ঋতজা।
নিচের দিকে চোখ যেতে দেখলো আজও একঝাঁক উজ্জ্বল প্রজাপতির মত  বাচ্চাগুলো হুটোপাটি করতে করতে স্কুল বাসে উঠছে।
ওই যে গাঙ্গুলিদা বৌদিকে রোজকার মত স্কুটিতে বসিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতে গেলো।
সৌরভ বাজারের ব্যাগ হাতে হন্তদন্ত হয়ে ফিরছে। এসেই অফিস ছুটবে। মাসিমার এই এক বাতিক, প্রতিদিন টাটকা সবজি আনা চাই।
পুজোর সময় এদের সবার সাথে হইহই করে দিন কেটে যায়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঋতজা।
সবকিছু কালকেও একই নিয়মে চলবে। সবার জীবন ছন্দ মেনেই চলবে, শুধু ঋতজার জীবন আজকের পর থেকে বদলে যাবে।
" ইউথ্যানাশিয়া"..শব্দটা মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছেনা।
এই একটা শব্দ ওর জীবনটাকে সম্পূর্ন পাল্টে দেবে।
ও জানেনা ও কি করে স্পন্দনকে ছাড়া বাঁচবে। কিন্তু দীর্ঘ সাতমাস কোমায় থাকা মানুষটা কোনোদিন যে সুস্থ হয়ে উঠবে সে আশাও তো নেই। ঘাড় থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্যারালাইসিস হয়ে গেছে।
এই অবস্থাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে কোয়াড্রিপ্লেজিক !
এখন তো শরীরের বেশিরভাগ অর্গানই কাজ করছেনা। শুধু বাইরে থেকে যন্ত্রের সাহায্যে ওকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরে সবাই বলা সত্বেও কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না ঋতজা।
একটা ছোট্ট একসিডেন্ট এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠবে ও বোঝেনি।
অফিসের কাজে সিমলা গেছিলো স্পন্দন। ফেরার পথে ড্রাইভারের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করে। একপাল ভেড়া যাচ্ছিলো, পাস কাটাতে গিয়ে গাড়ি ধাক্কা লাগে পাহাড়ের গায়ে। কতটা ইনজুরি তখন বোঝা যায়নি।
মাত্রই তিন বছরের বিবাহিত জীবন হলেও স্পন্দন ওর জীবনে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মত। এত এত স্মৃতি ... ওর জীবনের সবটাই তো স্পন্দন! স্পন্দন ছাড়া ওর অস্তিত্ব শুন্য।
দ্বিধাগ্রস্ত মন বারবার বলেছে, হসপিটালের বেডে কোমায় থাকলেও মানুষটা তো আছে, দুবেলা তাকে দেখতে তো পাচ্ছে ছুঁতে পারছে।
সে না থাকলে এই বিশাল শূন্যতা কিভাবে বইবে ও?
মনে মনে আউড়ায় ,পরজন্ম বলে সত্যি কিছু আছে কি না আমার জানা নেই। তবু আমি বারবার তোমাকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই ।
....
আজ স্পন্দনের লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে।
বহুতলের তেরো তলায় একমুঠো ঘুমের ওষুধকে সঙ্গী করে ঋতজা চিরনিদ্রায় যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
"আমি আসছি স্পন্দন! তোমাকে ছাড়া আমি যে অসম্পূর্ন।পরজন্মে বিশ্বাস করিনা আমি। কিন্তু আজ ভীষণভাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে জানো! পরজন্মে আবার আমাদের দেখা হবে .... "
ঘুমের ওষুধগুলো জলে গুলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো ঋতজা।
ফোনটা বাজছে... কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলো ঋতজা....
"মিসেস বাসু, আহুজা হসপিটাল থেকে বলছি। আপনি কোথায়? স্পন্দন বাবু তো রেসপন্স করছেন। এ যাত্রা বোধহয় আপনার প্রার্থনা ভগবান শুনেছেন।আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন..."

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন