#বুধবারের_প্রবন্ধ_বই
বই পড়া একটা অভ্যাস । এই অভ্যাস ধরে রাখা খুব প্রয়োজন । আমরা অনেকেই সকালের খবরের কাগজ ছাড়া আর কিছুই পড়ি না । এ ছাড়া কেউ কেউ অফিসের চিঠি চাপাটি ও প্রয়োজনীয় নিজস্ব বিষয় ছাড়া আর কিছু পড়েই না । ডিগ্রী অর্জনের জন্য যা করা ও পড়া হয়েছে তাকেই ভাঙিয়ে অনেকেই অনেক বিজ্ঞ । পরবর্তীতে আর সে রকম বই পড়াই হয় না অনেকের ।
সেই ফ্যামিলির শিশু বা পড়ুয়াদের কাছ থেকে আমরাই আবার অনেক বেশি পড়ার আশা করে থাকি । ক্লাসের বাইরের কিছু না পড়লে কি ভাবে জীবনকে জানবে । বড়রা যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পড়ে না কেবল বই জমা করে রাখে তেমনি শিশুরাও হারিয়ে ফেলছে পড়ার প্রতি আগ্রহ । তারা তো দেখে শিখছে ।
অনেক মা বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে আর নিজেদের মধ্যে বেশ গুলতানি মারছে । এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই কেবল নিজেদের বা পরের বা দেশের দশের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে আর তাই নিয়ে নানান হাসি মস্করা করে । সেখানে যদি দু একটা বাচ্চা থেকেও যায় অনেকে বলে – ও কিছু বুঝবে না ।
পড়ুয়ারা যদি মাকে বাবাকে কোনদিন বই টেনে নিয়ে পড়তে না দেখে , সে যদি দেখে টিভি কম্পিউটারে , মোবাইল , ট্যাব ও নাই নাই জীবনের চর্চায় বড়রা ব্যস্ত তো সে কেন সব সময় পড়া আর বই নিয়ে থাকবে । সে তার জগতে আরো কি এন্টারটেন্ট আছে তাই খুঁজবে ।
রান্না অফিস দৌড়াদৌড়ির মাঝে পড়ার সময় নেই বলা যাবে না । অবসরটাই যদি মল , টিভি বেড়ান , আড্ডা , রিলাক্স হতে পারে তার মাঝে পড়াটাকে ধরে রাখা যেতেই পারে । অল্প অল্প করে করা যায় । শুধু ইচ্ছেটাকে তৈরি করা । কেন না এই ইচ্ছে আগামী তৈরি করবে । না হলে এখন আর কেউ তেমন বই পড়তে চায় না বলে খুব রব তুলে লাভ কি ? এর জন্য বড়রা কতটা দায়ী তাও ভেবে দেখা দরকার ।
বাচ্চারাও ক্লাসের বই ছাড়া পড়তেই চায় না । তারা কেবল ইলেক্ট্রনিক্স মিড়িয়াতে খুব বেশি আকৃষ্ট । আমরাও কম কিসে ?
কিছু জিজ্ঞেস করলেই দাঁড়া নেট খুলে দেখে বলছি । হাতের কাছে বই খুলে অক্ষর গিলে ও গিলিয়ে শিশুটির মস্তিষ্কের বিকাশে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত । তা না করে তার সামনে ঐ একটি খুঁজতে হাজার প্রলোভনের দরজা খুলে দিলাম । তাকে তা টানবেই । যতই বাধা দিই আজ নয় কাল সে তাতে প্রলুব্ধ হবেই । আর দোষ পড়বে – কেউ বই পড়তে চায় না তা বললে হবে না ।
বই নিয়ে বসে পড়াতে হবে বলে অনেকেই টিউশন ব্যবস্থা করছে । যাতে সেই সময় বড়রা অন্য কাজ করতে পারবে আর বড়রা পেয়ে যায় বই পড়া থেকে রেহাই । সেই ভাবনাটা কিন্তু ছড়িয়ে যাচ্ছে আগামীর মধ্যে ।
বইমেলাতে গিয়েও অনেকেই কেবল ছেলেমেয়ে কি বই কিনবে অথবা ভবিষ্যতে সে কি কি পড়তে পারে তাকে ভেবেই বই কেনা হয় । বাবা মা বা বড়রা নিজের জন্য বই কিনছে এমনটা দেখা যায় তা খুব কম ।
এই ব্যাপারটা যারা লেখালেখি করেন তাদের মধ্যেও আছে । বই কিনে পড়ছে বা পড়ে এমন উঠতি লেখকদের মধ্যেও ভাটার টান আছে । নিজের লেখা বই এবং চেনা পরিধিতেই যাতায়াত করে । নেট থেকে অনেকে পড়ে তাতে দেখা গেছে অর্ধেক বা মোটামুটি পড়েই সারা আর দোষ হয়ে যায় কেউ বই পড়তে চায় না ।
অথচ যেভাবেই হোক অক্ষর গিলতে পারলে সব না হলেও অনেক জানা যায় আর সমস্যার সমাধান হয়ে যায় । টেনশন ট্রেস ফার্স্টটেশন মাথার যন্ত্রনা চোখের আরাম এবং মানসিক ও মানবিক অবস্থার উন্নতি , কিছু বলা বা কিছু বিষয়কে মানবিক দিক দিয়ে ভাবা বই পড়ার মধ্য থেকে পাওয়া যেতে পারে ।
বইয়ের অক্ষর গিলতে যে গভীর মনোযোগ দিতে হয় তা জীবনের অনেক ক্ষেত্রে ফলপ্রসু হতে পারে । আঘাত যন্ত্রণা কষ্ট রোগ শোক দুঃখ ব্যথা কান্না ব্যর্থ প্রেম ইত্যাদিকে সরাসরি হয়তো উপশম দিতে পারবে না কিন্তু পরোক্ষে এর সদর্থ ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
তাই সারাদিনে সকালের খবরের কাগজ বাদ দিয়ে যে কোন বই এবং বইয়ের অক্ষর পনের বিশ মিনিট আজ থেকেই পড়া শুরু করা যেতেই পারে । রোজ অভ্যাস আমরা যদি গড়ে তুলি তা আমাদের ভবিষ্যতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে ।
বই নিজেই পাবে প্রাণ । সেই প্রাণ অনেক প্রাণে সতেজতা এনে দিতে পারে । এই দশ বিশটা অক্ষর কিন্তু পুরোপুরি আপনার জন্য হৃদয়ে জমা হয়ে আপনাকে এক অনিন্দ্য আলোয় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে । যা অমূল্য ।
তাই আর নয় । এখুনি পড়ে ফেলি এক দু’শ লাইন – হাতের কাছের বই টেনে নিয়ে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন