আপন //
=======
বিভা ঘড়ি তে দেখলেন, প্রায় ছ'টা বাজে। আজ বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। একাদশী। ভাড়াটেদের মিটিং। তিরিশ বছর এক ঘর, এক বারান্দা, এখন ফ্ল্যাট উঠবে। সত্তর টাকা ভাড়ায় রুপুর জন্ম, একশো ত্রিশ টাকায় বিয়ে। প্রোমোটার গুছিয়ে ভয় দেখিয়েছে। হয় এক কামরার ফ্ল্যাট, নাহলে টাকা। ভাড়াটে রক্ষা কমিটি বুঝিয়েছে, টাকা। ওদের কমিশন থাকবে দশ শতাংশ। " মাসিমা, আপনি বয়স্ক মানুষ, না হলে অন্যদের টুয়েন্টি " -- গতকাল বলে গেছে দীপু, নিচের তলায় ঘুরে বেড়াতো, কোমরে ঘুনসি ছাড়া কিছুই থাকতো না। এখন হাতে সোনার ব্রেসলেট।
রুপু এল। " মা চিকেন কষা বানাও না, খুব খিদে পেয়েছে ।" রুপু মাসে পাঁচ হাজার দেয়। ওর রান্নার লোক, তোলা কাজের লোক নেই। বিভা আছেন। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা। শ্যাম বাজার থেকে টালা। রবিবার ছুটি। জামাই একদিন সেন্টার থেকে একটা মেয়েকে রান্নার জন্য এনেছিল। রুপু রেগে আগুন। "সেই তো মাকে মাস গেলে দিতে হয়।"
অঙ্কে রুপু বরাবরই ভালো। দিদিমণি হিসেবেও বেশ নামডাক।
নটায় ঢুকলো বিভা। মিটিং শেষ। দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিতে যাবে, তখনই " মাসিমা, আমি দীপু। তোমার চেক। সাত লাখ। আমি ওদের বলেছি, আমার মা সাত বছর বয়সে ভেগে গেছে। বাবা মরে গেছে। তুমি আমার কাছে থাকবে। কি রাজি? "
বিভা দীপুর মুখটা ভালো করে দেখলো, নাঃ, আদলটা রুপুর সঙ্গে একেবারেই মিলছে না। আজ ফেরার সময় রুপুর মুখটা বাদুড়ের মত লাগছিল।
==============================
জল ও চিনি//
########
এই এক জ্বালা। মোবাইল। সজল সবে মাত্র ট্রেন থেকে নেমেছে। রুমার ফোন। আঙুল টিপলেই নম্বর। "আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছি, দুমিনিট দাঁড়াও, আসছি " ব্যতিব্যস্ত গলা। ভুলেই গেছিলো। পুজোর কেনাকাটা। পকেট খালি হবে খানিকটা। হাত ঢুকিয়ে দেখে নিলো কার্ড টা। ডেবিট কার্ডে পেমেন্ট। টাকা খরচ হয় কিন্তু কেউ দেখতে পায় না। ফলে খরচ আরো বেশী হয়।
প্লাটফর্ম থেকে নেমেই করম আলির চায়ের দোকান।
"একটা বড় চা "-মুখ দেখে মনে পড়ে যায় কার কোন চা। কাঠের বেঞ্চে জায়গা নেই। চা খেতে খেতে একটু এগিয়ে গেল। চিমা ময়রার 'মামনি সুইটস '। সামনের বেঞ্চটা ফাঁকাই আছে। অনেকক্ষণ পর কোমরটা একটু রেস্ট পেল। একটা সুন্দর গন্ধে মনটা ভরে উঠলো সজলের। ভিয়েনটা দেখা যাচ্ছে। কিছু একটা পাক হচ্ছে। আঃ! বুক ভরে শ্বাস নিল সজল। কতদিন খায়নি! মনে পড়ে না। নিজের অজান্তেই কখন পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলো ভিয়েনের দরজায়। গোলাপ জাম।
জিভটা ভিজে যাচ্ছে। মুখের মধ্যে জল ভরে উঠছে। খিদেটাও চনমন করে উঠলো। সেই সকাল সাড়ে সাতটায় নাকে মুখে গুঁজে তিনটে জেলা পেরিয়ে চাকরির পর সন্ধ্যে সাতটা বেজে পাঁচ এখন। মাঝে ক্যানটিনের ডিম পাঁউরুটি পেটে বড়জোর ঘন্টা খানেক। নাঃ আজ কা সাম গুলাব জামুন কা নাম। সবে মাত্র হাতটা বাড়ালো কি বাড়ালো না, অমনি বেশ জোরালো পিছু টান। ভ্রূ একেবারে ভাঙা রামধনুর মত করে পিছনে তাকিয়ে থতমত খেয়ে স্থির। ওহ্ তুমি!
হাতটা ধরে রুমা, মুখে ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।
তুমি মিষ্টি খাবে? ও তো তোমার জন্য বিষ। গত মাসে সুগার দুশো ছিল। গলায় পাড় ভাঙে নদী। সজল সরকার তাকিয়ে রুমার চোখে। উপচে পড়া নদী সেখানে বিন্দু বিন্দু সিন্ধু।
রুমার হাসিটা এত মিষ্টি কখনও মনে হয় নি তো! যেন ভোরের শিশির ভেজা গোলাপের পাপড়ি। মামনি সুইটস পেরিয়ে আসবে এমন সময় " বাবু একটু পানি খেয়ে যান ।" গোলাপ জামের পাক ফেলে বশির একটা জলের জগ নিয়ে ছায়া ছায়া মুখে তাদের পিছনে।
==============================
|
পৃষ্ঠাসমূহ
▼
পৃষ্ঠাসমূহ
▼
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন