সম্পর্ক
----------
---------------------
-উফ্ অসহ্য লাগছে এই জীবন। না ভালো লাগছে ফেসবুক না টিভি। আর চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই কালো মোটা বউটা।
-- কি যে বলিস! মৌমিতা কিন্তু খুব ভালো মেয়ে রে!তোর ঐ রায়ার থেকে অনেক ভালো। আচ্ছা রে এখন রাখি। বউকে হেল্প করতে হবে একটু..
-- বাবা ঘরেও কাজ করিস! বউকে কতো পটাস রে
-- পটাই না, সংসারটা দুজনের।কাজ ভাগ করে নিচ্ছি আর সময়ও কাটে, কত আর ফেসবুক আর টিভি দেখবো। তোর মতো জীবন আর ক'জনের হয়। ঘরে লক্ষ্মীমন্ত বউ আর বাইরে রায়া.. হে হে...
-- রাখি রে, একটু বেরোবো। বাজার যাবো।
---আচ্ছা বাই
ফোনটা রাখতেই মুডটা আরও অফ হয়ে গেল তীর্থর। বুকটা কেমন করে ওঠে। ব্যালকনিতে সিগারেট ধরিয়ে দাঁড়ায়। প্রায় জনমানবহীন রাস্তাটা দেখতে দেখতে রায়ার কথা মনে পরে। মোবাইলে দেখে এখনও কাল বিকেলের মেসেজটা আনসিন করে রেখেছে কিন্তু অনলাইন দেখাচ্ছে। আজকাল রায়া আবার তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারে।
সত্যিই রায়ার জন্যই আজ তার জীবনটা এমন ওলোটপালট হয়ে গেল।
অফিসে কলিগ হয়ে আসা রায়ার সাথে তার লিভ-ইন করাকে মা -বাবা মানতে পারেননি। তবুও রায়াকে ভালোবেসে তীর্থ আড়াই বছর রায়ার সাথে ছিল। একগুঁয়ে রায়ার সবরকম অন্যায় কাজকে মেনেও নিয়েছিল। অফিসের নতুন বসের সাথে রায়ার
সম্পর্ক নিয়ে উড়ো কথাকেও পাত্তা দিতো না।কিন্তু সেদিন রাতে বসের গাড়ি থেকে নামতে দেখেই মাথা ঠিক রাখতে পারেনি আর। তুমুল ঝগড়া করে সম্পর্কে বিচ্ছেদ আনে।
তারপর যেন পরপর সব ঘটে গেল। রায়ার ওপর রাগে বিয়েতে রাজি হতেই মা মৌমিতাকে পুত্রবধু করে নিয়ে এলেন।
নাহ্! পছন্দ অপছন্দ বাছবিচার করেনি তীর্থ জেদের বসেই। বিয়েটা হলেও দূরত্ব ছিল। আর মৌমিতাও কেমন যেন!ঠাণ্ডা আর নির্লিপ্ত। জৈবিক চাহিদার জন্য কখনও এক হলেও মৌমিতা তীর্থর মনে দাগ কাটেনি। বরং বিয়ের পরপর মায়ের মৃত্যুর পর মৌমিতা আরও দূরে সরে গেছে। শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য হিসেবেই আছে। তবে মা চলে যাওয়ার পর বাবার যত্ন করে এটা ঠিক। কিন্তু তীর্থর কাছে দিনদিন যেন আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে।বরং অফিসে বসের বদলি হবার পরে আবার রায়ার সাথে পুরোনো প্রেমটা বেশ মাখোমাখো হয়ে ওঠে।
সিগারেট শেষ হতেই মনে পড়ল সিগারেটের প্যাকেট শেষ প্রায়। কিনতে যেতে হবে। বেরোনোর সময় হঠাৎ একটা শব্দ আসে কিচেন থেকে। বিছানা থেকে বাবার উদ্বিগ্ন গলায় বিরক্ত হয়েই রান্নাঘরে যায়।
মৌমিতাকে মাটি থেকে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করতে দেখে আরও মাথা গরমে বলে ওঠে,
-- কাজটা কি করো সারাদিন? এই তো ঘরের কাজ! তাতে আবার ধুপধাপ পড়ো।
মৌমিতার জলভরা চোখে আর নির্বাক মুখে কষ্টের ছাপ দেখে খারাপ লাগে তীর্থর। ধরে ধরে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
-- দেখে চলতে পারোনা?
--...
-- কি এমন কাজ করো যে চলাফেরাও করতে পারোনা ঠিক মতো।
বিছানায় বসিয়ে দিতে গিয়ে মৌমিতার কঁকিয়ে ওঠা শুনে দেখলো পায়ের পাতাটা ফুলে গেছে।
বিরক্ত হয়ে আইসব্যাগটা পাশে রেখে বেরোয়।
রাস্তায় পুলিশ নেমেছে দেখে ওষুধের দোকানে ঢোকে। কি মনে হতে একটা ভলিনি স্প্রে আর পেইনকিলার কিনল। নাহ্ মৌমিতার জন্য নয়। ঘরে রাখা প্রয়োজন তাই কিনল। আবার কি মনে হতেই মোবাইলটা দেখে। রায়া এখনো তার মেসেজ দেখেনি অথচ অনলাইন।
নতুন জয়েন করা পিনাকীর সাথে রায়ার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দুচার কথা তীর্থর কানে এসেছে।
মুখটা তেতো লাগছে। বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে এককাপ চা নিজেই করে নিল।
দুপুরে সব সেরে এসে শুয়ে সিগারেটটি ধরায়। অনেক কাজ করলো। মৌমিতা উঠতে পারছেনা দেখে বাবাকে খাইয়ে মৌমিতাকে খেতে দিয়ে নিজে খেয়ে বাসন মেজে টেবিল মুছে এলো। মৌমিতা ব্যথা নিয়েই করতে চাইছিল। কিন্তু তীর্থ আপত্তি করে। সত্যিই অনেক কাজ করে মেয়েটা।পাশফিরে শুয়ে থাকা মৌমিতার প্রতি কেমন যেন মায়া হয় তীর্থর। মুখ বুজে তার সাথে থেকেছে এতদিন।কখনো কোনো আবদার করেনি।অথচ রায়া..
আবার মোবাইল চেক করে। টিকগুলো নীল হয়নি।নাহ্ আর দরকার নেই।
রায়ার অ্যাকাউন্টটা ব্লক করে ভলিনি স্প্রে টার দিকে হাত বাড়ায় তীর্থ....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন