পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০

সেলিম মণ্ডল


এই সপ্তাহে কবি সেলিম মণ্ডল ৷ তার কবিতা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত ৷  কবিসত্ত্বার পাশাপাশি সম্পাদক ও প্রকাশক রূপে চূড়ান্ত সফল ৷

‘তবুও প্রয়াস’ পত্রিকা নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন তিনি। বর্তমানে ওয়েব ও প্রিন্টেড দুই মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়।  লোকসংস্কৃতির ওপর কাজ করার আগ্রহ আছে তার।

তার দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘মায়াজন্ম’ ও ‘লবণ খেতের জোনাকি’ প্রকাশিত । প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘কাঁচা মাংসের বাড়ি’ও সম্পাদিত গ্রন্থ ‘ছাদ পেটানোর গান’l


সেলিম মণ্ডলের কবিতা


বেদনাবীথি

৫৮
বসন্ত ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে বর্ষা আনল। বৃষ্টি হল নিঃসঙ্গতায়। ছাতা পারল না, ঠোঁট দিয়ে মেঘ ধরতে। মেঘ বাড়ির ভিতর, তোমার ভিতর, আমার ভিতর একই শীতকাল হয়ে লেপ মুড়িয়ে আছে।

৫৯
ওই লাল সাইকেল করে কি ফেরি করো? সন্ধ্যার পথ তোমার নাভির ভিতর হারিয়ে বেজে উঠবে কি ক্রিং ক্রিং করে?

কেরিয়ারে অলস যে ঘুঘু, ফাঁদ পাতবে বলে ইশারা করে চলেছে নিয়মিত, তার ডিম…

৬০.
তুমি বলো ছায়া হও, ছায়া হও। আমি ছায়া হতেই চেয়েছি। তবে দীর্ঘ  নয়। ছায়া দীর্ঘ হলেই অন্ধকার নেমে আসে। আমি জানি, অন্ধকার তুমি ভয় করো।

দু-জনে


একই স্বপ্নে দু-জনের ঘুম ভাঙল।
স্বপ্নে, দুজনই‍‍‍—
একটি পাহাড়ের গায়ে বড়ো বড়ো হাঁ দেখে আঁতকে উঠেছিলাম।

দাগগুলো ছিল‍‍‍— মানুষের মুখের মতো।


দু-জন কেউ কারো নয়। কথা হয় গাছের পাতায়।
গাছ গেছে ঝড়ে ভেঙে।
মাটিতে কোলাহল। মাটিতে পোকার সহবাস‍‍‍—
এমন বৃষ্টিদিনে‍‍‍— নিমফুলের মধু নিয়ে
মৌচাকে রেখেছি হাত

গাছ কথা কয় না, ঝুলে পড়া গাছে আমিই আদিম কচ্ছপ!


সাড়ে তিন ফুট দূর থেকে হাত নাড়িয়ে
চলে গেছ‍‍‍— আদিম লড়াইয়ে

দু-জনের কালো নৌকা, লাল হতে হতে
ঢুকে গেল বাড়ির ভিতর

বাড়ির জল ঘোলা হোক; বিপদজনক নয়

ভাঙা দাঁড়ে ফুল বেঁধে সবাই ভেবেছে এটা

আমাদের গল্প


বিধবার ভাতা নিয়ে ভোর আসে।
নিকটে, অতিনিকটে পড়ে থাকে সিঁদুর।
আমাদের গল্পে জানাজায় বিয়ে হয়
পাত পেতে একসঙ্গে খায় সাপ ও অলস ময়ূর।


আমাদের গল্পে মরা ইঁদুর পড়ে থাকে।
কাকে খাক চাইনি আমি এবং তুমি
পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তবুও তার ঝকঝকে দাঁতে
তুলে দিই আগামীর সঞ্চয়। মাঠভরা। আমাদের মাঠভরা সবুজ
ইঁদুরের গর্ভে ছিল। সে করেছিল অগাধ নালিশ।


গল্পের গল্প যেন দুধে মাখা সাদা ভাত।
শিশুর মুখে তুলে দেবে মা।
হাঁটিহাঁটি পা পা: টলমল খসে পড়ে নুপূর।
গল্পে রাত আসে না। এই গল্প শুধুই
খাঁ খাঁ। বাঞ্চোত দুপুর।

চিঠি, সাপ ও ময়ূর

একদিন চিঠি এল বাড়ি‍‍‍‍—
"পেখম মেলার আগেই সাপটি খাবে ময়ূর"
আমি সন্তুষ্ট হয়ে দশ টাকা বকশিস দিলাম পিয়নকে

একমাস পর আবার চিঠি এল‍‍‍‍—
"সাপটি ফণা হারিয়ে গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে"
আমি আরও সন্তুষ্ট হয়ে কুড়ি টাকা বকশিস দিলাম পিয়নকে

আবারও চিঠি এল একমাস পর‍‍‍‍—
"সাপ ও ময়ূর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না"
এবার আমি আরও খুশি হয়ে ত্রিশ টাকা বকশিস দিলাম পিয়নকে

এরপর একমাস যায়
                    দু-মাস যায়
                           তিন মাস যায়

চিঠি আসে না

একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলাম‍‍‍‍—
আমার বালিশের পাশে একটা ফণা পাওয়া গেছে
আর আমার খাটের নীচে তৈরি হয়েছে বিরাট গর্ত

দূর থেকে সেই মোটা গোঁফওয়ালা পিয়ন সাইকেলে ক্রিং ক্রিং করে চলে যাচ্ছে‍‍‍‍—
                                                       আমাকে না দেখার ভান করে

আমি মরে গেছি

'আমি মরে গেছি'— এ-কথা
ডাঙা থেকে কুমিরকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না
সে বলতে লাগল: জলে এসো
আমি আমার শরীর নিয়ে জলে নামলাম
কুমির আমাকে ছুঁয়ে বলল: মিথ্যা, মিথ্যা
সারা শরীর কামড়ে দাগ বসিয়ে দিল
কিছুক্ষণ পর জলে ভেসে উঠলাম
এবার সত্যি সত্যি মরে গেছি ভেবে জলের গভীরে চলে গেল কুমির
এখন জলের উপর একা আমি বেঁচে আছি, ভেসে আছি
কাউকে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজনবোধ করছি না


ঘটনা

একটি ফুল আত্মহত্যার আগে
একটি ফলের কাছে দুঃপ্রকাশ করে
ফল, বীজের কাছে জানতে চায় সম্পূর্ণ ঘটনা!


জ্বর

সন্দেহ হলে জ্বর আসে
জ্বরের রং নীল

আমাদের শাদায় তৈরী দেওয়াল
ছোট্ট ঘুলঘুলি
কড়ি বরগা
লুপ্তপ্রায় চড়ুই
একে একে ঢুকে যায় থার্মোমিটারে

জ্বর বড়ো হয়
জ্বর কপালে টিপ পরে

জ্বর তার যোনিতে খুলে রাখে একটা থ্যাঁতলানো চোখ


আমি

আসবে জানলে দরজা খুলে রাখতাম

প্রয়োজন হল না।  একটা ঝুল জমা ঘুলঘুলিতে
হারিয়ে যাওয়া কোনো আদুরে চড়ুই
বারবার উচ্চস্বরে বলতে থাকে: একা হও, শক্ত হও
কোনো ধাতুর মতো

আলো জ্বলে ওঠে

দরজায় বসে জোনাকির মেহফিল

আর আমিই হয়ে উঠি এমনই হুজুর যার আল্লা ছাড়াও
একজন 'আমি' আছে

চিৎকারপুর

চিৎকার নিয়ে বেঁচে থাকা সহজ
চিৎকার ভুলে যে মানুষটি ময়ূরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে
মুখে পুরে নিল সাপ—
সে কোনোদিন হয়ত চিড়িয়াখানায় যায়নি


চিড়িয়াখানা থেকে ফিরে যে মানুষটি
ঠিক করেছিল প্রচণ্ড টক-ঝালের ফুচকা খাবে
সে গরম রসগোল্লার লোভে ঢুকে পড়ল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে
মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে দীর্ঘদিন ছানা নেই! কিছু ঝকঝকে বিড়ালের
তীব্র চিৎকারে সে পালিয়ে এল বাড়ি


মানুষটি বাড়ি ফিরতে চায়নি
ফিরে যখন এল, ভাবল: আর কোত্থাও যাবে না
কারো মুখ দেখব না
ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিল বাড়ি
বাড়িতে ইঁদুর ঢুকল
সে ইঁদুর মারল না, ত্রিপল সেলাই করল
পরপর আরও ইঁদুর ঢুকল
বিরক্ত হয়ে একদিন নিজেই খুলে ফেলল ত্রিপল
ততদিনে নেমে গেছে বর্ষা
সে আবার রওনা দিল—



1 টি মন্তব্য: