পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

জয়াশিস ঘোষ




"সৃজন " ব্লগজিনের এ সপ্তাহের কবি জয়াশিস ঘোষ৷তার +জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৬ শে জানুয়ারি। পেশায় সরকারী আধিকারিক। নেশা ঘুরে বেড়ানো ও লেখালেখি। তাঁর লেখায় বারেবারে উঠে আসে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষদের জীবনকথা। লেখা প্রকাশিত হয়েছে দেশ, কৃত্তিবাস, তবুও প্রয়াস, শুধু বিঘে দুই, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম, সৃষ্টি, কোলাজ সহ অনেক ম্যাগাজিন ও ওয়েবম্যাগে।

প্রকাশিত বই পাঁচটি। বৃষ্টি আসার আগে (নীলকন্ঠ প্রকাশনী), বৃষ্টি বাই লেন ( অপদার্থের আদ্যক্ষর ও গ্রন্থালোক) এবং চুল্লী (রংছুট প্রকাশনী) কবিতার বই। অপদার্থের আদ্যক্ষর থেকে কলকাতা বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয়েছে বিষয়ভিত্তিক গদ্যের বই 'ডার্ক চকোলেট ও অন্যান্য'। সৃষ্টিসুখ থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত 'বৃষ্টি বারোমাস' লেখকের প্রথম গল্পের বই।



আবহাওয়ার খবর


চলে যাওয়ার দিন বৃষ্টি আসবেই

একটা একগুঁয়ে কুকুর আপনার চৌকাঠে
বসে থাকবে। বিস্কুট দিলে আপনার দিকে তাকিয়ে
মুখ সরিয়ে নেবে

চলে যাওয়ার দিন খবরের কাগজওয়ালা বলবে
একটা লটারির টিকিট কাটবেন স্যার? বাড়িতে ছেলেটার
খুব অসুখ…

চলে যাওয়ার দিন আপনি অনেকক্ষণ ধরে
গাছে জল দেবেন। নতুন পাতায় হাত বুলিয়ে বলবেন
ভালো থাকিস

হারিয়ে যাওয়া কোন বন্ধু দুম করে মেসেজ পাঠাবে
পাশের বাড়ির যে মেয়েটিকে লুকিয়ে দেখেন
সে নারকেলের বড়া দিয়ে যাবে এক বাটি

পড়ে থাকা রেডিওটা সস্তায় বিক্রি করে দেওয়ার আগেই
অনেক দিনের মৌনতা ভেঙে
বলে উঠবে বিবিধ ভারতী

চলে যাওয়ার দিন খবরে বলবে
আবহাওয়া আগামী তিনদিন খারাপ থাকবে
                                 সমুদ্রে যাওয়া মানা...



খিচুড়ি


খিচুড়ি বসানোর আগেই বাসগুমটি নদী হয়ে গেল

কাজলদা ছুঁয়ে গেছে যেখানে
সেখানে এখন জেদী মেঘ। যেন টোকা পেলে
ঝরবে খিচুড়ির হাঁড়িতে

দূর থেকে রেলগাড়ির কু-ডাক আসে
মেঘ হাতে করে এক দৌড়ে জানালায়

খিচুড়ির হাঁড়ি থেকে ভাজা পেঁয়াজের গন্ধ লাগে
আপাদমস্তক ভিজে যায়

কিশোরীর কপালে শাঁখের দাগ

আজ এই ভীরুলগ্নে যদি কাজলদা আসে,
যদি ক্ষিদে পায়

সমস্ত সিঁড়ি ভেঙে ছুটে যাবে
             খিচুড়ি বেড়ে দেবে অঙ্কের খাতায়...




দর্জি

ফিরবো না আর -
এই বলে একটু দূরে নারকেল গাছের নীচে
বসে আছে বউটি। ভেঙে ফেলেছে কাচের চুড়ি
                        আধখাওয়া সিঁদুর

ঝড় আসবে জেনেও
মাঝিটি বসে আছে নৌকার পাশে
তারপিন তেল দিয়ে মুছে দিচ্ছে দাঁড়ের চোখ

ফিরতে ফিরতে দল থেকে একা হয়ে যাচ্ছে পাখি

অঙ্কের মাস্টার বসে আছে বাসস্টপে
যদি কিশোরী মেয়েটি বাড়ি ফেরার সময়
                        নামতা ভুলে যায়

আর এদের থেকে একটু দূরে
তুমি অপেক্ষা করছ একজন দর্জির

            যে ভুল বোতাম সেলাই করেছিল…
ইনটু দ্য ওয়াইল্ড


নদী পেরোনোর সময় মনে রেখো
ফেরার সময় জল বেড়ে যেতে পারে
সমস্ত ইতিহাস রেখে আসো নদীর ওপারে

এখানে শুধু ঘাসের দিন
একটি পরিত্যক্ত বাস, যার গায়ে মরিচের দাগ
শুকিয়ে আছে, গোপন ব্যথাটির মত

তোমার অপেক্ষায় কেউ নেই
কেউ ছিল না কোনদিন, শুধু
একমুঠো ধুলো আসার সময় বলেছিল

আর কিছু না নাও, বাঁশি নিয়ে যেও

এখানে ঘাসের বুকে অনন্ত সঙ্গীত ফুটেছে
সমস্ত পশুপাখি শিকার ভুলে শুনছে
               তোমার আশ্চর্য সুর

তোমার গায়ের চামড়া সবুজ হয়ে যাচ্ছে
চুল থেকে ঝুরি নামছে
চোখের পাতায় পিঁপড়ের সংসার

আজ থেকে অনেকদিন পরে যদি কেউ এসে
হাত রাখে তোমার কপালে

জানতেও পারবে না
মানুষ কতটা একা হলে গাছ হয়ে যায়..


জ্বর


প্রতিটি জ্বরের দিনে সমুদ্রপারে বসে থাকি

আবহাওয়া প্রতিকূল। সমুদ্রে যাওয়া মানা
তবু সংসার গুছিয়ে নেয় কতিপয় জেলে

একাকী শাঁখের গায়ে জ্বর
ফেরার অপেক্ষায়
             বালির হৃদয় খুঁড়ে ফেলে

আমি তার ঘুমের ভেতর ঢুকে পড়ি
আশ্চর্য আলো নেচে ওঠে ঢেউয়ের মাথায়
যেন খুঁজতে এসেছে এক দল ঘোড়সওয়ার

রাত জেগে লিখি ফুল ছিঁড়ে ফেলার কাহিনি

যে মেয়েটি বলেছিল যেদিন একা হবে, এসো

মনে পড়ে
             তাকে শাঁখের দাম দিতে পারিনি

দুঃখ


যে লোকটা ঈষৎ ঝুঁকে পেছন পেছন আসত
আমি তাকে দুঃখ বলে চিনি

লোকটার সাথে বনিবনা নেই। অথচ
মাছের বাজারে, অফিসের গেটে
যেখানেই দেখা হত
অসহ্য হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করত,
'ভালো আছ তো'?

এই তো সেদিন, হঠাৎই পেছন থেকে
কাঁধে হাত রেখেছে
হাত সরাতে গিয়ে দেখি আঠার মত এঁটে গেছে

তারপর তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি

সেই থেকে
দুঃখ বসে আছে পাশে কাঁধে হাত দিয়ে
                          হাসিমুখ


রচি মম ফাল্গুনী



চোখ ফেরাতে পারিনি

মিনিবাসে চলে গেছে বিকেল
দুটো ফিঙে জাপটাজাপটি করে
গুছিয়ে নিয়েছে সংসার

তার মধ্যে এক বিন্দু জল
স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে তোমার কপালে
যে আলো অন্ধ করে দেয়
আমি তার কাছে ঋণী

সে আলোয় দেখেছি তোমার
উপেক্ষা কতটা নরম হতে পারে
বৃষ্টি নামলে

উঠোনে জমেছে জল
আমার চোখের উপরে পা রেখে
হেঁটে যাও অতল
আশ্চর্য মিনিবাসের দিকে

চোখের কথা আর কে শুনেছে কোথায়
এক উঠোনে এত জল আটকে রাখা যায়!

৩টি মন্তব্য: