পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২১

জয়তী রায় মুনিয়া

                                



 মেজাজ হল আসল রাজা/ আমি রাজা নই। 



   মুডসুইং ... অতি পরিচিত শব্দ। যেহেতু, মানসিক সমস্যা সমাজের উচ্চ এবং মধ্যবিত্তের মধ্যে বেশি, তার  মানে এই নয় যে নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে দেখা যায় না। মেজাজের পারদ ওঠা নামা করে। এটাই হল, জীবনের চালাকি। মানুষের ক্ষমতা এত বেশি যে তারা সহজেই সব পেতে পারে। হয়ে উঠতে পারে ঈশ্বরসম। এইখানে তারা অসহায়। এই নিজের কাছে। নিজের মেজাজের কাছে। ইচ্ছে অনিচ্ছের কাছে। মুড ভালো রাখা, মুড কিভাবে সন্তুষ্ট হবে তার চেষ্টা করা এই একটি সূত্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে সমস্ত সৃষ্টি। পরিবার। সমাজ। বহু জঘন্য অপরাধ থেকে বহু সার্থক সৃষ্টি সম্পন্ন হচ্ছে মুড এর জন্যে। 

  কি এই মুড? কেন এর এত  দাপট? 

ডাক্তার বলবে এটা একটা অসুখ। এই ভালো আছি তো এই খারাপ। কেউ কেউ হালকা চালে বলে, আজকাল খুব মুডসুইং করছে। যেন এটা একটা খেলা। অনেকে বলে, ওগুলো বেশি হয় মেয়েদের মধ্যে। প্রচলিত কথা, ঋতুচক্রের সময়, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় , লিখতে বসলে, একঘেঁয়ে রান্নার কাজ করলে আরো নানান ব্যাপারে মেয়েদের মধ্যে বেশি হয় বলে ধারণা করা হয়। 

   সন্দেহ নেই, ঋতুকালীন সময় এবং গর্ভবতী অবস্থায় হরমোনের ওঠা পড়া খুব বেশি মাত্রায় হয়, মেজাজ খিটখিট করে। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আজকাল পুরুষদের মধ্যেও এই মুড সুইং কথাটা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলা হচ্ছে। 

মুড বা মেজাজ বা মন কেন দোল খাচ্ছে? কেন ব্যালান্স হারাচ্ছে? এর সুদূরপ্রসারী ফল নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়। 

কি ভয়ঙ্কর ক্ষতি সাধন করেছে কেউ বুঝতে পারছে না। এ যেন , বালির উপর রাজপ্রাসাদ তৈরি করছি আমরা। ভিত শক্ত হল না, অথচ এই করছি, সেই করছি। 

     ভারতবর্ষ এমন এক দেশ, বলা যায় একমাত্র দেশ, যেখানে প্রাচীন কাল থেকে মনের বিভিন্ন অবস্থার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমার বাবা বলতেন," আমরা অনেক প্ল্যান করি। এবার প্ল্যান মত কাজ হল না। ব্যর্থ হলাম। তখন কি হয়? মন খারাপ হয়। লাগাতার বলতে থাকি, প্রবলেম। প্রবলেম। মন খারাপ , মন খারাপ। সেই মন, যে আমাদের পাশে দাঁড়াবে, যে আমাদের প্রবলেম থেকে বেরিয়ে আসার সন্ধান দেবে, সে মন না কি খারাপ? তবে? 

বাবা বলতেন, প্রথমেই বাদ দাও প্রবলেম শব্দটা। বলো পরিস্থিতি। এবার দেখো। পরিস্থিতি খারাপ। লড়তে হবে। প্রবলেম শব্দ বারবার ব্যবহার করলে,মনের  ভাইব্রেশন নষ্ট হয়ে যায়। লড়াই করার শক্তি নষ্ট হয়। 

প্রাচীনকাল মানে পুরাণের কতগুলি গল্প নয়। শিক্ষা। কিভাবে ভালো থাকব, তার শিক্ষা। সেটা আলোচনা করার আগে,

এবার দেখা যাক, মুডসুইং কি কি নষ্ট করছে? 

 প্রতিদিনের বেঁচে থাকার শক্তি ক্ষয় করছে। এনার্জিস্তর কমিয়ে দিচ্ছে। এনার্জি কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকার রসদ। খুব ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে দিতে খিটখিট করে তুলছে।করে তুলছে  স্পর্শকাতর। চট করে দুঃখ পাচ্ছি। অমুকের একটা শব্দ একটা, তুচ্ছ তাকানো , একটু এদিক ওদিক ব্যবহার নষ্ট করে দিচ্ছে সারাটা দিন। রাগ হচ্ছে। অকারণ হতাশা আসছে। ভয় এবং কান্না। 

  আজকাল গুগল করলে সমাধান চলে আসবে নিমেষে। প্রায় সবগুলোই বাইরের প্রক্রিয়া। যেমন, ব্যায়াম করতে বলা হয়। কাজে ব্যস্ত , লোকের সঙ্গে মেলা মেশা,প্রাণায়াম ইত্যাদি। 

   মুশকিল হল, এগুলো করতে ইচ্ছেই তো করবে না। ইচ্ছের জমি না তৈরি করলে ফসল ফলবে কি করে? ধাপে ধাপে এগিয়ে চলতে হবে। মুডসুইং মোটেই একদিন হঠাৎ হয় না। 

কারণ থাকে। বেশির ভাগ কারণ লুকিয়ে থাকে অতীতের মধ্যে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ খুঁজে বার করতে হবে। প্রবলেম বলে কিছু নেই। পরিস্থিতি খারাপ। লড়তে হবে পরিস্থিতির সঙ্গে। সেটা পারবে শক্ত সবল মন। 

   থেরাপি::

১.অউম প্রতিদিন ১০ বার। করতেই হবে। 

২.আয়না থেরাপি দিনে একবার। 

৩.মৌন দিনে ২ মিনিট। 

৪.খাতায় লেখা সমস্যার কথা। 

 

    কেন যেতে হবে নিজের সমস্যার জন্য অন্যের কাছে? কেন তোড়জোড় করে শুরু করতে হবে রুটিন মেনে ধ্যান ইত্যাদি? মন নিরন্তর ডুবে থাকবে নিজের চেতন শুদ্ধ করার জন্য। যেমন , aquaguard  জল পরিশুদ্ধ করছে, তেমনি আমার মন করুক চিন্তা শুদ্ধ। সকাল থেকে সারাদিন পাচ্ছি। দেখি, পরিস্থিতি কোনদিকে যায়। খারাপ না ভালো? আছে শক্ত মন। করবে মোকাবিলা। একটাই কথা, বাবা বলতেন, প্ল্যান করো। পরিকল্পনা করো। কিন্তু দিনের কখন কি ঘটে যাবে, কেউ জানে না। কাজেই , সেই সঙ্গে এটাও ভাবতে হবে যদি প্ল্যান মত কাজ না হয়, তখন কি হবে? তখন মেজাজ খারাপ করব? আনন্দ নষ্ট করব? এনার্জি স্তর নামিয়ে দিয়ে নিজের ক্ষতি করব? ডাক্তারের কাছে দৌড়ে যাব? 

মুড নামক মহারাজকে মাথায় তুলতে নেই। মুড বা মেজাজ একটু এদিক হবেই। উপরের থেরাপি গুলো সাহায্য করবে, নিজের ভিতর শক্তি জাগ্রত করার। ফলে, বাইরের পরিস্থিতি যত খারাপ হোক, ভিতরের স্থিতি ঠিক থাকলে, লড়াই করার শক্তি জন্ম নেবেই। 

মুডসুইং এর গালভরা গুগল ব্যাখ্যায় না গিয়ে নিজেই বরং  গুগল হই অথবা মনের ডাক্তার হয়ে যাই। মেজাজের উপর কন্ট্রোল থাক আমার নিজের। শুনতে কঠিন হলেও খুব সহজ কিন্তু। চেষ্টা করে যাওয়া যাক। মন শক্ত হবেই। মুড তো দূরের কথা , সমস্ত প্রবলেম সমাধান করার শক্তি জেগে উঠবে। মেজাজ হোক প্রজা, আমি হই রাজা।

চিত্রঋণ- Thomas .S.Andro 





1 টি মন্তব্য: