পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                        



                মধ্যবয়স/ সাফল্যের সুনামি আগ্রাসন।


    আলোচিত বিষয় হল, মধ্যবয়স। মানব জীবনের সবচেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। 

    যুগ এখন অন্যরকমের। সাফল্য আগেও চাইত মানুষ কিন্তু এখন খিদে বেড়ে গেছে তীব্রভাবে। এই চাওয়া সর্বস্ব মানুষের মধ্যে যেটার অভাব সবচেয়ে বেশি, সেটা হল সুকুমার বৃত্তির। ছোট ছোট কোমল ভাব বিনষ্ট হচ্ছে। সাফল্য এলো তো আরো চাই। 

লাগাতার এমন দৌড়ে হাঁফিয়ে যায় জীবন। জীবনের মালিক সেটা বোঝে না। সে কষে ধরে থাকে লাগাম চালায় চাবুক। একদিন হঠাৎ ফুরিয়ে আসে এনার্জি। তখন গ্রাস করে একাকীত্ব। 

****

ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ শেষ কথা নয়। সফলতা শেষ কথা নয়। দেখতে হবে, কাজের পিছনে যতটুকু সময় দিচ্ছি নিজের জন্যে ততখানি দিচ্ছি কি না? 

অনেকেই ভাবেন, কাজটাই তার জীবন। কাজ করতে পারলে তিনি ভালো থাকবেন। খুব ভালো কথা। কিন্তু,  হিসেব  অনুযায়ী যদি না হয়? কোনো কারণে চলে যায় কাজের ক্ষমতা? তখন ? অবসাদের কালো মেঘ ঘিরে ধরবে আপনাকে। 

*******

 কাজ করুন। সাফল্যের স্বাদ নিন। সেই সঙ্গে বন্ধু বা বান্ধবীর সঙ্গে সম্পূর্ন অন্য স্বাদের কথা বলুন। মনে রাখতে হবে, হঠাৎ করে কেউ মানসিক রোগী হয় না। দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে জন্ম দেয় মানসিক অবসাদের। যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কু প্রভাব ফেলে। মধ্যবয়সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। কারণ শরীর এই সময় দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক নিয়ে চলে টানাপোড়েন। এইজন্য মনে রাখতে হবে, সাফল্য যেন সুনামি না হয়। প্রাণঘাতি না হয়। 

 মনে রাখতে হবে, সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনোটাই জীবনের চাইতে মূল্যবান নয়। আবেগকে গুরুত্ব দিন। গল্প করুন। সিনেমা যান। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ব্যালান্স এমন হোক যেন ব্যর্থতা এলে সহজে নিতে পারেন। খ্যাতি আজ আছে কাল নেই। কিন্তু আনন্দ? চিরস্থায়ী হোক। 

   নিয়মিত নিজেকে লক্ষ্য করুন।  কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে নেতিবাচক সিগন্যাল এলে সরে আসুন। নিজের ঘরের লোক হলে, সমস্যা একটু জটিল হয় তখন সাইকো থেরাপিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। মনের জোর বাড়িয়ে তুলুন। ওষুধ কাজ করে রাসায়নিক পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর। কাউন্সিলিং কাজ করে জ্ঞানীয় বিকাশ , আচরণ ও মনের গড়নের ওপর। 

*******

  মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। তার সঙ্গে মন উন্নত করতে বাধা কোথায়? উন্নত শক্তিশালী ঝকঝক মন সাহায্য করে ভালো কাজ করতে। 

 সুন্দর থাকুন। মন সুস্থ রাখুন।       


                   


যুগান্তর মিত্র

 



আলেকজান্ডারের স্বপ্ন 


হেফাস্টিয়ান! অ্যারিস্টটল হলেন মহান গ্রিক দার্শনিক। তাঁর বুদ্ধিমত্তা কী পরিমাণ আমি জানি। আমি তাঁর কাছে পাঠগ্রহণ করেছি। তিনি একজন অপরিচিতকে বিশ্বাস করবেন কী করে? তাকে আমিই যে পাঠিয়েছি, তেমন নিশ্চিত হবেন কী করে তিনি? ধরা যাক, আমি পাঠিয়েছি সেটুকু বিশ্বাস করলেন। কিন্তু তিনি মৌখিক যে পরামর্শ দেবেন বা পত্র দেবেন, সেটা যে আমার দূত শত্রুপক্ষকে জানিয়ে দেবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায়? তাই আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানেন, এই ছাত্রের পক্ষে তাঁর সংকেত বোঝা সম্ভব, কিন্তু সকলের পক্ষে নয়। এজন্যই তিনি আমার কাছে নমস্য ব্যক্তি। এই কারণেই আমি তাঁকে এতটা ভরসা করি হেফাস্টিয়ান! 
উজ্জ্বল হয়ে উঠল হেফাস্টিয়ানের মুখ। তিনি বলে উঠলেন, সত্যিই মহান  গুরু অ্যারিস্টটল। তাঁর বুদ্ধি ও কৌশলের কাছে আমরা নিতান্তই শিশু। তবে মহামান্য সম্রাট, আপনিও আমাদের মহান রাজা। ঠিক তাঁর কৌশল বুঝতে পেরেছেন। এমনি এমনি তো আর বিরাট ভূখণ্ডের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠেননি! এত দেশ জয়, এত রাজাদের বশ্যতা স্বীকার তো এমনি হয় না। আপনি বুদ্ধিমান এবং মহান। 
হেফাস্টিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে সম্রাট আলেকজান্ডার প্রবীণ সেনাপতিদের সরিয়ে দিলেন ক্ষমতা থেকে। বয়স্ক কয়েকজন সেনাকে বাহিনীর পেছনের সারিতে নিয়ে গেলেন। যারা সম্রাটকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের প্রাণদণ্ড দিলেন একে একে। আর এতেই কাজ হল।  
কিছুদিনের মধ্যেই সেনাবাহিনীতে  শৃঙ্খলা ফিরে এল। তরুণ সেনাধ্যক্ষরা খুশি মনে আর উদ্যমে কাজ শুরু করে দিলেন। এবার আলেকজান্ডার নিশ্চিন্ত। তাঁর স্বপ্ন ভারত অভিযান। সেই অধরা স্বপ্নের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।   
দিনাবসানের সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। আলেকজান্ডার তাঁবুতে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেও বন্ধু হেফাস্টিয়ান ছিলেন তাঁর সঙ্গে। এখন তিনি একা। দিনের আলো মুছে গিয়ে নেমে এল সন্ধ্যা। দ্বীপাধারে আলো জ্বেলে দিয়ে গেছে নির্দিষ্ট কাজের লোক। আকাশে লক্ষ কোটি তারা ফুটে উঠে ঝলমল করছে। সেদিকে তাকিয়ে আছেন সম্রাট। কিছুক্ষণ বাদে এসে দাঁড়ালেন তাঁবুর বাইরে।  
রোক্সানেকে তাঁর কাছে আসার জন্য খবর পাঠিয়েছিলেন। সডগিয়ার ব্যারণের কন্যা রোক্সানে। অপূর্ব তাঁর শ্রী। প্রথম দেখাতেই আলেকজান্ডার মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁকেই বিবাহ করেছেন তিনি। রোক্সানে যখন মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান, আলেকজান্ডারের সমস্ত ক্লান্তি কেটে যায়। অদ্ভুত এক মাদকতায় ভরে যায় তাঁর মনপ্রাণ। 
এবার ভারত জয় করতে পারলেই তাঁর যুদ্ধ অভিযানের সমাপ্তি ঘটবে। তিনি ফিরে যাবেন নিজের দেশে, ম্যাসিডোনয়ায়। সেখানে গিয়ে রোক্সানের সঙ্গে শুরু হবে তাঁর নতুন জীবন। 
পিছন ফিরে দেখতে পেলেন রোক্সানে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। আলেকজান্ডার তাঁর জন্য অপেক্ষা না-করে নিজেই এগিয়ে গেলেন কাছে। আগামীকালই ভারত অভিযানে যাত্রা করবেন। দু-হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রেয়সীর দিকে। যে ঝলমলে তারাগুলো তিনি একটু আগে দেখছিলেন আকাশের কালো চাদরের গায়ে আঁকা আছে, সেই তারাগুলোই যেন রোক্সানের চোখেমুখে ঝলসে উঠছে। মুগ্ধ হয়ে সেই ঝিকিমিকি তারা দেখতে থাকলেন রাজা আলেকজান্ডার। ভারত অভিযানের পূর্বরাত্রে তাঁর মন খুশিতে নেচে উঠল।
( সমাপ্ত)

সুজয় যশ

                                       


এই সংখ্যার কবি সুজয় যশ।  হৈড়গ্রাম, হাটগোবিন্দপুর, বর্ধমানের  নিবাসী । 

[১]
' বৃহন্নলা '
-----------------

সারারাত গর্ভদ্বার পাহারায় সময়!
তবু ভোরের আলোয়,
জন্ম নিল বৃহন্নলা ।
সমাজ মুখ ফিরিয়ে ধৃতরাষ্ট্র ।

প্রত্যেকটা সূর্য ঘড়ির কালো ছায়া
শুধু বয়স বাড়িয়ে তোলে।
রোজ , নিজের উলঙ্গ শরীর ছুঁয়ে
মানুষের অসম্পূর্ণ সংঞ্জা খোঁজে ।

গলায় রক্ত দলা পাকায়---
চিৎকার করে বলা হয়ে ওঠে না ---
' আমি নারী থেকে পুরুষ ---
পুরুষ থেকে নারী---
তথাকথিত সমাজবৃক্ষে, আমিও মানুষ ' !

চারদেওয়ালে বন্দি পৃথিবী---
ধূসর মাটি, চোখের কোণে---
শূন্যে ভালোবাসা খোঁজে নীল শিরা।

সব পুরুষ নারী খোঁজে ---
নারী খুঁজে চলে পুরুষ ---
প্রেম খোঁজে না কেউ,
ভালোবাসা দেখে না কেউ----
বৃহন্নলার চোখে !

জোর করে আইন জন্ম নেয়---
অধিকার চেপে বসে সমাজে।
মাটি তবু ধূসর,  ক্লান্ত!
সমাজ হেসে চলে মুখ টিপে---
মানুষের চামড়া গলে রক্তের সাথে ।

একদিন প্রেম আসে হামাগুড়ি দিয়ে,
ভালোবাসা ফিরে আসে ছোট্ট আঙুল ধরে।
শিশু মন হাত রাখে গালে ---
চুমু খায় চোখে---
শিহরনে চোখ খোলে, বৃহন্নলা !

হাজার হাজার শিশু
এগিয়ে আসছে মানুষ হয়ে---
যৌনাঙ্গ হীন সবুজ সমাজে।

বৃহন্নলার শরীর জুড়ে
মানুষের গন্ধ !




[২]
' কবি সম্মেলন '

-------------------------

সারা রাত বুকে বালিশ চেপে
একটা কবিতা লিখলাম,
' মানুষের ইতিহাস ' !
খোলা মাঠে কবি সম্মেলন----
অনেক বাহবা,  হাততালি ।
শেষ ভিড়ে
উঠল, একটা শীর্ণ হাত---
বলে গেলো----
" তোমার কবিতা, আমায় ভাত দিতে পারল না " !

হাততালি গুলো
আমার পাঁজর গুড়ো করে ফেলল।
পাণ্ডুলিপি জুড়ে
আমার গুড়ো হাড়ের গন্ধ !

এখন আমি
কবিতা রান্না করি।
ভাত ফোটাই
আমার পাণ্ডুলিপির আগুনে ।
শুধু অপেক্ষায় আছি
পরবর্তী কবি সম্মেলনের ।





[৩]
' অনুভূতি '
-------------------

তোমার আদর গুলো
ছায়ার মত, শরীর জুড়ে হাঁটে ।
সেই লজ্জা নুপুর
সকাল থেকে, আলতা পায়ে ছোটে।

বড় ইচ্ছে করে
এক পোশাকে, দোলনামাখা চোখে----
তোমার ইচ্ছে ডানা
এক বিকেলে, হলদে পাখির বুকে ।

তোমার আগুন শরীর
লতার মত, কামড়ে ধরে চোখ।
দেখি বৃষ্টি ভেজা জলনুপুরে
নদীর গোপন স্রোত ।

তুমি উড়তে পারো
বুক আকাশে, রঙিন ঘুড়ির মত।
আমি শিকড় জুড়ে
তোমার বুকে, লিখব গল্প যত।

তুমি চুপটি করে
শাড়ির খুঁটে, আমায় বেঁধে রেখো।
বুনো লতার মত
জঙ্গলী ফুলে,ছায়ার মতোই থেকো।




[৪]
' কি হবে '
---------------

কি হবে,
যদি একমুঠো মাটি ছিঁড়ে নিই
তোমার হৃদপিন্ড থেকে!
যদি ভুলে যাই ,জরায়ু উপড়ে
আর একটা মাংসপিন্ড গিলে খেতে!

কি হবে
যদি মেঘের পালক ছিঁড়ে
তোমাদের আকাশ সাজাই!
গাছের দম বন্ধ করে
আর একটা কৃত্রিম ফুসফুস বানাই!

কি হবে
যদি সব নদী মোহনা ভুলে
ফিরে যায় উৎসের সন্ধানে!
যদি শহরের গলি জুড়ে
রাশি রাশি ক্যাকটাস জেগে ওঠে!

কি হবে
যদি একদিন সব শরীর
আগাছার প্রেমে পড়ে!
সঙ্গম ভুলতে থাকে
উদ্ভিদের শিকড় উপড়ে নেওয়া মাটি!

আমরা জরায়ু পাল্টে নেব তখন !
কিছু ভাঙাচোরা দিন
মুছে নেব পকেট রুমালে।

কই কিছুই তো হলো না এখনো!



[৫]

' রাস্তা '
----------------

ঢেউ আছড়ে পরার আগেই
শুকিয়ে নুন গুঁড়ি!
লবণাক্ত রক্ত থমকে
গতি হারানোর ভয়ে ।
ফিরে আসার অঙ্গীকার বুকে
জঙ্গলের ওপারে নূপুরের শব্দ ক্ষীণ------
কালো বেড়াল রাস্তা আগলে বসে,
রাস্তা পাল্টায় নদী ------
ঝাউবনে নূপুরের শব্দ!




[৬]
' স্বপ্নের রাত '
---------------------

বাইপাস ছুঁয়ে
ছুটে চলে আমার স্বপ্নের রাত,
বুকের টানেল ভেঙে
কুয়াশার মতো বাড়ে নিঃস্ব ইচ্ছে ।
জড়াজড়ি সিগন্যাল
ছুঁয়ে দেখে ছায়ার রাস্তা,
রাতের অনুভূতি
খুলে নেয় অবিনশ্বর মন।
ভালোবাসা বাড়ছে
নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে ,
অন্ধকার এখনো
আমার নিঃসঙ্গতার প্রেম মেখে।

আগুন মেখেছে সোহাগের রাত,
গোটা বাইপাসে আমার গুড়ো !
ভালোবাসার আগুনে
বাইপাস জুড়ে গলে বিটুমেন,
আগুন মাখে
আমার বুকের পুরনো বরফ!





[৭]

' অবৈধ '
-----------------

ক্লান্ত চোখ আদর খোঁজে ,
ঘুমের শরীরের অবৈধ গন্ধ
নিজেকে বিবস্ত্র করে !

ওবেলার বাসি ভাতের গন্ধ
খিদের ঠোঁটে চুমু খায়,
খিদের শরীর কামুক হয়ে ওঠে
পর পুরুষের ছোঁয়ায় ।

মুখের সামনে আধঢাকা শরীরে, বৌ
প্রেম মাখিয়ে দিচ্ছে বাসি ভাতে ।
শরীরে লেপ্টে থাকা ক্লান্তি, পরকীয়া চোখে
ওদের নির্লজ্জ প্রেম দেখে ।

আঙুল কে আস্কারা দেয় মন,
আদর মেখে ভাগ করে খায়
বাসি ভাতের প্রেম!
ক্লান্তি মুখ লুকোয় সতিনের অস্থির জঠরে।

ক্লান্ত চোখ আদর খোঁজে
ঘুমের স্তনবৃন্তে ,
আধখোলা শরীরে ওরা , সারারাত !






[৮]

' সোনালী মাটি '
---------------------------

(ক)
পাথর ভাঙতে ভাঙতে
খুঁজে পাওয়া গেল সোনালী মাটি,
সহস্র যোজন দূরে
খড় কুটোয় পোড়া মাটির পাহাড়ে।
বুনো আগাছায় ঢাকা জিভ,
পাহাড়ের নুন চেটে, বুঝতে চাইছে
জীবন পোড়ার গন্ধ!

(খ)
এবার বুড়িটা ঠিক মরবে !
কেউ  ভাবতেই পারেনি
রাস্তা পার হওয়া বাচ্চাটাকে
এক হেচকায় ফেলে দিয়ে -----
বুড়ি নিজেই পার হবে,
সোনালী মাটির খোঁজে , অন্ধকারে!

(গ)
ভালোবাসার সব এঁটো ধুয়ে,
আদিম হওয়ার লোভে
পাথর ভাঙতে রাজি সবাই ।
সোনালী মাটি উধাও!
বুড়িটা পৌছে গেছে পাহাড়ের চূড়ায়।

(ঘ)
বুড়ির পাকা চুলে কালবৈশাখী ,
নিজেকে গুড়ো করে হাসছে
শুক্ন হাড়কঙ্কাল বুড়ি!
হাওয়ায় উড়ছে সোনালী মাটি,
বুড়ি নিঃস্ব!

(ঙ)
পাহাড়ের নিচে উলঙ্গ হচ্ছে মানুষ
জিভের আগাছা মাড়িয়ে
এবার নতুন খেলা,
বুড়ি ছোঁয়া!





[৯]

' ব্ল্যাক ক্রমোজোম '
---------------------------

আমার চোখের নোনা দেওয়ালে,
বৃষ্টিরা আজ মুখচোরা ।
আমার আঙুল নীল লিটমাস,
স্মৃতির পাতায় আনকোরা ।
আমার শাখায় গুড়ো ক্যাকটাস
শিকড় কাটে মাঝরাতে।
আমার পৃথিবী অনেক পুরনো
শৈশব খোঁজে কার সাথে?

তোমার জানলা চোখ বুজে আছে
বৃষ্টি আগলে বারান্দায় ।
তোমার দু চোখে লাল লিটমাস
স্মৃতিরা কাঁদছে একলা হায়!
তোমার কবিতা জ্বলছে ধোঁয়ায়
মাটি হারিয়েছে ক্রমোজোম ।
তোমার পৃথিবী কংক্রিট ঘেরা
বিষের প্যাকেটে মাইক্রোজোম।

আমার পকেটে ডি এন এ ঠাসা
তোমার মুঠোর অপেক্ষায় ।
পাটিগণিতের শতকরা মেপে
মাটির পৃথিবী উপেক্ষায়।

সূর্যের কুঁড়ি
ভোর রাতে ফোটে।
তবুও পৃথিবী
রোজ কেঁদে ওঠে।
------------------- @@ ----------------


[১০]

' ঈশ্বরী '
--------------------

তোমার মনের ভেতর,
আমি শিশুর মতো ঘুমিয়ে ।
তুমি আঁচল ছোঁয়ালে,
নিদারুণ ভালোবেসে,  লুকিয়ে ।

আমার রুগ্ন মন,
তোমার চুলের গন্ধে সবুজ।
তুমি বৃষ্টি ভেজালে,
আমার আকাশ এখনো অবুঝ ।

তোমার বাগান জুড়ে,
অবুঝ খেয়াল হেসে ওঠে।
তুমি গাছ হয়ে ওঠো,
আমার অসুখ করা ঠোঁটে ।

তোমার বাকলে দেখি,
আমায় জড়িয়ে রাখা দাগ।
তুমি হয়ে ওঠো, ঈশ্বরী------
ঈশ্বর নতজানু,  নির্বাক!








রবিবার, ২১ মার্চ, ২০২১

যুগান্তর মিত্র

                                                        


আলেকজান্ডারের স্বপ্ন


 

  তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। শুধুমাত্র আমি যা যা করলাম সেটুকুই দয়া করে সবিস্তারে জানিও। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমাদের রাজা। এবার তুমি এসো। ক্ষুব্ধকণ্ঠে বললেন অ্যারিস্টটল।হতাশ হেরাস সম্রাটের গুরুর মাথার ব্যামো আছে নিশ্চিত হয়ে ঘোড়ার পিঠে গিয়ে উঠল।

(৩)

আলেকজান্ডারের কাছে এসে আধোবদনে দাঁড়াল হেরাস। ম্যাসিডোনিয়ার বীর রাজা তাকে দেখে খুশি হয়ে উঠলেন। এবার সহজেই সংকট নিরসন করা যাবে। ভাবলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরামর্শ দিলেন গুরুদেব?

আলেকজান্ডারের দিকে একবার তাকিয়েই মুখ নামিয়ে নিল হেরাস। ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল, আমাকে মার্জনা করবেন মহারাজ! আমি কোনও পরামর্শ আনতে পারিনি তাঁর থেকে!

তাঁর সঙ্গে কি তোমার দেখা হয়নি?  তিনি কি এখন এথেন্সে নেই?

দেখা হয়েছে মহারাজ। উনি আমার সবকথা শুনলেন মন দিয়ে। কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও মতামত দিলেন না!

আজ তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত জেনে কুঁকড়ে রইল হেরাস।

আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছ! এত বড় স্পর্ধা তোমার? 

বিশ্বাস করুন মহামান্য! উনি সত্যিই কোনও পরামর্শ দেননি। আমার কথা শোনার পরেও ওনার কাণ্ডকারখানা দেখে আমি অবাক হচ্ছিলাম। শেষে বললেন, আমি যা যা করেছি সেটাই বোলো তোমাদের রাজাকে। তাহলে সে বুঝতে পারবে।

গুরুদেবও কি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মেলালেন! ভাবলেন আলেকজান্ডার। নাকি আমাকে মিথ্যে কথা বলছে এই সেনা? গুরুদেবের সুপরামর্শ হয়তো জানিয়ে এসেছে আমার শত্রুপক্ষকে! মাথা গরম হয়ে উঠছে তাঁর। তবু বিচলিত না-হয়ে জানতে চাইলেন, গুরুদেব ঠিক কী কী করছিলেন আমাকে খুলে বলো।

এবার পূর্ণ চোখে তাকাল হেরাস। অবধারিত মৃত্যুর হাতছানি এগিয়ে আসছে তার দিকে বুঝতে পেরেছে সে। তবু গুরুদেবের সমস্ত কাণ্ডকারখানা সে বিস্তারিত জানাল।

প্রথমদিকে আলেকজান্ডার কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। পরে যখন বুঝতে পারলেন গুরুর ইঙ্গিত, তখন তাঁর মুখে ফুটে উঠল হাসি। বললেন, আমি বুঝেছি গুরুদেব কী বলতে চেয়েছেন। দীর্ঘ পথশ্রমে তুমি ক্লান্ত। এখন বিশ্রাম নাও। তার আগে সেফাস্টিয়ানকে একবার ডেকে দিও।

এসবের বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারল না হেরাস। মহারাজ মৃত্যুদণ্ডের বদলে তাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, এতেই তার ধড়ে প্রাণ ফিরে এল। দ্রুত সে সম্রাটের সামনে থেকে সরে গেল।

প্রায় ছুটতে ছুটতে হেফাস্টিয়ান চলে এলেন সম্রাটের কাছে। এসেই জানতে চাইলেন, কী সংবাদ এনেছে হেরাস। আমি জানতে চেয়েছিলাম মহারাজ। কিন্তু ও কিছুই না-বলে চলে গেল। এতটা বেয়াদবি তো করার কথা নয়! এই সেনাকে হেফাস্টিয়ানই নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। তাই উদ্বিগ্নতা তাঁকে ঘিরে রেখেছে।

আলেকজান্ডারের চোখমুখ থেকে ঝরে পড়ছে আলো। তিনি বললেন, হেরাস তোমাকে কী আর বলবে! ও নিজেই তো জানে না গুরু অ্যারিস্টটল কী নির্দেশনা পাঠিয়েছেন।

সম্রাটের কথাটা কেমন যেন হেঁয়ালির মতো মনে হল হেফাস্টিয়ানের কাছে। যে লোকটা নির্দেশ বয়ে নিয়ে এল, সে নিজেই জানে না! এ আবার কেমন কথা! সংশয় নিয়ে বললেন, আমাকে সব খুলে বলুন মহারাজ। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আলেকজান্ডার অ্যারিস্টটলের ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ গুছিয়ে বললেন হেফাস্টিয়ানকে। কিন্তু তাঁর মাথায় কিছুই ঢুকল না। জিজ্ঞাসা করলেন, এমন অদ্ভুত আচরণের মানে কী সম্রাট?

গুরুদেব বোঝাতে চাইলেন বৃদ্ধ সেনাপতি আর সৈন্যদের অব্যাহতি দিতে, যাতে তরুণরা দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। তাই তিনি গাছের বড় বড় কয়েকটা ডাল ছেঁটে দিয়েছিলেন।

আর হলুদ ডালগুলো? জানতে চাইলেন হেফাস্টিয়ান। তখনও তাঁর ঘোর কাটেনি।

হলুদ ডালপালা কাটার অর্থ হল যারা কমজোরি, বা যুদ্ধের ব্যাপারে অনাগ্রহী, তাদের যুদ্ধের আয়োজন থেকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। কেটে ফেলা ডালপালাগুলো মাটিতে পুঁতে দেওয়ার মানে কী জানো হেফাস্টিয়ান? এর অর্থ শত্রুদের এদের নিশ্চিহ্ন করে দাও।

কিন্তু মহারাজ, গুরুদেব তো খোলাখুলিই বলতে পারতেন দূতের কাছে। অন্তত একটা পত্র লিখে জানিয়ে দিতে পারতেন!

 

(ক্রমশ:)

চিত্র- অন্তর্জাল 

 



\

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                                       




বাক্য ও জীবন

বাক্য  কয়েকটি শব্দের সমষ্টি। অথবা একটি মাত্র শব্দও বাক্য হতে পারে। মানুষের মনের ভাব প্রকাশ বাক্যের সাহায্যেই সম্পূর্ণ হয়। মনের ভাব--অর্থাৎ মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ফুটে ওঠে বাক্যের মাধ্যমে। 


মন দেখা যায়না। স্পর্শ করা যায়না। অথচ মন হল সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকট ইন্দ্রিয়। শরীর নানা ভাবে তুলে ধরে মনের ভাব। বাক্য তার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। 


বাক্য দুরকম। উচ্চারিত আর অনুচ্চারিত। জীবনের ষাট ভাগ হল অনুচ্চারিত বাক্য। বেশিরভাগ কথা মানুষ ভিতরে রাখে। আর যেগুলো বলে সেগুলোও অনেক সময় সেটা বাদ দিয়ে বলে , যেটা সে বলতে চায়। 


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্থ বহু পরিবার কথা হারিয়ে ফেলেছিল। বাংলাদেশে থাকাকালীন রাশভারী ছিলেন, অথচ কলকাতা এসে হয়ে উঠলেন তোষামুদে , অকারণ হ্যা হ্যা করা মানুষ। ভিতরের কষ্টের কথা ক্ষতের কথা বলতে না পেরে হয়ে উঠছেন অবিন্যস্ত। 


রেপড হওয়া চোদ্দ বছরের এক মেয়ে এসেছিল আমার কাছে। ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকা শুধু। শরীরের চাইতে মন হয়েছিল অনেক বেশি রক্তাক্ত। তখন তার নিরাময় নির্ভর করছিল স্বাভাবিক কথা বলার উপর। সেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার লড়াই সহজ ছিল না।


 আমার কাজ হল--how to motivate our daily life----অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন পাঁচপাঁচির জীবন ছোট ছোট সমস্যার কাঁকড়ে আক্রান্ত হয়। আমরা পাত্তা দি না। অথবা দেখেও ভান করি না দেখার। অবশেষে সেই কাঁকর জমতে জমতে পাহাড়। তখন ছোট মনের ডাক্তারের কাছে। গেলো একগাদা ওষুধ। 


    একটা দিন আসলে একটা জীবন। কেন? ভাবলে দেখা যায়, ভোর বেলার আমি, বেলা বারোটার আমি, বিকেলের আমি, রাতের আমি--মানুষ এক--চরিত্র আলাদা। প্রত্যেক সময় ভাবনা বদলেছে, মন পাল্টেছে, কথা বদলে গেছে। এবং লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ঘরের বাতাবরণ পরিবর্তন হচ্ছে। কাজের মহিলা এল না? অফিসে বস ক্ষেপে গেল; ফেসবুক লাইক কমেন্ট কম দিল; বন্ধু চ্যাটে এল না--হরেক কিসিমের সমস্যা, মাথা গরম।গরম মাথা নিয়েও মুখে হাসি রাখতে হয়। মন ভাবছে এক, মুখ বলছে আর এক। 


  সবাই বলবে, এগুলো তো পার্ট অফ লাইফ। তাই কি? এত সহজ সমাধান হলে আজ মনের ডাক্তারের চেম্বারে এত ভীড় হত না। 


   মনে, রোজ রোজ জমা হচ্ছে হাজার অভিযোগ। বেশিরভাগ অকারণ। মনের ডাস্টবিন উপচে পড়ছে। বাক্যর ঝাড়ু পারে সেগুলো ঝেঁটিয়ে তুলে ফেলতে। কিন্তু সে বলবে না। ভাববে কিন্তু বলবে না। লোক বলবে বলা যায়না সবসময়। কিন্তু, ভাবাও তো বলা। 


 --অমুক খুব পাজি। খুব সুবিধাবাদী। একদম সহ্য হয়না --এমন ভাবনা কিন্তু ক্ষতি করছে নিজের। তারচেয়ে চোখ কান বুজে বলে ফেলা অনেক ভালো। হয়ত দেখা গেল, ভাবনা ছিল ভুল। দুঃখের কথা এই, এমন ভুল ভাবনা বহন করে চলতে পছন্দ করে মানুষ।


নদীর তলা ক্ষয়ে ক্ষয়ে জীবন শেষ হয়ে যায় এক সময়। রোজকার জীবন সুন্দর রাখতে হলে একটা দিনকে লক্ষ করতে হবে ভালো করে। দেখা যাবে,ভোর থেকে রাতের পরিক্রমায় কথার বিশেষ ভূমিকা আছে। 


বহু সমস্যা পারস্পরিক কথা বলাবলিতে কেটে যায়। মনে রাখতে হবে, কোনো সম্পর্ক অনর্থক নয়। সাধারণ জীবনে একে অন্যের সঙ্গে সুন্দর সহাবস্থানের অপর নাম হল জীবন। বাক্যকে সঠিক উপায়ে মধ্যস্থতা করতে ডাকলে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে উকিলের দরকার পড়বে কম। 


 আমরা কি চাই? আমরা ঠিক কি বলতে চাই? সেটা ডাক্তার হোক বা উকিল--সে ভালো বুঝবে না আমি নিজে বুঝব? আমার অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব অন্য লোকের হবে কেন? নিজের অবস্থান নিজেকেই তো ঠিক করতে হবে। 


  বাক্য সংকট ত্রাতা। মনের জমে ওঠা আবেগ মাইক হাতে নিয়ে না বলতে পারলেও, নিজের কাছের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিন। অনেক শান্তি লাগবে। ঘরের ভারি বাতাস হালকা হয়ে উঠবে। ঘুমের ওষুধ ছাড়াই হয়ত এসে যাবে প্রশান্তির ঘুম।।


                                                           


সাত্যকি

                                                          



এই সপ্তাহের কবি  সাত্যকি৷

প্রথম কবিতা প্রকাশ ২০১৮ সালে, শব্দহরিণ পত্রিকায়।প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি পত্রিকায়I পরবর্তীতে কবিকথা , কাগজের ঠোঙা , বিবস্বান , কাল্ধবনি , ষোলোআনা , নৌকা , সাগ্নিক , আকর, দক্ষিণের জানালা, পরবাস, পদক্ষেপ প্রভৃতি। পেশাগতভাবে কবিতা না লিখলেও, ধারাবাহিকভাবে চলছে  কবিতা লেখা।

প্রথম গল্প প্রকাশিত হয় মুখর পত্রিকায় ২০১৯।এছাড়া, কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গল্প ও অণুগল্প।

 


একটা দিনের খবর

 

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের বাইরে হাত রাখলে গরম অনুভূত হয়

রোজ কথাদের মাঝ থেকে শব্দকে আলাদা করতে করতে ফিকে

হয়ে গেছে নাম শীত হারিয়ে বসে আছি রৌদ্র দগ্ধ উঠোনে বাকি

যা সব রেলের লাইনের মত সমান্তরাল তবুও এখানে ভেসে আসে

নিয়ম তাড়িতের মত শব্দ ভিজিয়ে দিয়ে যায় রৌদ্র দগ্ধ শরীর

জুড়ে মেঘ কুয়াশার অবাধ অস্তিত্ব যাপন... 


একান্তে যা বলা গেল

 

অনেক সংজ্ঞা ও উদাহরণ নিয়ে আমরা ঘুরে বেড়াই

কে জানে কোনটা কখন দরকারে লেগে যাবে

তাই ব্যাগে ঠেসে ঠেসে ভরে নেওয়া

আমার আমির প্রতি কর্তব্যের কথা মনে পড়ে

প্রত্যেকের সমানে যথাযথ তুলে ধরা

খানিকটা বাড়িয়ে হলে বেশ

 

এসবেরই মধ্যে ধরো,

             আমি যদি সব নিয়ে বিস্মৃত প্রায় হই

কেমন হবে

 

সেদিনও কী এভাবেই জাপটে ধরে রাখবে আমার হাত

সেদিনও দেখব তোমার চোখের নীল কক্ষপথে আমার ছায়া... 

                                                   

পাশে এসে দাঁড়ায়

 

সমস্ত আবেগ উৎকণ্ঠা কল্পনা অনুমান 

সাদা পৃষ্ঠার গায়ে ঢেলে ফেলার পর

বাকি থাকে অনুদান

 

উপার্জন হীন

গুড়ো মশলা দুপুরগুলো পাশে এসে দাঁড়ায় 


বদলে যায়

একটা ট্রেন এসে থামছে আর

হুড়মুড় করে লোক নামছে

ঠেলাঠেলি করে লোক উঠছেও

ট্রেন থামার আগের চিত্রপট বদলে যাচ্ছে

চিত্রপট এভাবেই বদলে যায় প্রতিনিয়ত



উপর্যুপরি

 

উপর্যুপরি আমিও ভর্তুকি দিয়ে যাই

প্রত্যেক দুপুরের মাছের ঝোল

বদলে পাই

 

গ্রানাইট হীন কাঠ পেন্সিল

খয়েরি খবরের কাগজ

বোতাম ছেঁড়া জামা

আর অজস্র শব্দ সমুদ্র

 

যারা চড়চড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে তালুর রেখা ধরে...


স্বপ্ন পোঁতা থাকে

 

 

দরমার চার দেওয়াল থেকে ঝর্না তলায় স্নান

এক বিরাট পথ বেয়ে চলা

ক্রমাগত অনুভূতির বেষ্টনের আবহে আটক হওয়া

 

আমি দেখে দেখে ফিরে যাই

আমার টালির কামরায়

 

তবুও তো কারো কারো ছ্যাঁকা লাগে

সবার ভিতরে একটা ঝর্না তলার স্বপ্ন পোঁতা থাকে...


ভ্রম

 

রবীন্দ্র সদন যাব বলে যখন এলিয়ট পার্কের কাছে দাঁড়িয়ে আছি

লাল লাইটে একদিকের যান চলাচল স্তব্ধ

তখন দ্বিধাবিভক্ত আমি কোন পথ ধরে যাব

ভাবতে ভাবতে এক পথের রাশ আলগা হয়ে আরেক পথ আগলে ধরেছে

 

এ-পথ ও-পথ করতে করতে যখন একটা পথ নির্বাচন করলাম

দেখলাম রবীন্দ্র সদন ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা চলে এসেছি ভবানী পুরের দিকে... 


ভালোবাসার স্মৃতি...

 

 

কয়েকটা আসবাব মেলানো মেশানো জীবন দুটি ভালোবাসার মুখ ক্রুশ কাঁটায় বুনছে শীত পোশাক একাকী চলে যাওয়ার আগের স্টেশনে একাকীত্ব উপভোগ করা আনন্দ হুল্লোড় অপরিচিত মানুষের ভিড় থেকে নিরিবিলিতে সমস্ত বাধ্যবাধকতা ছেড়ে এখানে শেষ দিনগুলোকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া এমনভাবেই কয়েকটা শীত পার হবে বসন্ত দিন আসবে হেমন্তের পাতা ঝরা ঘষঘষানি শব্দের ভিতর বিকেলগুলোকে শুধু দেখে যাওয়া স্মৃতির খেলাঘরে উলটপালট হাওয়া আর থেকে যাবে ভালোবাসার স্মৃতি...


অধিকন্তু একটা মৃত্যুর পর

 

লাশ কাটা ঘরে পড়ে আছে

দেহের মাঝে শুয়ে আছে একটা 

শুকনো নিম ফলের মত মন

যা কারো নজরে পড়বে না

মাথার চুল হাতের নখ গায়ের লোম

কোথাও  জমবে না কুয়াশার ছাপ

আজ আর ঝেঁপে বৃষ্টি হবে না!



একটা দিনের খবর

 

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরের বাইরে হাত রাখলে গরম অনুভূত হয়

রোজ কথাদের মাঝ থেকে শব্দকে আলাদা করতে করতে ফিকে

হয়ে গেছে নাম শীত হারিয়ে বসে আছি রৌদ্র দগ্ধ উঠোনে বাকি

যা সব রেলের লাইনের মত সমান্তরাল তবুও এখানে ভেসে আসে

নিয়ম তাড়িতের মত শব্দ ভিজিয়ে দিয়ে যায় রৌদ্র দগ্ধ শরীর

জুড়ে মেঘ কুয়াশার অবাধ অস্তিত্ব যাপন... 


রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

 




মধ্যবয়স/ মুড সুইং/ আধ্যাত্মিক দিক।


  আধ্যাত্মিকতা কথাটা খটোমটো। ইংলিশ সহজ। স্পিরিচুয়ালটি। spirituality.এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সংযোগ নেই। অর্থাৎ ধার্মিক লোক স্পিরিচুয়াল হতে পারে কিন্তু স্পিরিচুয়াল ব্যক্তিকে ধার্মিক হতে হবে না। 

  মধ্য বয়স আলোচনা করতে গিয়ে আধ্যাত্মিকতা কেন এলো , সেটা বোঝাতে গেলে, বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। 

ধৃ + মন = ধর্ম। ধৃ মানে হল ধারণ বা গ্রহণ করা আর মন হল অন্তর , আত্মা পরমাত্মা। তাহলে, ধর্মের অর্থ হল , মন যাহাকে গ্রহণ করে শান্তি লাভ করে। 

এখন ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রদায় কেন্দ্রিক। বৃহৎ অর্থ হারিয়ে গেছে। মধ্যবয়সে পৌঁছে মানুষের মন টাল মাটাল হতে থাকে। শরীর এবং মন উভয় দিকেই পরিবর্তন আসতে থাকে। পুরনো দিনের কথা বড় বেশি করে গ্রাস করে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, লেখক লেখিকা মধ্যবয়সে পৌঁছে অতীত চারণ করেন বেশি। পুরানো সেই দিনের কথা... আক্রান্ত করে। কলেজ লাইফের দুরন্ত জীবন...খুব মনে পড়ে। এইরকম একটা সময়ে বেশ অনেকেই ধর্ম করতে ছোটেন। এমনও বলতে শোনা যায়: বুড়ো হতে চলেছি। ধর্ম কর্ম নিয়ে থাকি এইবার। 

অতঃপর আশ্রম এবং বাবাজীর খপ্পরে পড়তে বেশি দেরি হয় না। 

 তাহলে? ঈশ্বর সাধনা করতে হবে না?  দান ধ্যান পুজো কিছুই লাগবে না? 

কিছু পুজো বাড়ির পরম্পরা। সেগুলি রক্ষা করতে হয়। কিন্তু, মধ্য বয়সে হঠাৎ করে ধর্মে আসক্তি হলে সমস্যা হয় এটাই, ভীষন ভাবে আচার সর্বস্ব হয় মন। অর্থাৎ, এই বারে এই খাব না। অমুক সময় ঘরে থাকব। আরো হাজার কিছু। কেউ কেউ প্রচন্ড রকম শুচি বাই হয়ে পড়েন। মহিলাদের ক্ষেত্রে বেড়ে চলে বাতিক। সুস্থ শরীর কে ব্যস্ত করে তোলার নানা প্রক্রিয়া চলে। মধ্য বয়সে মনের জানালা আপনা থেকেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। ধর্ম যদি সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার করা হয়, তবে জানালা বন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি। মন নষ্ট হতে থাকে। বিকার গ্রস্থ হতে থাকে।

 ***********

এখানেই প্রয়োজন spirituality. ধর্মকে ঠিক মত ব্যবহার করা যায়, যদি মানুষটা আধ্যাত্মিক হয়। অর্থাৎ পরিণত হয়। কোনো কিছুই অন্ধের মত বিশ্বাস করে আঁকড়ে ধরলে বিপদ হতে পারে। বয়সের তেজ যত ঢলে যেতে থাকে, লাঠির প্রয়োজন তত বেশি। মন সর্বদাই ভাবতে থাকে: অমুক এলে কি ভালো হয়। অথবা, আগে কত লোক আসত, এখন কেউ আসে না। আনন্দের উৎস, যদি ব্যক্তি বিশেষ অথবা বস্তু বিশেষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন  অনুগ্রহের পাত্র হয়ে দাঁড়াতে হয়। সবচেয়ে খারাপ লাগে, যখন বোঝা যায়, কেউ উপেক্ষা করছে। বিরক্তিতে ভুরু কুঁচকে আছে। খারাপ লাগলেও, সঙ্গ ছেড়ে দেবার মত মনের জোর পাওয়া যায় না। একা কি করে ভালো থাকা যায়?

********

 আধ্যাত্ম কিতা কিভাবে সাহায্য করে: 

 আবারও বলছি, ধর্ম বা আচারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। তাহলে? দরকার কি? এটা একটা থেরাপি। মনের অবস্থা উন্নত করার থেরাপি। যেমন, মানুষের শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী জীবন সম্পর্কে তাদের গভীর ভ্রান্ত ধারণা। অনেক মধ্য বয়েসী মনে করেন, দুঃখিত হয়ে কিছু পাওয়া যায়। কষ্টের আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে লোকের কাছে সহানুভূতির আশা করে। 

 *** 

আধ্যাত্মিকতার অর্থ হল, অভিজ্ঞতার মাধ্যমে উপলব্ধি করা। আমার আনন্দের উৎস আমি নিজে... এই সত্য হৃদয়ে আত্মস্থ করা। মধ্যেবয়সে এসে আমরা অনুভব করি, পার্থিব অনেক কিছু আছে। যেটা নেই সেটা হল আনন্দ। শান্তি। কারণ, জীবন কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বৈষয়িক উপার্জনে। শান্তি আনন্দ এগুলি যে উপার্জনের বিষয়, সেকথা কখনো ভাবার অবসর ছিল না। 

******

আধ্যাত্মিকতা কিভাবে সাহায্য করে। 

&&&&&&&&&&&&&&&&

  There is something greater than myself, something more to being human than sensory experience, and that the greater whole of which we are part is coshmic or divine in nature. 

   খুব কটমট কথা। আসলে, এটা খুব সরল এক উপায়। মনের জমিতে নিয়মিত আলো, জল, সার ইত্যাদি দিয়ে তাকে উর্বর করে রাখা। তাহলে, আবেগের উপর সংযম আসবে। শরীর মন আবেগ শক্তি এগুলির সঠিক পরিচর্যা করলে,ধীরে ধীরে ভিতরে এক শক্তির জন্ম হয়। বিচার বুদ্ধি সতর্ক হয়। বোধ পরিণত হয়। জীবন তখন আলাদা মাত্রায় ধরা দেয়। 

**********

  মানুষকে নিজের অভিজ্ঞতার বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হয়। নিজের গন্ডীর বাইরে গিয়ে তাকালে তবে বৃহতের অনুভূতি হয়। পার্থিব ছাড়তে শিখতে হয়। জলে দুধে মিশে থাকবে, দুধটুকু তুলে খেতে হবে। সংসার সর্বস্ব হতে নেই। তাহলে, সংসারের অবহেলা মনে ধাক্কা দেয় না। এই অভ্যাসটা হল আধ্যাত্মিকতা। জীবনের শিক্ষা মাত্র। যার জন্য আমরা আনন্দে থাকতে পারি। 

********

 বোঝা গেল, নিজের মনের গভীরে প্রবেশ করতে জানা হল এই প্রক্রিয়ার উৎস। যেমন, সাঁতার জানি, রান্না জানি, যৌনতা জানি তেমনি এটাও জানতে হয়, কিভাবে নিজের ভিতর হতে আনন্দের উৎস খুঁজে পেতে হয়। এই জানার অপর নাম spirituality. মধ্যবয়সে সবচেয়ে বেশি কাজের হল এই অভ্যাস।

















শুভ্রনীল চক্রবর্তী

                                                              


এই সপ্তাহের কবি শুভ্রনীল চক্রবর্তী৷
স্ট্যাটিসটিক্স এ মাস্টার্স করে এখন রাশি বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত । ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা বিশেষত মা এর থেকেই পাওয়া ।  প্রথম কবিতা প্রিন্টেড আকারে বেরোয় ক্লাস ৮ এ পড়াকালীন । নিয়মিত কবিতা চর্চা শুরু ২০১২-১৩ সাল থেকে , প্রথম কোনো প্রকাশনীতে কবিতা প্রকাশ পায় ২০১৬ সালে । এখনো অব্দি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রায় ১০০ টির বেশী কবিতা বেড়িয়ে গেছে । কবিতার পাশাপাশি অণুগল্প ,বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ  ও ছোট গল্প ও বেশ কিছু পত্রিকায় বেড়িয়েছে । কবির প্রথম প্রকাশিত বই দূর স্বপ্নের আঠাশে, স্নিগ্ধা প্রকাশনী থেকে । লেখালিখির পাশাপাশি একটি পত্রিকার সহ সম্পাদক হিসাবে উনি নিয়মিত কাজ করছেন ।

আদর্শ , খিদে , ধর্ম ও ইত্যাদি 

ক্ষিদে পেটে স্পুটনিক তত্ত্ব
নিউক্লিয়ার সংসার বা লাশকাটা ঘর ,
নিয়ম মাফিক সময় এলে
উপচে পড়া আদর্শের ঢল ।

আদর্শের কোন ধর্ম হয়না
ধর্ম শুধুই জাতীয় স্তরে ,
তর্ক চলছে , পথে নামছে
কিন্তু ফুস-মন্তর সর্ষের ভেতরে ।

নীতি কথার রঙীন মোড়ক
মার্শম্যালো বা
সাদা কালো ,
নীতির আঁচে নেতা বানিয়ে
গণতন্ত্র খুটোয় পোরো ।

তোমার আমি আমার তুমি
মানববন্ধন না ছিনতাইবাজ ?
অর্বাচীন দের নেতার মুকুট
আর বিপ্লবীদের জোটে শশ্মান-সাজ ।

প্রহসিত রূপকথা 

শহরের কলঙ্ক-রেখা বরাবর শুকতারার পর্দা উন্মোচনের তোরজোড় চালাচ্ছে রাতের অপালারা , সম্বল একমাত্র রাত মাপার পারদ , তা দিয়ে সে সাজাচ্ছে শ্মশানের হকার গুলোর রোজ নামচা ,বৈদ্যুতিক চুল্লি উষ্ণতা বাড়াচ্ছে অতীতের কিছু আহ্লাদের । তার ফাঁকে মিডিয়ার জন্য সে কিনছে কোন এক কোজাগরীর অনিচ্ছার প্রথম রক্ত-বিন্দু ,
কিম্বা নন্দনে সাজাবে বলে দরদাম চালাচ্ছে শ্রেণী-শত্রু ঘোষিত এক বৃদ্ধের বাড়ির নিষিদ্ধ দালানের ।
পাইকারি দরে শেষ ঘুমটা বেচে অন্য গোলার্ধে যাওয়ার জন্য শশব্যাস্ত সে, আবার একটা নতুন দিন, পার্লামেনটে ঘোষিত কিছু দিবা-স্বপ্ন , আর সমাজের জরায়ুতে নাড়া দেওয়া ধর্ম-ধ্বনিদের মুকাভিনয়ের পর আবার রাত পরীরা স্বপ্ন ছড়াতে আসবে পাইরেটস আর সিন্ডারেলার গল্প বলে ।।

বিধাতার বিপ্লব

বিধাতাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ওরা বিপ্লব করছে
ক্রমশ জঠরে পুষে যাচ্ছে পান্ডুর বিবর্ণতা
ডুমুরে ফুলেরও জারণ হয় প্রতিনিয়ত
সায়াহ্নে মিছিলের ডাক দেয়ার কথা
আউশের আজ নীল এর সাথে বোঝা পড়া হবে ,
মরা জাঙ্গালের বেড়ে ওঠা বিপ্লব কিছুটা অলৌকিক
তৃতীয় বিশ্বই বটে
নিরেট কিছু অসৌজ এনে আজ ধর্মের গাঁয়ে ছিটিয়েছে ওরা
রক্ত আর সমাজের জরায়ুকে আহুতি দিয়ে আজ যজ্ঞের পালা
যোগ্য যজ্ঞ আজ পরমাণু বোমা আর শিবলিঙ্গের
বাষ্পের মধ্যেই বিধাতা বিলীন হচ্ছে পঞ্চভুতে
বিধাতার আজ আবার নতুন সৃষ্টির পালা
সেও বিপ্লব করতে চায় শুধু কালো রক্তের নেশায় ।।


ভার্সেস

ছন্দ তুমি রক্ত চোষো
কবির কল্প কাব্য
দূর্গম পথ আজও খোঁজে
শিব ঠাকুরের স্বাক্ষর ।

ছন্দ তোমার বাড়বাড়ন্তি
কলমের দোঁহে আত্মমেহন
অশুচিরো গেরস্ত থাকে
কবির শুধু জন্মান্তর ।

জন্ম তবে শূন্য সলিল
গলগ্রহে অগ্রদাণী
জায়জ জারণ অর্ধ আয়ন
ছন্দ থাকুক ছদ্মগামী ।।


পৃথিবী

পৃথিবী ?? একটি নারীর নাম ।
যে প্রতিনিয়ত সভ্যতা বুনছে তার বলিষ্ঠ ওমে ,
একদিকে জঠর পুড়িয়ে পিন্ড দিচ্ছে নিজের সবুজ অঙ্গীকারের
অপরদিকে যুগ উত্থাপনে ভাসাচ্ছে সোমত্ত শব ।

পৃথিবী ??
যে রোজ উপহার দেয় এক নতুন সকালের
উপহার দেয় অরোরা বরিয়ালিস ,
পৌঁছে দেয় প্রতিনিয়ত কিছু নতুনের সন্ধানে
সুযোগ করে দেয় অভিজ্ঞতা আহরণের ।

সারাদিন নিজে তাপদগ্ধ হয়েও সূর্য-জারণ ঘটায় সালোকসংশ্লেষে ,
সে রোজ অগ্নি-পরীক্ষা দেয় বিগত রাতের কলঙ্ক ঘোঁচাতে ,
তবু প্রতিরাতে বাড়ি ফেরার পথে তাকে ছিড়ে খায় কিছু নিশাচর,
ক্ষমতাবান অথবা ঈগল ।

সে কিছু বলতে পারেনা ,
দগদগে কিছু ক্ষত নিয়ে ফিরে আসে ,
ফিরে আসে আবার এক নতুন সকালের আহুতি নিয়ে
যে সকাল সুযোগ করে দেবে আবার সেই নিশাচর দের ।

সে জ্ঞান পাপী ,
সব জেনেও সে কিছু বলতে পারেনা ,
কারণ ??
সে পৃথিবী
একটি নারীর নাম ।।

জন নীতি

রাজার-নীতি আমার নয় ,
আমি রোজ সকালে উঠে জপি দিন-গুজ্রান এর মন্ত্র
আমি রোজ হয়ে উঠি ঐ ভিখারির একবেলা
আমার এক বিন্দু রক্ত কেড়ে করছে যারা উল্লাস
সে গণতন্ত্র আমার নয় ।।
আমি মোমবাতি নিয়ে করি ১২০ কোটির মুখে খাওয়ার তোলার আহ্বান
আমি রাজনীতি ভুলে করি জন-নীতির স্লোগান ।।

ভালোথেকোভালোবাসারা

আর কিছুদূর গেলেই মুক্তি
জব্দ হবে ধর্মের ষাড়
আর কিছুক্ষণ হাতেহাত রাখো
ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম ।

আর কিছুটা ধৈর্য ধরো
স্বপ্ন দেখো স্বপ্ন দেখার ,
তারপর ধম্ম মুছে পগারপাড়
ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম।

ধম্ম ওদের ব্যবসার পণ্য
হাতিয়ার ও আছে , ভগবান
তোমাদের যুদ্ধতো শুধু হাতধরার
ধর্মের শবে সঞ্জীবনীর সন্ধান
- ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম ।

অশরীরী প্রেম সান্নিধ্য চায়
ধর্মধ্বজার বিচ্ছেদ নাড়া ,
তোমাদের তো শুধু স্বপ্নই সম্বল
ভালোথেকো ভালোবাসারা ।।

ইতিবৃত্ত

অসহায় কিছু যন্ত্রণা শিরপা দেয় খারাপ থাকার ছদ্মবেশ
"আমি ভালো আছি" বলে আয়নায় মুখ লুকাই ।।
বেসামাল সহজাতরা মানুষ বানিয়েছিল কিসের স্বার্থে ?
সেই প্রশ্নের মায়াজাল আমাকে ফেলে দেয় ইট,কাঠ,পাথরের ফাঁকে ।
সমাজের সব ইহুদিরা যেদিন কেদেছিল একসাথে
সেদিনও আমি এভাবে মুখ লুকিয়েছিলাম আয়নায়,
বলেছিলাম "আমি ভালো আছি"।।
ঠাকুর আর আল্লাহ্‌ যেদিন নিজেদের পথ বেছে নিলো
সেদিনও এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল আমার ।।
তবু ভালো থাকার অভিনয় ,
সভ্যতার প্রসব যন্ত্রণায়ে কেঁপে উঠেছিল আমার শরীর ;
তবু পণ করেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ।।
ধর্ম আর বিজ্ঞান এর লড়াইয়ে
তৃতীয় বিশ্ব নামের ক্যান্সারে আমি আজ বিধ্যস্থ।।
আমার শরীরে লেনিন শিখা এখনো গরীবের রাজা হতে চায়
শ্মশানের ভিখারী সাজাতে চায় তাজ-মহলে ।।
এখনো তবু শান্ত আমি,
ঠাণ্ডা-যূদ্ধের অভ্যেস করে নিয়েছি
সংস্কৃতি বেঁচে পেট চালিয়ে ,
জঙ্গি পোষার দেশ বানিয়ে নিয়েছি ।।


ঘর ফেরানোর গান

অসময়ের ছদ্মবেশ
সালপাতাতেই চর্বিত-চর্বণ
পিঁপড়ে খাওয়া জাতির শুধু
শিরদাঁড়াতেই অরণ্যে রোদন ।

শির শুধুই তফাতে দাঁড়ায়
ধর্ম কেবল কর্মরোষেই,
সংস্কৃতি বদলাক , মানুষ নয়
মানুষ থাকুক ধর্মের মুখোশে ।

মুখোশ সেতো সবার ধারক
শিল্পী কিংবা ছদ্মবেশী,
বেশ-ভুষাতেই মনন যাপন
দলিত থাকুক মনের পেশী ।

জননীতি কেবল রাজনীতি নয়
গেরিলা গড়ে উঠুক নবজাতকের স্বার্থে,
বিপ্লবে যাদের এখনো বিশ্বাস
চলো রক্ত শাণাই বাংলার জয়রথে ।।

১০

নষ্টক্রোমোজোম


আমার অন্ধকার পছন্দ নিঃসঙ্গতা পছন্দ , নিঃসঙ্গতার ভেতর আছে এক সুগন্ধী মৃতদেহ ,
যে প্রতিনিয়ত মনে করায় প্রথম নষ্ট হয়ে যাওয়া ভ্রুণ টিকে ।
সেদিন জরায়ু কেঁপেছিলো খুব , নষ্ট সদস্যের ভিড়ে
প্রবৃত্তি ঘিরে ছিল ঘেন্না , ঘৃণা নয়
চিৎকারে এক গ্রাস আগুন দিয়ে আহুতি হয়েছিল
কোনো শব্দ হয়নি ,
এক দলা মাংসপিন্ড তো , ক্রোমোজোমের তো আর ব্যথা লাগেনা ।।

যুগান্তর মিত্র

                                        



আমার মাথাতেও কিছু আসছে না মহারাজ। হতাশ গলায় হেফাস্টিয়ান কথাটা বলেই যোগ করলেন, এইসময় আমাদের দরকার ছিল গুরু অ্যারিস্টটলকে। তিনি সঠিক দিশা দিতে পারতেন।

ঠিক। একদম ঠিক বলেছ। আমার মাথাতেই আসেনি মাস্টারমশাইয়ের কথাটা। তাঁর পরামর্শ খুব জরুরি এখন। উনি আছেন এথেন্সে। তুমি দ্রুত যাও ওনার কাছে। ওনার মূল্যবান মতামত নিয়ে এসো।

এথেন্স এখান থেকে অনেক দূরে মহারাজ! সডগিয়ান থেকে সেখানে যাওয়া, তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করা, আবার ফিরে আসা... বিরাট সময়ের ব্যবধান। এই মুহূর্তে আপনার পাশে আমার সবসময় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনাকে ছেড়ে কোথাও গিয়ে আমি স্বস্তি পাব না। তার চেয়ে একজন বিশ্বস্ত সেনাকে পাঠানো যেতে পারে। তার ফিরে আসা পর্যন্ত আমরা যেভাবেই হোক এদের সামলাতে পারব।

কথাটা মনে ধরল অ্যালেকজান্ডারের। তিনি মনে মনে স্বীকার করলেন, হেফাস্টিয়ান সঙ্গে থাকা মানে মনোবল অনেকটাই বেড়ে যাওয়া। তাই বললেন, বেশ, তবে তাই করো। খেয়াল রেখো দূত যেন ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ না-করে। সে যেন গুরুর পরামর্শ ফাঁস করে না-দেয়।

আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মহারাজ। আমি যাকে পাঠাব সে খুবই বিশ্বাসী। প্রাণ যাবে, তবু বেইমানি করবে না।

(২)

বিশ্বস্ত সেনা হেরাসকে পাঠানো হল এথেন্সে। সে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে, দীর্ঘদিন বাদে এসে পৌঁছল এথেন্সে। এখানে অ্যারিস্টটলকে সকলেই চেনে। তিনি একজন জ্ঞানী পুরুষ ও রাজা আলেকজান্ডারের গুরু হিসাবে পরিচিতি। তাই অতি সহজেই হেরাস পৌঁছে গেল অ্যারিস্টটলের গৃহে।

অ্যারিস্টটল তখন তাঁর ঘরে বসে আছেন। তাঁর চোখ জানালা দিয়ে বাইরের দিকে। তবে তিনি যে কিছুই দেখছেন না তা বোঝা যাচ্ছে তাঁর বাহ্যজ্ঞানহীন দৃষ্টি দেখেই। কোনওকিছু নিয়ে তিনি গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। এমনকি ঘোড়ার পদশব্দও শুনতে পাননি তিনি, এতটাই নিমগ্ন হয়ে আছেন।

মহান রাজা আলেকজান্ডার আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। হেরাসের কথা অ্যারিস্টটলের কানে পৌঁছল না। তিনি ভেবেই চলেছেন কোনও গভীর বিষয়ে। হেরাস আবার বলল একই কথা। এবার বেশ জোরেই বলল সে।

সম্বিত ফিরল অ্যারিস্টটলের। তিনি মুখ ফিরিয়ে দেখলেন সেনাটিকে। হেরাস প্রায় একই কথা উচ্চারণ করল। তিনি তরুণ সেনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, আলেকজান্ডার তোমাকে কেন পাঠিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে? তার কোনও বিপদ ঘটেনি তো!

না মহামান্য। বিপদ তেমন নয়। আবার বিপদও বলতে পারেন।

ভ্রু কুঁচকে উঠল অ্যারিস্টটলের। বিপদ নয়, আবার বিপদও! তুমি বোসো এখানে। তারপর সবিস্তারে বলো ঘটনাটা কী। কথাটা বলেই একটি পাথরের বেদি দেখিয়ে দিলেন অ্যারিস্টটল।

মহারাজার গুরু। তাঁর সামনে বসতে একটু ইতস্তত করলেও অবশেষে বসে পড়ল সেখানে হেরাস। এরপর আলেকজান্ডার ও হেফাস্টিয়ান যেমন করে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, হুবহু সেভাবেই বুঝিয়ে বলল অ্যারিস্টটলকে।

অ্যারিস্টটল কখনওই বক্তার কথার মাঝে কথা বলেন না। তিনি বক্তাকে বলতে দেন। তারপর নিজের মতামত দেন। এমনকি কারও ওপর নিজের মত চাপিয়ে দেওয়াও তাঁর নীতিবিরুদ্ধ। এক্ষেত্রেও হেরাসের কথা মন দিয়ে শুনলেন।

নিজের বলা শেষ হলে জিজ্ঞাসা করল হেরাস, এবার আপনি বলুন গুরুদেব, আমাদের মহান রাজার কর্তব্য কী? আপনার পরামর্শ নিয়ে দ্রুত ফিরে যাব সডগিয়ায়। সেখানে আপনার সুপরামর্শের আশায় অপেক্ষা করছেন আমাদের সম্রাট। 

অ্যারিস্টটল উঠে দাঁড়ালেন। একটি শব্দও উচ্চারণ না-করে চলে গেলেন পাশের ঘরে। তাহলে কি লিখবার সরঞ্জাম আনতে গেলেন গুরুদেব? শিষ্যকে লিখে জানাবেন তাঁর মতামত? ভাবল হেরাস। কিন্তু বিস্মিত হয়ে সে দেখল অ্যারিস্টটল একটা বিরাট আকারের ছুরি নিয়ে বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। সোরেস আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে তো কোনও অন্যায় বাক্য বলেনি! মহারাজার হুকুম তামিল করেছে মাত্র! অ্যারিস্টটল তার দিকে দৃকপাত না-করে ছুরি নিয়ে চলে গেলেন বাগানের দিকে। তাকে যে হত্যা করতে ছুরি হাতে নেননি গুরুদেব, তাতেই সে আশ্বস্ত হয়ে তাঁর পিছন পিছন চলে এল বাগানে। অবাক হয়ে দেখল অ্যারিস্টটল ছুরিটা দিয়ে একের পর এক গাছের শুকনো ডাল কেটে চলেছেন। হলুদ হয়ে যাওয়া ডালপালা ছেঁটে দিচ্ছেন তিনি। কী আশ্চর্য! একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় জানতে সে এখানে এসেছে, সেসব গুছিয়ে বলেওছে। আর অ্যারিস্টটল সেসবের জবাব না-দিয়ে গাছপালা কাটছেন! হেরাসের মনে হল, আমাদের সম্রাট বদরাগী। আচমকা সেনা বা সেনাপতির ওপর রেগে যায়। যদিও সেই রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।  আর তাঁর গুরুদেব কেমন যেন আধ-পাগল। সবকিছু শুনেই নির্বিকার হয়ে বাগান পরিচর্যা করে চলেছেন। রাজার গুরু বলে কথা! তাঁর সঙ্গে তো আর খারাপ আচরণ করা যায় না। অপেক্ষা করতেই হবে তাকে। এই ভেবে হেরাস চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে তফাতে।

কিছুক্ষণ পরে সমস্ত কেটে ফেলা ডালপালা জড়ো করে একটা গর্তের মধ্যে ফেললেন অ্যারিস্টটল। বিড়বিড় করে বললেন, এগুলো এখানে জমা থাক। এর থেকে ভালো সার হবে। এই বলে তিনি বাগানের মধ্যে থাকা একটা পাথরের ওপর বসে পড়লেন। বহুক্ষণ বাদে গুরুদেবের মুখে এইটুকু বাক্য শুনতে পেল হেরাস। ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে সে বলল, আমাকে আপনার পরামর্শটা জানান মহামান্য। আমি দ্রুত ফিরে যেতে চাই। মহারাজা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন।

অ্যারিস্টটল মুখ তুলে তাকিয়ে ভালো করে জরিপ করলেন তরুণ সেনাটিকে। তারপর কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন, আলেকজান্ডার যা জানতে চেয়েছে, আমি তো তার জবাব দিয়ে দিয়েছি!

জবাব দিয়ে দিয়েছেন! কখন দিলেন! এই নিয়ে তো একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি গুরুদেব! এবার সে নিশ্চিত হয়ে গেল, সে যা ভেবেছিল, ঠিক তাই। এই বৃদ্ধ ছিটগ্রস্ত। তবু সে আর-একবার জানতে চাইল, তাহলে আমি মহারাজাকে গিয়ে কী বলব?

 

(ক্রমশ:)

চিত্র- অন্তর্জাল