পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

শুভ্রনীল চক্রবর্তী

                                                              


এই সপ্তাহের কবি শুভ্রনীল চক্রবর্তী৷
স্ট্যাটিসটিক্স এ মাস্টার্স করে এখন রাশি বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত । ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা বিশেষত মা এর থেকেই পাওয়া ।  প্রথম কবিতা প্রিন্টেড আকারে বেরোয় ক্লাস ৮ এ পড়াকালীন । নিয়মিত কবিতা চর্চা শুরু ২০১২-১৩ সাল থেকে , প্রথম কোনো প্রকাশনীতে কবিতা প্রকাশ পায় ২০১৬ সালে । এখনো অব্দি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রায় ১০০ টির বেশী কবিতা বেড়িয়ে গেছে । কবিতার পাশাপাশি অণুগল্প ,বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ  ও ছোট গল্প ও বেশ কিছু পত্রিকায় বেড়িয়েছে । কবির প্রথম প্রকাশিত বই দূর স্বপ্নের আঠাশে, স্নিগ্ধা প্রকাশনী থেকে । লেখালিখির পাশাপাশি একটি পত্রিকার সহ সম্পাদক হিসাবে উনি নিয়মিত কাজ করছেন ।

আদর্শ , খিদে , ধর্ম ও ইত্যাদি 

ক্ষিদে পেটে স্পুটনিক তত্ত্ব
নিউক্লিয়ার সংসার বা লাশকাটা ঘর ,
নিয়ম মাফিক সময় এলে
উপচে পড়া আদর্শের ঢল ।

আদর্শের কোন ধর্ম হয়না
ধর্ম শুধুই জাতীয় স্তরে ,
তর্ক চলছে , পথে নামছে
কিন্তু ফুস-মন্তর সর্ষের ভেতরে ।

নীতি কথার রঙীন মোড়ক
মার্শম্যালো বা
সাদা কালো ,
নীতির আঁচে নেতা বানিয়ে
গণতন্ত্র খুটোয় পোরো ।

তোমার আমি আমার তুমি
মানববন্ধন না ছিনতাইবাজ ?
অর্বাচীন দের নেতার মুকুট
আর বিপ্লবীদের জোটে শশ্মান-সাজ ।

প্রহসিত রূপকথা 

শহরের কলঙ্ক-রেখা বরাবর শুকতারার পর্দা উন্মোচনের তোরজোড় চালাচ্ছে রাতের অপালারা , সম্বল একমাত্র রাত মাপার পারদ , তা দিয়ে সে সাজাচ্ছে শ্মশানের হকার গুলোর রোজ নামচা ,বৈদ্যুতিক চুল্লি উষ্ণতা বাড়াচ্ছে অতীতের কিছু আহ্লাদের । তার ফাঁকে মিডিয়ার জন্য সে কিনছে কোন এক কোজাগরীর অনিচ্ছার প্রথম রক্ত-বিন্দু ,
কিম্বা নন্দনে সাজাবে বলে দরদাম চালাচ্ছে শ্রেণী-শত্রু ঘোষিত এক বৃদ্ধের বাড়ির নিষিদ্ধ দালানের ।
পাইকারি দরে শেষ ঘুমটা বেচে অন্য গোলার্ধে যাওয়ার জন্য শশব্যাস্ত সে, আবার একটা নতুন দিন, পার্লামেনটে ঘোষিত কিছু দিবা-স্বপ্ন , আর সমাজের জরায়ুতে নাড়া দেওয়া ধর্ম-ধ্বনিদের মুকাভিনয়ের পর আবার রাত পরীরা স্বপ্ন ছড়াতে আসবে পাইরেটস আর সিন্ডারেলার গল্প বলে ।।

বিধাতার বিপ্লব

বিধাতাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ওরা বিপ্লব করছে
ক্রমশ জঠরে পুষে যাচ্ছে পান্ডুর বিবর্ণতা
ডুমুরে ফুলেরও জারণ হয় প্রতিনিয়ত
সায়াহ্নে মিছিলের ডাক দেয়ার কথা
আউশের আজ নীল এর সাথে বোঝা পড়া হবে ,
মরা জাঙ্গালের বেড়ে ওঠা বিপ্লব কিছুটা অলৌকিক
তৃতীয় বিশ্বই বটে
নিরেট কিছু অসৌজ এনে আজ ধর্মের গাঁয়ে ছিটিয়েছে ওরা
রক্ত আর সমাজের জরায়ুকে আহুতি দিয়ে আজ যজ্ঞের পালা
যোগ্য যজ্ঞ আজ পরমাণু বোমা আর শিবলিঙ্গের
বাষ্পের মধ্যেই বিধাতা বিলীন হচ্ছে পঞ্চভুতে
বিধাতার আজ আবার নতুন সৃষ্টির পালা
সেও বিপ্লব করতে চায় শুধু কালো রক্তের নেশায় ।।


ভার্সেস

ছন্দ তুমি রক্ত চোষো
কবির কল্প কাব্য
দূর্গম পথ আজও খোঁজে
শিব ঠাকুরের স্বাক্ষর ।

ছন্দ তোমার বাড়বাড়ন্তি
কলমের দোঁহে আত্মমেহন
অশুচিরো গেরস্ত থাকে
কবির শুধু জন্মান্তর ।

জন্ম তবে শূন্য সলিল
গলগ্রহে অগ্রদাণী
জায়জ জারণ অর্ধ আয়ন
ছন্দ থাকুক ছদ্মগামী ।।


পৃথিবী

পৃথিবী ?? একটি নারীর নাম ।
যে প্রতিনিয়ত সভ্যতা বুনছে তার বলিষ্ঠ ওমে ,
একদিকে জঠর পুড়িয়ে পিন্ড দিচ্ছে নিজের সবুজ অঙ্গীকারের
অপরদিকে যুগ উত্থাপনে ভাসাচ্ছে সোমত্ত শব ।

পৃথিবী ??
যে রোজ উপহার দেয় এক নতুন সকালের
উপহার দেয় অরোরা বরিয়ালিস ,
পৌঁছে দেয় প্রতিনিয়ত কিছু নতুনের সন্ধানে
সুযোগ করে দেয় অভিজ্ঞতা আহরণের ।

সারাদিন নিজে তাপদগ্ধ হয়েও সূর্য-জারণ ঘটায় সালোকসংশ্লেষে ,
সে রোজ অগ্নি-পরীক্ষা দেয় বিগত রাতের কলঙ্ক ঘোঁচাতে ,
তবু প্রতিরাতে বাড়ি ফেরার পথে তাকে ছিড়ে খায় কিছু নিশাচর,
ক্ষমতাবান অথবা ঈগল ।

সে কিছু বলতে পারেনা ,
দগদগে কিছু ক্ষত নিয়ে ফিরে আসে ,
ফিরে আসে আবার এক নতুন সকালের আহুতি নিয়ে
যে সকাল সুযোগ করে দেবে আবার সেই নিশাচর দের ।

সে জ্ঞান পাপী ,
সব জেনেও সে কিছু বলতে পারেনা ,
কারণ ??
সে পৃথিবী
একটি নারীর নাম ।।

জন নীতি

রাজার-নীতি আমার নয় ,
আমি রোজ সকালে উঠে জপি দিন-গুজ্রান এর মন্ত্র
আমি রোজ হয়ে উঠি ঐ ভিখারির একবেলা
আমার এক বিন্দু রক্ত কেড়ে করছে যারা উল্লাস
সে গণতন্ত্র আমার নয় ।।
আমি মোমবাতি নিয়ে করি ১২০ কোটির মুখে খাওয়ার তোলার আহ্বান
আমি রাজনীতি ভুলে করি জন-নীতির স্লোগান ।।

ভালোথেকোভালোবাসারা

আর কিছুদূর গেলেই মুক্তি
জব্দ হবে ধর্মের ষাড়
আর কিছুক্ষণ হাতেহাত রাখো
ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম ।

আর কিছুটা ধৈর্য ধরো
স্বপ্ন দেখো স্বপ্ন দেখার ,
তারপর ধম্ম মুছে পগারপাড়
ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম।

ধম্ম ওদের ব্যবসার পণ্য
হাতিয়ার ও আছে , ভগবান
তোমাদের যুদ্ধতো শুধু হাতধরার
ধর্মের শবে সঞ্জীবনীর সন্ধান
- ভালোথাকাই ভালোবাসার সর্বনাম ।

অশরীরী প্রেম সান্নিধ্য চায়
ধর্মধ্বজার বিচ্ছেদ নাড়া ,
তোমাদের তো শুধু স্বপ্নই সম্বল
ভালোথেকো ভালোবাসারা ।।

ইতিবৃত্ত

অসহায় কিছু যন্ত্রণা শিরপা দেয় খারাপ থাকার ছদ্মবেশ
"আমি ভালো আছি" বলে আয়নায় মুখ লুকাই ।।
বেসামাল সহজাতরা মানুষ বানিয়েছিল কিসের স্বার্থে ?
সেই প্রশ্নের মায়াজাল আমাকে ফেলে দেয় ইট,কাঠ,পাথরের ফাঁকে ।
সমাজের সব ইহুদিরা যেদিন কেদেছিল একসাথে
সেদিনও আমি এভাবে মুখ লুকিয়েছিলাম আয়নায়,
বলেছিলাম "আমি ভালো আছি"।।
ঠাকুর আর আল্লাহ্‌ যেদিন নিজেদের পথ বেছে নিলো
সেদিনও এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল আমার ।।
তবু ভালো থাকার অভিনয় ,
সভ্যতার প্রসব যন্ত্রণায়ে কেঁপে উঠেছিল আমার শরীর ;
তবু পণ করেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ।।
ধর্ম আর বিজ্ঞান এর লড়াইয়ে
তৃতীয় বিশ্ব নামের ক্যান্সারে আমি আজ বিধ্যস্থ।।
আমার শরীরে লেনিন শিখা এখনো গরীবের রাজা হতে চায়
শ্মশানের ভিখারী সাজাতে চায় তাজ-মহলে ।।
এখনো তবু শান্ত আমি,
ঠাণ্ডা-যূদ্ধের অভ্যেস করে নিয়েছি
সংস্কৃতি বেঁচে পেট চালিয়ে ,
জঙ্গি পোষার দেশ বানিয়ে নিয়েছি ।।


ঘর ফেরানোর গান

অসময়ের ছদ্মবেশ
সালপাতাতেই চর্বিত-চর্বণ
পিঁপড়ে খাওয়া জাতির শুধু
শিরদাঁড়াতেই অরণ্যে রোদন ।

শির শুধুই তফাতে দাঁড়ায়
ধর্ম কেবল কর্মরোষেই,
সংস্কৃতি বদলাক , মানুষ নয়
মানুষ থাকুক ধর্মের মুখোশে ।

মুখোশ সেতো সবার ধারক
শিল্পী কিংবা ছদ্মবেশী,
বেশ-ভুষাতেই মনন যাপন
দলিত থাকুক মনের পেশী ।

জননীতি কেবল রাজনীতি নয়
গেরিলা গড়ে উঠুক নবজাতকের স্বার্থে,
বিপ্লবে যাদের এখনো বিশ্বাস
চলো রক্ত শাণাই বাংলার জয়রথে ।।

১০

নষ্টক্রোমোজোম


আমার অন্ধকার পছন্দ নিঃসঙ্গতা পছন্দ , নিঃসঙ্গতার ভেতর আছে এক সুগন্ধী মৃতদেহ ,
যে প্রতিনিয়ত মনে করায় প্রথম নষ্ট হয়ে যাওয়া ভ্রুণ টিকে ।
সেদিন জরায়ু কেঁপেছিলো খুব , নষ্ট সদস্যের ভিড়ে
প্রবৃত্তি ঘিরে ছিল ঘেন্না , ঘৃণা নয়
চিৎকারে এক গ্রাস আগুন দিয়ে আহুতি হয়েছিল
কোনো শব্দ হয়নি ,
এক দলা মাংসপিন্ড তো , ক্রোমোজোমের তো আর ব্যথা লাগেনা ।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন