পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া

                                                                     




 পর্ব __৪

   মধ্যবয়স/ মুড সুইং/ যৌনতা

________


 মেজাজ হল আসল রাজা... এই প্রসঙ্গে লিখে চলেছি। মধ্যবয়স এখন বিষয়। মানুষের কঠিনতম সময়। না ঘরকা না ঘাটকা। না যৌবন না বৃদ্ধ। বিদেশে সমস্যা একটু কম। কারণ সেখানে মোটেই শুনতে হয়না - বুড়ো বয়সে লাল রঙ পরেছে! অথবা, প্রতি কথায় - আমি তো বুড়ো। 

 অথবা বুড়ি। 

    বয়স বাড়বে এটা যেমন স্বাভাবিক তেমন প্রত্যেক বয়সের একটা নাম থাকা স্বাভাবিক।  যেমন ছোটবেলা তেমন বুড়োবেলা। তাতে কি এলো গেলো? হ্যাঁ। শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায়। সেটাও ঠিক রাখা যায় অনেকটা। চুলের রঙ সাদা হলে মনের রঙ কেন হবে বিবর্ণ? মনের সুবিধে বরং বেশি, তাতে রঙ না লাগিয়েও সবুজ থাকা যায়। 

 মধ্যবয়স নিয়ে মাথা ব্যথার অন্ত নেই সমাজের। যেমন: 

দ্যাখ, কেমন হই হই করছে। যেন পঁচিশ বছর। 

দ্যাখ, কেমন জোরে কথা কইছে। 

দ্যাখ, কেমন সেজেছে। যেন কুড়ি বছর। 

  কেন এমন হবে? পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এত ত্যাগ করতেই বা হবে কেন? হৈ হুল্লোড় আমোদ কেন পড়বে ফাঁকি? 

****

   বারংবার আপনজনেরা মনে করায় আসছে শীতলদিন। সত্যিই আসছে। বাতের ব্যথায় কাবু। সুন্দরী পত্নীর চোখে চশমা। শরীর ভারি। কথা বলতে এগিয়ে আসে না কেউ। একাকীত্ব ঘিরে ধরে। নিমতেতো মেজাজ। মুড খারাপ । রাতে ঘুমের ওষুধ । 

 ৪৫ থেকে ৬০ মানুষের সংকট বয়স। অনেকে বাইরে নিজেকে চাঙ্গা দেখাতে চান বটে, কিন্তু একলা দিনে চলতে থাকে দোলাচল। যেহেতু, নারী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই শারীরিক পরিবর্তন আসছে, হরমোনের ওঠা পড়ার প্রভাব পড়ছে চুল ত্বক এবং যৌনক্ষমতায়... মানুষ ভুগতে থাকে নিরাপত্তাহীনতায়। অক্ষমতার অবসাদ। 

   ****

    সব বয়স নিয়ে যত্নবান হতে হয়।  বিষাদে ভুগে কোনো লাভ নেই। বয়স আসবেই। আপন মহিমায়।

   একাকীত্ব দূর করার চেষ্টায় নেতিবাচক পথ বেছে নেয় কেউ কেউ। তারুণ্য প্রমাণ করার চেষ্টা অথবা তরুণী প্রমাণের তাগিদ... এটাও কাম্য নয় আবার অযথা নিজেকে বুড়ো ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই।

অনেকেই দাম্পত্য জীবন নিয়ে হতাশায় ভোগেন। একঘেঁয়ে লাগে। বিয়ে যেন একটা কাজ।করে ফেলা হয়ে গেছে। ব্যাস। সেটা নিয়ে আবার ভাবার কি আছে? 

মুশকিল হল, সেটা নিয়েই ভাবতে হবে। ওই একটা জায়গা থাকে নিজের এবং সুরক্ষিত। দাম্পত্য জীবন বেশিরভাগ সময় এইবয়েসে এসে সংকটে ভুগতে থাকে। স্বামী স্ত্রী আলাদা বেডরুম ব্যবহার করেন। এ আলো জ্বালায় তো ও নাক ডাকে। ঠাণ্ডা মেশিন লাগে কারো কেউ বা ফ্যান চালাবে। কিটকিট। কুটকুট। স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের স্পর্শ সুখ? দূর। বুড়ো বয়সে ওসব হয় না কি? এখন চুপ করে যেতে হবে। আশ্রম যেতে হবে। অঙ্ক কষে চলতে হয়। কে কি বলল? কে কি ভাবল? 

****

 মধ্যবয়স শরীরের হয়। মনের হয়না। তাই বলি, বুড়ো হতে থাকুন। বুড়োটে নয়। বদল আনতে হবে চিন্তায়। 

 সত্যি বলতে কি, মধ্যবয়স সবচেয়ে বেশি সুখী হওয়ার বয়স। সন্তান যদি সফল হয়, তবে স্বামী স্ত্রী নতুন করে নিজেকে চিনে নেওয়া ভালো। একসঙ্গে অনেকদিন থাকলেই একঘেঁয়ে হবে সম্পর্ক... কে বলেছে? দুজনের পছন্দের অমিল হতেই পারে। কবিতা ভালো নাই লাগতে পারে, কিন্তু সেই মানুষটাই মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। কম বয়সে শরীরের জোর থাকে কিন্তু মনে থাকে হাজার চিন্তা। সদ্য জন্মানো সন্তান, চাকুরীর টেনশন, বাড়িতে লোকজন... ওই সময় উপভোগ করা যায়না জীবন।  বরং মধ্যবয়স অনেক ফুরফুরে। এই বয়সে সুস্থ যৌনতা জীবন রঙ্গীন করে তোলে। সুগার প্রেশার কন্ট্রোল করে। ত্বক টানটান রাখে। সৃষ্টিশীল কাজে উৎসাহ যোগায়। মধ্যবয়সে পরস্পরকে নতুন করে চিনতে হয়।  এর ফলে,প্রতিদিন উজ্জ্বল থাকা যায়। অবসাদ কাটতে থাকে। বলা যায়না, খুঁড়িয়ে চলা স্বাস্থ্যবতী বউ চমকে দিল জিন্স পরে। সমস্যা হল, জীবন রঙিন করতে হোটেলে খাবার খেতে গেলে। পকেটে টান। পেট খারাপও হতে পারে। বাড়ির রোজকার ঝোল ভাত সাজিয়ে দেওয়া যাক নতুন কেনা বাসনে।  একটু বয়স বেড়ে গেলে, বাইরের রান্না কিন্তু বিপদ ডেকে আনতে পারে। ঝোল ভাত সুস্বাদু আর নিরাপদ ।  দাম্পত্য জীবন ঠিক তাই। এখানে চনমনে থাকলে, প্রতিদিনের কাজ সুন্দর হতে বাধ্য।  মনে রাখতে হবে, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তি নিয়েই জীবন। একজীবনে সবটুকু পাওয়া হয়না। ছাড়তে জানলে যেটুকু পেয়েছি তাই নিয়েই দিব্য থাকা যায়। 

কোনো কারণবশত ,একলা হয়ে গেলে পছন্দ মত বন্ধু অথবা বান্ধবী অথবা সমলিঙ্গের কাউকে সঙ্গী করা যেতেই পারে। অযথা একলা কাটিয়ে কি লাভ? 

 আমার পরিচিত একজন ৬৫ বয়সের পুরুষ, স্ত্রী মারা যাবার পরে স্বীকার করেছেন যে উনি আসলে পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হতেন বেশি। আজ উনি একজন পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে সুখে আছেন। স্ত্রীর কোনরকম অমর্যাদা তাতে হয়নি। ঘটনাটা বিদেশের। স্বদেশ বিদেশ বলে কথা নেই, বাচ্চা ছেলে মেয়ে ধর্ষণ করার চাইতে অনেক ভালো প্রকাশ্য যৌনতা। সমীক্ষায় প্রমাণিত বয়স্ক মানুষ যৌনতা পছন্দ করেন। জীবনে একজনের আসন খালি হয়ে গেলে বাকি জীবন পড়ে থাকবে মরুভূমির মত? এটা অবশ্য নিজস্ব পছন্দের বিষয়।  পছন্দ প্রকাশ্য হওয়াই ভালো।

*****

মধ্যবয়সে নতুন করে বন্ধু খুঁজবেন না। নিরাপদ একাকীত্ব ভালো। কারণ, মতের অমিল থেকে শুরু করে আরো নানান ঝামেলা তরুণ বয়স নিতে পারে, এই বয়সে সম্ভব না। অনেকে প্রমাণ করতে চান নিজের জনপ্রিয়তা। তাই, বন্ধুত্ব করতে চান। সোশ্যাল মিডিয়া সুযোগ করেও দিয়েছে। মনের উপর চাপ না বাড়লে ঠিক আছে। তবে, উল্টোটা হলে বেরিয়ে আসুন বৃত্ত থেকে বা গ্রুপ থেকে। একাকীত্ব অভিশাপ নয়। কখনো কখনো আশীর্বাদ বটে। ইতিবাচক ভাবে নিতে হয়। বহু বই পড়া বাকি। গান সিনেমা... চেষ্টা করতে দোষ কি।

****

প্রথম কাজ হল, নিজেকে বুড়ো ভাবা ছেড়ে দিতে হবে। 

জীবন যাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। শরীরের যত্ন নিতে তো হবেই। সেইসঙ্গে মনের প্রতি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। 

আর পারি না। হচ্ছে না... এই ধরণের নেতিবাচক সংলাপ কম ব্যবহার করলে ভালো হয়। 

সঙ্গ এমন হোক, যে উৎসাহ দেয়। যার বোধ পরিষ্কার।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল সুস্থ দাম্পত্য জীবন। বেশির ভাগ মনের রোগ এখান থেকেই হয়। নারীরা আক্রান্ত হন বেশি। কারণ তারা সংবেদনশীল প্রাণী। পুরুষের মনোযোগ তাদের কাম্য। আবার, নারীরাই দূরে ঠেলে দেয় স্বামীদের। সন্তান হয়ে যাবার পর, বেশিরভাগ স্ত্রী আর প্রেমিকা থাকে না। মা হয়ে যায়। 

মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব মানে নারীত্ব বিসর্জন দেওয়া নয়। তিরিশ বছর বিবাহ বার্ষিকীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়া না দেখলেও চলবে। বরং, সন্ধ্যে সাতটায় দুই কাপ চা নিয়ে বসে পড়া যাক। কাপদুটোর মধ্যে কিছু রঙিন কারিকুরি থাক। 

জীবন সবসময় রঙ দিয়ে ভরিয়ে রাখতে চায়। দোষ জীবনের নয়। ভাবনার। 

আজ থেকে তাই বুড়ো হতে রাজি। বুড়োটে হতে নয়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন