পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

পূর্বা দাস

                                                                         


আজকের কবি পূর্বা দাস৷লেখালিখি শুরুর বয়স পাঁচ বছর। প্রথম ভালোবাসা কবিতা। অনুগল্প, ভ্রমণকাহিনী, ছোটগল্প এবং রম্যরচনাতেও অবাধ যাতায়াত। প্রকাশিত লেখা এখন পর্যন্ত লিটল ম্যাগাজিনেই সীমাবদ্ধ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ' মেটামরফসিস 'I


বিবর্ণ

শপথের কথা মনে হয় নি কখনো
এতই স্বাভাবিক ছিল সেই উপগমন
প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র আঁকার আনন্দে
দিনরাতের ছবি তৈরী হচ্ছিল
ভ্রান্ত ছায়া গাঢ় হলে
তিরস্কারের আঁখিতে ছিল সূর্যালোকের ভাষা

শপথের ভয় নেই, ছবি মুছে ফেলি
বিবর্ণ হয়েছে দেয়াল, তাই....

                               (২)

নিদান

ইদানিং কোন দেবতা নেই আমার
যেখানে দুদণ্ড নতজানু হব,
নির্লজ্জ হব
সব ক্ষোভ উগরে দেব অধৈর্য্যে
দাবী জানাব, দেবতা তুমি
এসো - আমার অপমানের বিপন্ন জমিতে।

ইদানিং রোজ দাঁড়াই আয়নার সামনে
ক্ষয়ে আসা জীবনীশক্তির চোখে চোখ রেখে বলি,
ঘুমিয়ে পরো না যেন,
শেষ অবধি এভাবেই হাত ধরে রেখো, তুমিই - 


                                (৩)

জন্মান্তর

ভালোবেসেই একদিন আকাশ ছেড়ে এলে
ডানা মুড়ে বসেছিলে 
শুকিয়ে আসা গাছটির ফুল পাতাহীন ডালে
তোমার ভালোবাসার কুহু গানে
বসন্ত এল
বসন্তের আরতি সাজাতে সাজাতে, বেহিসেবী!
ডানার পালক কমজোরী হল, বোঝনি -

এখন সরীসৃপ জীবন
বৃক্ষের আশ্রয়ে বড়জোর এ ডাল ও ডাল
ফাগুন উল্লাস শেষ হলে,
এখন বুঝি পরজীবি নাম তোমার! 

                               (৪)

ত্রাণ

পুকুরের জলে বিষ দিলে
খুব শ্বাসকষ্ট হয় মাছেদের
নীল হয়ে যায় আতঙ্কে, তবু মরণের ভয় থাকে না
জলের আস্তরণ বাঁচিয়ে রাখে ওদের।
রাঘব বোয়াল নেই এসব ছোট পুকুরে
ওদের আগেই সরিয়ে দিয়েছে।
এবার এই ভরা গ্রীষ্মের আটচল্লিশে
জলের ঢাকনা সরে গেছে, তখন
সরল মৃত্যুর ভার নেমে আসে
শুধু কিছু জিয়ল মাছ বুকে হেঁটে চলে যায়
একটু দূরে, অন্য পুকুরে। 

                             (৫)

পূর্বাভাস

একটা ঝড়ের আভাস
কোথাও ঠিক তৈরী হচ্ছে প্রকাণ্ড ঝড়
রীত চরিত তার জানে না কেউ এখনো
এখনো জানা নেই তার কৌশলী গতিপথ
অথচ, অনুভবে তার আগমবার্তা পৌঁছয়
আমাদের রোজকার হাঁটাচলা, দোকানবাজার
রাজনীতি, খেলাধুলা
রাতের গভীর সুষুপ্তিতেও 
জেগে থাকে ঝড়ের পূর্বাভাস
ঈশান, নৈঋৎ, বায়ু, অগ্নি
সবদিকে অনিমেষ চোখ রাখি 
কোথাও এক টুকরো লাল মেঘ দেখলেই
সতর্ক করতে হবে অন্যদের, কারণ - 
ঝড় আসছে, আসছেই....

                                  (৬)

মডিউলার

অনন্ত আবর্তে ঘুরে মরেছি বহুদিন ধরে
যেন কোন ইনফাইনাইট লুপ
সিস্টেম হল্ট করানোর আগে
অনেকবার এনকোডিং ডিকোডিং করে দেখেছি
সিনট্যাক্স এ ভুল ছিল না
ছিল সিম্যান্টিক এরর
বুঝেও ভিসিয়া সার্কল এড়াতে পারি নি
অথচ, ফল থ্রু বা এলসিভির মত ছোটখাট বিষয়ও
গুরুত্ব দিয়ে এসেছি বরাবর
স্ট্রাকচার সুঠাম ছিল, আর তাতে ছিল গভীর আস্থা।

ভুলটা আসলে সেখানেই। 
ঐ স্ট্রাকচার... লিনিয়ার... একধারায় বয়ে চলা
মডিউলার কনসেপ্টের ধারণা ছিল না তখনও
ভেঙ্গে ফেল, আরো ভাঙ্গো, আরো টুকরো করে ফেল নিজেকে
গাছ হয়ে যাও, প্রজাপতি, ভীমরুল বা কাঠবেড়ালি - 
কবিতার শরীর পাও, গান হয়ে ভাসিয়ে নাও চরাচর
সূর্যাস্ত হও, অথবা কালবৈশাখী
সবশেষে অনন্ত নক্ষত্র রাত্রির আশ্রয় তো আছেই
কোন ভয়ঙ্কর ঘূর্ণাবর্তের ভয় নেই আর
এক্সিট বাটনটা হাতের কাছেই আছে - সবসময়। 


                              (৭)


কাব্যজ

এ এক আশ্চর্য কবিতাজন্ম
নিশিডাকে ভোর হয় রাত
মউল দীঘিতে দ্যাখো, বর্ণিল শব্দেরা ভাসমান
ফুটে ওঠে শরৎ প্রভাত।
কামিনীর কস্তুরী গন্ধ স্নান সারা হলে
ঝরে যায়, ঝরে যায় সহস্র শিউলির ভিড়ে 

অসংখ্য জন্মের শেষে
কোরকের যন্ত্রনার স্বাদ
জেনেছিল একজন শুধু - তৃতীয়ার চাঁদ।

আর কোন চিঠি আসে না
জন্মের প্রত্যয় নিয়ে কবিতারা
স্বতঃই স্ববাক।
জন্মদাগ? সেসব কথা থাক। 

                             (৮)

ঘর

আমার ঘরের নাম কাশ
আমার ঘরেই রাজপথ
আমার শ্রান্তি উপহাস
দুয়ারে থামেনি কোন রথ।

                আমার ঘরের ছাদে মেঘ
                দেয়ালে বর্ষা ঝরে যায়
                জানালায় রোদের আবেগ
                নিঃশ্বাসে রেখে যেতে চায়।

আমার ঘরেই উৎসব
কত রাত জাগা অছিলায়
আঙিনায় ঝিঁঝিদের স্তব
ঘর আমার নদী হয়ে যায় - 
ঘর আমার নদী হয়ে যায় - 

                               (৯)

জৈবিক

সকাল, নাকি দুপুর ছিল
দুপুর নাকি সন্ধ্যে? 
শহর জুড়ে মায়ার আকাশ
বৃষ্টি চোয়ায় রন্ধ্রে।

একটি হাতে মুদ্রাতে সেই
অভয় নিষেধপানি
চোখের গভীর ছায়ায় কেন
মিথ্যে পরেশানি।

গোধূলি কোন সুরের ছিল
করুণ ছিল ঊষা - 
লতার মত বিজলী আলো
দীপক রাগে মেশা।

সকাল মরে দুপুর হলে, দুপুর ঢলে সন্ধ্যেয়
রাত্রির ট্রেন ঝমঝমিয়ে দূরের থেকে ডাক দেয়।

                             (১০)

বিদ্রোহী

নদীকে বাঁধতে চেও না; বরং ভালোবাসো
দুবেলা নদীর কাছে বসলে
প্রতিদিন বসন্ত, হোরিখেলা - 
দূর থেকে ভেসে আসা জলচর গুল্মের গায়ে
লেগে থাকে অজানা গঞ্জের সুবাস
চৈত্রের গভীর হাওয়ায় কান পাতলে, শুনবে
উৎস আর মোহনার কোমল-কঠিন কাহিনী
যদি না শোনো, না দেখো,
অথবা আঘ্রাণে অরুচি -
নদীও জেনো দিক বদলায়
তোমার অবগাহনের পরোয়া না করেই...

৫টি মন্তব্য: