পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৯ মে, ২০২১

তিস্তা

                                                                       



এই সংখ্যার কবি তিস্তাদি।আসুন পড়া যাক কবিতা।

মন

ঘুন বেজে যাচ্ছে হাড়ের ভিতর
মিহি ভস্মের ভিতর সন্তানের দগদগে নাভি
তুমি জেনে গেছো কতো দ্রুত আগুনের গতি
কতো দ্রুত বেশুমার পুড়ে গেলো সাধের কোরক
চাঁদের উল্টো পিঠে চাঁদই তো!
চব্বিশটা বসন্তের ইয়াব্বড়ো একটা মন...

এতোটা গ্রহণ, আমরাও জেনে গেছি, তুমি নিতে পারোনি–
নষ্ট পার্বণ



জলের স্থাপত্য


১/

ঋতু বদলের আগাম বার্তা নিয়ে

আমাদের ঘরে ঝুপ ঝুপ বর্ষা নেমে আসে


তুমি অন্তঃপুর চেনো, দেবল?

আঁচলের ঝুম ঝুম শব্দে টের পাও চাবির ঝনাৎ!

জলের স্থাপত্য!


এখানে প্রহার পঞ্চমস্বরে অমৃতের গান হয়ে বাজে

আর ঠিক তখন–

জ্বলেই নিবে যায় প্রাণহীন আর একটা সঙ্গম


গ্রহণ লাগে চাঁদে


২/

যে সব সন্ধ্যা নামেনি কখনো

অথবা নামবেও না কোনোদিন–

কেন তার অন্ধকারের কিনারে দাঁড়িয়ে

ফেরি করো গন্ধমাদন?

কেন তারে পরাতে চাও বৃষ্টির পোশাক?

হলুদ রঙের টিপ!


যা কিছু প্রণয়সূচক–

এ যাবৎ গাত্রদাহ– জ্বালা ; আমি তার পাশে

গান্ধার রেখে ফিরে এসেছি কবেই!


প্রিয় বান্ধবীর পায়ের কাছে রেখে এসেছি–

আমার সমস্ত শ্রী, আতর ও সৌরভ


৩/

" বিশালাক্ষী বিশালাক্ষী" - করে

আমাকে আর ধুনো দিও না

দেবীত্বে আমার রুচি নেই কোন


তুখোড় দস্যুবৃত্তির কাছে -

শীৎকারহীন আমার সমর্পণ

অথবা নিরুত্তাপ ঝরে যাওয়ার পাশে

তুমি আর কোন সন্তাপ রেখো না, দেবল,

বিচলিত হয়ো না


আমিও তেমন বধূটি ছিলাম না কোনদিন, যে -

বুনে রাখবো পঞ্চশস্য, সোহাগ!

গুনিনের কাছে মাথা কুটে মরবো তাকে ফেরাতে চেয়ে

কোন গুহ্যমন্ত্রেই আমিও তো বিশ্বাস রাখিনি কোনোদিন!

এয়োতি আচার দেহলিজ পেরিয়ে গেছে কবেই


অথচ আলগোছে খুলছো এমন

যেন রেওয়াজী দাস্তান, টুপ খসে পড়বো!

যেন কেঁদেকেটে আকুল হবো গোঁসাই গোঁসাই


৪/

যেখানে আবডাল নেই অথচ ফটক

তুমি তার নির্মাণ নিয়ে ভেবে দেখেছো কখনো?


সুচারু মৃৎশিল্পীর মতো প্রতিদিন, প্রতিটা দিন সে -

গড়েছে আর ভেঙেছে, ভেঙেছে আর গড়েছে

কিভাবে যে একের পর এক রূপ বদলে দিয়েছে প্রতিমার!

মুকুটের মতো পরিয়ে দিয়েছে

কবর খুঁড়ে তুলে আনা মৃত রমণীর চুল!

কিভাবে যে সস্তার রঙ লাগিয়ে দিয়েছে ঠোঁটে মুখে চোখে!


অতখানি আবাহনের পর বিসর্জনের উল্লাস -

তুমি দেখেছো দেবল? অনুভব করেছো!

বলো, অনুভব করতে পেরেছো সেই ব্যথা?


আজ আর ব্যতিব্যস্ত কোর না স্নান

বরং প্রলয় প্রস্তুত করো


আমাকে ভাসান পেয়েছে।


বান্ধবী

আমাদের বিগত ফটো ফেরি করতে করতে
দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে যে বান্ধবী আমার,
সে একদিন আমার-ই হাতের পায়সান্ন খেয়ে
আমাকে 'মা' বলে ডেকেছিল
সম্মোহন আর কতদূর!
জলোচ্ছ্বাস – সে-ও তো ক্ষণিক মাত্র!
তবু তারই ত্রুটিময় –
যন্ত্রণাকাতর জীবনের কথা ভাবতে ভাবতে
ওহ্ এই দেখুন, আজও আমার কাজল স্প্রেড করে যাচ্ছে...


বড়ো অসময় এসেছেন হে
১/
সমস্ত কিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি
আমার অগণিত দিন–
খাঁচার ভিতর কেটে গেছে শীতল ও শান্ত
আমার চোখের তলায়–
কালো হয়ে চেপে বসেছে গোপন যুদ্ধের দাগ
অদ্ভুত একটা হিমায়িত ঘুম!
যেন কতো বৎসর বরফ স্তরের নিচে–
চাপা পড়ে গেছে আমার নরম বাৎসল্য, প্রেম ও খুনসুটি
আর ধুলোয় ঢাকা পড়ে গেছে যে অমূল্য গুপ্তধন আমার–
তা তো গেছেই!
দুই প্রজন্মের সত্য ঘটনা অবলম্বনে–
এই আমার পায়রা জীবন মাজারের, প্রিয়
চৌচির চৌচির সমস্ত চাতাল
কী স্পৃহায় আর জেগে উঠি বলুন!

২/
এই সেই মৃত জলাভূমি–
যেখানে একা জেগে আছি আমি
আর আপনার ব্রাশের একেকটা স্ট্রোক
বদলে দিচ্ছে আমার ধাতব আদল, ভাঙা চোয়াল
শীতকালীন প্রাচুর্যের রঙে–
আমি ফুটে উঠছি টিউলিপের মতো!

৩/
দেয়ালে আঘাত করে ফিরে এসেছেন–
শৈশবের খেলার মতো
অথচ হার্ট টু হার্ট... বিট টু বিট...
যতক্ষণ না ছবি থেকে প্রতিচ্ছবির আয়না ভেঙে যায়
ঠিক ততক্ষণ এই ওয়েবসিরিজ চলবে
ঠিক ততক্ষণই মোহ
আয়নায় সূর্যাস্ত দেখছে রোজ–
দূর প্রাচ্যের প্রতিমা কোনো


স্ব-উপাসক


সে আমাকে গীর্জায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল একদিন
আজন্ম নাস্তিক আমি ; তেমন বাধ্যও তো নই কারো !
তবু, তাকে ফেরাতে পারিনি

কিন্তু পশ্চিমের ওই জানলাটা
জাফরি ভেদ করা বিকেলের ওই তেরছা আলো–
যা আমাকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছিল অনেকদিন পর্যন্ত!

সে-ও কী ততটা গভীর নয়! বলো ?

–'না, নয়।কবরের থেকেও গভীর কোন স্থান এই পৃথিবীতে নেই' –
ডোরিনা ক্রসিং পেরোতে পেরোতে সে বলেছিল।

'সে' – মানে মার্থা
মার্থা, মানে আমাকে 'নদী' বলে ডাকে যে মেয়েটি

কাল রাতে যার বুকে মুখ রেখে আমি ফুঁপিয়ে উঠেছিলাম!


৭টি মন্তব্য:

  1. পরিচয় হল কবির সাথে। মুগ্ধতায় ভেসে গেলাম। আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই কবিকে 🙏

    উত্তরমুছুন
  2. অসাধারণ সব কবিতা। প্রথম কবিতাটি অনন্য। প্রত্যেকটিতে রয়েছে মুগ্ধ করা সব চিত্রকল্প।

    উত্তরমুছুন
  3. অসাধারণ সব কবিতা। প্রথম কবিতাটি অনন্য। প্রত্যেকটিতে রয়েছে মুগ্ধ করা সব চিত্রকল্প।

    উত্তরমুছুন
  4. অসাধারণ সব কবিতা। প্রথম কবিতাটি অনন্য। প্রত্যেকটিতে রয়েছে মুগ্ধ করা সব চিত্রকল্প।

    উত্তরমুছুন
  5. অসাধারণ সব কবিতা। প্রথমটি অনন্য। বিরল চিত্রকল্পের ভান্ডার।

    উত্তরমুছুন
  6. অপূর্ব!আঙ্গিক, শব্দচয়ন, ভাববিন্যাস সবেতেই তিস্তার প্রবাহ। জলের স্থাপত্য ও স্ব-উপাসকে বিমুগ্ধ।

    উত্তরমুছুন