পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পূর্বা দাস

                  


                          (১)

বিবর্তন

তারার নাম দিয়েছ লুব্ধক;
বিভীষণকে যেদিন ভাইয়ের মর্যাদা দিলে,
তারপরের অগ্নিপরীক্ষা আর বস্ত্রহরণগুলি
স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে যায়।

মনুসংহিতার পাঠ শেষ হলে, একবার
না-মানুষদের এলাকায় এসো
ওদের অভিব্যক্তিতে জানা হয় নিজেকে।
গাছকে ভালোবেসে দেখো কোনদিন,
ওরাও অধীর হয় স্নেহস্পর্শের জন্য
তোমার শরীরের ঘ্রাণ পেতে বাড়িয়ে দেয় শাখা -

কোন ব্যাকরণ না মেনেই দেখো, সেদিন
কেমন সহজাত হয়ে উঠেছে মানবিকতা।

                           (২)

মূলধন

সেই লোকটা, যাকে 
নামের চাইতে বোকা কিংবা 
পাষণ্ড বলে ডাকতে
সবাই স্বচ্ছন্দ্য ছিল।
আমাদের চায়ের ঠেকে আড্ডা মারতে আসত 
ফর্সামত, বেশ বোকা সেই লোকটা।

একদিন দেখি, ওকে ঘিরে 
দূর-দূরান্তের হাততালি।
একই গঞ্জে বাড়ি। চেনামুখের ভরসায় বললাম, " কেমন আছ?"
"ভাল, খুব ভাল। কি জানিস - 
আমার বোকামি, আর গ্রামের সোঁদাগন্ধ  এখন আমার মূলধন। খুশি হয়েছিস?"
খুশি, খুশি, খুব খুশি হয়েছি সেদিন। 
গঞ্জবাজারের সরল-জটিলতা 
মাখানো একটা মুখ 
আজ পাদপ্রদীপের আলোয়।

তারপর অনেকদিন - 
তখন অতটা বোকা, 
অন্তত সবাই আর বলেনা ওকে। 
ওজন বেড়েছে, চলনে-বলনে ভঙ্গিমায়। চোখে-মুখে কষ্ট-কুটিল দাগছোপ। গঞ্জের বাজার, ওকে যেন আর 
ছুঁতে পারে না আজকাল। 
লোভ নামের আরও একটা পালক যেদিন যোগ হল ওর মুকুটে, লোকটা - লোকটা সেদিন মারা গেল।

আমরা গঞ্জের বাজারে, চায়ের ঠেকে অথবা পুণ্যতোয়ার গজলায় 
কখনো ফিসফিসিয়ে, কখনো উচ্চকিত 'লোকটা আসলে আপাদমস্তক পাষণ্ড'। 

সবশেষে, ওর সব শিরা-উপশিরায় 
বিষ ঢেলে যখন ওকে 
সত্যিই দৈহিক মৃত্যু দেওয়া হল, 
রাজার দোহাই দিয়ে - 
তখনো বোঝেনি লোকটা 
ওর বোকামিটাই আসলে ওদের মূলধন ছিল।

                         (৩)


নিষাদ

কুয়াশা ঘিরেছে সবদিক আজ কুয়াশা কবলে প্রাণ
বিষন্ন সব পথঘাটে নামে সন্ধ্যার অঘ্রান
চেনা গাছপালা আবছা হয়েছে
চেনা রাস্তারা ভুল
চিরচেনা যারা ছিল বাঁধা মনে কুয়াশায় হল ম্লান।

মুখ চেপে ধরা আর্তনাদকে বুকের ভেতরে খুণ
দোতারায় বেজে চলে এক ঘেয়ে পবিত্র রামধুন
তারাদের হাতে আলো
মৌন মিছিলও পারো
জানি তবু শেষে ছিঁড়ে নেবে ঠিকই জাগরণের ভ্রূণ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন