পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

জয়তী রায় (মুনিয়া)

                                         


                                                                    



অশান্তি 😌 থেকে শান্তি😊

💕💕💕💕💕💕💕💕💕

  মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় অভিশাপ হল অশান্তি। এ এক ভয়ঙ্কর রোগ। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে এই রোগের শিকার। মহামারীর চাইতে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। অশান্তিতে যে ভুগছে, সে সবসময় চাইবে অপরজন তার অসুবিধাটা বুঝুক। চুপ করে থাকলেও তার শরীর হতে বিচ্ছুরিত হয় অশান্তির আলো, যা পরিবার বন্ধু এবং সমাজ করে তোলে অন্ধকার। 

💕💕💕💕

অশান্তির সমস্ত কারণের পিছনে বাস্তব সম্মত কিছু ভিত্তি থাকে। কোনো কিছু অকারণ হয় না। সেই কারণ বলতে না পারা বা বুঝতে না পারার সঙ্গে লড়াইতে ক্লান্ত মানুষ, সমস্যা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য, নিজের এক কাল্পনিক দুনিয়া তৈরি করে, সেটা ঠাকুরঘর হতে পারে, গানের ঘর হতে পারে, লেখার টেবিল অথবা পরকীয়া। ধীরে ধীরে সেই কাল্পনিক দুনিয়ার বাসিন্দা হয়ে পড়ে, আর মুক্ত হতেই চায় না, এমন ও দেখা গেছে, সেই দুনিয়ায় কিছু মানুষজনের দেখা পায় সে। অর্থাৎ, মনের স্থিতি তখন নষ্ট হতে চলেছে। 

আর, দীর্ঘস্থায়ী মন খারাপ শরীরের মধ্যে সৃষ্টি করে না না রোগের। ক্যান্সার সহ  সুগার প্রেসার বহু রোগের কারণ অশান্তি থেকে উৎপন্ন নেগেটিভ এনার্জি।  নষ্ট করতে থাকে কাজের উৎসাহ উদ্দীপনা আনন্দ। অকারণ কান্না পায়, দুনিয়া ধীরে ধীরে বিষাক্ত হয়ে আসে।

😊😊😊😊😊😊

আগেই বলেছি, অশান্তি অমূলক নয়। থাকে কিছু তো ঘটনা থাকে। প্রথম কারণ আমি বলব , কথা। শব্দ ব্রহ্ম। কথার শক্তি প্রচন্ড। শব্দবাণ রক্তাক্ত করে দিতে পারে মানুষকে। পরিবারের একটি কথা, ফেসবুকের একটি পোস্ট ... বদলে দিতে পারে আগামী কিছু ঘণ্টা। কথার আঘাত সামলে ওঠা খুব মুশকিল। বিশেষত, কুৎসা রটনা শুনলে মন খারাপ হয়। কুৎসা মেনে নেওয়া খুব মুশকিল। ফলে, কেউ কাজ ছেড়ে দেয়, কেউ আত্মহত্যা করে। তাহলে কথা একটা কারণ। এবার, দিনের শুরু থেকে রাতের ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত শুধু মাত্র ভালো কথা শুনব এটা হতে পারে না। মনে রাখতেই হবে, বাজে কথা ভেসে আসবেই। স্বামী সন্তান ভার্চুয়াল জগৎ... টুক করে খারাপ কথা এসে নাড়িয়ে দেবে মনের স্থিতি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ভালো কথা তোষামোদি কথা মন উৎফুল্ল করছে, কুৎসা মন খারাপ করছে। দুটো অভিঘাত আসছে বাইরে থেকে। এবার আমার করণীয় কী? সুতরাং, সকালে উঠে সবচেয়ে আগে আয়না থেরাপি করে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হবে: আমি শক্তিশালী একজন মানুষ। আজ যে কথাই আসুক, আমার সুবিধা অনুযায়ী তাকে গ্রহণ অথবা বর্জন করব। সারাদিন দেখতে হবে অপরের মুখ তাই আয়নায় আগে নিজেকে দেখি, নিজেকে তৈরি করি তারপর দেখব অপরে কি বলে! কুৎসার আয়ু বেশিদিন থাকে না। বিচলিত হলে বরং কুৎসার রটনাকে ইন্ধন দেওয়া হবে। 

এই থেরাপি খুব কাজে দেয়। টানা কয়েকদিন করলে তফাৎ বোঝা যায়। 

 *****

অশান্তির আর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল অবদমন। চেপে রাখা। অনেক কিছু আমরা চেপে রাখতে বাধ্য হই, যৌনতা থেকে জীবনের অসফল কিছু মুহূর্ত চেপে রাখি সযত্নে। এই চেপে রাখার ফলে ভিতরে ভিতরে বাড়তে থাকে অশান্তি। এই চেপে রাখা কিন্তু ঘুন পোকার মত। তিলে তিলে শেষ করে দেবে। নাহ্, বাইরের কাউকে বলতে না পারলে, নিজেকে বলা যাক। নিজেকে বন্ধু করে তুলতে হলে, 5 মিনিট সময় দিতেই হবে। এবং, জিজ্ঞেস করতে হবে কোথায় হচ্ছে গন্ডগোল। আজকাল এটা ট্রেন্ড, নিজেকে ব্যস্ত প্রমাণ করা। কেবল বলে যাবে, এক ফোঁটা সময় নেই অথচ অনর্থক চ্যাট করার সময় আছে। কি হবে নিজেকে  5 মিনিট দিলে? চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটবে। পরিণত হবে। 5 মিনিট শারীরিক ব্যায়াম যেমন শক্ত করে শরীর, তেমনি মনের ব্যায়াম পুষ্টি জোগায়, পরিণত করে,  ঘটনাটার সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে চিন্তা শক্তির উন্নতি ঘটিয়ে দেখা যাবে, চেপে রাখা ঘটনা নিজের সঙ্গে বিশ্লেষণ করে ঘটনাকে কিভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তার একটা উপায় বার হয়। না হলে, অনর্থক উত্তেজিত মন ক্লান্ত অবসাদ আচ্ছন্ন হয়ে উঠবে। এই সময় একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখতে পারলে আরো ভালো।

*******

আপোষ অথবা কম্প্রোমাইজ , অশান্তি সৃষ্টির বড় কারণ। আপোষ করে চলতে হবেই, নাহলে সংসারে থাকা মুশকিল। কিন্তু, একটা সীমার পরে মন আর নিতে পারে না, তখন শরীরও বিদ্রোহ করে। আপোষ করে চলতে ভালো লাগে না, কথায় কথায় মন চায় , মুক্ত বিহঙ্গের মত বেরিয়ে পড়তে। যদিও, বিহঙ্গ ও মুক্ত নয়, তাকেও আপোষ করতে হয়, সুতরাং, ব্যাপারটাকে ইতিবাচক নজর দিয়ে দেখতে হবে। ওই যে চিন্তা শক্তির উন্নতি ঘটিয়ে চলার প্রক্রিয়া, সেই শক্তিমান চিন্তা শক্তি সাহায্য করবে, আপোষ করেও কি করে নিজেকে সুন্দর এবং ভালো রাখা যায়, সেটা করতে। মনে রাখতে হবে, অশান্তি হল ধোঁয়া, আর স্ট্রেস হল আগুন। 

শুরু থেকে অশান্তির উৎস খুঁজে বার করে তার উপর কাজ না করলে ধীরে ধীরে সেটাই পরিণত হবে মারণ দায়ী স্ট্রেস এ। 

*******

অশান্তি থেকে আসে অবসাদ। মনের নিজেরও কিন্তু ইমিউন পাওয়ার আছে , আছে অরা অর্থাৎ প্রচুর পজিটিভ এনার্জি নিয়েই আমরা জন্মায়। প্রবল অবসাদের আক্রমণে ক্ষয় হতে থাকে এনার্জি। মন দিশেহারা হয়ে পড়ে, ডিসিশন নিতে ভুল করে ফলে আবার অবসাদ আসে। এইখানে বলব, দুই ভুরুর মাঝখানে আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ টিপে রাখুন। এটা একটা মারাত্মক থেরাপি। যেখানে যখন ইচ্ছে করে নেওয়া যায়। অবসাদে খুব কাজে দেয় ওম মন্ত্র কানে শোনা অথবা মুখে উচ্চারণ করা, দিনে দশবার। অবসাদের সূচনা হলেই এই থেরাপি প্রয়োগ করুন। ভয়ঙ্কর কিছু হলে কিন্তু তখন ডাক্তার আর ওষুধ।

******

আলোচনা শেষ করার আগে বলি, অন্যের উপর সুখ নির্ভর করে না কিন্তু দুঃখ নির্ভর করে। জীবনের নব্বই ভাগ অমুকের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছি, বাইরের প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে অশান্তির বীজ, এইখানে থেরাপি হ'ল, বাইরে নিয়ে যখন চলতেই হবে, তখন মন আর বাইরের মাঝখানে একটা পাঁচিল তৈরি হোক। প্রতিদিন ধ্যান করলে, প্রতিদিন একটু একটু করে আত্মশক্তির উন্নতি করলে, বাইরে থেকে ধেয়ে আসা ঝড় বৃষ্টি খুব বেশি ভেঙ্গে ফেলতে পারে না , মনের দুর্গ। প্রতি রাতে না হোক, কিছুদিন অন্তর অন্তর এক জায়গায় নিজের জন্য কিছু পজিটিভ বার্তা লিখে রাখি। যে সময়টা গালে হাত রেখে চিন্তা করছি, অথবা অমুকের সঙ্গে চ্যাট করে হা হুতাশ  করছি, সেই সময় নিজেকে দিয়ে, নিজেকেই শোনাই, আমি অমৃতপুত্র। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না। 


 💕💕💕💕💕💕

সামনে আসছে বিশ্বশান্তি দিবস। গোটা বিশ্ব হল আমার মন। তাকে প্রতিদিন যত্ন করুন। নিজের চারিদিকের প্রতিরক্ষা গড়ে তুলুন। অশান্তির ঝড় থেমে গিয়ে পাবেন সুন্দর নির্মল জীবন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন