ছায়াবীথিতলে
-কে ওই বাতাসবাহন? পর্বত পেরিয়ে আসছে, শরীরে আচ্ছাদ নেই,মাঠে
গড়িয়ে
উল্লাস করে,কাছে এলে, দেখি, ওফ্, অস্থি নেই, বাস্তু নেই
সেও যেন বায়ু,
নিজেকেই সওয়ারি বানিয়ে আমার দুয়ারে এল, তাকে নিয়ে
জলাশয়ে যাই, ডোবাই,
বুদ্বুদ করে তুলি পুনরায়,লাগে না সামান্য পানি
সামান্য আর্দ্রের
প্রতি তার অনুৎসাহ, তবে ডাকি অগ্নি ময়রাকে
তিনি তো মিষ্টান্নে
দেন আত্মস্বাদচিনি এবং ক্ষুধাকে শালপাতার ঠোঙায় সাজিয়ে
বাণিজ্য করেন; পারেন
না পোড়াতে এই অজ্ঞাত তুমুল, কে এই?
চাষীকে বলি, ‘পুঁতে
দাও’; মাঝিকে ভাসাতে বলে বই খুলে বসি, কে ওই?
আমার সদর দ্বারে কড়া
নাড়ছে ? ও কে?
_ আমি তো দেখিনি তাকে, দেখেছি, মানুষ শুধু বেজে ওঠে শোকে
-তবে কি সে অশ্রু নির্মিত কোনো সহজ বিছানা! বালিশ,
সান্ত্বনা আছে
নিদ্রাকে ঔষধ ভেবে লোকাচার
জনপ্রিয় ছিল, মনে পড়ে?
এ ঠিক সেই মতো না,
বলছি তো
বিশ্বাস করো, মনে
হচ্ছে, আমিই কী? দাঁড়িয়েছি মিরর হাউসে ?
-দেখেছি, খেলার বল হারিয়ে বালকেরা ওঠে সমস্বরে ফুঁসে
-তবে কে মা-বাপ তার? অনাথ? নাকি স্বয়ম্ভু? নিজের কড়ি
নিজেকেই কিনতে খরচ
করে
প্রতিটি দোকানে
যেভাবে দোকানি এসে খুলে রাখে বাইরের জামা
সেও নগ্ন ততদূর,
তারও খেলা একাকী, সঙ্গিনীহীন
গোলে নিজেই দাঁড়িয়ে
শট মারে
কাম-ক্রোধ-মোহ ... এবং দর্শক হয়ে দেয় করতালি
-নাচের সঙ্গত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ওই নৈঃশব্দ্যের ফালি
-পুরুষেরা তার জন্য বর্ম পড়ে থাকে
নারী শুধু খুলে
যায়, বাতির সলতেটুকু জিহ্বা দিয়ে
উদযাপন করে,
ফুলগুলি নিরপেক্ষ নয়
-ফুলগুলি, কখনো উদ্বাস্তু ভাবি,কখনো ভেবেছি আশ্রয়
- তবে? ওই? বায়ুভুক, হাওয়াহরকারা, টুকরো অণবিক মৃত্যু
সুতোর কম্পাঙ্কে
যদি আবার জন্মাল
যদি, শ্বাসে, তুমি
দ্রবীভূত, যদি শোণিতে ছুটেছ
ফুসফুসে ঘুমিয়ে
রও, হৃদে এসে জাগো
পোষ্য ময়ূরদুটি,
একজন মেঘ করলে নাচে
অন্যটি রৌদ্রের
দাসী, ডেকে উঠলে ভোরবেলা হয়
তখনই শরীর জাগে,
ঘন্টা বাজে, লালা ছলকে পড়ে
তখনই শরীর, তাকে
গুরু মানি, দীক্ষা সারিলেন
-‘তোমার শরণে নিও, হে জাহাজ, হে আমার কাঙাল, কাপ্তেন’
-কান ধরি, কান্না ধরি, ধরে থাকি পুং-প্রয়োজন
কোনোদিন চিনতে পারব
কে আমায় ঘা দিয়ে বাঁচায়
কোনোদিন মহাকাশ
নীচু হলে চড়ে যেতে পারি
-তোমার যন্ত্রণা ছিল তোমার প্রেমের চেয়ে ভারী
-আমি তাকে লঘু করি, দড়ি কেটে ফেলি সারাৎসার
আবার লুফতেও যাই,
আবার উড্ডীনও হই নিজে
মনে পড়ে, কতকাল আগে
এসেছিলাম, আন্ধার-আলো
আমার পিতা ও মাতা,
ঠাকুরদা- ঠাম্মাও তাঁরা
তাঁরাই সন্ততি, আমি
যত পিছলে যাই এইসব রশ্মির জালে
ধরা পড়ি, লেপ্টে
থাকি, উত্তেজনা হলে বড় হই
আবার হ্রস্ব হই,
কবিতা বলেছে তাকে কেউ
-হয়ত জীবন মানে আঁধারের ঢেউ
-আমাকেও যেতে হবে, পাহাড় পেরিয়ে, মাঠে গড়াগড়ি দিয়ে
জলে ও চুল্লিতে
ডুবে আমাকেও দিতে হবে পরীক্ষা, হবে না?
-ততক্ষণে চাঁদ উঠবে , মুখে ঝরছে জ্যোৎস্নার ফেনা
-আমারও তেষ্টা পাবে, ছাতি ফেটে বেরোবে কলিজা
তা দেখে কাঁদবে
তুমি, কান্নায় মেশানো থাকবে নুন-জল-বিষ
-যেভাবে মানুষ মরে সেরকম পারিনি, ভাগ্যিস
-তবে কতটুকু পারি, কতবার ভাঁজ করতে ভেতরে কাপড়
পারি আর ছিঁড়ে যায়,
ছিন্নের আওয়াজ ওঠে, লজ্জা ঘৃণা ভয়
সেলাই করার আগে ছুঁচকেও দণ্ডবৎ করি
--‘তোমার শরণে নিও, হে কানন, হে আমার মাতাল, মঞ্জরী’
ছবি কৃতজ্ঞতা স্বীকার : অরিণ রায়
-
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন