"আলোর প্রতিক্ষায়"
প্রায় বছর সাতেক পর গ্রামের মাটিতে পা দিলো অপর্ণা। বাবা বারবার ফোন এ বলেছিল
তাকে আনতে এয়ারপোর্ট যাবে। সে কিছুতেই রাজি হয়নি। এখান থেকে শুধু তাকে আনতে
যাওয়ার জন্য বাবার অনেক ধকল যাবে। এখান থেকে বাস এ প্রথমে স্টেশন যাবে তারপর
ট্রেন এ কলকাতা। আবার বাস এ দমদম। শুধু শুধু এত হয়রানি। আর সে যখন সুদূর
জার্মান থেকে একা আসতে পারছে, তখন সে একাই পারবে। অবশ্য বাবার ভয় পাওয়ার যথেষ্ট
কারন আছে, কারন সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা তো আর জার্মানি বা দিল্লি তে ঘটেনি। ঘটেছিল
তার নিজের গ্রামে। তার একান্ত আপন ভালবাসার মাটিতে।
এই ভয়টাই বাবা মা পাচ্ছিলো। যে সন্ধ্যে না হয়ে যায়। ঠিক তাই হল। গ্রামটা একটু
বদলেছে মনে হল। রাস্তার অবস্থাও একটু ভালো মনে হচ্ছে। অনেক নতুন দোকান ও হয়েছে
দেখতে পাচ্ছে। যাই হোক, এখন সে যাবে কিসে ? কোনও রিকশা ও তো নেই। যদিও বাড়ি
বেশি দূরে নয়, কিন্তু এই লাগেজ নিয়ে হেঁটে যেতে পারবে কি ? আর সময় নষ্ট না করে
সে হাঁটাই মনস্থির করল। সেই মোড়টা। এক ই আছে। সেই গাছের তলা। সেই আবছা অন্ধকার।
সেই কয়েকজনের জটলা। সেই অন্ধকারের মধ্যে আগুনের ফুল্কিগুলো। অপর্ণা কাছাকাছি
আস্তেই দু-তিনজন উঠে এসে দাঁড়াল। সে ওদের পেরিয়ে যেতেই একটা সিটির আওয়াজ। সাথে
সাথে ফিসফাস। এ কাদের বাড়ি এলো রে? তারপর ওরা যা বলল, শুনে অপর্ণা র চোআল শক্ত
হয়ে গেল। কিন্তু ও কোনও সাড়া না দিয়ে চলে গেল। নাহ, কিছু বদলায়নি। আসলে এরা
বদলাবার নয়। অপর্ণা র আজ কিন্তু বুক কাঁপল না , একটুও ভয় না পেয়ে সে বাড়ির দিকে
রওনা দিলো। ওই তো বাড়ি দেখা যাচ্ছে।
বাবা বারান্দায় পায়চারি করছেন। ভাইয়ের এই বছর টুয়েলভ ফাইনাল। ও নিশ্চয় টিউশন গেছে।
ও একটু এগোতেই বাবা ওকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার
শব্দে ঘরের ভেতর থেকে মায়ের গলা শোনা গেল।। "অপু এলি মা ? আয়, আমার কাছে আয়
একবার, কতদিন দেখিনি তোকে। " অপর্ণা র চোখ দুটো জলে ভরে গেল। সেদিনের পর থেকে
মা আর বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। এখন যদিও মেডিসিন আর ফিজিওথেরাপি করে অনেক
ভাল আছে। সেদিনের পর তো প্রায় ছয় মাস মা বাক রুদ্ধ হয়ে ছিল। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে
চেয়ে থাকতো।
অপু গলা তুলে বলল, "হ্যাঁ মা আমি এসে গেছি। আমি পা টা ধুয়েই আসছি এখুনি। "
তাড়াতাড়ি করে কলতলায় গিয়ে পা ধুয়ে সে মার ঘরের দিকে এগোয়। ঘরে ঢুকে দেখে মা
ব্যাকুল চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
মা মাগো, কতদিন তোমার গায়ের গন্ধ পাইনি। কিন্তু তোমার একি চেহারা হয়েছে? বাবা
বলছিল তুমি নাকি একটুও কথা শুনছো না আজকাল ? এবার কিন্তু আমি এসে গেছি। আমি
যতদিন থাকব তোমাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। মা হেসে বলল পাগলী মেয়ে! বলতে বলতেই
আবার বেল বাজল। মা বললো ওই দেখ পাপু এলো বোধয়। পাপু, তার সেই ছোট্ট ভাইটা,
অপর্ণা ঘাড় ঘুরোতেই দেখে তার সামনে দাড়িয়ে মিষ্টি দেখতে এক তরুণ। সদ্য গোঁফ
গজানো, গালে কালচে আভার পরশ, তার আদরের ছোট্ট পাপু। ভাই এর সাথে তার বয়েস এর
তফাত অনেকটাই, তাই প্রায় মাতৃস্নেহে ও পাপুকে দেখত। "দিদি তুই এসে গেছিস! কখন
থেকে স্যার কে বলছি ছুটি দিতে।" অপর্ণা ভাইয়ের কথা শুনবে কি, অপলক নয়ন দুচোখ
ভরে ভাইকে দেখতে থাকে। বাবা, মা, ভাই তার এই অতি প্রিয় মানুষগুলোর থেকে তাকে
দূরে থাকতে হয়।
রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর আজ ওরা অনেকক্ষণ গল্প করে শুতে গেল ।কথা যেন শেষই হতে চায়না,
এইভাবে দুদিন আনন্দে কেটে যাওয়ার পর অপু সকালবেলা বাবার ঘরে গেল
'বাবা, ব্যস্ত আছো? একটু কথা বলতাম ।'
' আয় মা, বোস, বল কি বলবি? ' 'বাবা, আমি যে একটা বিশেষ ঊদ্দেশ্যে এখানে এসেছি সেটা তো তোমাকে আগেই জানিয়েছি।'
'জানি রে মা, কিন্তু কেউ তো রাজীই হচ্ছেনা ।ঠিক আছে, আজ তূই আমার সাথে একবার স্কুলে যাস। তুই নিজে একবার বলে দেখ যদি কিছু হয় ।
তাকে আনতে এয়ারপোর্ট যাবে। সে কিছুতেই রাজি হয়নি। এখান থেকে শুধু তাকে আনতে
যাওয়ার জন্য বাবার অনেক ধকল যাবে। এখান থেকে বাস এ প্রথমে স্টেশন যাবে তারপর
ট্রেন এ কলকাতা। আবার বাস এ দমদম। শুধু শুধু এত হয়রানি। আর সে যখন সুদূর
জার্মান থেকে একা আসতে পারছে, তখন সে একাই পারবে। অবশ্য বাবার ভয় পাওয়ার যথেষ্ট
কারন আছে, কারন সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা তো আর জার্মানি বা দিল্লি তে ঘটেনি। ঘটেছিল
তার নিজের গ্রামে। তার একান্ত আপন ভালবাসার মাটিতে।
এই ভয়টাই বাবা মা পাচ্ছিলো। যে সন্ধ্যে না হয়ে যায়। ঠিক তাই হল। গ্রামটা একটু
বদলেছে মনে হল। রাস্তার অবস্থাও একটু ভালো মনে হচ্ছে। অনেক নতুন দোকান ও হয়েছে
দেখতে পাচ্ছে। যাই হোক, এখন সে যাবে কিসে ? কোনও রিকশা ও তো নেই। যদিও বাড়ি
বেশি দূরে নয়, কিন্তু এই লাগেজ নিয়ে হেঁটে যেতে পারবে কি ? আর সময় নষ্ট না করে
সে হাঁটাই মনস্থির করল। সেই মোড়টা। এক ই আছে। সেই গাছের তলা। সেই আবছা অন্ধকার।
সেই কয়েকজনের জটলা। সেই অন্ধকারের মধ্যে আগুনের ফুল্কিগুলো। অপর্ণা কাছাকাছি
আস্তেই দু-তিনজন উঠে এসে দাঁড়াল। সে ওদের পেরিয়ে যেতেই একটা সিটির আওয়াজ। সাথে
সাথে ফিসফাস। এ কাদের বাড়ি এলো রে? তারপর ওরা যা বলল, শুনে অপর্ণা র চোআল শক্ত
হয়ে গেল। কিন্তু ও কোনও সাড়া না দিয়ে চলে গেল। নাহ, কিছু বদলায়নি। আসলে এরা
বদলাবার নয়। অপর্ণা র আজ কিন্তু বুক কাঁপল না , একটুও ভয় না পেয়ে সে বাড়ির দিকে
রওনা দিলো। ওই তো বাড়ি দেখা যাচ্ছে।
বাবা বারান্দায় পায়চারি করছেন। ভাইয়ের এই বছর টুয়েলভ ফাইনাল। ও নিশ্চয় টিউশন গেছে।
ও একটু এগোতেই বাবা ওকে দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এসে দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার
শব্দে ঘরের ভেতর থেকে মায়ের গলা শোনা গেল।। "অপু এলি মা ? আয়, আমার কাছে আয়
একবার, কতদিন দেখিনি তোকে। " অপর্ণা র চোখ দুটো জলে ভরে গেল। সেদিনের পর থেকে
মা আর বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। এখন যদিও মেডিসিন আর ফিজিওথেরাপি করে অনেক
ভাল আছে। সেদিনের পর তো প্রায় ছয় মাস মা বাক রুদ্ধ হয়ে ছিল। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে
চেয়ে থাকতো।
অপু গলা তুলে বলল, "হ্যাঁ মা আমি এসে গেছি। আমি পা টা ধুয়েই আসছি এখুনি। "
তাড়াতাড়ি করে কলতলায় গিয়ে পা ধুয়ে সে মার ঘরের দিকে এগোয়। ঘরে ঢুকে দেখে মা
ব্যাকুল চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। সে দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
মা মাগো, কতদিন তোমার গায়ের গন্ধ পাইনি। কিন্তু তোমার একি চেহারা হয়েছে? বাবা
বলছিল তুমি নাকি একটুও কথা শুনছো না আজকাল ? এবার কিন্তু আমি এসে গেছি। আমি
যতদিন থাকব তোমাকে আমার সব কথা শুনতে হবে। মা হেসে বলল পাগলী মেয়ে! বলতে বলতেই
আবার বেল বাজল। মা বললো ওই দেখ পাপু এলো বোধয়। পাপু, তার সেই ছোট্ট ভাইটা,
অপর্ণা ঘাড় ঘুরোতেই দেখে তার সামনে দাড়িয়ে মিষ্টি দেখতে এক তরুণ। সদ্য গোঁফ
গজানো, গালে কালচে আভার পরশ, তার আদরের ছোট্ট পাপু। ভাই এর সাথে তার বয়েস এর
তফাত অনেকটাই, তাই প্রায় মাতৃস্নেহে ও পাপুকে দেখত। "দিদি তুই এসে গেছিস! কখন
থেকে স্যার কে বলছি ছুটি দিতে।" অপর্ণা ভাইয়ের কথা শুনবে কি, অপলক নয়ন দুচোখ
ভরে ভাইকে দেখতে থাকে। বাবা, মা, ভাই তার এই অতি প্রিয় মানুষগুলোর থেকে তাকে
দূরে থাকতে হয়।
রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর আজ ওরা অনেকক্ষণ গল্প করে শুতে গেল ।কথা যেন শেষই হতে চায়না,
এইভাবে দুদিন আনন্দে কেটে যাওয়ার পর অপু সকালবেলা বাবার ঘরে গেল
'বাবা, ব্যস্ত আছো? একটু কথা বলতাম ।'
' আয় মা, বোস, বল কি বলবি? ' 'বাবা, আমি যে একটা বিশেষ ঊদ্দেশ্যে এখানে এসেছি সেটা তো তোমাকে আগেই জানিয়েছি।'
'জানি রে মা, কিন্তু কেউ তো রাজীই হচ্ছেনা ।ঠিক আছে, আজ তূই আমার সাথে একবার স্কুলে যাস। তুই নিজে একবার বলে দেখ যদি কিছু হয় ।
------- ক্রমশঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন