চোখের আলোয়
-----একটু জোরে চালাও না রিক্সাটা, গেস্ট হাউজে রাত ১১টার মধ্যে ঢুকতে হবে, বলল লাল্টু।
-------এই তো চালাচ্ছি বাবু, আসলে গরমে শলীলটা বেশ খারাপ ছেল দু দিন, (কথাবার্তা তে পুরো বহরমপুরের মানুষের ভাষার ছাপ)
------ এখানে কতদিন আছে? রিক্সায় বসা আরেকটি কণ্ঠস্বর পেল রিক্সা চালক।
------সাথে সাথে উত্তর আসে চালকের কাছ থেকে-- সে তো জন্ম থেকেই এখানে।
------রিক্সায় বসা লাল্টু, পল্টু পরস্পরের মুখ চাওয়া- চাই করতে লাগলো।
------গন্তব্যস্থান আসা মাত্রই রিক্সাওয়ালাকে দেখার জন্য লাফ দিয়ে নামলে দু জনে।
দেখেই চিনে ফেলেছে ওরা, কি গো রামকৃষ্ণদা আমাদেরকে চিনতে পারছো না?
-------কে রামকেষ্ট , তারে তো চিনিনা! আমি রসুল মিঞা। দেন তো টেহা কটা, আজ রাত ভোর রিস্কা টানতি হবে, আজ যে ভরা পূর্ণিমা। সামনের পূর্ণিমায়...
------ কি? কি? বলে সামনের পূর্ণিমায়?দুজনেই বলে। ওঠে।
--------না মানে, টেহাটা দিন তো!
--------তোমার কি কিছু মনে নেই,রামকৃষ্ণদা, আমাদের কথা, বহরমপুরের কথা? সেই যে তোমাদের সবাই কে নিয়ে আমরা পাঁচ জন বাস ছেড়ে ছিলাম পুরী যাবো বলে? সব, সওব কি ভুলে গেলে? কত খুঁজেছি তোমাকে আমরা, যেদিন তুমি হারিয়ে গেলে সেদিন থেকে। বৌদি, বাচ্চাগুলো কত কান্নাকাটি করেছে, তুমি জানো? বলল নান্টু।
-------মশাই টেহা টা দিবেন না চলি যাবো?
------অনেকটা হতভম্ব হয়েই টাকাটা দিল পল্টু।
---------টাকা নিয়ে, রিক্সাটাকে ফিরিতে নিয়ে যেতে যেতে রামকৃষ্ণ মনে মনে বলে, সব মনে পড়ে রে লাল্টু। আমি চলে গেলে, সেদিন সমুদ্দুরের থেকে ভেসে ওঠা আধমরা, নীলোফারের বাবা কে হবে? অন্ধ বলে যে কেউ যে ওর সুযোগ নিতি পারে, আগে যে, সে এই পাশবিক অত্যাচারেই অন্ধ হয়ে গেছে। তীর্থ ক্ষেত্রেও মানুষের পারে সীমা নেই। তাই তো ঐ নিষ্পাপ পেরানটাকে বাঁচাতে আমি ই না হয় , ধর্ম খোয়ালাম!
ডাঃ তো বলিছেন, সামনের হপ্তায়, একটা মরা মানসের চোখ বসানো যাবে নীলুর চোখে। আজকের দিনটা একটু বেশী খাটি। টেহার দরকার যে বড্ড। আমি জানি, মিনতি আমারে ছাড়া নেতাই কে নিয়ে সাথে ঘর কন্যা করছে, শুধু বাবলুটার জন্য মন ছ্যাচায়!
পূর্ণিমার আলো পড়ে গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত চিকচিক করতে থাকে, তার ঢেউ বোধহয় রামকৃষ্ণের চোখের এসে লেগেছে। তবুও নাটুকে ছাড়া যাবে না, সে যে, তার ভরসায় গত স্মৃতি ভুলে বেঁচে আছে।
***********
**************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন