পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

রীনা রায়


"পরিবর্তন "
*********
আজ রোববার, স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। অনেকদিন বাদে আজ অনন্যার ইচ্ছে হল ছুটিটাকে একটু নিজের মতো করে উপভোগ করার। কতদিন, মনে হয় যেন এই জন্মে নয়, সব আনন্দগুলো আগের কোনো জন্মে করে এসেছে। কতদিন ও যেন বিছানায় শুয়ে আয়েশ করতেই ভুলে গেছে, কতদিন কোনো সিনেমা দেখেনি, মন খুলে শপিংও করেনি।
যদিও বাজার হাট সবই এখন ওকে নিজেকেই করতে হয়, কিন্তু সে তো শুধুই প্রয়োজনের সামগ্রী কেনা, তাকে শপিং বলেনা!
আচ্ছা আজ মল্লিকাদিকে ডেকে নিলে কেমন হয় । সেও তো একা, ছেলে চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে গেল, কিন্তু মল্লিকাদি, স্কুলের টানে এখানেই রয়ে গেল।
মল্লিকাদির সাথে এখানেই লাঞ্চ করে, মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে একটা সিনেমা দেখে, তারপর যা মন চাইবে এলোমেলো শপিং করে কোনো রেস্তরাঁয় ডিনার সেরে ফিরলে কেমন হয় ।
হ্যাঁ, এখন ওকে বাধা দেবার কেউ নেই । এই ক মাসে নিজের ওপর বিশ্বাসটাও একটু করে ফিরে এসেছে ।
কতদিন হল,,,, প্রায় সাতমাস হতে চলল। প্রতিদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি পেয়েছে।
না ভাববোনা,,,,, ভাববোনা,,, ,, আমি ভুলে যেতে চাই, কিন্তু ভুলবো কি করে! ওরা যে ঋককেও কেড়ে নিলো।
তখনও ও চাকরিটা পায়নি, মা ছেলের ভরণপোষণে অক্ষম, এই অজুহাতে ওরা ছেলের কাস্টডি পেয়ে গেল ।
হ্যাঁ, সপ্তাহে একবার ছেলের সাথে দেখা করার পারমিশন্ ও কোর্ট থেকে পেয়েছে। ছেলের প্রতিদিন স্কুল, টিউশন থাকে, তাই ও রবিবার যেতো, কিন্তু এখন এই স্কুলের চাকরিটার জন্য ওকে অনেকটা দূরে চলে আসতে হয়েছে, তাই এখন আর ইচ্ছে হলেও হয়না। প্রায় ছয় ঘণ্টার জার্নি করে যাওয়ার পর সেদিন ফেরা সম্ভব হয়না। পরেরদিন স্কুল থাকে, ও অনেকবার চেষ্টা করেছে ছুটি নিয়ে ছেলের সাথে দেখা করতে, নতুন চাকরি, কয়েকবার ওর মুখ চেয়ে কনসিডার করলেও প্রতি সোমবার ছুটি দিতে স্কুল যে অপারগ সেটা বড়দি, সুমিতাদি জানিয়ে দিয়েছেন।
এখন ও নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে।
গরমের ছুটিতে ও যখন গেল, শুনলো ওরা সবাই ঋককে নিয়ে বেড়াতে গেছে ।আশ্চর্য, ওকে একবার জানানোর দরকারও মনে করলো না।
কেনই বা করবে,,,,, ওরা তো চায়না যে ঋকের সাথে ও দেখা করুক।
সম্বিৎ ফিরতেই দেখে ওর দুচোখ জলে ভরে গেছে । তাড়াতাড়ি উঠে বসে চোখ মুছে ভাবলো, যাই মল্লিকাদিকে আগে ফোনটা করে নিই, এখুনি আবার সীমা চলে এলে কি রান্না হবে না হবে ওকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে। কিছু আনতে হবে কিনা দেখতে হবে।

সীমা ওর রান্না করা ছাড়াও বাকি কাজগুলোও করে দেয়। ও অন্য লোক রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু সীমার কথায় 'তুমি তো একলা মানুষ গো বউদিমণি, আর কাউকে রাখতে হবেনি বাপু, এ আমি একাই সামলে নিবো'।পরিবর্তে অবশ্য মাইনেটা ভালই নেয়। তা হোক, দশরকম লোকের থেকে এই একজনই ভালো।
ও অবশ্য প্রথমে রান্নার লোক রাখতেই চায়নি। মল্লিকাদিই জোর করেছে, বলেছে, 'রাখ, দেখবি, শরীর খারাপ হলে বা স্কুলে কাজের চাপ বাড়লে তখন কত উপকার হয়।তাছাড়া বাড়িতে একজনের সাথে দুটো কথাও তো বলতে পারবি!'
সত্যি, নিজের জন্য ও কোনোরকমে কিছু একটা করে চালিয়ে নিত, এখন তাও সীমাটার দৌলতে এটা ওটা খাওয়া হয় ।
ও কতবার বলেছে, তুই আমাকে বৌদিমণি বলবিনা, দিদি বলবি। কিন্তু কে শোনে কার কথা।মনে করালে তখন জিভ কাটে, আবার পরমুহূর্তেই সেই বৌদিমণি!
অনন্যা এখন আর কিছু বলেনা।
ওর স্কুল থাকলে সীমা সকালেই চলে আসে, ও যখন স্কুলে বেরোয়, সীমাও ওর সাথে বেরিয়ে যায় । আর রবিবার সীমা সারাদিন থাকে, মাঝে মাঝে বললে বা দরকার হলে রাত্রেও থেকে যায় । নিজের বাড়ীর প্রতি খুব একটা টান নেই। স্বামীটা মাতাল, রাত্রে এসে পেটায়। ও-ও মাঝে মাঝে নাকি দু চার ঘা দিয়ে দেয়, আবার কখনও কখনও খুব সেজেগুজে আসে, জিজ্ঞেস করলে সাতকাহন করে স্বামীর সোহাগের কথা বলে। ছেলে-মেয়ে নেই , একটা মেয়ে হয়েই মারা যায়, তারপর আর হয়নি। এদের বয়স কত আন্দাজ করা যায়না, জিজ্ঞেস করলেও ঠিকঠাক বলতে পারেনা।
মল্লিকাদিকে ফোন করার পর অনন্যা ভাবতে বসলো, কি কি রান্না হবে ।
কারণ স্বামী মারা যাওয়ার পর মল্লিকাদি এখন নিরামিষ খান ।
ও সীমাকে ডেকে বললো, "শোন, আজ নিরামিষ রান্না হবে। মল্লিকাদিকে
খেতে বলেছি।আজ আমি রান্না করবো, তুই চট করে কটা জিনিস কিনে আন।
অনন্যা মনে মনে ভেবে নিলো কি রান্না করবে, --নারকেল দিয়ে ভাজা মুগের ডাল, ঝিরঝিরে আলুভাজা, পোস্তবড়া, দই পটল, ফুলকপির তরকারি, ছানার ডালনা আর আলুবোখরার চাটনী। সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের বিখ্যাত লাল দই থাকবে।
সীমাকে বাজারে পাঠিয়ে অনন্যা স্নানটা সেরে নিতে বাথরুমে গেল ।

--ক্রমশঃ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন