পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

পিয়াংকী মুখার্জী



১)বৃষ্টিস্নাত বিকেল 


আকাশের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আজ গর্ভবতী করেছে আজন্ম নিস্ফলা বন্ধ্যা দুপুরকে , 
কক্ষপথ নিংড়ে  মেঘেরা সাজিয়েছে প্রসবযন্ত্রণা , 
মুঠো মুঠো জলকণা আঁজলা ভরে গুছিয়ে নিয়ে 
বিকেল জন্মেছে পৃথিবীর চোখ সিক্ত করে । 

জমাখরচের খতিয়ান খুলে বসা অপ্রেমিকও আজ ধারাপাতের সুরে গুণছে বৃষ্টির  টুপটাপ ! 
ওই যে দূরে  নন্দনের ঐতিহ্য শিকেয় তুলে প্রকাশ্য উষ্ণ ওষ্ঠচুম্বনে স্নাত হচ্ছে এজন্ম ! 
শিকল ছিঁড়ে  গৃহবধূ আজ ঘুঙুর পরে নাচছে কত্থক , উড়ছে আঁচল ভিজছে ছাদ ।
অশ্রু-বৃষ্টি-মাখা জলে  মায়ের চিতার আগুন  ধুইয়ে মানবজন্মের ঋনশোধ করছে এক মফঃস্বলী সন্তান ! 


আমার শহরের শিলালিপি আজ  পাঠোদ্ধার হলো বৃষ্টিস্নাত বিকেলের হাতে  !




২)

বৃষ্টি যখন প্রতিপক্ষ 
*****************



আদুরে আলোমাখা স্নেহেরা ফিরে গেছে ...
 বৃষ্টির মেঘপিওন ডাকবাক্সে জমিয়ে রেখেছে আগামী জীবনের সবকটা চিঠি । 
যদিও ছেঁড়াকাগজের কালিমাখা অক্ষরগুলো স্নান করে পরিশুদ্ধ হয়েছে তবুও তারা অসম্ভব ঝাপসা আজ ! 

জানালার ঘষা কাঁচে এখন শুধুই নিস্তব্ধতার আয়োজন ! 
নশ্বর দেহের প্রতিটি অঙ্গ থেকে খুলে খুলে পড়ছে আবদার মাখা গ্রীষ্মের গয়না ॥ 

তাও মেয়েটা নিশ্চুপ ! 
হ্যাঁ , বর্ষা এসেছিলো বন্ধুর মতো দুহাত বাড়িয়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে ভেজাতেও চেয়েছিলো  ওর  পিছল-মন ...

মেয়েটা ভেজেনি বিয়োজনের ভয়ে ॥ 

শ্মশানে দাঁড়িয়ে ও মেখে নিয়েছে বাবার অবিনশ্বর আত্মা !



৩)

বৃষ্টির বর্ষা 
*********



তারিখটা আজ আর মনে পড়ে  না ,
আটকে রাখার শত চেস্টা বিবর্ণ করে সে ফিরে গেছে ঠিক সেদিনের মতো করে অন্য কোথাও ...
তবে শোভাবাজারের মুখের বটগাছটা নিজস্ব দম্ভ আর দৃপ্তি নিয়ে মেরুদন্ডীর তকমা বুকে সাঁটিয়ে এখনো আশ্রয় দেয় সহস্র পাগলাঝোরাকে ...
আনকোরা দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যায়  যখন  আকাশের কোল চিকচিক করে ওঠে জলের স্রোতে , , , 
 নতুন হলুদ-পাখি ভিজে যায় উষ্ণতার বৃষ্টিতে ! 

সেদিনও , বৃষ্টির ফোঁটারা  ওই বটগাছের পাতাগুলোকে তোষামোদি করে ধীরে ধীরে দুমদাম - টুপটাপ - টিপটিপ নানান মুদ্রায় ঝরে পড়ছিল আমার চোখের কাজল লেপ্টে দিয়ে তোমার  রিমলেস চশমার বাইফোকাল কাঁচে ।

রোদ্দুর ভেজা বিকেলে বৃষ্টি নেমেছিলো শহরের মেঘে , 
কিন্তু ...
বর্ষা এসেছিলো দুটো মনের ভিতর ঘরে ॥ 

সেদিনের শব্দেরা এই মুহূর্তেও আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে ...
মনে পড়ছে , তুমি বলেছিলে , "নদী আছড়ে পড়লে তার কোনো আবরণ থাকে না , সে তখন শব্দবিহীন 
"
কি ভীষন অট্টহাসিতে শোভাবাজার কাঁপিয়ে আমি বলে উঠেছিলাম , 
 " পর্বত ভাঙ্গছে অণু-পরমাণুতে , তাই বুঝি তার এত্ত উদ্দাম উত্তাল শোকপ্রকাশ  ? ? "


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন