ছোট্ট সানাকে
স্কুল দিতে যাবার সময়ই আজ তপতী ভেবে নিয়েছিল কিছুতেই স্কুলের পাশের গলির দিকে
তাকাবে না । একটা উটকো সমস্যা শুরু হয়েছে দিন পনেরো হলো । তবে তার আগেও হতে পারে । কিন্তু তপতী নোটিশ
করেছে পনেরো দিন আগে । সানাকে স্কুলের গেটের ভিতর ছেড়ে দিয়ে মনটাকে শক্ত করে ফেরার
পথ ধরে তপতী । কিন্তু শেষমুহূর্তে নিজের অজান্তেই পিছন দিকে তাকিয়ে ফেলে তপতী । আর
ঠিক চোখাচোখি হয়ে যায় বয়স্ক ভদ্রমহিলার সঙ্গে ।
পরেরদিন গিয়ে
দেখে যথারীতি ওই মহিলা দাঁড়িয়ে আছে আর তার দিকে একদৃষ্টে দেখছে । দেখেও না দেখার ভান করে সানাকে গেটের ভিতর ছেড়ে
দিয়ে ফেরার পথ ধরে । আজ মহিলাটি তার সামনে রাস্তা আটকিয়ে দাঁড়ায় ।
বলে,সুমনাপিসিকে
মনে আছে ? তোমাদের বাড়িতে থাকত একটা সময় ।
তপতী ভাল করে
দেখে মহিলাটিকে ।হ্যাঁ, ইনি সুমনাপিসিই । বয়সের ছাপ পড়লেও চেনা যায় ।
কি গো বুড়িমা,
চিনতে পারছ না ?
আর তো কোন
সংশয়ের জায়গা নেই । বুড়িমা বলেই সুমনাপিসি তাকে ডাকত । আর সুমনাপিসিকে সে তো কোনদিন
ভুলতে পারবে না । ভোলা সম্ভব না ।তার দশ বছরের জন্মদিনে দিদার থেকে সোনার রিং
উপহার পেয়েছিল । কিন্তু তার পরের দিন মা দুষ্টুমি করার জন্য বেশ বকাবকি করে । সেই রাগে কান
থেকে রিং খুলে জানলা দিয়ে বাড়ির পাশের হাই ড্রেনে ফেলে দিয়েছিল । কিন্তু একটা রিং
খুলে ফেলে দেওয়ার সময়েই সুমনাপিসি ঘরে চলে আসে । দেখেই ছুটে আসে । বলে, এটা কী
করলে বুড়িমা ! বৌদি জানলে খুব রাগ করবে ।
পরে মায়ের আদরে
রাগ ভাল হয়ে গেলে সে রিং ফেলে দেবার কথা ভুলেও গিয়েছিল । গোলমাল বাঁধলো পরেরদিন
স্কুল যাবার সময় মা যখন চুল বাঁধতে গিয়ে একটা কানে রিং দেখতে পেলো না । তাকে
জিজ্ঞাসা করলে ভয়ে সত্যি কথাটা মাকে বলতে পারেনি তপতী ।
সেদিন স্কুল
থেকে ফিরে সুমনা পিসিকে দেখতে পায়নি । পিসি কোথায় জানতে চাইলে মা বলে দিয়েছিল,
পিসি আর এ বাড়িতে থাকবে না ।
পরে বাবা মায়ের
আলোচনায় বুঝতে পেরেছিল কানের রিং না পাওয়ার জন্য মা পিসিকে দায়ী করে বাড়ি থেকে
তাড়িয়ে দিয়েছে ।
আজ সেই
সুমনাপিসি সামনে দাঁড়িয়ে । কী করবে সে ? সে তার পুরোনো অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা
চাইবে, নাকি চিনতেই অস্বীকার করবে মানুষটাকে ।
বেশ কিছুটা সময়
মুখোমুখী দাঁড়িয়ে থাকার পরে সুমনাপিসি নিজে থেকেই বলে, আমিই বোধহয় চিনতে ভুল করেছি
। কিছু মনে করো না । তোমার অনেকটা সময় নষ্ট করে দিলাম ।
সুমনাপিসি চলে
যাবার পর তপতী মনে প্রশ্ন জাগে । এতদিন পর
সুমনাপিসি কেন এলো তার কাছে ? কী করে খোঁজ পেলো তার ? তাহলে কী কোনো প্রয়োজনে . . .
চোখটা ভিজে যায়
তপতীর । ভাবে, সেদিনের অপরাধ না আজকের অপরাধ, কোনটা বেশী ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন