নিজস্ব ছায়ার প্রতি
এক
এই যে এখন সকাল হল, ছায়াগুলো হেঁটে গেল কাঠবেড়ালির দিকে। আমি অতীত জড়িয়ে নিচ্ছি আলোয়, চাদর জড়িয়ে নিচ্ছি – এমনকি অলস হাসির মধ্যে লুকিয়ে রাখছি একটা গোটা বালিচক লোকাল। স্টেশন জুড়ে এখন বিস্মৃতির পদাবলি। টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিবর্ণ পাতায়। আমার আতসকাচ নেই, সমুদ্র নেই, এমনকি একটা নির্মেঘ আকাশও নেই। অথচ আমি খোলা খাতাটিকে বুকে জড়িয়ে অনর্গল বলে চলেছি অশ্লীল মৃত্যুর কথা। এখন ভিখিরির মতো হাত পেতে আছি। শুকনো পাতার বিষণ্ণতা ছিঁড়েখুঁড়ে দেয়। শীতের বিকেলে নরম অভিমান পাশে এসে বসে। দু’হাতের মধ্যে তখন নিজের ছায়া, জলপ্রপাতের শব্দ। এখন জানালার পাশে বিপন্ন পলিমাটি জমা করি অকারণ....
দুই
চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করছে আজ। কুয়াশা জমেছে। ধুলো জমেছে। স্মৃতির পাশে এখন বিষণ্ণ কামরাঙা গাছ। গুটিশুটি শুয়ে আছে নিরীহ গিটার। সুর লাগছে না, আবেগ লাগছে না। বারবার সারানো সত্বেও আকাশ ফুটো হয়ে বৃষ্টি নামছে। পৃথিবীর সব সবুজ আজ ভিজে যাবে। দরজায় এখনই তালা দিয়ে দেব। ঘুম পাচ্ছে। অসহায় আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। গোপন সেই পাচিলের কাছে নতজানু হতে হবে। সারারাত ধরে জলপ্রপাতের শব্দ শুনব। একটা চিঠি লিখতে হবে। অন্ধকারময় এক পোস্টকার্ডে সেই চিঠি লিখব। ব্যর্থতা লিখব। ঘুম লিখব। আয় ঘুম...আয় ঘুম...তোমার আঙুলে ঢুকে পড়ছে কামরাঙা ফুল।
তিন
নদী মানেই একটা শীতল ছায়া। প্রায়শই ঘুমিয়ে থাকে বুকের বাম দিকটায়। রোদে ও পিপাসায় জীবন এলোমেলো হয়। ঘুড়ি ডিঙিয়ে ছুটে যায় ভেজা আকাশের দিকে, পাখিদের দিকে। হয়তো বহুদূরবর্তী কেউ ঠিক লক্ষ্য রাখছে। আগামী রাত্রিগুলোকে বলে দেবে কুর্চির ব্যথাতুর তিলটির কথা। সেই তিল মেঘের ভেতরে খেলে বেড়ায়, শুভেচ্ছা জানায় ঘুমের ভেতরে, গভীর শরীরী শুভেচ্ছা। ছায়ার বুকে, নদীর বুকে শোনা যায় জলের গর্জন। ঝড় আসতে পারে। তুমুল ঝড়। তীব্র হাওয়ায় কেঁপে উঠবে পূর্বজন্মের স্মৃতি। সেই জন্মে একটিও নদীর হৃদয়ে বৃষ্টি নামেনি। ভুল করেও ভিজে যায়নি নদীটির চোখ, চোখের পাতা। অভিশপ্ত সেই জীবনের দিকে বারবার ছুটে যাচ্ছে ছেলেটি, মেয়েটিও। ছুটে যাচ্ছে তাদের জীবনের আজব দোলাচল নিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন