পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

বিশ্বজিৎ দাস

                                           

                  

 

এই সপ্তাহের কবি বিশ্বজিৎ দাসl১৯৮৫ সালে উত্তর চবিবশ পরগনার ভবানীপুরে  জন্ম। ছোট থেকেই আশৈশব ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে এবং অর্থনৈতিক অবহেলায় এই জীবন ও জগতকে চিনতে চিনতে কবিতায় এসেছেন। বলা যায়, সব ব্যর্থতাই একদিন তাকে কবিতায় এনেছে। কবির প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ : হ্যালোজেন ও স্পর্ধাগুচ্ছ। প্রথম প্রকাশ : ২০১৭। প্রকাশক : ধানসিঁড়ি। প্রথম দশকের কবি। 
পেশা : অধ্যাপনা 
গবেষক : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
(বিষয় : পূর্ব-পাকিস্তানের বাংলা কবিতার গতিপ্রকৃতি : ১৯৪৭-৭১) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে গবেষণা করছেন, বাংলাদেশের কবিতা :১৯৭১-২০০০)

১.
প্রাজ্ঞ চাঁদের ঘোড়ায় চলে যাচ্ছে 
                    আমাদের তারকদা
হঠাৎই অসামঞ্জস্য ঘুমের ভিতর মুনসাইন

স্বপ্ন কিনতে বেরিয়ে পড়ে
সোজা রাস্তায়। কুড়ানো কাগজে দেখে

মাতৃবিয়োগের খবর! খুব জোরে ইংরেজি
আওড়ায়; যেভাবে উত্তরহীন জীবন কেটে যায়...

২.
নিউরোট্রান্সমিটার খেয়ে ফেলেছে ওপাড়ার
নিমাইদা। গাছে গাছে লুনাটিক মূর্তির আসর

খুলির সংসারে শুধু পাতা। সেও শুনেছে
সবুজ রঙের মধ্যে ভাদুটুসুর গান

খিদে পায়। দস্তার থালায় ভাসে
আদিবাসী পাজর চোয়ানো এক দুরন্ত ইয়ার্কি!

নিমাই সরদার আবারও একদিন 
গাছের মইয়ে আকাশে উঠে যায়...

৩.
গগেনদা কি করে পাগল হল জানি না
শুধু দেখেছি, বাঁশ বাগানে বসে থাকে

পাতার ফাঁকে সে দ্যাখে ফুলমুন
সাইকোসিস চিবোতে চিবোতে ঘুমিয়ে পড়ে

মুখভর্তি দাঁড়িতে জমিয়ে রাখে
ঘটনার পৌনঃপুনিকতা

আর
তিরিশ বছর আগের ভুল ঋতুর গ্যালাক্সি

৪.
কয়লা ব্যাপারীর মেয়ের 
প্রেমে পড়েছে বারাসাতের অভীক

খোঁজ নিয়ে জেনেছি এটি প্রেম নয়
ডোপামিন বেড়েছে খুলির ভেতরে

কালো রক্তের শৈশবে,
স্কুল আর বাড়িই বাইপোলার অসুখ!
বাড়ির প্লাস্টারে আটকানো তাঁর শরীর

কখনো জানতে চায়নি বাবা মা
কতটা মন খুলে দিলে, জ্যোৎস্না পাবে ছেলে
মুনস্ট্রাক হবে না; কতটুকু ভালোবাসা পেলে...

৫.
বেহুলা পাগলি কুঁই কুঁই শব্দ করলেই
লডসে সৌরভের জার্সি খুলে ওড়ানোর দৃশ্যে

দু'চোখের জল মোছে সুখ। ভাবে এই তো
ফিরে পেয়েছে সে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর

সেই বাড়ি! কিন্তু কিভাবে এসেছে সে?
ভুল তো ভাঙে না, ভাঙে কি নৈঃশব্দ্য?

ঘুম বঞ্চনার পথে; সে হারিয়েছে উৎসাহী সম্পর্ক!

৬.
একটি সুগন্ধি চাঁদের কাছে 
আশ্রয় চেয়েছিল নমিতা পাগলি

পায়নি। হ্রাসযুক্ত সম্পর্কের থেকে
সে পেয়েছে দুঃস্বপ্নের আদর

ছেড়ে গেছে স্বামী আর চাঁদ দেখা আয়না
পথে পথে এখন তাঁর বিছানা

কেউ খেয়াল করেনি, কোনো এক
অন্ধকারের জন্মগত ভয়; 
রাতের আশ্রয় হামলে পড়ে শরীরে...

মা, হয়ে গেল সে! অথচ জানল না
শুয়োরের বাচ্চা চাঁদের দ্রাঘিমা কত?

৭.
শুনেছি, 
উন্মাদ আচরণ দেখলে
যুবতী জ্যোৎস্নারা খুশি হয়!

যুবক নয়। পত্নী বিয়োগের পনেরো বছর পর
বিয়ে করে ছিলেন ভবনাদ দাশ

সুখেই চলছিল সব। একদিন রসে রাঙানো পানে
তিনি হয়ে উঠলেন মাতাল অজগর

খুন চেপে গেল মাথায়, করলেনও অবুঝে
শুধু ডুব দিলেন জলে। কেউ পেল না খুঁজে...

৮.
অসঙ্গতি কি জ্যোৎস্না ধোয়া জল?
নিজেকে দেখা এক বিশ্বাসের
ডিজাইন করা বিষণ্ন মখমল?

কেউ জানে না...

হাঁটতে হাঁটতে কোথায় থামতে হয়
কোথাও এমন সতী হওয়ার ষড়যন্ত্রে

খাওয়ানো হতো নিঝুম ধুতুরার ফল...
এও কি তবে চাঁদের উদ্যানে চাঁদের ডামাডোল?

কেউ জানে না, সেই তারাময়ীর চিতার আঁচল...

৯.
মস্তিষ্কের লুকানো হাত পা
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে

খবর আসে কুঁকড়ে যাওয়া তৈমরের
রাস্তায় ছেলেরা পিছনে লাগে

সেও উলটে দেয় লজ্জার ঢাকনা
বলে 'দেখ দেখ, ঘুমানো আয়না'!

হারামিরা তাকেই করে রাজনীতির পোস্টার
তৈমুর ছুটে বেড়ায় ভুল রোদ্দুরকে রোদ্দুর...

১০.
না, আকবর মুঘল সম্রাট নয়
ম্যাথের ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট

বহুকোষী সংঘাতে ছাড়ে প্রেমে, ছাড়ে পরিবার
এখন ড্রিমল্যান্ডে ঘুরে বেড়ায়

মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে গণিতের সূত্র

নিজেকে কখনো সম্রাট ভাবে
তো, এইমাত্র বেড়ালের ব্যামো

ছিঁড়ে গেছে চাঁদ, পর্যায়ক্রমের ঘুম কাঠামো...

১১.
চন্দ্রাহত হয়ে এ জীবন কাটিয়েছে
ভবানীপুরের কোনো এক যুবক

নাম তার জেনে কি হবে?

চান্দ্রজন্মের প্রভাবিত জ্বর নিয়ে
সে হয়ে উঠেছে ক্রমশই আনসাউন্ড ম্যান

তাকে দিও পলাশীর অবশিষ্ট মেঘ
ফারাক্কার জলের স্রোতভাঙা ডানা

সেও তো চায়নি কিছু, হ্যালুসিনেশন ছাড়া...

১২.
যতটুকু পড়ে বুঝেছে সে
চাঁদের পোশাক বদলের সাথে

মানুষের হাত, পা, সোহাগ বদল হয়
বাইবেলের নেবুচাডনেজ্জারের কাহিনী

যদি প্রথম লিখিত পাগলামি হয়ে থাকে
যদি বিয়েট্রি প্রথম মানুষকে মুক্ত করে

তবে ফিলিপ পিনেলই তার পিতা
জঁ বাপ্টিস্ট পুসির কথাও তিনি

করেননি অস্বীকার, তবু তিনিই ছিলেন
অগঠিত পৃথিবীর সবচেয়ে সুপুরুষ পাগল

মানুষের হৃদয় স্পর্শের জন্য...

১৩.
নিজেকে পিছন থেকে দেখার সৌজন্যে
এই সুসজ্জিত হত্যার নির্বাক মাতন

নিয়ে গিয়েছে চন্দ্রলোকের দিকে
সে মেয়েটি, কখনো জানতো না

জোর পুরুষের শরীর কি?
অনিচ্ছুক মাংসের ভিতর হাঙরের নখ

ওই মেয়েই তো বুঝেছে, 
ধমনীতে রক্ত আর আবেগের মিস ইউজ!

১৪.
বাবা কিনেছে চাঁদের ঘুম
ছেলেও কিনেছে চন্দ্রাহত বাড়ি

দুজনই আপাতত মেঘের হলে সিনেমা দেখে
ছেলেটির মা যে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসের তলদেশে

দেখে যাচ্ছে সাইন্যাপসের জানজট...

বলো, এ জীবনের 
হলুদ চশমায় আর কি কি দেখা বাকি থাকে?

১৫.
পরীদের সঙ্গ ওর ভালো লাগে
অদূর জ্যোৎস্নার উদ্যানে বসে থাকে

বাবা মা হ্রদের দরজায়
মরা স্বপ্নদৃশ্য আঁকে নীল অশ্রুজলে...

ভাতের কাঁকরই জোটে না
তো আবার আহত মেয়ের জন্য কি 

বোধ রঙের পালকি কিনে আনবে?

১৬.
অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল কুড়ি বছর আগে
স্নায়ুর ভিতরে জমে আছে চাঁদরঙ

তবু একদিন নোঙরের টানে
বিষাদের নোলক পরে ছুটে গেছে

একটা মিথ্যে আয়নার সামনে
জেনেছে পাখিদের পুতুল নেই

নদীর বুকে ছাই হওয়া সব জল
বেহালা বাদকের প্রগাঢ় পাপড়ি

আর দেহমাংসের প্রত্যাশিত সম্বল
নিয়েছে ওই এক সন্ধ্যারসের পুচ্ছধারণ ফল!

বলো, এঁকে কি তোমরা পাগল পুতুল বলবে?

১৭.
সন্দেহের বাসনা থেকে যে রঙ ঝরে
সেখানে রেখো অনিশ্চিত সবেদা

ওর গায়ে ঝুরো চামড়ায় হাত দিয়ে
দেখো না সহস্র নদীর সিল্ক

ছেলেটি এখনো জানে না
স্ত্রীলোকের পাহাড়ে কত ফাটল

ধস নেমেছে মাঠের অবসরে

আর্কাইভ জড়ানো প্রাচীন ঈর্ষা
ছিন্নমস্তা বানিয়েছে ওই রমনীকে...

১৮.
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে
আজকাল এগিয়ে গেছে ধরাধাম

সাধকরা সুরের শিকড়ে নামে
সহজ কি বুঝে নিতে নিতে ফুরিয়ে যায়

এভাবে জেনেছি ভবা পাগলার কথা
তিনিও কি সত্যিই পাগল?

নাকি সম্মোহনের নজর এড়িয়ে
সোসাইটির হৃদয় থেকে উড়ে যাচ্ছে

এক একটি সুখগামী জোনাকির দল...

১৯.
বাড়ির ভিতরে গানঘর; দেহঘড়ি
সময়ে সময়ে গেয়ে ওঠে

নিউরোসিসের সমস্যার চাদরে
রাখা ছিল, 
'সব লোকে কয় লালন কি জাত'?

রিপোর্ট এলে জানা যাবে এই স্বপ্নঘরে 
চাঁদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বরাবরই

লালনও কি তবে
বাউলের একতারায় এক পাগলাঘর?

২০.
রবীন্দ্রনাথ পাগলের মহৌষধি নিয়ে
বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন

তাঁর উক্ত বক্তব্য অনুযায়ী 
আমরা কি ধরে নিতে পারি, তিনি পাগল?

উনি ক্লোরপ্রমাজিন খাননি! খেলে হয়তো
আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতেন!

আমরা হয়তো পেতাম না মৃতপুত্রের গান,
জ্যোৎস্নাহত না হলে কি গীতাঞ্জলি লেখা সম্ভব?





৩টি মন্তব্য: