পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

জয়তী রায় ( মুনিয়া)

                                                   


 



মস্তিষ্কের ভুল ভুলাইয়া / মানব জীবনের অভিশাপ

************

   দ্বিতীয় ভাগ


___________________

 দ্বিতীয় ভাগে আলোচ্য বিষয় হবে, কিছু ঘরোয়া টিপস। প্রাচীন সনাতনী বিলুপ্ত প্রায় কিছু অভ্যেস। যেগুলি সাহায্য করবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে। 

*************

ঋষি বলতেন: যে কোনো অভ্যাস ছোট থেকেই তৈরি করো। শরীর এবং মনের বিদ্যায় অভিজ্ঞ ঋষিদের কাছে বালক বয়স থেকেই ধ্যান ছিল জরুরি।  বালক যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হবে, অভিভাবকের বেড়া সরে যাবে, তখন যেন সাফল্য আর ব্যর্থতা দুটোই বহন করার মত শক্তি ধারণ করতে পারে। ধ্যানের মধ্যে দিয়ে উজ্জীবিত হতে থাকে মস্তিষ্কের কোষকলা।

  বিজ্ঞান বলে, ভুলে যাওয়া  মস্তিষ্কের রোগ। তার  কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। মস্তিষ্ক ক্ষমতা উন্নত করার প্রক্রিয়া ত্রিকালজ্ঞ ঋষিরা বলে গিয়েছেন। মানব জীবন সুন্দর করার জন্য নিরন্তর গবেষণা করতেন তাঁরা। হয়ত কালের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে চলে গেছে সে সমস্ত উপায়। তবু, কিছু এখনো আছে। তার আগে , আরো একবার বলি, স্মৃতিভ্রংশ হল নিঃশব্দ হত্যাকারী। খুব ধীরে ধীরে আসে। কাজেই প্রতিদিন নিজেকে একবার করে দেখতে হবে।  হ্যাঁ বন্ধু! নিজেকে আগে বাঁচিয়ে তারপর অন্যের জন্য ভাবতে হবে। 

লক্ষ্য রাখতে হবে:

 :একদিনে কতটা মনে রাখতে পারছি। কিছুক্ষণ আগের কথা ভুলে যাচ্ছি কি না?

: রান্নার রেসিপি, টেলিফোন নম্বর , ব্যাংক কার্ডের তথ্য ভুলে যাচ্ছি কি না? 

: ফোন নম্বর ভুলে যাওয়া অথবা নাম মনে করতে না পারা। 

: সকালের ওষুধ খাওয়া হল কি না? কিছুতেই মনে পড়ছে না। 

: কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। 


    অবহেলা একেবারে নয়। যৌবন মানে হল ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা। তাকে ঠিক মত কাজে লাগাতে হবে। যৌবনে অনেক কিছু করার ক্ষমতা থাকে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধ বয়সে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করতে হয়।

***********

  তাহলে উপায়:

****************

১. জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া হোক অ উ ম শব্দটি। ওম। ধর্মের সঙ্গে যোগসূত্র খোঁজার প্রয়োজন নেই। সকালে পাঁচ বার করে সঠিক উপায়ে করলে নিজেই নিজের পরিবর্তন টের পাওয়া যাবে। 

________

২. সঠিক সঙ্গ

     নানা ধরণের লোকের সঙ্গে মিশতে হবেই। কিন্তু কেউ একজন থাক, যে এনার্জি সঞ্চারিত করতে পারে। সে যে কেউ হতে পারে। বাড়ির কাজের লোক হওয়া বিচিত্র নয়। তেমন লোক যেন সঙ্গে থাকে। একজন চরম সফল মানুষকে এখন জানি, যিনি ঘরের মেঝেতে হামাগুড়ি দিয়ে চলেন। সমস্ত ভুলে গেছেন। জীবন শুধু সাফল্য দিয়ে মাপলে চলবে না। সুখী হতে হবে আগে। এই ব্যালেন্স না জানলে নিজের খিদের মুখে নিজেকেই আহুতি দিতে হবে এক সময়। 

____________

৩. সঠিক ব্যায়াম

     ব্যাংককে দেখতাম, বিকেল হলেই ছেলে বুড়ো পিল পিল করে বেরিয়ে পড়ছে খেলতে। সেখানে কলকাতায় চলছে ফোন কালচার। আর অবান্তর গসিপ। রাজনীতি ইত্যাদি। খেলার মাঠ বন্ধ করে গড়ে উঠছে মস্তবড় বিল্ডিং। কোথায় খেলবে বাচ্চাগুলো? মা বাবা বিকেলে হাঁটবে কোথায়?

শরীরের ব্যায়ামের সঙ্গে সঙ্গে মনের ব্যায়াম জরুরি। নিয়মিত গান কেউ শুনছে না। আগে আড্ডা হত। সেমিনার হত। মস্তিষ্কের চর্চা হত। এখন সাহিত্যসভা হয়। একটা করে গল্প কবিতা পাঠ করে চলে যায় লোক। সেগুলো যদি একটু অন্যভাবে ব্যবহার করা যায়। আলোচনা সভা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। সঙ্গীত নাচ ছবি আঁকা ... ঢিমে তালে চলা মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। 

__________

৪. সূর্য ডুবে যাওয়ার পরের নোটবই। 

**********

 নিজের সারাদিনের কাজ। ছোট্ট করে লিখে ফেলা।  স্মৃতিশক্তি বাড়বে। আত্মবিশ্বাস বাড়বে। একটা নোট বুক থাকুক। টুক করে লিখে ফেললেই হয়। সুন্দর যৌন জীবন সাহায্য করে ভালো থাকতে। যৌনতা কিন্তু টনিক।

৫. ধ্যান করা

***********

 ধ্যান নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা রকম জটিলতা কাজ করে। যেন ওটা একটা বিশেষ কাজ। কঠিন কাজ। বুড়ো বয়সের কাজ। অনেকে আবার লজ্জারও কাজ  ভাবেন। 

দিনের যে কোনো সময় যে কোনো অবস্থায় করে ফেলা যায় ধ্যান। যেমন পিপাসা পেলে জল খায় লোক। তেমনি সমস্যা হলে একটু নিজের ভিতর তাকাতে হয়। উত্তর ভিতরেই আছে। অমুক করব না তমুক? যাব কি যাব না? 

ছোট্ট ছোট্ট ডিসিশন। উত্তর পাওয়া যায় নিজের কাছ হতে।

 জাদু আঙ্গুল

*************

. হাতের আঙ্গুলের সঠিক ব্যবহার। 

সারাক্ষণ মোবাইল বাটন টিপে চলা ছাড়াও আঙ্গুলের কাজ আছে। চোখ মন মস্তিষ্ক আঙ্গুলের সঠিক মুদ্রায় সাড়া দেয়। 

তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুল লক করুন মাঝে মাঝে। অজস্র স্নায়ুর অন্তিম অংশ এখানে থাকে। আমরা খেয়াল করিনা। আমাদের নিজস্ব শক্তি বাইরে বেরিয়ে। যাচ্ছে। এই লক সিস্টেম আবার শক্তিকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে আনে। প্রাণিক সার্কিট তৈরি করতে সাহায্য করে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

 আর একটা সহজ মুদ্রার কথা বলে আজকের আলোচনা শেষ করব। 

 :জ্ঞানমুদ্রা

 তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুলের মাথা দুটি যুক্ত করুন। দুই হাতের। বৃত্ত তৈরি করুন। অন্য আঙ্গুলগুলি সোজা রেখে , দুই হাত দুটি হাঁটুর উপর রেখে মনে মনে পাঁচবার অ উ ম ভেঙ্গে ভেঙ্গে উচ্চারণ করুন। 

 এই মুদ্রা স্মরণশক্তি ও একাগ্রতা  বাড়িয়ে দেবে। ধৈর্য বাড়িয়ে দেয়। বালকবয়স থেকে এই মুদ্রা করলে খুব ভালো কাজ হবে। 

হাতের আঙ্গুলের অসীম শক্তি নিয়ে আলাদা লেখা লিখব। এখন , লক আর জ্ঞানমুদ্রা এই দুটোই নিয়মিত করলে ফল লাভ হবে। 

***********

ভারতবর্ষের আছে অসীম রত্নভান্ডার। খাদ্য তালিকায় ফাস্ট ফুডের দখল দারি কমিয়ে নিয়ে আসা যাক ব্রাহ্মীশাক। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় প্রভূত পরিমাণে উৎপন্ন হয় অমৃত শাক ব্রাহ্মী। এই শাকে উপস্থিত আছে। ব্যাকো সাইড নামে এক ধরনের রাসায়নিক জৈববস্তু। এটি ব্রেন টিসুর ক্ষত সারিয়ে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মনে আছে, আমার এক পিসি, আমার মাকে ঠাট্টা করে বলেছিল: ঘাস পাতা খায় গরু। অর্থাৎ মা এত ঘাস পাতা খান! তিনি গরু। অপমান করল আর কি! আমার মা ৯২ বছর বয়সে সজ্ঞানে একদিনের মধ্যে মৃত্যু বরণ করেন। স্মৃতিশক্তি ঈর্ষণীয় ছিল। মায়ের রেগুলার ডায়েট ছিল এই শাক। যেদিন মারা গেছেন, লাঞ্চ খেতে পারেন নি। সেদিন ও মেনুতে ছিল ব্রাহ্মীশাক।  

এখানে উপস্থিত অনেক ধরণের কার্যকরী উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হিপোকমপাস অংশটির ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। ব্রেনের hippocampus অংশটির কি ক্ষমতা গুগল করে জেনে নাও বন্ধুরা। আমাদের মা বাবাদের গুগল ছিল না। ছিল পরম্পরা জ্ঞান। যা এখন নষ্ট হতে চলেছে। 


ভুলে যাওয়া সমস্যা ক্রবর্ধমান।আগে প্রবীণদের রোগ ভাবা হত, এখন সব বয়সীদের হয়। সাবধান হতেই হবে। এখন থেকেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন