পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

কাজল সেন

                                                       



 পুজোর ছুটি 

ছেলে-বৌমা ফোন করে জানিয়েছে, এবছর পুজোয় তাদের বাড়িতে আসা সম্ভব হবে না, কেননা ছুটি পায়নি। লিচুবাবু জানেন, কথাটা আংশিক সত্য। হ্যাঁ, একথা ঠিক যে, ছেলে-বৌমা দুজনেই চাকরি করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। ব্যাঙ্গালোরে থাকে। এসব কোম্পানিতে ছুটিছাটা খুবই কম। তাছাড়া দুজনে আলাদা আলাদা কোম্পানিতে কাজ করে। একজন ছুটি পেলেও যে আর একজনও সেইসময় ছুটি পাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবু প্রত্যেক মা-বাবাই আশা করেন যে, অন্তত পুজোর ক’টা দিন ছেলেমেয়েরা ঘরে আসবে। লিচুবাবু ও তাঁর স্ত্রী সীমাদেবীও আশা করেন। কিন্তু ছেলে-বৌমা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে যে, যেহেতু লিচুবাবু ও লিচুবাবুর বেয়াইমশাই এই দুটি কোম্পানির মালিক নয়, তাই তাদের ছুটি মঞ্জুর হয়নি। আর ঠিক এইখানেই লিচুবাবুর সন্দেহ ও সংশয়। ছেলে-বৌমা কি সত্যি সত্যিই আবেদন জানিয়েছিল ছুটির জন্য? নাকি তারা ছুটি জমিয়ে রেখেছে শীতকালে কোথাও বেড়াতে যাবার জন্য? 


গতবছরও ঠিক তাই হয়েছিল। বিয়ের পর সেটাই প্রথম শারদ উৎসব। লিচুবাবু ও সীমাদেবী এবং তাঁদের বেয়াই-বেয়ান আশা করেছিলেন, ছেলেমেয়ে নিশ্চয়ইছুটি নিয়ে আসবে পুজোর দিনগুলোতে। আসার কথা তারা জানিয়েও ছিল। কিন্তু তারপর কী যে হলো, পুজোর দিনকয়েক আগে জানালো, না যাওয়া হচ্ছে না। ছুটি ক্যান্সেল হয়ে গেছে। হতাশাটা মুখ বুজে গিলতে হয়েছিল লিচুবাবুদের। কী আর করা যায়! চাকরি বলে কথা! সেখানে তো আর নিজেদের মনমৌজি চলে না! কিন্তু তার মাস দুয়েক পরেই ছেলে-বৌমা জানালো যে, তারা দুজনে দিন দশেকের ছুটি পেয়েছে অফিস থেকে। আর এই ছুটিতে গোয়া বেড়াতে যাচ্ছে। 


সুতরাং এবছরও যখন লিচুবাবু জানতে পারলেন যে, অফিস থেকে দুজনেই ছুটি পায়নি, তিনি অনুমান করার চেষ্টা করলেন, এবার শীতকালে কোথায় বেড়াতে যেতে পারে তাঁর ছেলে-বৌমা! 


সেদিন কথায় কথায় লিচুবাবু পাড়ার বুড়োদের আড্ডায় তাঁর মনোবেদনা প্রকাশ করে ফেলেছিলেন। এই বুড়োরা সবাই চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। এক বুড়োর কথায় আড্ডার কয়েকজন বুড়ো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, তাঁদেরও একই মনোবেদনা। বাকিরা অবশ্য জানালেন, না, এবছর ছেলেমেয়েরা তাঁদের দয়া করেছে, পুজোর দিনগুলোয় তাদের গায়ের গন্ধ তাঁরা শুঁকতে পাবেন। এইকথা শুনে, যাঁরা ছেলেমেয়ের গায়ের গন্ধ এবছর শুঁকতে পাবেন না, তাঁরা মুখে আনন্দ প্রকাশ করলেও মনে মনে বিষণ্ন হলেন। আর এই বিষণ্নতায় পরের দিন আড্ডায় বুড়োদের দুটো গ্রুপ তৈরি হলো। প্রথম গ্রুপ, যাঁরা এবছর পুজোয় ছেলেমেয়ের গায়ের গন্ধ শোঁকার সুযোগ পাবেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে মশগুল হয়ে পড়লেন নিজের নিজের ছেলেমেয়ের মাহাত্ম্য বর্ণনায়। আর দ্বিতীয় গ্রুপ, যাঁরা এবছর ছেলেমেয়ের গায়ের গন্ধ শোঁকা থেকে বঞ্চিত, তাঁরা নিচুস্বরে শলা পরামর্শ করতে লাগলেন, কীভাবে প্রথম গ্রুপের বুড়োদের টাইট দেওয়া যায়। এমন কিছু একটা করতে হবে, যাতে দ্বিতীয় গ্রুপের বুড়োরা দেখিয়ে দেবেন, ছেলেমেয়ে পুজোর ছুটিতে না এলেও কুছ পরোয়া নেই। তাঁরা নিজেরাই প্রত্যেকে একাই একশ। আর ঠিক তখনি লিচুবাবু প্রস্তাবটা দিলেন, চলুন না, আমরা সবাই দার্জিলিং বেড়াতে যাই!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন