পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

অন্তরা সরকার







                                           



 অসমাপ্ত



আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। দুপুরে মালা দুই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যাবে। জিনিসপত্র গোছানো হয়ে গেছে। এক বছর আলাদা থেকে মিউচুয়াল ডিভোর্স নেবে।
কুর্চির সাথে  জয়ের সম্পর্কটা জানার পর মালা শান্তভাবে বলেছিলো,"তুমি কি পারবে এই সম্পর্কটা থেকে বেড়িয়ে আসতে??" কোনো উত্তর দেয়নি জয় । কুর্চিকে ভোলা তার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা। মালা বুঝেছিলো সবটা। বাড়ির পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে গেলো। মেয়েদুটোও কিছু একটা বুঝে চুপ হয়ে গেছিলো।
রান্নাঘর থেকে বড়ো মেয়ের মাথার কাছে বসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো বেশ জ্বর এখনো। বৃষ্টিতে ভিজেছে কাল। জয় অনেকবার বলার চেষ্টা করছে, মালা আজ যেন না যায়। জয় ঘরে ঢোকে।"মেয়েটার জ্বর, আজ না গেলেই পারতে"--- বিষন্ন গলায় বলে জয়। তীব্রদৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকিয়ে নিচুগলায় মালা উত্তর দেয়," কাল থেকে যখন মেয়েদের দায়িত্ব আমার, তখন আমাকেই ওদের ভালোমন্দ বুঝতে দাও। তোমার নতুন জীবনে তো তোমার প্রেমিকা ওদের নেবেনা।"
জয় মাথা নিচু করে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। মনে পড়ে, এমন ই এক বর্ষাভেজা দিনে কুর্চিকে প্রথম দেখেছিলো সে। কুর্চি! পঁচিশ বছর আগে তার কাছে পড়তে আসা কুর্চি। ফর্সা মুখের দুপাশে দুবিনুনি করা কুর্চি । বৃষ্টিভেজা জুঁই ফুলের মতো।

এর পাঁচ বছর পর কুর্চির বড়োলোক বাবা জোর করে তার বিয়ে দিয়ে লন্ডন পাঠিয়ে দিলেন । জয় তখন কাঠবেকার। কিন্তু সুখী হয়নি সে। ডিভোর্স নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে দুবছর আগে। কুর্চির বাবা মারা গেছেন। তাছাড়া কুর্চির অসুখী দাম্পত্যের কোনো ফসলও নেই । 
ফিরে এসে অনেক খুঁজে জয়ের ঠিকানা , ফোন নম্বর জোগাড় করে ।
জয় আরও একবার বাঁধ ভাঙা প্রেমের বন্যায় ভেসে গেলো।

এখন তাদের কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়। আরেকবার কুর্চিকে হারাতে পারবেনা সে। কিন্তু মেয়েদুটোকে ছেড়ে কিকরে থাকবে সে?? অসহায়ভাবে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে জয়।
মালা রান্নাঘরে অন্যমনস্ক। এমন ই এক বর্ষার সন্ধ্যায় জয়ের সাথে শুভদৃষ্টি হয়েছিল। জয়ের চোখে কি নির্লিপ্ততা দেখেছিলো মালা। তখন যদি ও জয়ের মনটা পড়তে পারতো তাহলে তার জীবনটা এভাবে নষ্ট হতোনা। পরে জেনেছিলো বিধবা মায়ের কথাতেই এই বিয়ে করেছিলো। মালার চোখে দু ফোটা জল আসে।
পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয় সে।মনে মনে বলে,"এই অসম্মান নিয়ে থাকা যায়না। আমি ঠিক পারবো মেয়েদের মানুষ করতে। চাকরিটা তো আছে।

হটাৎ ছোট মেয়ে পিকুর চিৎকারে দুজনেই ছুটে আসে। শেষবারের মতো বেড়ালছানা দুটোকে দেখতে গিয়ে সান বাঁধানো উঠোনে পড়ে গিয়েছে পিকু।মাথা ফেটে রক্ত পড়ছে। 
আরও এক বর্ষার সন্ধ্যা। ট্যাক্সিতে পিকু শুয়ে আছে মা বাবার কোলে। তিনটে সেলাই পড়েছে। মালা এতক্ষনে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। জয় একহাত দিয়ে জড়িয়ে রাখে তাকে। জয়ের সামনে এক দৃশ্য ভেসে ওঠে। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে কুর্চি। বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। কেটে যাচ্ছে দিন,সপ্তাহ,মাস, বছর.....।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন