পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

পলাশ মজুমদার

                                    




এই সংখ্যার কবি পলাশ মজুমদার৷

দাহক


ব্যাসার্ধে মেপেছি নীলাকাশ

ভেবে নাও আমি প্রবঞ্চকখল


রাষ্ট্রও জানে ভালোবাসা 

                      কাঠুরিয়া ছল!


শোকাবহে রেখেছি বিচ্ছেদ কাঁটা

ভেবে নাও তুমি ব্যাধস্বৈরিণী


কালিদহ জানে শাপ

                     বিবশ যামিনী!



নিখোঁজ সংবাদ


সন্ধান চাই এই জাতীয় বিজ্ঞাপনগুলি খুব মন দিয়ে পড়ি ;

নামবয়সগড়নউচ্চতা।

নিজেকে খুঁজে না পেয়ে যারপরনাই হতাশ হই।


নিখোঁজ ব্যক্তির ছবিতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি

বিজ্ঞাপনদাতা'র আদল ;

তার স্ত্রীপুত্রপরিজনের মুখচ্ছবি।


আসলে যারা নিখোঁজ হন,

গোপনে বাড়ির উঠোনে পুঁতে রেখে আসেন অনেকগুলো

ব্যক্তিগত নিখোঁজ সংবাদ।

হারানোর নামে হৃতদের খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন একা।


কাঠের উনুন ও ভাতে'র গল্প


.

ভাতকে কখনও অন্নপূর্ণা মনে হয়নি আমারমা মনে হয়নি।

বুক বুক খিদে নিয়ে যাদের বেশিটা সময় রান্নাঘরে কাটে

মা এবং দাউ দাউ কাঠের উনুন।


আমার দুটো মা ;

কাঠের উনুনকে 'মাবলে ডাকি।


.

কাজ ফেরত বাবাকে কখনও ঘাম মুছতে দেখিনি।

বাড়ি ঢোকার আগেই ঘাম লুকিয়ে ফেলতেন,

অথবা বিশ্বাসঘাতক ঘাম বাবাকে কপর্দকশূণ্য প্রমাণ করতে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতো।


কাজ ফেরত বাবাকে মনে হতো ঢেঁকিছাটা শুকনো চাল।

সকলের খোঁজ-খবর নিতেন। পুকুর পাড়খড়ের গাদাগরু-বাছুর।

ততক্ষণে ফুঁটে যেতো হাঁড়ির সবকটি চালহাত-পা ধুয়ে খেতে বসতেন।


এক থালা ভাতকাঁচালঙ্কাপেঁয়াজতরকারি।

আমাদের সবাইকে গ্রাস গ্রাস মুখে তুলে দিতেন আপনমনেসবশেষে

কাঁচালঙ্কা সহযোগে নিজেকে নিজে পরম তৃপ্তিতে চিবিয়ে খেতেন বাবা !


খিচুড়ি স্কুল


সরীসৃপ খোঁজে কৌমার্য আহার

জরায়ুতে লুকোনো গর্ভ সঞ্চয়


কুসুম সুখে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থী


দিনটা নৈব নৈব চ,

রাত খান খান


শিকারের নাভি কেটে ঢুকে পড়ি,

খিচুড়ি স্কুল;


থালায় সাজে

খিদের বর্ণমালাঅমৃত ফুল।


বেশীটা কাল্পনিক নয়


হরিদাকে বলে রেখেছিলাম,

আমার শেষকৃত্য মিটে গেলে

শান্ত চিতায় দুটো মিঠে পানের খিলি রেখে দিও -

চুন কমখয়ের বেশিসুপারি কুচিকুচি কাটা।


হরিদা কথা রেখেছে,

তবে চুন বেশিখয়ের কমসুপারি চাকা চাকা কাটা।


মদন খুড়ো বললো -

এই যে ভাইপোএকটা বিড়ি দিবি বড় নেশায় পেয়েছে?

তোমার বুদ্ধি সুদ্ধি সব লোপ পেলো ?

হরিদাকে আগেভাগে বলে রাখলে সময়মতো ঠিক পেয়ে যেতে।


ভাইপোচেয়ে দ্যাখ তোর খুড়ির কান্ড -

আমি মরার দিন কতো কাঁদলো,

মাগী এখন বউহারা রমেনের গায়ে কেমন ঢলে ঢলে পড়ছে !


আচ্ছারমেনের বৌ তো খুব সুন্দরীআটোসাটো,

তোর সাথে দেখা হয়?



চিরন্তন


তিল পরিমাণ অসন্তুষ্টি কুড়িয়ে পেলাম -

প্রশ্রয়ের অক্সিজেনে ডালপালা মেললো ।


এবং

ফুলকুঁড়িবীজবংশরক্ষা সব জানা কথা ।


শেয়ালবেড়ালবাঘআগাছাপরগাছা

এক ঘাঁটে জল খাবে ।


এবং

অনিবার্য খরা এসব জানা কথা ।


অসন্তুষ্টি গর্ভবতী হলে অনেক প্রত্যাশা দানা বাঁধে -

বিপ্লবমড়াকান্না..........

প্রযুক্তিবিদ সন্তুষ্টি খোঁজে চাঙ্গা বাজার অর্থনীতিতে,

মেকি বিশ্বায়নে..............


আমরাও একদিন ইতিহাস হবো !

সন্দেহ সত্যি প্রমাণ হবে -

প্রত্নতত্ত্ববিদ আমাদের অস্থিতেও

এক জোড়া চোখের অস্তিত্ব খুঁজে পাবে ।


আত্মপক্ষ

এক.

দেয়ালে মুখ দেখি ;

দর্পণে যা দেখিআসলে তা মুখোশ।


দুই.

একটি দরকারী ভ্রম সংশোধন;

যাদের মেরুদন্ড আছেতাদের অমেরুদন্ডী বলে।


তিন.

পিঁপড়ে'রা দলবদ্ধ হয়ে চলতে ভালোবাসে;

দৈবাৎ কেউ ছত্রভঙ্গ হলেওরা তাকে 'মানুষবলে গালি দেয়।


মাংসাশী

রোজ দামী গাড়িতে চড়ে

নিত্য নতুন মাংসাশী আমার ঘরে আসে,

মুখে ভদকা'র উৎকট গন্ধ

রুদ্ধশ্বাসে আর্থিক শেয়ার সূচক মাপতে লেগে যাই


যার যা দেয়ারযার যা নেয়ার -

ক্রেতা অধিকার এতটুকুও সুরক্ষা হারায় না


ভূগোলইতিহাসঅর্থনীতি ত্রিমাত্রিক সঙ্গম শেষে

খদ্দের তার অবিন্যস্ত চুলগুলো যত্ন করে আচড়ে নেন

অন্তর্বাসশাড়িব্লাউজ পরিপাটি পরে 

এক মাংসাশী আবার ম্যাডাম হয়ে ওঠেন!

প্রাপ্য'র সাথে কিছু তৃপ্তির বকশিশ হাতে গুজে দিয়ে

চলে যেতে যেতে বলেন -

সি এগেননাইস গাই '


কিশোর বেলার এক অবাধ্য বালিকা -

ওর পায়ের নরম আঙুলগুলো খালি মনে পড়ে।

ও জানে নাআমি এখন ভয়ংকর মাংসাশী …


নাস্তিকের সংলাপ


বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাচ্ছে শেকড়।

মৃত্যু বলে কিচ্ছু নেই... কিচ্ছু নেই।

হাওয়ার আবিরে অস্তিত্ব মিশে গেলে বুনো শেয়াল গন্ধ শোকে নিরবতার।

ব্যথার নৈরাজ্যে কালো রক্তের ছোপ,

যারা বলেছিলো ভালোবাসবেকথা রেখেছে সবাই।


অন্ধকার নিভে গেলেঅদ্ভুত আলো রাতের চেয়েও আঁধার।

পুজার নৈবেদ্যে কারা যেন মিশিয়ে রাখে ঘৃণার আর্সেনিক ;

কথা রাখেনি ঈশ্বরকথা রাখেনি ভালোবাসা।


ঘোষণা করিআমি যুগোত্তীর্ন নাস্তিক এক ;

ঈশ্বর ফিশ্বর মানি না

সুখ দুঃখ মানি না


আমি এবং ঈশ্বর পরস্পরের ভরসা হারিয়ে দুজন

এখন বিশ্বজয়ীদায়হীন মুক্ত পুরুষ।


যারা মৃত্যুকে ভয় পায়তারা ঈশ্বর মানে।

যারা ঈশ্বর মানে নাতারা কবিতা ভালোবাসে।



দৃশ্যখুন এবং সেই সব খুনিরা


ধরা যাকবড় রাস্তা আর ফুটপাতে কোনো সীমানা আঁকা নেই

আলুথালু এক মা বসে আছেকোলে এক স্তন্যপায়ী

মা জানতোছুটে আসা একটা গাড়ি ভারসাম্য হারাবে

তারপর দুজনকে পিষবে .......


খবরে প্রকাশ,

মায়ের স্তনে ছিটেফোঁটাও দুধ ছিলো না

ঘাতক গাড়িটা ছিলো সত্যের পক্ষে ......


ধরা যাকদুজনেই যদি বেঁচে যায়

যদি বেঁচে যায় ...


বাঁচার জন্য মৃত্যুটা শুধু প্রয়োজন নয়অপরিহার্য


দৃশ্যখুনে কোনো নির্ভরযোগ্য শাস্তির বিধান নেই

অথবা খুনের জন্য দৃশ্যের পর দৃশ্যের পুনর্জন্ম হয় .…


সমাপতন


.

সোমালীয়া'য় এক শিশু কবিতা লিখছে ;

শুকনো স্তনে প্রতিটি কামড়ের দাগ

এক একটি কবিতা


রাশিয়া'য় অর্থনীতির ছাত্র শেয়ারের উর্ধ্বসীমা মাপছে ;

পুরু লেন্সে উঠেছে-নামছে আদিম শেয়ার সূচক


অথবাকাশ্মীরি জেহাদী

অথবাচোলাই'য়ের চাটে পিঁপড়ের ডিম থুড়থুড়ে বুড়ো


বহুগামী রেখাগুলো ছোট হতে হতে বিন্দুতে

যুগপৎ পতন


.

ইটের পর ইট

ইটের পর ইট

ইটের পর ইট


আকাশচুম্বী ..........


আসলে সবই পতনের গল্প


1 টি মন্তব্য: