পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

রত্না দত্ত

                   



এক পশলা বৃষ্টি

( ১ ) 

গোধূলির হাতছানিতে আজ
সুমধুর দখিনা বাতাসের দোলা,
আকাশের বুকে বজ্রমাণিকের আনাগোনায়
মেঘমল্লারের সুরে ভুবনভোলা।
এক পশলা বৃষ্টি এসে হঠাৎ
ভেজালো মনের গহন আঙিনা,
এনেছে সাথে পরম সঙ্গী করে 
শীতল হাওয়ার মনমাতানো দখিনা।
এই বৃষ্টিতে যদি মন নাই ভেজে
তবে তার অঝোরে ঝরে যাওয়াই বৃথা,
আমি জানি আর মেঘ জানে
মনের সকল চুপকথা।
                   
                            ______

( ২ ) সিক্ত হব বৃষ্টিধারায়

জমাট কালো মেঘের পুঞ্জীভূত ভারে
বিস্তৃত আকাশ গর্ভবতীর যুগল,
নরম তুলতুলে আঙ্গুলের টোকায়
ঝরঝর অমৃতধারা বইবে
তোমার কাজলটানা চোখ দুটো
হয়ে উঠবে বৃষ্টিস্নাত ও সজল।
শহরের কোলাহল ও ব্যস্ততায় কষাই মন 
হয়ে যাক না এক পশলা বৃষ্টি,
তোমার অঝোর ধারায় ভিজবো আজ
বৃষ্টিস্নাত হয়ে আকাশের কোলে
নিভৃতে মাথা রেখে শয়ন করব,
নয়নাভিরাম বিস্তৃত সবুজ বক্ষযুগলে
বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত হৃদয় সিক্ত হবে
মেতে উঠব সোঁদা মাটির গন্ধে।

                             ________

( ৩ ) কামনার ধারা

তপ্ত,রুক্ষ মাটি রয়েছে অপেক্ষায়
বুক ফাটা এক গলা তৃষ্ণা নিয়ে,
হঠাৎই অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি ধারায়
মাটির বুক যাবে ভিজিয়ে দিয়ে।
রুক্ষ,শুষ্ক বৃক্ষরাশি আজ তৃষ্ণার্ত
বুক ফাটছে জলের লাগি,
হে বৃষ্টি, তোমার বর্ষণ ধারার তরে
গোটা বিশ্ব আজ অনুরাগী।
বৃষ্টি,তুমি এসে ভিজিয়ে দেবে
আমার আকুল মন অঝোর ধারে
আমার অশ্রুজল ধুইয়ে দেবে
কেউ যেন না বুঝতে পারে।
বুকের কষ্ট ঘুচিয়ে আমি
উঠব আবার প্রাণবন্ত হয়ে,
মাত্র একপশলা বৃষ্টিই
এক নতুন ধরিত্রীর সৃষ্টি করে।
পৃথিবীকে করে চিরহরিৎ,চিরসবুজ
রুক্ষ,শুষ্ক মাটিকে করে সতেজ
তোমার অঝোর ধারাতে,সবাই
মনে প্রাণে সজীবতা পায় খুঁজে।

                              ________

( ৪ ) ভেজা মরসুম


হঠাৎই  গুরুগম্ভীর মেঘের তর্জনে গর্জনে
ঘুম ভাঙা চোখে তাকাই আলগোছে,
এগিয়ে গিয়ে খড়খড়ি তুলে
দেখি জানলার কাছে শার্সিতে
জলফোঁটা দাগ লেগে আছে।
কানফাটা বজ্রনিনাদে ভেঙে যায় ঘুম
চোখ খুলি মাঝরাতে,ভেজা মরসুম।
সারা প্রকৃতি ঘুমিয়ে আছে
ভিজে গেছে রাস্তাঘাট,ঘরবাড়ি,
সিক্ততায় পরিপূর্ণ শহরতলির জনবসতি
সূর্যের সাথে ওদের যে আজ আড়ি।
উড়ে যাও মেঘ দূর বহুদূর
কান পেতে শুনি তাই মেঘমল্লার সুর,
চোখ কচলিয়ে সব ভাবি এলোমেলো
ভোরের বৃষ্টি এসে হঠাৎই আমায় ভেজালো।
আজ আমার মন নিভৃতে,গোপনে
ছুটি চেয়েছে আলগোছে,
হব আজ আমি বৃষ্টিস্নাত নারী
সংসারের রোজনামচা দেব মুছে।

                              _______

( ৫ ) বৃষ্টিধারার তরে


অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে ভিজে খুশিতে মন ভরে
হিয়ার মাঝে মধুর সুরে মন আনচান করে,
খুশির জোয়ারে প্রকৃতি ভাসে নতুন আবেশ নিয়ে
কাঁপন ধরে সবুজ বনে  বৃষ্টির পরশ পেয়ে।
এক পশলা বৃষ্টি এসে ঘোচায় তপ্ত হাওয়া
চাতক পাখি গাছে বসে মেটায় মনের চাওয়া,
শীতল বাতাস ছুটে এল সোঁদা গন্ধ ভরে
তপ্ত ধরা শান্তি পেল বৃষ্টি ধারার তরে।
কারণে অকারণে সম্পর্কের দাবদাহে
অযথাই করি মনভূমির কঠিন কর্ষণ,
মান - অভিমানের অবুঝ টানাপোড়েনে
সুখশান্তি ফিরিয়ে দেয় অকাল বর্ষণ।

                              ______

( ৬ ) ক্ষণিকের তরে

বৃষ্টির সুমধুর পরশ এসে
কত কিছুই যে কহে হেসে,
ঝর ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে
অতিবর্ষণের অঝোর ধারায় সেজে
শীতলতায় ভাসাইলে যে মোরে।
কত কথা হয় মনের গহনে
নিভৃতে,শয়নে,স্বপনে ও একান্তমনে
টুপটাপ ছন্দ লয় বীণার তানে,
প্রেম তরঙ্গ সুধার নেশার ঘোরে
মাতি আমি ক্ষণিকের তরে।
নেচে ওঠে অঙ্গ আমার নৃত্যেরই তালে তালে
নূপুরখানি বেজে যায় রুমঝুম রুমঝুম,
উড়িয়ে দিলেম আঁচলখানি আকাশ পানে
ভিজলো আমার শিহরিত তনুমন।

                             ______

1 টি মন্তব্য: