পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

পূর্বা দাস

 


                         (১)

ত্রাণ


ওরা শুধু ঝড়কে ভয় পেত
আকাশকে নয়
মাথার ওপর কোন না কোন আকাশকে 
টেনে নিতেই হয়
আকাশ যে অহরহ রং বদলায়
সে কথা জানত না মৌসুনি দ্বীপ।

কিশোরী মেয়ের হাতে ঢলঢলে কাঁচ, শাখাপলা
দুদিনের নির্জলা একাদশীর পর আজ
পূর্ণিমার চাঁদ দেখেছিল 
জলের পাউচ,গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট -
জেটিতে সরকারি লঞ্চ।
গনগনে দুপুরে অনেকটা দূর পেরোনোর পর
প্রশ্ন এল, 'এই, তোমার বাচ্চা ক'জন?'
উত্তর দেয়নি মেয়ে।

শিয়াল কুকুর তাড়ানোর মত দূর করে দিয়েছে
মুশকো লোকগুলো - ওরা জানে না
আসলে, ওর তো বাচ্চা হয়েছে;  বাচ্চা -
জলের তোড়ে দু'বছরের টা ভেসে গেলে
দুদিন শুধু চোখের পানি খায় ও

মাথার ওপর নীল চাঁদোয়া শুধু রং বদলায়
কোন দায় নেয় না।


                               (২)


একান্তে

বৃষ্টিরা নিজস্ব হলে
ওরা ফিরে যাবার পর অনেক কাজ থাকে
জল থৈ থৈ উঠোন
খুব তাড়াতাড়ি ঝাঁটপাট দিয়ে
সদরটি নিকিয়ে নিতে হয় যত্ন করে
বৃষ্টির জলে ভেসে আসা কিছু বিষাক্ত কীট এদিক-ওদিক
জানালার শার্সি অথবা কুলুঙ্গি থেকে
সরিয়ে দিতে হয় আলগোছে।

এরপর আগদুয়ার হাট করে দাও
বহির্জনেরা এসে বসবে
সাজানো বৈঠকখানায়

যেটুকু জল থেকে যাবে ঘরের চালে, অথবা
একান্ত স্নানঘরটিতে; ভাবনা নেই -
সে কারোর চোখে পড়বে না।


                              (৩)


গাছপুতুল

সদ্য বীজমুক্ত শিশু গাছটির
আঁকাবাঁকা শাখা, পত্রল প্রশাখা
সবুজ করে তুলল এক ঋতুর বর্ষা
সরস মাটির পুষ্টিতে তার লাবণ্য মেলে দেয় আকাশে; দুর্নিবার প্রেমে, ঔদ্ধত্যে -

ঠিক তার পরের বর্ষাতেই 
তার সব অহংকার কেড়ে নেয়
বজ্রগর্ভ অশনি মেঘের দুরূহ কারুকাজ
শিরা-উপশিরা অব্দি জ্বলে গেলে
মরণের অপেক্ষায় তরুটি
স্তব্ধ হয়ে থাকে মেঘের কুশলী খেলায়

সেটুকুও শেষ হয়, 
যে দিন ভরা কোটালের জল 
শিকড়শুদ্ধ উপরে নিয়ে যায়
এখন আর কোন আশা নেই ওর 
কোন ঋতুর কাছেই।



                            (৪)

ডেলিউশন

আকাশ জুড়ে মেঘের ছায়া মেঘের গায়ে গল্প আঁকা
চিলের ছাদে একলা দুপুর মেঘের সুবাস যায়না ঢাকা

দুপুর শেষে স্বপ্ন বিকেল মেঘ বলেছে চায়ের কথা
মুখোমুখি বসবে নাকি একটি দিনের বনলতা!

আনমনা ঠোঁট, গরম চায়ে পুড়ল তবু মুচকি হাসি
এরপরেতেই মেঘ ঢেলেছে জল ঝমঝম রাশি রাশি।

কোথায় যেন জুঁইকুড়িদের ফোটার সময় এগিয়ে এলো
শ্রাবণ মেঘও তার স্বভাবে তুমুল বজ্রগর্ভ হল

বনলতার মেঘলা সাজটি বেশ
চায়ের কাপে অর্ধ অবশেষ।

1 টি মন্তব্য: