পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

দেবলীনা চক্রবর্তী

                                         




বৃষ্টিকথা 




   ক)
ইদানিং সে প্রায় রোজই আসে ঠিক দুপুর নাগাদ, সে এলেই চোখ চলে যায় তার দিকে ! আমি যেই দ্যেখি ওমনি ছুটে যাই আর শরীরী দূরত্ব বজায় রেখেই কিছুক্ষণ আমরা পাশাপাশি হাঁটি , কোনদিন একটু বসি পরস্পর ব্যবধান রেখে !
না সে তেমন সুদর্শনকান্তি না হলেও তার সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে বেশ একটা তৃপ্তিদায়ক স্বস্তি মেলে !
তার আসাটা মন্থর , কোন পূর্বাভাস না থাকলেও বেশ বুঝতে পারি তার এসে পরা, সে এলেই কেমন একটা হালকা জলজ গন্ধ ছড়িয়ে যায় চারিদিকে তার সাথে মিশে যায় মাটির সোঁদা গন্ধ ! একটা আমোদ মিশে থাকে গাছের পাতায় , ঘাসের ডগায় ! যেন বন্দি জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে আতর্কিতে ছোঁয়াছোুঁয়ি খেলা, ওই সময়টুকু জুড়ে। 

 তারপর সে বিদায় নেয় নিয়মমাফিক । 
 কিন্তু কি আশ্চর্য সে কখনও কথা দ্যেয় না ফিরে আসার , দ্যেখা হওয়ার , আনন্দে ভিজিয়ে দেওয়ার ! 
 
 তবু তার আসার খবর আমি পেয়েই যাই — পারিপার্শ্বিক হাওয়ায় হাওয়ায়! 
 
 
  খ)
দু'এক পশলা রিনরিনে বৃষ্টির পর আকাশের অভিমানী মুখ ভার , আরো কিছুটা আবেগ ঝেড়ে ফেলে হালকা হওয়ার গোপন ইচ্ছে ছিলো বোধহয়  কিন্তু তবুও এমনি মেঘ ছায়া মাখা নিবিড় কোমল  প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে মনে হয় হারাই নিজেকে। প্রত্নতাত্ত্বিক মনকে ছিঁড়ে খুঁড়ে উড়িয়ে দিই পালক পালক মেঘের সাথে। কি এক আশ্চর্য মৌজে শিহরিত মন দু'হাত মেলে লুটে নিতে চাই আকাশ।

 আকাশের এই বিষাদ জন্ম ভুলে গিয়ে তৃকোণ পাতা থেকে ঝরে-পড়া ফোঁটা ফোঁটা জলের বিরহটুকু মেখে নিতে আমার সঙ্কোচ হয় নি কখনও, আমি যেন জলে ভেজা থোকা থোকা জোনাকির আগুন আলো ! যে নাবিক পথ হারালো তার দিকনির্দেশে পৌঁছে যাই সেই দূর বাতিঘরে যেখানে আলো ছায়া মাখা নীল জলে স্বপ্ন ভাসে। 
আসলে প্রকৃতির এই ফুসমন্তরের ডাকে সাড়া দিয়ে কবেই হয়েছি আমি ভবঘুরে। স্তরীভূত জীবনের বন্দরে ঋতু আসে ঋতু যায় ! ঢেউ খেলা করে , প্রাচীন  প্রস্তরে চির ধরে তবু ভাঙে না ,আর গোপন ব্যাধির মতো গাঢ় হয় অন্ধকার - সান্ধ্যভাষা নিয়ে!

গ)
ঠিক কবে প্রথম বৃষ্টির গন্ধ পেয়েছিলাম, আকণ্ঠ পান করেছিলাম ঝোড়ো বাতাসের ঘ্রাণ ঠিক মনে নেই তবে মনে পরে সেই ছলাৎছল উচ্ছ্বাসে বুকে বেজে ওঠা চৌরাশিয়ার মোহন বাঁশি মলহারের ঘনগম্ভীর সুরে — “কদম - বাহার ”
বর্ণিল রোদে আঁকা কৌণিক অস্তরাগ ।  

কুলকুল বয়ে যাওয়া শান্ত নদীটির মতো পাশ ঘেঁষে চলে এসেছি আজ বহুদূর 
ইচ্ছে বকুল এখন ম্লান  - স্মৃতি ধূসর হয়ে,শেষে পরে থাকে শুধু বিবর্ণ অস্থি কঙ্কাল। 

কিন্তু তবু মনে হয় বৃষ্টির গন্ধ এলে এখনও মননদী ফুলে ওঠে , দুলে ওঠে তার গোপন ঢেউ  - 
আছড়ে পরে পাথর ঘরে!
কত নামহীন ফুল ফোটার সম্ভাবনায় নদীমন হয় আকুল —
 
তবুও মনে পরে না সেই প্রথম দিনের বৃষ্টি সম্মোহন !


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন