পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১

জয়তী রায় (মুনিয়া)

                                     


                   

   আজকের আলোচনা করব মানবমন নিয়ে। এখন ২০২১ সাল। চলছে মহামারির তাণ্ডব। কি হবে তার মধ্যে এই মনের কচকচি কেন? 

প্রয়োজন বইকি! মন ঠিক না থাকলে শরীর নিয়ে লড়াই করা মুশকিল। মরণাপন্ন রুগী উঠে দাঁড়াতে পারে  মনের জোর থাকলে। আর শুধু রোগের কথা ই বা কেন? প্রতিদিনের জীবন চর্যায়  মনের ভুমিকা স্বীকার করতেই হবে। বিবাহিত জীবনে মন বড় ভু


মিকা পালন করে। দাম্পত্য পুরনো হয়ে গেলেই পরকীয়া এসে হানা দেয়। কেন? মন কেন চায় অখণ্ড স্বাধীনতা? এটা কোনো দোষ নয়। ধর্ষণ বিদেশে এত বেশি হয় না। কারণ, মনের কোন জায়গা থেকে এইরকম ভযঙ্কর ইচ্ছের উত্পত্তি সে সম্বন্ধে ছোট থেকে বাচ্চাদের সচেতন করে দেওয়া হয়। এই দেশে বাচ্চারা যত মায়ের বেবি হয়ে থাকবে ততই ভারতীয় মা খুশি। শিশু কোনো অবোধ প্রাণী নয়। মাত্র তিন মাস থেকে যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে তার শরীরে। অথচ, মায়েরা ভাবে, শিশু অবোধ। আধো আলো  আধো অন্ধকারে থাকতে থাকতে একমাত্র sex  নিয়ে সারাজীবন কৌতূহলী থেকে যায়। 

মন খারাপে ভোগে। লেখাপড়া, সম্পর্ক সবকিছুতে ছাপ পড়ে। 

********



জন্ম নিয়েই কেঁদে ওঠে শিশু। 

  আগামী দিনের লড়াইয়ের কথা ভেবে হয়ত মন খারাপ হয়। পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে না জানি কত  লড়াই করতে হবে? শুধু  বাইরের জগতের সঙ্গে তো নয়, কঠিন লড়াই হল নিজের সঙ্গে। ভিতরের আমি আর বাইরের আমি র নিরন্তর সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়।   তাই কেঁদে ওঠে শিশু। পারবে তো টিঁকে থাকতে? না কি , পরাজিত হতে হবে নিজের কাছে? নিজের অ- দেখা প্রবৃত্তির কাছে? 

    

***

  প্রবৃত্তি( Instinct) জন্মলগ্ন থেকে বহন করে আনতে বাধ্য হয় মানুষ। এই ব্যপারে তার কোনো  পছন্দ- অপছন্দ কাজ করেনা। বিষয়টিতে প্রথম আলোক পাত করেন বিখ্যাত মনো বিজ্ঞানী  সিগম্যানট ফ্রয়েড। এ একেবারে ধামকাধার আবিষ্কার। উপর দেখে নয় বিচার করতে হবে ভিতর দেখে! ভিতর মন। সেখান থেকে আরো আরো খুঁড়ে খুঁড়ে একেবারে শেষ পর্যন্ত। সেই শেষের ঘরে লুকিয়ে আছে যে মন,সে নাকি পশুর মত। কিম্বা তার চাইতেও আগ্রাসী। হিংস্র। লালসা পূর্ণ। 

ফ্রয়েড স্যারের এমন চমকপ্রদ আবিষ্কারের কথা ভালো করে জেনে চোখ কপালে উঠে গেল। মানুষ জন্ম হতেই হিংস্র? তবে সমাজ চলছে কি করে? 

   একটু গুছিয়ে বলা যাক। 

ফ্রয়েড স্যার বললেন যে, যাবতীয় মানসিক চিন্তা ভাবনা তিনটি পথ ধরে এগিয়ে চলে। ইড, ইগো , সুপার - ইগো। 

*****

ইড , মানুষের অচেতন মন। শিশুর মত, পশুর মত...উচিত অনুচিত বোধ থাকে না। খিদে পেলে খাবার, রমণ ইচ্ছে জাগল তো রমণ...আনন্দ চাই।  যেভাবে হোক। চাই। চাই আর চাই। ইড হল মানব মনের মৌলিক স্তর। যেখানে মানব মনের সকল শক্তি নিহিত থাকে।  ইড মূলত মানুষের জৈবিক দিক। মানব মনের স্বভাবজ চাহিদা পূরণ করে ইড। মন যা চায় তাই করো। এর কোনো মানবিক দিক নেই। পুরোটাই লোভ লালসা কাম চিন্তায় ভরপুর। ইড এমন তীব্র ভাবে মানুষকে প্ররোচিত  করে যে, সে প্ররোচনায়  মানুষ যে কোনো অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে খুন ধর্ষণ অবধি করতে দ্বিধা বোধ করে না। এক কথায় ইড হচ্ছে আমাদের ভিতরের সুপ্ত পশু। ফ্রয়েড স্যার বলেছেন যে, এই প্রবৃত্তি দখল করে আছে মানব চরিত্রের বেশির ভাগ জায়গা। 

      পাশবিক প্রবৃত্তির ভূমিকা মানুষের জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা গেল। 

   সুপার ইগোর কথায় আসি একটু।  এ হল আধা অচেতন বা অবচেতন মন।  সুপার ইগো হল মানুষের বিবেক। ইড যখন জৈবিক কামনা পূরণ করতে উদ্দীপ্ত হয়, সুপার ইগো একে বাধা দেয়। সুপার ইগো মানুষ কে সব সময় মানবিক দুর্বলতার উর্ধে উঠে ভালো কাজ করার জন্য মানুষকে উদ্দীপ্ত করে। অর্থাৎ, পশু প্রবৃত্তির সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে এর অবস্থান। একজন অতি খারাপ তো অপরজন অতি ভালো। এই দুই অতি অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে ইগো বা চেতন মন। কি রকম?

যেমন, ইড বলবে পর্নোমুভি দেখো। দারুণ লাগবে। 

সুপার ইগো ওমনি  লাঠি উঁচিয়ে বলবে, খবর্দার। এটা নৈতিকতা বিরোধী। অতএব দেখা যাবে না। 

ইগো বলবে, পর্ণমুভি দেখো। তবে লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। 

ইগোর কাজের আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, ফাঁকা রাস্তা আর বাইক সহ কিশোর। এক্ষেত্রে, ইড প্রবৃত্তি উস্কানি দিয়ে বলবে তীব্র বেগে চালিয়ে যাও। যা হয় দেখা যাবে। হেসে নাও দুদিন বই তো নয়।  ফুর্তি করো। মজা লোটো। বাতাসের বেগে বাইক চলাও। সঙ্গে সঙ্গে তার অবচেতন মন বা সুপার ইগো বাধা দেবে। বহু অনিষ্ট হতে পারে সেটা বলবে। এই দোলাচলের মাঝে এসে পড়বে ইগো অর্থাৎ সচেতন সামাজিক মন।  মাঝামাঝি স্পিডে চালাতে নির্দেশ দেবে। 

*****

   আমাদের যখন তিনবছর বয়স তখন থেকে উচিত- অনুচিত বোধ তৈরি হয়। শিখে যাই অনুভূতি চেপে রাখার কৌশল। মন আর মুখ আলাদা করে ফেলতে পারি অনায়াসে। রেসের মাঠে গেলে লোকের নিন্দে, তবে লুকিয়ে যাওয়া যায়। পরকীয়া করা উচিৎ নয়। গোপনে করলে কে জানবে? ইগো সর্বক্ষণ এই ভূমিকা  পালন করে যাচ্ছে। মানুষের আদিম প্রবৃত্তির সঙ্গে সামাজিক প্রবৃত্তির এমন একটা সহাবস্থান কাজ করছে। চেতন মন লুকিয়ে লুকিয়ে সেই কাজটাই করছে, যেটা গোপন মন করতে চায়। প্রকাশ্যে না হলে, চিন্তায় করছে। স্বপ্নের মধ্যে আসছে। অচেতন মন ঘুমের মধ্যেও জাগ্রত থাকে। তাই, সারাদিন যেমন যেমন চিন্তা করি ,অচেতন মনের মধ্যে জমা হতে থাকে সব। স্বপ্নে বহুসময় প্রতিফলিত হয় সেগুলো।

  *****

     কথায় বলে, প্রবৃত্তির হাতে অসহায় মানুষ। নির্মম সত্য। আজকের সভ্য মানুষ সৃষ্ট হয়েছে সমাজের প্রয়োজনে। প্রকৃতপক্ষে সে তো অরণ্যচারী স্বাধীন। জবাবদিহির কোনো প্রয়োজন ছিল না তার। শরীরের ক্ষুধা উদরের ক্ষুধা মেটানো ছিল জন্মগত অধিকার। নারী -পুরুষ জীবনে একজন হতে হবে, এমন মাথার দিব্যি ছিল না। অথবা আইনগত সম্পর্কের বাঁধনে মোটেই  বাঁধা ছিল না সে। যুগের সঙ্গে পরিবর্তন হল পৃথিবীর। পরিবর্তন হল না মানুষের গোপন মনের। সেখানে সে রয়ে গেল স্বেচ্ছাচারী  আদিম।   স্বপ্নদোষ  দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষের। নিরীহ ভালমানুষ ব্যক্তি বহন করে চলে অবদমিত কাম। পতিব্রতা বৌটি  মনে মনে পরকীয়া করে। নিষ্ঠাবতী বিধবা  কান পেতে শোনে রসের গল্প। ধর্ষণের ভিডিও বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের ভিডিও তারিয়ে তারিয়ে দেখে অনেকেই। আহা উহু করার মধ্যে দিয়ে সুখানুভূতি  চলকে পড়ে। খুন জখম দাঙ্গার খবর অনেক বেশি আগ্রহ জাগায় সাধারণ খবরের চাইতে। সরাসরি অপরাধ করছে না কিন্তু অপরাধ ঈর্ষা হিংসার ঘটনা শুনে তীব্র  আনন্দ পাওয়া নিজের পাশবিক প্রবৃত্তির  কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া  আর কিছু নয়। 

   

  ****

   ফ্রয়েড স্যার অনেক উপকার করে দিয়েছেন আমাদের। তার কাছে  কৃতজ্ঞ থেকেও বলতে পারি এই পাশবিক মনের আক্রমণ সম্বন্ধে প্রাচীন শাস্ত্র ভালরকম চর্চা করে নানান উপদেশ দিয়ে গেছে। মন চাইছে অথচ পাচ্ছে না...চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যের ব্যবধান থেকে মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় হতাশার।  দিনের পর দিন নিজেকে দোষ দিতে দিতে একসময় আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। পীড়িত মন দুর্বল মন বহনকারী মানুষকে আত্মহনন থেকে সরে এসে আত্মোপলব্ধি করার পথ দেখিয়েছেনভারতীয় ঋষি -মুনিগণ। 

   মানব চরিত্র সম্পর্কে প্রাচীন যুগের ঋষিকুল মানব চরিত্রের নাড়ি  গলি খুঁজে  ভালো রকম পর্যালোচনা করেছিলেন। প্রবৃত্তির হাতে বন্দী মানব মুক্তি কি করে পাবে? সুপার ইগো ( সুপার ego) অর্থাৎ মনের যে অংশে নীতিবোধ, মানবিকবোধ, নৈতিক চেতনা সুপ্ত থাকে--তাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

ভিতর হতে ইচ্ছে জেগে না উঠলে  পশুপ্রবৃত্তি রোধ করা যাবে না। নৈতিক বোধ জাগরণের জন্য নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই জরুরি। প্রকৃষ্টতম  উদাহরণ মহর্ষি বাল্মিকী। দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মিকী। রাম নাম করে একমনে তপস্যা বস্তুত এক্ধরণের কাউনসিলিং।   রত্নাকর অবস্থায় কিন্তু মানুষ হত্যা করতে হাত কাঁপেনি। অনুশোচনা হয় নি। স্বাভাবিক ভাবেই  নিয়েছিলেন দস্যুজীবন। তপস্যা শেষে ভিতর ঘরে জ্বলে উঠল আলো। স্পষ্ট অনুভব করলেন প্রাণ কত মহিমাময়। সামান্য পাখি হত্যা দেখে ঝরে পড়ল অশ্রু। উচ্চারিত হল কবিতা। এখানে সম্পূর্ণ ভাবে পরাজিত ইড প্রবৃত্তি। নিজের মনের সঙ্গে বসে ধ্যান করে ধীরে ধীরে উপলব্ধি করা যায় মানব জীবনের  উদ্দেশ্য রিপু বা প্রবৃত্তির হাতে হারিয়ে যাওয়া নয়। বরং, রিপুকে মহৎ কাজে নিয়োজিত করে জীবন সুন্দর করে তোলা। 

*****

  মানব মনের, অন্ধকার পাশবিক দিক অনেক বেশি শক্তিশালী। তার  অভিঘাত প্রবল প্রচন্ড। সুনামির মত। ভাবনার কথা এই যে, কতখানি পশু আমরা হয়ে উঠতে পারি, সে সম্বন্ধে নিজেরাই জানি না। এমন শক্তিশালী পিশাচের সঙ্গে লড়াই সহজ নয়। নৈতিক বোধ দ্বারা পিশাচ কে হত্যা করতে হলে, কঠিন জীবনচর্যা প্রয়োজন। নিজের আয়নায় নিজেকে দেখে ধুলো ময়লা সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। 

পিশাচ মনের কাজ হল তাৎক্ষণিক খুশির দিকে মনকে চালিত করা। সাধারণ মানুষের ভালো লাগে সেটাই। মদ্যপান, অকারণ হুল্লোড়,ঈর্ষা , আড্ডা , পরনিন্দা, ধর্ষণ, ইভ টিজিং উলঙ্গ শরীর দেখা ...আরো নানা কাজে পিশাচমন উৎসাহ দিতে থাকে। তাৎক্ষণিক খুশির জাল রঙিন সুন্দর। 

ইড ধীরে ধীরে অধিকার করে নেয় মানবমন। প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে হরণ করে শান্তি। ভুরি ভুরি ঘটনা আছে উদাহরণ হিসেবে। 

এই পিশাচ মনের ভিতর নিহিত আছে প্রচন্ড শক্তি। ভেঙে যেমন ফেলতে পারে, গড়েও তুলতে পারে। রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হতে গেলে অলৌকিক উপায় নয়, চাই নিরলস সাধনা। তবে, সেই প্রবৃত্তি ঘুরে যাবে সুন্দর দিকে, সৃষ্টি  করবে অতুলনীয় জীবন। আমাদের ভিতর ঘরের মন যেন উত্তাল নদী। বাঁধ দিয়ে উৎপদিত হবে বিদ্যুত। দূর করবে অন্ধকার। না হলে? ভাসিয়ে নিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে। মৃত্যু অর্থ শারীরিক কেবল নয়। মানসিক সুস্থতা  না থাকাও মৃত্যুর সমান। 

******

গভীর অজানা মন লাগাম ছাড়া  ঘোড়ার মত। তাকে  লাগাম পরিয়ে সঠিক পথে চালিত করে ফেলতে হবে। তাৎক্ষণিক সুখের জন্য বহু ক্ষতি করে দিতে পারে বেয়াড়া মন। বহু সমস্যা, দুশ্চিন্তা দুঃ স্বপ্ন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। শরীর খারাপ হতে থাকে। অচেতন মন সাংঘাতিক শক্তিশালী একথা জেনেছি। এই শক্তি বা এনার্জি কিন্তু নেতিবাচক। ক্রমাগত নেতিবাচক ইঙ্গিত করে পথ চ্যুতি  ঘটতে থাকে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কালে অর্জুনের অচেতন মনে এইরকম নেতিবাচক চিন্তার ঝড় উঠেছিল। ধৈর্য ধরে বুঝিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। ইতিবাচক মনোভাব  অর্জন করতে হলে  শ্রীমদ্ভগবত গীতা পড়া জরুরি।  নিরন্তর চর্চার দ্বারা এই নেতিবাচক মন যদি ইতিবাচক দিকে পরিণত হয়, তবে মানুষ হয়ে উঠবে ঈশ্বর। বহুগুণ বেড়ে যাবে জীবনী শক্তি।

*****

মানুষ ভালো - মন্দের ফারাক করতে পারবে। 

অচেতন মন( Id) সচেতন মন( ego) অবচেতন মন( super ego) --তিনটি এক সুতোয় গেঁথে ফেলে মানুষ হয়ে উঠুক নিজভূমে  রাজা। 







      

পিয়াংকী

                                                   



 লিখতে লিখতে আজ গরম বাহারের দশম পর্ব চলে এলো। বিগত ন'সপ্তাহ আপনারা যেভাবে একটু একটু করে আমার হাতাখুন্তি আর কলম ক্যামেরাকে ভালবেসে নিয়েছেন,সেটুকুই প্রাপ্তি। কোনদিন ভাবিনি রান্না নিয়ে কিছু লিখব,অথচ এখন প্রতি রবিবার চেয়ে থাকি । আপনাদের ভাললাগা যখন শেয়ার করেন, মন ভরে যায় আনন্দে। 


আজ আরও একটা প্রপার লাঞ্চ থালা সাজাব।সেখানে থাকবে 

ভেজিটেবল স্টাফড রুটি

 আদুরেপনির 

ঘরে বানানো টকদই 


এই থালায় প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট মিনারেল ফ্যাট সবকিছু থাকবে।আসলে সঠিক মাত্রায় শরীরে এগুলো থাকা খুব জরুরি। 


রুটির আটা সামান্য নুন আর কুসুম-গরম জল দিয়ে মেখে রেখে দিন আধ ঘন্টা। পুরের জন্য ননস্টিক প্যানে রসুনকুচি হালকা সেঁকা টাইপ করে নিয়ে তাতে মিহি করে কুচোনো পেঁয়াজ আর কাঁচালঙ্কা দিয়ে আরও মিনিট তিনেক হাল্কা নাড়াচাড়া করুন,যতক্ষণ না কাঁচা গন্ধ চলে যায়। তারপর ওতে দিন আগে থেকে গ্রেট করা নুন মাখানো (জল চেপে ফেলে দিয়ে)  গাজর বিন ব্রকোলি ক্যাপসিকাম, গ্যাসের আঁচ কমিয়ে ঢাকা।মাঝে মাঝে শুধু নেড়ে দিতে হবে।কারণ তেল নেই ফলে নীচে লেগে যাবার সম্ভবনা প্রবল। মিনিট দশেক পর ঢাকা খুলে দেখুন কী সুন্দর ভর্তা টাইপ মাখোমাখো হয়ে গেছে।এবার ঠান্ডা করে পুর ভরে বেলে নিয়ে তাওয়াতে সেঁকলেই তৈরি ভেজরুটি।তবে হ্যাঁ এই স্টাফড রুটিগুলো যেহেতু ডিরেক্ট আগুনে ফেলে সেঁকা যায় না তাই তাওয়াতেই একটু সময় নিয়ে চেপে চেপে ভাজতে হবে।একেকটা রুটি ভাজতে কিন্তু মিনিট তিনেক সময় লাগে

            


এবার পনির। প্রথমেই বলব পনির টুকরো করে নিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রাখুন।রান্নার পাঁচ মিনিট আগে বের করবেন। একটা ননস্টিক প্যান খুব ভালো করে গরম করে তাতে পনির টুকরোগুলো এপিঠ ওপিঠ  সেঁকে নিয়ে গরম জলে ভিজিয়ে দিয়ে সরিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। ওই প্যানেই সামান্যতম বাটার বা অলিভ অয়েল ব্রাশ করে একে একে রসুনকুচি ডুমো করা কাটা পেঁয়াজ আর ক্যাপসিকাম   দিয়ে অল্প তাপে ওদের সাতলাতে থাকুন।আসলে কী জানেন তো আজকের এই স্যতে করাই ঠাকুমার আমলের সাতলানো।  যাই হোক, প্রসঙ্গে ফিরি।পরিমাণ মত সাদা তিল রোস্ট করে বেটে রাখুন।মিনিট পাঁচেক পর স্যতে হওয়া  সবকিছু নরম আর ল্যাটপ্যাটে হয়ে এলে সামান্য দুধে কর্ন ফ্লাওয়ার গুলে তিলবাটা মিশিয়ে ঢেলে দিন,সাথে দিন রোস্টেড কারিপাতা আর কসৌরিমেথি। অল্প করে গোলমরিচগুঁড়া ছড়িয়ে দিন। রেডি হেলদি আদুরেপনির।



পরিবেশন করুন ঘরে পাতা টকদই আর শশা দিয়ে।



এই প্রসঙ্গে বলে রাখি,এই ধরণের ডিশ নিজেকে বা প্রিয়জন কাওকে সার্ভ করার আগে সাজানোটা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট। 


যেমন ধরুন, রুটির লেচি ছোট করে কেটে নিয়ে বেললেন বড় করে।যখন খাবেন তখন আপনার মন বলবে অনেকটা খাচ্ছি, আদতে আপনি খাচ্ছেন কিন্তু অল্প সীমিত।

     


আবার ধরুন, পনির বা তার গ্রেভি  যদি একটা ছোট বাটিতে সার্ভ করেন তাহলে বাটিটা একদম ভর্তি উঁচু উঁচু দেখাবে। যিনি খাবেন তিনি মেন্টালি স্যাটিসফায়েড হবেন এটা দেখে যে 'পরিপূর্ণ বাটি খাচ্ছি '।

       


এসকল কিছু বলতে পারছি এইজন্যই কারণ মেয়ের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লাই করেছি, একসময় খাওয়া নিয়ে ডিপ্রেশড থাকা মেয়ে আজকের ডেটে দাঁড়িয়ে এইরকমভাবে নিজে সার্ভ করে অন্যান্য মানুষের জন্য এবং সে নিজের ওজন একাশি থেকে চৌষট্টিতে নামিয়েছে,শুধুমাত্র পরিমিত খেয়ে

 


আসলে সেই আদিকাল থেকে আজ অব্ধি যদি খাদ্যবিবরণী একটু ঘাঁটাঘাঁটি করি তাহলে দেখব সর্বকালেই ডায়েট চার্ট এর আসল অর্থ পরিমিত এবং  যথার্থ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্যগ্রহণ।  সুস্থ সুন্দর বেঁচে থাকার দীর্ঘায়ু হবার প্রথম আর প্রধান শর্ত এটিই 


যেহেতু এই লাঞ্চবক্স বাঙালির তেলালোঝোলালো পঞ্চব্যঞ্জন নয়, ফলতঃ একটু সুদর্শন যুবক বা আকর্ষণীয় যুবতীর মত করে তুললে মন নেচে ওঠে।যে কোনো বিষয়ে  সুন্দরের টান কে ই বা কবে ফেরাতে পেরেছে!প্রবাদেই তো আছে  'পেহেলে দর্শনধারী বাদ মে গুণবিচারী'



সুবীর সরকার

                           


গৌরীপুরের পান আর গোলকগঞ্জের গুয়া
সুবীর সরকার


৫.
সব হাট কি একরকম!সোমবারের হাটের ভেতর কি খুঁজে পাওয়া যাবে বুধবারের হাট! তামারহাটের রঙের সাথে কি পুরোপুরি মিল থাকা সম্ভব রতিয়াদহ
হাটের!ছত্রশালের হাটের পাখিদের কি দেখা মেলে পানবাড়ির কোন এক শনিবারের হাটে!
সব হাট একরকম হয় না।সব গান একরকম হয় না।
সব গঞ্জ আর গাঙ একরকমের হতে পারে না।
প্রবেশ আর প্রস্থান দিয়ে এক একটি হাটপর্ব রচিত হতে থাকে।আর লোকমান পাগলার হাটে ধুলোর ঝড়সমেত ঢুকে পড়ে জোড়া মহিষ।গদাধর নদীর কোন বা চর থেকে বাথান ভেঙে এরা বুঝি চলে এসেছে এই হাটে ভেতরে।সমস্ত হাট জুড়ে একটা হুড়াহুড়ি লেগে যায়।মানুষের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মানুষ।তখন কোথায় ইয়াকুব ব্যাপারী কোথায় মহিউদ্দিন ওস্তাদ কোথায় লোকমান!ভরা হাটের কোলাহল থেকে সরে আসতে আসতে ময়কান্ত মৈশাল তখন খুঁজতে শুরু করে বাথান পালানো সেই জোড়া মহিষদের।তার হাতে দীর্ঘ পেন্টি।মাথা গামছা দিয়ে পাগড়ির মত করে বাঁধা।প্রায় তিন কুড়ির পেশীবহুল সুঠাম শরীরের পেশীগুলো একত্রিত করে 
ময়কান্ত তার কণ্ঠে তুলে আনেন মহিষের কণ্ঠের আকুতি।এই ডাক শুনে সেই জোড়া মহিষ কেমন থমকে দাঁড়ায়।তাদের বড় বড় চোখে কেমন মেঘের ছায়া!একটু বাদের দেখা যাবে সেই জোড়া মহিষ অদ্ভুত আহ্লাদ নিয়ে হেলে দুলে ময়কান্তর পিছনে পিছনে সেই বাথানের পথ ধরে ফেলেছে।গদাধর নদীর কোন বা চরের খুব অন্দর থেকে ভেসে আসছে 
হাহাকার ভরা গানের সুর_
"আরে ও  মৈষের  দফাদার ভাই
ডালা সাজাও ডালা সাজাও
চল মৈষের বাথানে যাই রে"
ময়কান্ত তার জোড়া মহিষ নিয়ে বাথানে চলে যেতে থাকে।কিন্তু হাট ভেঙে যায়।
৬.
ইয়াকুব ব্যাপারী মহিউদ্দিন ওস্তাদ লোকমান পাগেলাকে ভুলে গিয়ে আপাতত আমরা ঢুকে পড়তেই পারি বালাজানের হাটে।গঙ্গাধরের বাতাসে নদীর বালু উড়ে আসছে হাটের মস্ত খোলের ভেতর।শরীর ভরতি বালুকণা মেখে গরুহাটির উত্তর শিথানে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সাজু  চোরা।না,সাজু চোর নয়।তার নাম সাজু মোহাম্মদ। হাটে হাটে গরুর দালালি করে বেড়ায়।আর "চোর চুন্নি" পালাগানে
সাজু চোরের ভূমিকায় অভিনয় করে।তার শরীরের পরতে পরতে তীব্র এক নাচের ছন্দ লুকিয়ে আছে।সাজু চোরার পালা দেখার জন্য মানুষ হামলে পড়ে গানবাড়িতে।সাজু মোহাম্মদকে এখন আর কেউ চেনে না।সবাই সাজু চোরাকে একনামে চেনে।সাজু যখন নেচে নেচে শরীরে অদ্ভুত পাক দিতে দিতে গেয়ে ওঠে_
"ও কি হায়রে হায়
আজি মনটায় মোর পিঠা খাবার চায়"
তখন সমগ্র গানবাড়ি জুড়ে কি এক উন্মাদনা!
সাজু চোরা ছিল গানমাস্টার মঈনুদ্দিন এর শিষ্য।
মঈনউদ্দিন আবার ছিল আলাউদ্দিন এমেলের সাকরেদ।সারাজীবন এই গান,এই নাচ,রাতের পর রাত গানবাড়ি নিয়েই জীবন কাটে সাজু চোরার।
গরুর দালাল সাজু চোরা গরুহাটির ভেতর দাঁড়িয়ে 
কি ভাবছিল!রহস্যমোড়া গানবাড়ির কথা।নাকি সওদাপাতি নিয়ে বাড়ি ফিরবার কথা!তার শরীর জুড়ে নাচের ছন্দ ক্রিয়াশীল থাকে আর হাটের অন্ত মধ্যে সাজু ছড়িয়ে দিতে থাকে গুনগুন সুরের কোন এক গান,যা দূরাগত হওয়ার ডানায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সমস্ত হাটের পরিসরে_
"ওরে ফুলবাড়ীত ফুলমালার বাড়ি
হাট করিতে যামো হামরা গরুর গাড়িত চড়ি"
এইভাবে পুরোন হাটপর্ব শেষ হয়ে যায়।নুতন নুতন হাটগুলোর হাট হয়ে উঠবার জন্যই হয়তো বা!

          



ক্রমশঃ
(চিত্রঋণ- সুবীর সরকার)

সোনালী চক্রবর্তী

                                       


পরাগ 




মৎস্যকন্যার হিজাবের নিচে প্রেতমুখের অতিরিক্ত কিছু ছিলো না- এই সিদ্ধান্ত স্বধার মস্তিস্ক নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোর গতিবেগের লাজ রাখতে আধা পাথুরে প্রায় জোলো উপত্যকার প্রতিটি বৃক্ষ ফিসফিসিয়ে উঠলো- আদেশ ... আদেশ...


যে তাকে প্রথম জানিয়েছিলো এই প্রদেশের কথা, তার কথা স্বধার সম্যক মনে আছে। সে কৃতজ্ঞতা ধারণ করে পর্যাপ্ত কিন্তু সিসিফাসের স্ত্রী লিঙ্গের ভূমিকায় নিজেকে মনোনীত করার বিন্দুমাত্র স্পৃহা নেই বলে ছাই আর আঁশবটি- দুইকেই অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। 'সংসার' আর 'সম্পর্ক' এই দুই সংগ্রামে 'সার' ঠিক ততোটুকু যতখানি পরমহংস বৃত্তি, বাকিটা 'সংনামা'। হা হা করে হেসে উঠলো সে। প্রতিধ্বনি এলো না কারণ শুধুমাত্র তার কাছেই, তার জন্যেই আসা ক্ষতখচিত পাঁজরকে প্রকৃতি যখন আশ্রয় দেয়, মানুষের মতো লবণ লীলা করে না। 



বড় আশ্চর্য রূপ এই ময়ূর পাহাড়ের। সে বর্ষায় এসেছে, চ্যাপলিন মনে পড়েনি। পদ্মবিল দেখার সময় শ্যাম-নৌকা ভেসেছে। তার কিছু ব্যাক্তিগত রূপকল্প আছে যেগুলো ঘুমিয়ে থাকে অন্যসময় কিন্তু রিপ ভ্যান হতে পারে না। যখন একটিও দূর্বা পা ছুঁয়ে বলে ওঠে লেলিহা মুদ্রায় "অস্যৈ প্রাণা: প্রতিষ্ঠন্তু অস্যৈ প্রাণা: ক্ষরন্তু চ", মুহূর্তে চরাচর তার কবিতা বোধ হয়- 'অবাঙমানসগোচরম' ।


স্বধার মনে পড়তে থাকে শৈবলিনীর কথা। এই একজনই এখনো অবধি জীবিত অথবা একমাত্র প্রাণ যে তাকে 'স্বাধীনতা' শব্দের সংজ্ঞায় কোনো সৌজন্যসূচক ঝরোখা রাখতে শেখায়নি। একবার, মাত্র একবারই তিনি বেনারসে পা রেখেছিলেন তার বন্ধুর ডাক ফেরাতে না পেরে। সেইবার জন্মইস্তক স্বীয় করতলের মতো চেনা বেনারসকে স্বধার অপরিচিত লেগেছিলো বিস্ময়ে। এমনকী, সে যার পৌত্রী, তারও। কে না জানে (অন্তত তখনো অব্দি অবশ্যই জানত) লক্ষ্ণৌ-বেনারসে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঈজীদের মহল্লা। সময় শুধু স্থাপত্য গুঁড়িয়ে দেয় না, লঘু করে তোলে গভীরতা। নাহলে জ্ঞান, নৈপুণ্য, শিক্ষা, তালিম, নিষ্ঠা সমস্ত কিছু নিংড়ে যে অসামান্য শিল্পীদের নির্মাণ করা হতো অভিজাত হাভেলি গুলিতে, তাদের পরিচয় ধীরে 'তবায়েফ', আরও হীনতায় 'দেহপসারিণী' হয়ে যাবে কেন? শৈবলিনীর সঙ্গে তারা দুইজন ঘুরে বেড়াতো ভোরের আলো ঠিকঠাক ফুটে ওঠার আগে। একমাত্র এইসময়েই এই এলাকা নিস্তব্ধ থাকে। বাসিন্দারা হয় নিদ্রিত নাহয় ঘাটে। শৈবলিনী কথা বলতেন বৃদ্ধা কাউকে পেলে, আনমনে সিঁড়িতে বসা, অতীতের ফুলকারিটি গায়ে জড়িয়ে। জানতে চাইতেন ইতিহাস। বাড়ি ফিরে স্তব্ধ হয়ে থাকতেন। সন্ধ্যায় গঙ্গারতি দেখতে দেখতে উদাস হয়ে যেতেন। পরে, বহু পরে স্বধাকে বলেছিলেন-


--" আগুনের দুর্ভাগ্য অসীম না ভাই যদি ভাগ্য মানি? যত তীব্র তত উজ্জ্বলতা। যারা জ্বালায় কেউ জ্বলে না। কেউ উত্তাপ নেয়, কেউ আলো, কেউ পবিত্র হয়, কেউ শুদ্ধ, কেউ মুক্তি নেয়, কেউ শান্তি। সরে যায়। আগুন নিজে কী পায়, কাকে পায় বলতে পারো? আগুন একা, শুরু থেকে শেষ। তবু যদি তার স্বাধীনতা টুকুও থাকত। সে কি নিজের ইচ্ছেয় জ্বলে? কেউ দাবী তোলে শিখায় আদরের আঙ্গুল রেখে, অস্বীকার করো দাহ্যকে? আগুনের কি ব্যথা নেই? ভাই, বড়ো মিল, বড়ো মিল, প্রতিটি নারীই কি আগুনপাখি?"


গতরাতে দাবানলের খবর পেয়ে পৌঁছানো স্বধার অযোধ্যার দিকে তাকিয়ে খেয়াল হলো, তার কখনো তমাল দেখা হয়নি। এতো এতো অরণ্যে ঘুরেছে সে, এই মুহূর্তেও তো হাঁটছেই, তবুও হয়নি কখনো। অথবা এও হতে পারে, চেনেনা বলে অধরা রয়ে গেছে। শৈবলিনী বলতেন সপ্তপর্ণার কথা। তাও দেখা হয়নি। আবারও হাসতে ইচ্ছে হলো তার। বহু আগে লিখেছিলো- পালক খেললে ময়ূর তুমি, কৃষ্ণ জানলে না। তার শুধু খুঁজে বেড়ানোই হলো। জল কি কখনো ভেজে?


স্বধা গবেষণার জন্য প্রথম বেছেছিলো একটি অদ্ভুত বিষয়- 'ধর্মরূপ ও উত্তরসত্য' । যেভাবে একটি নদীখাতের উৎস থেকে মোহনা অবধি উপ আর শাখাতে বিভাজিত ও যুক্ত হতে হতে অস্তিত্বহীন হয়ে ওঠে মূলধারাটি, তেমনই তো যে কোনো মিথ, মিথ্যের সিনোনিম। কিন্তু বিশ্বাসকে ডিগ্রিতে রূপান্তরিত করতে যে তথ্য ও যুক্তির নিপুণ কৌশল লাগে, তা করায়ত্ত না হওয়ায় অসম্পূর্ণ থেকে গেছে অন্বেষণ। একটিমাত্র উদাহরণ দেওয়া যাক? কীভাবে সে উপড়ে দেবে কোটি কোটি চার্চ থেকে অদ্ভুত সুদর্শন ক্রাইস্টের রেপ্লিকা? মুভমেন্ট করবে? রক্তে গেঁথে যাওয়া বিশ্বাসের কী হবে? আরবীতে যে স্থানের নাম 'মাংসের বাড়ি', হিব্রুতে 'রুটির ঘর', সেই বেথলেহেম শহরের ভৌগোলিক অবস্থান বিচার করলে কী দাঁড়ায়? ভূ-মধ্যসাগরীয় উপকূল- ইজরায়েল- ঈজিপ্ট- জর্ডন-  এই তো? ন্যূনতম চিন্তা করলে যে কোনো মানুষের কাছে স্পষ্ট হওয়ার কথা এই অঞ্চলে জন্মানো কারোর সোনালি চুল হয় না, বরফশুভ্র ত্বকও নয়। সুন্দরীশ্রেষ্ঠা ক্লিওপেট্রাও তা ছিলেন না। অথচ, ক্রাইস্টকে স্মরণ করলেই যে আদল মাথায় ভেসে আসে সে পেন্টিং আর ভাস্কর্যের সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ মডেল। স্বধারও তাই ই আসে। কেন অস্বীকার করবে? সত্য সম্ভবত তা নয়। জন্ম, নাসা, কাঁটা, ক্রুশ সমস্ত কিছুই এক মানবসন্তানকে অলৌকিক করে তোলার অনুপান মাত্র। 


মানুষ তার শরীরে মানুষ খোঁজে, মাথা নিচু করতে আর হৃদয়ে বসাতে চায় অতিমানুষ। "ম্যান" তার কাছে প্রশংসার শব্দ, ফ্যান্টাসিতে রাজ করে সুপারম্যান'ই। স্বধা অপেক্ষা করে থাকত কখন অরণ্যদেব মুখোশ খুলে নার্দার সঙ্গে দেখা করবে, ব্যাটম্যান কখন ক্যাটউমেনকে ভেবে মুখ গুঁজবে জাল ছিঁড়ে। উলটে যেতো পরপর পাতা। তার ভীষণ মনে হতো এই সব চরিত্র আসলে নিখুঁত উদাহরণ মানুষ আর ঈশ্বরের শতরঞ্জের। মায়ামুখোশ টুকুই আড়াল মাঝের ঝিল্লির। কখনো কখনো স্ট্রিপ শেষ হয়ে যেতো, পর্দাটা উঠতো না। প্রতিটা যাপন সম্ভবত এই উৎকণ্ঠার নাম। বিরাট হাঙর। ধরতেই হবে। জয় আসে। অথচ উপভোগ্য স্তর পাড়ে টেনে আনতে আনতে সে কঙ্কাল। "রাইডারস টু দ্যা সি"- এর মতো করে জীবন চেনাতে কেই ই বা পারলো আর। স্বধা কিছুটা পার্সোন্যালাইজড করে নিয়েছে এর ব্যাখ্যা। বীরভোগ্যা বসুন্ধরা- নারী মাত্রেই জানে লিঙ্গ সাম্রাজ্যবাদের বানান ঠিক কী। পূর্বরাগে প্রেমিকেরা উত্তাল, কেন না মায়াঅন্ধত্বে তাদের ভিতর বসত গড়ে ঈশ্বরসত্ত্বা, শোনপুর মেলার বিক্রির আগের চোখ সেলাই করা বাজপাখি। সময় পেরোলে হাতে থাকে শুধু করোটির পানপাত্রটি। আজ প্রচন্ড হাসি আসছে স্বধার, প্রেতের হাসি-

-- শৈবলিনী, সত্য তুমিই ছিলে। আগুনের ব্যথা হতে নেই। জলের ভিজতে নেই। যে ঈশ্বরীয় রূপ মানুষের ফ্যান্টাসি, তার মুখোশও নামিয়ে নিতে নেই।

ঘোর আঁধারে কোথাও তক্ষক ডাকছে। স্বধা চিনতে পারে যেমত সে সর্পযোনি। আজ নগ্নিকা তার এই অরণ্যে চন্দ্রপানের তিথি, ইস্তার জন্মের দায়...

ছবি- অন্তর্জাল

রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১

তিস্তা

                      


 

"বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা"

৫/
এখানে অনেক খোয়াব। হাতছানি দিয়ে যাওয়া সকলি পরিত্রাণ নয় লতিফা। এই যে রাস্তা শুরু হলো চলার, এ তো হঠাৎই! না ফুরোনো কথারা চলবে অনর্গল অথবা থেমে যাবে এক ঝটকায়। আমরা যত্নে থাকবো অথবা ভেঙে পড়বো– কিছুই পূর্বনির্ধারিত নয়।
ঘন ঘন মূর্ছা যায় যে মেয়েটি, তাকে এখনো জানানো হয়নি তৃতীয় বিশ্বের লাগাম। পড়ে পাওয়া চোদ্দোআনা এই আজাদীর গল্প। বলা হয়নি তিন তালাকেই রাতারাতি স্বামী কেমন কোলের ছেলে হয়ে উঠেছিল মেহেরুন্নিসার! আর শ্বশুর, স্বামী! সবখানেই মৃত্যু আমাদেরই লতিফা। গলা পর্যন্ত কাঁটা, নর্দমার পাক।  সে এক অভাবিত জুয়াড়ি আমাদের ভিতর দান ফেলতে ফেলতে মেহমান হেঁকে যায়। দেদার নিঃস্ব হতে হতে শেষ পর্যন্ত আমাদের টুটি থেকে যায় তার হাতের মুঠোয়। 
দরজা মনে পড়ে। মনে পড়ে উঠোন...চৌকি...বেড়ে দেওয়া ভাতের থালার সামনে সন্তানের উদাসীন মুখ। আমরা লড়ে যাই খতম। আমরা লড়ে যাই কেয়ামত তক। একটা ছেঁড়াফাটা দিনের পর আর একটা ছেঁড়াফাটা দিন। আর একটার পর আর একটা। আর একটার পর আর একটা। পরিভ্রমণ সংক্রামিত হতে থাকে এভাবেই। সংকেত ভেঙে গেলে তুমিও জানো, অন্ধত্ব গ্রাস করে অধিকারবোধ।

ভূ-ত্বকের নীচে জমতে থাকে ঝুরো ঝুরো বরফ...

পিয়াংকী

                          





তন্দুরি চিকেন


তন্দুর কী? একটি সিলিন্ড্রিক্যাল ক্লে ওভেন।মুরগীর মাংসের পিস,বিশেষ কিছু মশলা মাখিয়ে রোস্ট করার পদ্ধতিই হল তন্দুরি চিকেন। 


খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০অব্দে সিন্ধু সভ্যতার সময়কালে প্রথম তন্দুর উনুনের সন্ধান পাওয়া যায়, ধরে নেওয়া হয় অবিভক্ত ভারতের ব্রিটিশ আমলে পাঞ্জাবে প্রথম এই পদের আবিস্কার হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে, তন্দুরি চিকেন জনপ্রিয় হয় পেশওয়ারে মতিমহল নামের একটি রেস্টুরেন্টের হাত ধরে, সেটা প্রায় ১৯৪৬-৪৭। বিদেশে ১৯৬৩ তে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস  পত্রিকায়  প্রথম এই রেসিপি শেয়ার করা হয়



রান্নার পদ্ধতিঃ


প্রথমে চিকেন পিসগুলো চিরে নিতে হবে।এটাই প্রথম এবং প্রধান স্টেপ ভালো তন্দুরি রান্নার।চেরা পিসগুলোতে লেবুর রস গোলমরিচগুঁড়া অরেঞ্জ ফুডকালার আর পরিমাণ মতো নুন দিয়ে মেখে সরিয়ে রাখতে হবে, এবার সময় তন্দুরি মশলা তৈরির। একটা বড় পাত্রে নিতে হবে হাংকার্ড অর্থাৎ জল ঝরানো টকদই।অন্তত ঘন্টা দুয়েক যেন জল ঝরানো থাকে। ওই দইতে একে একে কাশ্মীরী লাল লংকাগুঁড়ো আদারসুন বাটা শুকনোলংকাবাটা গরমমশলা সর্ষের তেল এবং সামান্য মধু মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে একটা স্মুদ মিক্সচার তৈরি করে তাতে আগে থেকে ম্যারিনেট করে রাখা চিকেন পিস দিয়ে আবার সেকেন্ড স্টেপ ম্যারিনেশন করে রেখে দিতে হবে অন্তত একটা গোটা রাত।এক্ষেত্রে বলি আপনারা মধুর বদলে দিতে পারেন চিনিও। আমি ডায়েট চার্ট অনুযায়ী করেছি বলে চিনি দিই নি।এক রাত এভাবে রাখার পরদিন ভোরে উঠে ফ্রিজ থেকে নামিয়ে, আবারো হাল্কা হাতে ভালো করে মেখে নিতে হবে। গ্যাসে বসাতে হবে একটা ননস্টিক প্যান। একটুকরো বাটার দিয়ে প্যানের বেসটা গ্রিজ করে নিয়ে সাজিয়ে  দিতে হবে পিসগুলো, এরপর বাকিটা সম্পূর্ণ নিজস্ব কায়দা । ওভেনের আঁচ কমিয়ে বাড়িয়ে চিকেন পিসগুলো ওলটপালট করে রোস্ট করার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আসল কৌশল। কোনসময়ই গ্যাস বাড়িয়ে কাজটা করতে নেই, তাহলে মশলা পুড়ে যায়। রোস্ট করার পর একটুকরো কাঠকয়লা বাটার মাখিয়ে জ্বালিয়ে নিয়ে প্যানে বসিয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে রেখে দিতে হয় যতক্ষণ না কাঠকয়লার ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধটা মাংসের মধ্যে ঢুকে না যায়। এই স্টেপটা কমপ্লিট হয়ে গেলে একটা রুটিসেঁকা ছাঁকনি বা তারজালি সরাসরি আগুনের ওপর বসিয়ে গরম করে তার ওপর রোস্ট করা চিকেন পিস দিয়ে হালকা পোড়া পোড়া করলেই তৈরি তন্দুরি চিকেন। 


আমি সার্ভ করেছি লেটুস পাতার ওপর। সাথে আছে শশা লেবু ধনেপাতা আর ঘরে পাটা টকদই।

কার্বোহাইড্রেট বিহীন ভরপুর প্রোটিন যুক্ত এই রেসিপি ডায়েট চলাকালীন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতেই পারেন



শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

সোনালী চক্রবর্তী

          


    
মঞ্জিরা 



বন্দিশেরা নামছে সহস্রধারায় কৃষ্ণ অন্তরীক্ষ থেকে। নীলাদ্রি শুনছেন। বলা ভালো, শুষছেন। এই একটিই প্রেম তাকে কখনো গার্হস্থ্য চাওয়া পাওয়ার সরলবৃত্তে প্রবেশাধিকার দিলো না। উস্তাদ আমির খান যখন বিলাসখানি টোড়িতে "বাজে নিকি ঘুংঘরিয়া" ধরেন, ধর্মাচরন থেকে বহুদূরে থাকা নীলাদ্রির জগত, বৃন্দাবন হয়ে যায়। তিনি স্পষ্ট দেখতে পান খান সাহেব "রহিয়ে অব এয়সি জাগা" গাওয়ার সময় গজলের শেষ মীরটি শুনতে স্বয়ং গালিব এসে দাঁড়ান তার পানপাত্র ফেলে রেখে। অশ্রুই তো সেই নিরপেক্ষ বহতা যা যে কোন স্থান কাল পাত্রকে নিমেষে অপ্রাঙ্গিক করে দিতে পারে অপ্রতিরোধ্য তাড়নায়।
 

নীলাদ্রির বিশ্বাস মানুষ তার মানবিক পৃথিবীতে যাবতীয় বিগ্রহ এবং ধর্মের রূপকল্প নির্মাণ করেছে সঙ্গীতের স্বার্থে। একমাত্র সুরই সেই অতীন্দ্রিয় শক্তি যা শরীরে অবস্থান করেও আত্মাকে ত্রিলোকের উপলব্ধি দিতে পারে যদি আদৌ অদ্বৈতের অস্তিত্ব থাকে। শ্যামসুন্দর তার কাছে নজরুলের কৃষ্ণসঙ্গীতের বাইরে কিছুই নয়। তিনি হরিকে জানতে ব্যগ্র হননি শুধু "সে হরি কেমন বল" শুনে ভেসে গেছেন। তার হরি ঐ সৃষ্টিজারিত তুমুল আবেগটিই, কোনো আধার নয়। 


সময় কী কখনো ভাবার মতো সময়ের সন্ধান নীলাদ্রি করেন নি। ওয়ার্কহোলিক নয়, কর্মযোগও নয়, গণিত আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, এই দুই গহীন তাকে এতোটাই দুর্গম করে রেখে দিলো এত বয়স অবধি যে, সেই অরণ্যে তার নিবিড়ে বসা পাখিরা কতটা অভিমান জমিয়ে মেঘ হয়ে উড়ে গেলো, জানতে পারলেন না। কী বিচিত্র দ্বন্দ্ব আকীর্ণ সংবেদন। গওহরজানের ঠুংরির একটা মুড়কি যাকে তোলপাড় করে দেয়, বড়ে গুলাম আলীর "প্রেম যোগন বনকে" যাকে প্রেমিক করে তোলে লাজিজ মরহুমে, তিনি একবার তাকিয়েও দেখলেন না এতগুলো বছর ধরে দাবানল খুঁজে না পেয়ে পাথর হয়ে যাওয়া বৃক্ষবিষাদের শরমকে। অজস্র সূঁচ বিঁধে থাকা চামড়ার ব্যথাবোধ শরীর হারালে সম্ভবত মেধাবী মস্তিষ্ক অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে অচেতনে। হয়তো তাই আখতারী বাঈ- এর একটি আলাপ মনে পড়ছে তার অতিরিক্ত, ঘুরে ফিরে, "ইয়ে না থি হামারি কিসমত" ।

এও এক বিস্ময় স্বধার কাছে। সারা জীবনে হারমোনিয়াম, তানপুরা অথবা তবলার মতো নিরীহ, সহজপাচ্য বস্তুগুলি, বাঙালী সংসারে বাসনপত্রের মতোই যাদের উপস্থিতি ছিলো অন্তত কুড়ি পঁচিশ বছর আগেও, কোনোদিন ছুঁয়ে দেখেন নি নীলাদ্রি অথচ এক পলের অধিক সময় তিনি কখনো নেন নি খমক আর একতারার পার্থক্য বলে দিতে। তড়পেছেন সঙ্গোপনে যখন মিউজিক ট্যালেন্ট হান্টে অংশগ্রহণকারী কোনো শিশু তার কাছে বলতে পারেনি সেতারে ১৭ টি তার থাকলেও সুর নিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকে মাত্র তিনটিতে, বাকিগুলি 'তরপ'। নীলাদ্রির চরম শত্রুরাও তাকে প্রজন্মবিরোধী দলের শরিক এই অপবাদ দিতে পারবে না কিন্তু স্বধা তার উপর ক্রমবর্ধমান হতাশার ছায়ার অধিগ্রহণ দেখেছে নিয়ত যখন হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, শিবকুমার শর্মা, উস্তাদ নিশাত খান, পাঁচুগোপাল দত্ত, শুভলক্ষ্মী, অন্নপূর্ণার মতো ব্যক্তিত্বরা নিছক কতগুলো নাম হয়ে বন্দিত্ব নিয়েছে কম্পিটিটিভ এক্সাম প্রার্থীদের বৃত্তে।


এক ফাল্গুনী সন্ধ্যা তিনি উপহার দিয়েছিলেন স্বধাকে। সে তখন এক কলিগের বিয়েতে না গিয়ে উপায় নেই বলে তৈরী হয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলো বাবার স্টাডিতে। নীলাদ্রি শুরু করেছিলেন "ফ্রী স্পিরিট" দিয়ে।

--"এসো, এসো, না হয় দেরীই হবে খানিক"


তারা পৌঁছেছিলো তারপর "ঘাট অব বেনারস" এ।

--"তুমি বিয়েবাড়ি যাচ্ছিলে না?
    অ্যারেঞ্জ না লাভ?
    বেশ, এই দুটো পরপর শোনো             তাহলে,
     "বিলাভেড কল" আর
     "মিসিং অব হার্ট"


ফল্গুর উচ্ছ্বাস স্মরণ করিয়ে স্বধাকে যখন শেষে শুনিয়েছিলেন নীলাদ্রি "হোলি ম্যাট্রিমনি", স্বধার জানা হয়ে গিয়েছিলো ভালোবাসা আর বিবাহের সংজ্ঞা শিখিয়ে দিতে একা বিসমিল্লা জন্ম জন্মান্তরের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছেন। বিয়েবাড়ি আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কী প্রয়োজন লোকসমাগমের? তার তো অভিসার অধিগত হয়ে গেছে সদ্য, সিঁদুরের রঙও মাখা শেষ। 


--"তোমার আনুষ্ঠানিক সম্প্রদান আমি করবো না কখনো। সেই অধিকার আমার নেই। কোনো নারীকেই দানের অধিকার কোনো পুরুষের থাকে না আরেক পুরুষের হাতে। স্বধা, আমি ব্রাহ্মণ যে। ব্রহ্মজ্ঞান না হোক, আত্মার বর্ণকে অশুক্ল করি কী ভাবে? তুমি আমার অংশবীজ। গ্রহন বা অর্পণের দায় মানুষের হাতে থাকে কি? যোগসূত্রকে অস্বীকার করে, অজ্ঞাত যেমত, অনুষ্কাকে শুনো, নোরাকেও। পন্ডিতজীর অবয়ব ভাসবে না? দ্যুতির আহুতিতে অঙ্গুলিত্রাণ জরুরী, শিরস্ত্রাণ নয় "


বহুবার জানতে চেয়েছে স্বধা, নীলাদ্রি উত্তর দেন নি। আজ মনে হলো বড় দেরী হয়ে গেছে। হয়তো জানিয়ে দিলেই পারতেন। হিন্দুস্থানী মার্গসঙ্গীতের একনিষ্ঠ শ্রোতা কিন্তু অভিনিবেশে স্পষ্ট হয় নীলাদ্রির ঝোঁক আবদুল করিম আর ফায়েজ খানের গমকে যতটা, তার থেকে অনেক বেশী তাদের গোবিন্দ বন্দনায়। কেন? নীলাদ্রি মনে মনে উচ্চারণ করলেন, জানেন স্বধা বুঝে নেবে একদিন ঠিক। ঈশ্বরের অর্থ যদি নিখাদ ব্রহ্ম হয় তাহলে নীলাদ্রি তীব্র আশ্বাস রাখেন সেই সমস্ত সুরসাধকদের গায়কীতেই অধিক যারা ধর্মকে শুধুমাত্র একটি শব্দে পরিণত করতে পেরেছেন। অতিক্রম করে গেছেন লোকায়ত ও প্রচলিত ধারণা ও আচরণ। পৌঁছে গেছেন অনাদির সেই অভেদ অবস্থানে যেখানে রসুলের সর্বনাম সরস্বতী। 


মাঝে মাঝে স্বধার মনে হয় চেতন অবচেতন থেকে ক্রমশ অচেতনের দিকে সরে যাওয়া তার বাবার এই পরিণতি হয়তো সিদ্ধান্ত মাত্র। এই মুহূর্তে যে রাষ্ট্রে তাকে শ্বাস নিতে হচ্ছে তা তার অপরিচিত ও অসূয়ার কারণ। তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন নিজেকে ক্রমেই। যেভাবে মুছে ফেলা হচ্ছে নগরীদের নাম, হয়তো তার প্রাণপ্রিয় ঘরাণাদেরও বদলে ফেলা হবে তাদের স্রষ্টাদের ধর্মবিচার করে। জয়পুর আত্রাউলি, পাতিয়ালা, রামপুর মহাস্বন, ইন্দোর, কিরাণা, আগ্রা, গোয়ালিয়র, দিল্লী, ভেন্ডিবাজার, মেওয়াটি, শ্যাম চৌরাশিয়া- সবকটি এবং প্রতিটিরই প্রতিষ্ঠাতা প্রো-হিন্দুত্ব সাম্রাজ্যবাদীর ষণ্ড দৃষ্টিতে অপরাধী, যেহেতু বিধর্মী। সেই নরকজল বাইতে পারবেন না, এই আতঙ্কেই কি যাবতীয় চিকিৎসাকে প্রার্থিত ফলপ্রসব করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন তিনি নিজেই?

বহুর মধ্যে বিশেষ করে একটি বিতর্ক বাকী থেকে গেছে স্বধা ও নীলাদ্রির। কেন এক জমিনে দুজনেই বিচরণ করেও তারা, পিতা ও কন্যা, মূল আদর্শগত কেন্দ্রে এতো বিরোধী। তাদের ফোর্ট এক নয়, আঙ্গিকও নয়। সেই কারণেই কি? নীলাদ্রি মানুষ থেকে ক্রমে দূরত্বে গেছেন যে পন্থায় ঠিক সেই প্রকরণে কেন স্বধা মানুষেরই মধ্যে খুঁজে ফিরছে পরশপাথর? পৃথিবীর যে তিনটি জায়গায় তাদের যাওয়ার কথা ছিলো অবরোধ উঠলেই, তাদের মধ্যে এই মুহূর্তেই তার পৌঁছে যেতে ইচ্ছে করছে সিস্টিন চ্যাপেলে। নীলাদ্রি বারবার শেখাতেন স্বধাকে শিল্পীর জীবন নিয়ে না ভাবতে। শিল্পই শিল্পীর সাক্ষর। যন্ত্রণা, অর্জন ও প্রাপ্তি-প্রাকাম্যের। সৃষ্টি ও স্রষ্টা একীভূত। যখন নীলাদ্রির ডোবার কথা ছিলো "ও গ্রেসিয়াস লাইট" অথবা অন্যান্য ভেসপারের অতলে পিয়ানোয় চোখ রেখে, স্বধা দেখে বেড়াতো ফ্রেস্কো, এঞ্জেলোর মায়া ধার করে। এর কারণ কী? নিজেকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে সামান্য কাঁপলো সে। তাহলে কি ব্যবধান রেখার কাছাকাছি পৌঁছাতে চাইছে সে ক্রুশ আর ক্রাইস্টের? ছুঁয়ে দেখতে চাইছে ইন্দ্রিয় সম্বল করে ফ্যান্টাসি আর স্পর্শযোগ্যতার লাইন অব কন্ট্রোল? বাবাকে বলা হলো না। আর কখনো সুযোগ আসবে কি?


ভোর হয়ে আসছে। ইডেনের কেবিন ওয়ানে ধ্রুপদে ভৈরবী ধরলেন আল্লাদিয়া খান। কে বলে 'হংসধ্বনি' রাগ মাত্র? কে বলে শুধু 'মিঞা কি মল্লার' পাবক শান্ত করে? অসংখ্য ভেজা ভেজা সাদা ডানা উড়ে যাচ্ছে কাদের তাহলে কাচ পেরিয়ে দিগন্তের দিকে? স্বধা দেখছে। অক্সিমিটারের নেমে যাওয়া কাঁটা তাকে বাধ্য করছে ডক্টর সেনকে ফোন করতে অথচ টের পাচ্ছে এ অন্যায়। যাত্রাপথে বাধা হতে নেই। হটাত তার সমস্ত কোষে জিহাদ জ্বলে উঠলো নৃশংস মাত্রায়। কেন প্রতিবার নির্লিপ্তিতে নীলাদ্রি পেরিয়ে যাবেন প্রতিটি সম্ভাব্য সংঘাত? অসীম নিস্তব্ধতা দিয়ে এড়িয়ে যাবেন অনিবার্য প্রতিরোধ? আজ তাকে ফিরতেই হবে। নাড়া স্বধার হাতেও বাঁধা হয়েছিল তিন বছর বয়সে ইলাহাবাদে। সে অন্য ইতিহাস। ইনশাল্লাহ, আজ সে হারবে না তার পঞ্চগুরুর প্রথম জনের কাছে।

ছবি - অন্তর্জাল 


সুবীর সরকার

                              


গৌরীপুরের পান আর গোলকগঞ্জের গুয়া ( দ্বিতীয় পর্বের পর)

৩.
ইয়াকুব ব্যাপারী আর মহিউদ্দিন ওস্তাদের দেখা হয়।হয়তো দৃষ্টি বিনিময় হয় তাদের।কিন্তু কোন কথা হয় না।হাট তখন কেন্দ্রচ্যুত হয়ে টুকরো টুকরো ভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।হাটের মধ্যে জেগে ওঠে কত কত রকমের হাট।ইয়াকুব চলে যায় তামাকহাটির দিকে।আর মহিউদ্দিন ধানহাটির গহিনে মিলিয়ে যেতে থাকেন।আমরা ঠিক তখন দেখে ফেলি আসারিকান্দির লোকমান পাগেলা কে। সে তখন মাথায় গামছার পাগড়ি বেন্ধে চুপচাপ বসে আসে গিয়াস হেকিমের হেকিমি ওষুধ বিক্রির জমায়েতে।আসলে ওষুধ নয়।তার আগ্রহ গিয়াস হেকিমের ওষুধ বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে দুলে দুলে গান করবার প্রতি।
আশেপাশের বিশ তিরিশ হাটে আজ প্রায় তিন কুড়ি বছর ধরে এভাবেই গান আর হেকিমী ওষুধ নিয়েই ছুটে চলেছেন গিয়াস হেকিম।এর আগে তার বাপের সাথে,তার বাপ আবার তার বাপের সাথে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন হাটে হাটে।গিয়াস হেকিম আর তার গান আর তার শিকড় বাকর ছাল বাকলার ওষধি সামগ্রী নিয়ে এক রঙ্গিলা জীবনের ভেতর কাটিয়ে যাচ্ছেন তার আয়ুষ্কাল।আমরা দেখতে পাই গিয়াস হেকিম
তার বাবরি ছাটা চুল দোলাতে দোলাতে গাইছেন_
"ছাড়িবার না পাং 
এই গানের মায়া"
গানের পর গান চলতে থাকে।গান থামে।কিছু কথা তথা হয়।ওষুধের গুণকীর্তন হয়।মজা গুয়া পান বিড়ি  তামাকু সেবন হয়।হাসি মস্করা হয়।লোকমান পাগেলা
শরীরের আড়মোড়া ভেঙে তার পেশিসমগ্রে একটা মত্ততা বইয়ে দিতে দিতে একটা নাচের তীব্রতা ক্রমে নির্মিত করতে থাকেন।গিয়াস হেকিম তখন দোতরা বাজিয়ে গাইছেন_
"গান গান করিয়া সর্বনাশ
তবু না মেটে গানের হাউস "
এইভাবে হাটের মধ্যে জেগে ওঠে নুতন এক হাট।
৪.
আর একসময় প্রসঙ্গ হারিয়ে কিরকম প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে থাকে লোকমান।লোকমান পাগেলা।চরে চরে বালাবাড়ির কাশিয়ার ঝোপে ঝোপে হাটগঞ্জের মস্ত পরিধির ভেতর ডুবে যেতে যেতে কত কত পুরাতন আর নুতন গল্প সে তুলে আনে।সাজিয়ে দেয়।ছড়িয়ে দেয়। হাটে হাটে লোকমান হাটুয়া পাইকার ব্যাপারীদের শোনায় সেই সব গল্প।মানুষ ভালোবেসে তাকে পাগেলা বলে ডাকে।লোকমানের বাবা নইমুদ্দিন ছিল পান গুয়ার দোকানি।গোলকগঞ্জের আর আসারিকান্দির হাটে সপ্তাহে তিন দিন তার দোকানদারি।বাকি চারদিন সে বিবাগী।কখনো গৌরীপুরের বড় রাজকুমারীর বেটা মৃণাল বড়ুয়ার সাথে গানবাড়িতে,কখনো লালজি রাজার হাতি ধরার ফান্দিদের দলে মিশে যাওয়া,কখনো আসগর বয়াতির পালাটিয়ার দলে ঢোল বাজানোর কাজে ডুব দেওয়া।এইভাবেই একটা জীবন কখন কিভাবে বুঝি ফুরিয়ে গেল।নইমুদ্দিনের ইন্তেকালের পর প্রায় হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল তার জানাজায়।এসেছিলেন লালজি রাজা।রঘুনাথ মাহুত।বয়ান শেখ।
আজও,মরণের প্রায় চল্লিশ বছর পরেও মানুষের স্মৃতিতে খুব খুব বেঁচে আছেন নইমুদিন।লোকমানের রক্তেও বাপের রক্তের ধারা। পীরনানার জীন।
ঘুরে ঘুরে জীবন দেখার জীবন লোকমানের।গানের জীবন।নাচের জীবন।বাদ্য বাজনার জীবন।চিরকালের সব মানুষের গল্পের জীবন।আসলে মানুষ তো গল্প জড়িয়েই বেঁচে থাকতে চায়।
হাটের জমে ওঠা কিংবা ভাঙা হাটের স্তব্ধতার ভিতর লোকমান গতিয়েই দেয় না ফুরোন গল্পের ভাড়ার।
টোকন ব্যাপারী আর তার মত্ত হাতি জংবহাদুরের গল্পকে ভরা হাটে ডুবিয়ে দিয়ে লোকমান একমনে গুনগুন করে_
"ওরে কামাই কাজে যেমন তেমন
মানুষ মারার যম"
হাট এভাবেই লোকমান পাগেলার হাটে রূপান্তরিত হয়ে যেতে থাকে।

রবিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২১

বিভাগীয় সম্পাদক

        






দিনকয়েক হল কাঁধে এসে একখানি গুরুদায়িত্ব বর্তেছে। তরুণ কবি ও তাঁদের কবিতাকে সৃজনের রবিবারের সংখ্যার জন্য খুঁজে আনা। এখানেই শেষ নয়। পাশাপাশি লিখতে হবে বিভাগীয় সম্পাদকীয়, এমনই নির্দেশ পারমিতা'দির। স্বভাবতই, এর ফলে আমার মত এক তুরীয় আনাড়ির পর্বতপ্রমাণ উৎকণ্ঠা ও হন্তদন্তের জোগাড়। যাই হোক, বলেই ফেলি। 


'...Far between sundown's finish and midnight's broken toll

We ducked inside the doorway, thunder crashin'

As majestic bells of bolts struck shadows in the sounds

Seemin' to be the chimes of freedom flashin' 


Flashing for the warriors whose strength is not to fight

Flashing for the refugees on the unarmed road of flight

And for each and every underdog soldier in the night

And we gazed upon the chimes of freedom flashin...' 


আজকের দিনটা এলেই মনে পড়ে এই ক'টি চরণ। বিশ্বব্যাপী সঙ্গীতমায়ার অন্যতম যুগপুরুষ বব ডিলান এমনই বলেছিলেন তাঁরই লেখা ও সুরোরোপিত এক কালজয়ী গানে। চুয়াত্তর বছর কেটে গেছে। ঔপনিবেশিকতার ভয়াল বেড়ি ভেঙে হেঁটে চলেছে আমাদের দেশ। তবে স্বাধীনতার লড়াই, স্বাধীনতা চেয়ে লড়াই - এসবে ইতি পড়েনি একেবারেই। কবিগুরুর গীতিকল্পে বারবার ধ্বনিত হয়েছে, "আজ খেলা ভাঙার খেলা।" শৃঙ্খলের বাড়বাড়ন্ত তো সর্বত্রই। তা ভাঙার প্রয়াস নিশানায় নিয়েই আমাদের ছুটতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধর্মান্ধতা, পিতৃতন্ত্র, সন্ত্রাস বা দুর্নীতি, মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানান শেকলের। এদের মাঝে সবচেয়ে দুর্ভেদ্য? ভয়। যা চৌচির করে ফেলতে সম্বল ওই একটুখানি সাহস। কিংবদন্তি কবিমানস রবার্ট ফ্রস্টের কথায় ফিরে আসে, "Freedom lies on being bold." 


অতঃপর? সন্ধান চলুক, বিস্ময়-চারণ ডিলানের লেখনীতে বেজে ওঠা সূদূরগামী ঘণ্টাধ্বনির। মধ্যরাত্রির বজ্রময় বিপদসংকেতের সমাবেশ ভেঙে যা দিকচক্রবালে বারবার ছড়িয়ে দেয় স্বাতন্ত্র্যের সমুজ্জ্বল সাতকাহন। যা ছুঁয়েই এগোতে পারি আমরা সব্বাই। নিজের কথায়, নিজের সুরে এগিয়ে যেতে পারে কবিতারাও...

সম্পাদকীয়

             


স্বাধীনতার ৭৫ বছরে আমরা পা দিয়েছিl স্বাধীনতা আমাদের নিরাপদ করেছে ঠিকই কিন্তু সাবলম্বী হতে শেখায়নি। দেশের গণতান্ত্রকামী মানুষের রক্তে একদিন স্বাধীনতা এসেছে। তাঁরা চেয়েছিলেন আমাদের দেশকে  নিরাপদ ভাবে রেখে যেতে। সঠিক গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে।তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন স্বাধীন দেশে জল ,হাওয়া গ্রহণ করে৷কিন্ত বর্তমান প্রজন্ম বুঝলই না যে কত শহীদের রক্তে, কত ব্যথায় এই স্বাধীনতা এসেছে। স্বাধীনতা মানে মুক্তি৷ স্বাধীনতা মানে উল্লাস। স্বাধীনতা মানে স্বাধীন চিন্তা ও মনন। সেখানে থাকবে না কোনো অন্ধকার, মলিনতা৷ থাকবে  শুধু আলো। বেঁচে থাকার রসদ৷

আমাদের ভাবনার,চেতনায় যেন কখনও শিথিলতা না আসে।মন উড়ে যায় বিহঙ্গের মত ! আমাদের চেতনা আমাদের শরীর থেকে দূরে নিয়ে যায়৷ আমরা উপলব্ধি করি স্বাধীনতার মন্ত্র।

কিন্তু এই ৭৫ বছরের স্বাধীনতায়  এসে আমরা কী স্বাধীন হয়েছি ৷আজও বহু কন্যা ভ্রুণ হত্যা হয় কিংবা কন্যা শিশুকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে চলে যায়। নারী ধর্ষিত হয় কিংবা কন্যা শিশু ধর্ষিত হয়। এ কোন স্বাধীনতা ! যা আমাদের শিকড়চ্যূত করে ৷মহিলাদের ডায়নী আখ্যা দেওয়া হয়। স্বাধীনতা কথাকে বিশ্লেষণ করলে দেখব স্ব - অধীনতা অর্থাৎ নিজেকে স্বাধীন করা। আমরা স্বাধীনতা কথার অর্থ সম্পূর্ণ রূপে মননে,চিন্তনে প্রবেশ করাতে পারিনি। আর এটাই আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা ছেড়ে যত সহজে  আমবা  বেরোব ততই জাতির উন্নতি ৷ আমরা যত এগোব দেশও তত এগোবে৷ এই ভাবনা থেকে যত মুক্ত হব ততই উন্নত হব।

আজ ১৫ ই আগস্ট ।তাই এই সংখ্যার বিষয় স্বাধীনতা ও মনন৷"সৃজন " সর্বদাই বিষয়ভিত্তিক করে । আর এই বিষয় নির্বাচনে সর্বদা স্বকীয়তার দাবী রাখেl "সৃজন "" স্বাধীন চেতনা ও মনন " সংখ্যায় যারা কলম ধরেছেন সবাইকে ধন্যবাদ ।সৃ প্রকাশনের একটি শাখা " সৃজন" অপরটি " আমার সৃজন" ৷ আমার সৃজন মুদ্রিত সংখ্যা। আমার সৃজন শারদীয়া সংখ্যার বিষয় " যৌনতা " ৷যেটি প্রকাশ হবে শীঘ্রই। সবাই খুব ভালো থাকুন ,সৃজনে থাকুন।

পারমিতা চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক 

চিত্র- জয়ীতা ব্যানার্জী 

সুস্মিতা সাহা

                          


১. মূহুর্ত


একটি একটি করে দিন এগোয় -
এগোয় মাস বছর মূহুর্ত।
দু একটা মূহুর্ত আজো বড়ো দামী। 
অনেকটা রক্ত ঝরেছিল যে সেদিন।
স্বাধীনতা! তুমি আজো ভীষণ রকম মূল্যবান। 
কারণ সবাই তোমাকে এখনো পায় নি। 

২.  অপেক্ষা

আদরের নাম ধরে ডাকছি তোমায়,
আজ সে কতো কাল।
দূরবিনের কাঁচ খুব ঝাপসা, 
মুখখানা আবছা - অস্পষ্ট। 
তুমি হেঁটে গেলে কোন সুদূরে -
আকাশ যেখানে হাত রাখে দিগন্তরেখায়-
আমি তো আছিই লবণাক্ত হৃদয়ে 
ঝাঁঝালো গন্ধের চচ্চড়ি রাঁধতে। 
ফিরে এসে হাতে মুখে জল দিয়ে দু দানা মুখে তুলবে তো বিশ্ব পথিক।

৩. বিষ

বিষ- বিষের ছোঁয়ায় কালিদহ আজ নীল -
ডিঙা ভাসাও কোথায় কতো দূরে চাঁদ সদাগর? 
শ্রাবণের পূর্ণিমায় কালো জলে মাথা নাচায় 
সার সার সুগন্ধি পদ্মগুলি - সময় যে যায়। 
যায় সব, প্রাণ যায় - মান যায় - যায় প্রাণের স্পন্দন। তবু আজো হে, একাকী মানব 
লগি তুলে আওয়াজ দাও- কই গো কোথায় গেলি বাছা লখিন্দর?
মানুষের গল্প লেখা হয়েছিল সেদিনই। 
চাঁদের পরাজয়ে মানবের বিজয়কাহিনী।


 

আকাশ মুখোপাধ্যায়

                              


এই সংখ্যার কবি বৈদ্যবাটীর বাসিন্দা। বর্তমানে বি.কম (অনার্স) পড়ছেন গোয়েঙ্কা কলেজ অফ কমার্স, কলকাতা থেকে। সাথে চ্যাটার্ড অ্যাকাউনটেন্সিও পড়ছেন।দেড় বছর হল লেখালিখির শুরু। তবে সেগুলোর বেশীরভাগই ডায়েরির পাতাতে সীমাবদ্ধ ছিল। গত বছর নভেম্বরে 'প্ল্যাটফর্ম' ওয়েবজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রতি মুহূর্তে ভাবনাকে সঙ্গী করেই কবিতা লেখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন...



★ লিপস্টিক ★

প্রেমিকার ঠোঁটের এই ক্যাপিটালিস্টিক বস্তু
আমার মধ্যবিত্ত জীবনে তারা খসিয়ে দেয়।

সারাদিন কার্ল মার্ক্স গুলে খাওয়া ছেলেটা
শুধু চুমু খাওয়ার সময় ক্যাপিটালিজম এর
প্রশংসা করে...
কিন্তু, চুপি চুপি.....

★ সিলিন্ডার ★

লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতি মাসে দাম বেড়ে যায়
সিলিন্ডার দায়িত্ব নিয়ে মধ্যবিত্তের হেঁশেলে
আগুন লাগিয়ে দেয়....

সেই আগুন নিজের মত জ্বলতেই থাকে,
পরের সিলিন্ডার আসা অবধি....

এদিকে সিলিন্ডার ওয়ালা বাবার সাথে
বকশিস নিয়ে ঝগড়া করে যায় ....

আমরা সরকারের ভর্তুকির জন্য দিন গুনতে থাকি...

★ রিক্সাওয়ালা ★

প্রতিদিন রিক্সায় ওঠার সময় পাঁচ টাকা
করে কম দিই,
পাছে এই পাঁচ টাকা জমিয়ে বাংলা খেয়ে না পড়ে থাকে, এই ভেবে...

একদিন দেখি রিক্সাওয়ালাটা তার মেয়েকে
নোটবুক কিনে দিচ্ছে....
পাশ থেকে দেখি ওর মধ্যে আমার দেওয়া
ফাটা পাঁচ টাকার নোট টা রয়েছে.....

★ টিউবলাইট ★

টিউবলাইট অকারণে জ্বালাতে দেখলে
মা আমাকে বকাঝকা করে....
আমার বিলাসিতা নিয়ে খোঁটা দেয়...

প্রতিবার বকার সময় মনে করিয়ে দেয়
এই মাসের ইলেকট্রিক বিল দেওয়া
এখনও বাকি....

★ র‍্যাশান ★

অতিমারিতে অস্তিত্ব রক্ষা করতেই হবে
এইভেবে র‍্যাশান থেকে
দু টাকা কেজির চাল নিয়ে আসি...

চারিদিকে পোকা কিলবিল করে,
বাছতে বাছতে বেলা গড়িয়ে যায়...

ভালো করে বেছে ভাত রান্না করতে হবে,
কারণ, পেট খারাপ হলে ওষুধ কেনার কোনো টাকা নেই....




কবি-পরিচিতি :


পিয়াংকী

                                     


             


 ডিটক্স ওয়াটার বা ইনফিউসড ওয়াটার,  এখন এটা ট্রেন্ড । কিন্তু এই ট্রেন্ড ফলো করার আগে জানা দরকার ডিটক্সিফিকেশন কি।আমরা কথায় কথায় বলি শরীরটা চলছে না আর, মেশিনে তেল নেই।হ্যাঁ শরীর একটা যন্ত্র। বাহ্যিকভাবে চুল চামড়া ধুয়ে তাকে পরিস্কার করা হয় কিন্তু ভেতর? তাকে সাবান মাখানো স্নান করানো হবে কিভাবে বলুন তো?


হ্যাঁ ভেতরঘর পরিস্কার রাখার প্রসেসই হল ডিটক্সিফিকেশন। যা কিনা দেহের টক্সিন রিলিজ করিয়ে দিয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়িয়ে সমস্ত কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। সবচেয়ে বড় ভূমিকা হল আমাদের শরীরের বি.এম.আর অর্থাৎ বেসিক মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে ক্যালোরি বার্ণ করতে সাহায্য করে। আমাকে আমার ডায়েটিশিয়ান বলেছিলেন, "এই যে আমরা কথায় কথায় বলি অমুক হাওয়া খেয়েও ফুলছে আর তমুক সারাদিন বিরিয়ানি আর হালিম খেয়েও ফুলছে না, আসলে এটা কাজ করছে আপনার জন্মগত বি এম আর এর রেটের ওপর। যার বি এম আর যত হাই সে তত কম ওজনের মানুষ। আর যার বি এম আর যত লো সে তত বেশি ওজন ক্যারি করছেন সুতরাং ওজন কমানোর উপায় বলতে গেলে প্রথমেই বি এম আর বাড়ানোর দিকে মন দিন"। আজ আমি দুটো ডিটক্স ওয়াটারের এবং আট রকম ডিটক্স চায়ের  কথা বলব। আমি যতটুকু করে উপকার পেয়েছি ততটুকুই জানাব আজ।যদিও গরম বাহার রান্নার ব্লগ তবু শরীর সুস্থ রাখতে গেলে একটু তো করতেই হয়


হোলনাইটওয়াটার...খোসা সমেত একটা শশা গোল চাক চাক করে কেটে নিন,সাথে দশ বারোটা পুদিনা পাতা পাঁচটা কারিপাতা, গোল চাক করে কাটা পাতিলেবু কয়েকটা তুলসীপাতা এক লিটার জলে ভিজিয়ে রাখুন সারারাত।সকালে উঠে নির্ভাবনায় খেতে থাকুন,দারুণ ফ্লেভার। আর দারুণ টক্সিন রিলিজিং।ত্বক ঝলমলে রোদ্দুর হতে বেশি দেরি লাগবে না

                     

                               হোলনাইট ওয়াটার

শুদ্ধগরমজল...দেড়শো মিললিটার ঈষদুষ্ণ গরম জল সকালে এবং রাতে শোবার সময় (খালি পেটে) খেলে ম্যাজিকের মত কাজ করবে।জল ক্যালরিহীন একটি পানীয় 

                

                          শুদ্ধ গরমজল

                 


এবার আসি চা-য়ে🙂



গ্রীনটি...ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বর্তমান পৃথিবীর বুকে স্বাস্থ্যসচেতন প্রতিটি মানুষের দিন শুরু হয় গ্রীনটি দিয়ে।এক কাপ জল ফুটিয়ে নিয়ে একটা টিব্যাগ ঝুলিয়ে চলে যান গাছে জল দিতে।ফিরে এসে বসে পড়ুন সামনের বারান্দায়। পাখি দেখুন গাছের সবুজের দিকে তাকান আর মুখে দিন সবুজচা। একটানা একুশ দিন করে দেখুন আপনার বডি একে আপন করতে শুরু করবে সাথে বেলি ফ্যাট কমবে আর স্কিন তরুণ তরুণী হতে থাকবে

                         

                            গ্রীণ টি 

দারচিনিচা...তৈরি পদ্ধতি খুব সহজ, এক থেকে দেড় ইঞ্চির দুটো স্টিক নিয়ে দেড়শ থেকে দু'শ মিলিলিটার জলে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে গরম গরম খেতে হবে, বেশ খানিকটা সময় ধরে। 

                               

                        দারুচিনি চা

আদাজল...আদার মধ্যে থাকা উপাদান প্রাচীন যুগ থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে ইনফেকশনের প্রতিরোধী হিসেবে।আদা মেটাবলিজম বিপাকক্রিয়ার হার বাড়িয়ে শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। তিন লিটার জলে তিরিশ থেকে চল্লিশ গ্রাম আদা থেঁতো করে বা গ্রেটারে গ্রেট করে ফুটিয়ে নিন মিনিট পনের সময় ধরে।একগ্লাস গরম গরম খান। তারপর সারাদিনের জলে একটু একটু করে মিশিয়ে খান।সর্দিকাশি থেকে ত্বকের সমস্যা সবেতেই কার্যকরী এই জল

                    


জিরালেবুচা...চা চামচের এক চামচ জিরা আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখুন, সকালে সেটা ফুটিয়ে তার মধ্যে একটা গোটা পাতিলেবুর রস,কিছুটা পুদিনা পাতা দিয়ে গরম থাকতে থাকতে সিপ সিপ করে টানুন।পেটের ফ্যাট কমাতে এই চায়ের জুড়ি মেলা ভার

                     

                              জিরালেবু চা 

চিয়াসিডওয়াটার... একেক সময় একেকটা জিনিসের ঝোঁক দেখা যায় ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে।সেরকমই হল এই চিয়াসিড। এর গুণাগুণ বললে শেষ করা মুশকিল। আগের দিন রাতে চা চামচের দুই চামচ ভিজিয়ে রাখুন  পরেরদিন সকালে সেই জলটা গরম করুন।বাবলস এলে নামিয়ে নিন।একটু পিচ্ছিল স্বাদ গন্ধ কিছুই নেই।তবে খেলে ওজন কমবে তাড়াতাড়ি। পনের দিন খেয়ে পরের পনের দিন অন্য ডিটক্স খান।

                                        

                 চিয়াসিড


আনারসিখোলাচা...এই বর্ষা ঋতুতে আমরা খুব আনারস খাই আর তার খোসা বুকসমেত ফেলে দিই,অথচ জানিই না যে এই খোসায় কী অসাধারণ গুণ আছে।খুব ছোট ছোট পিস করে খোসাগুলোকে কেটে পাঁচশো মিলিলিটার জলে অন্ততপক্ষে কুড়ি মিনিট ফোটান যতক্ষণ না জলের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়।ছেঁকে নিয়ে খান খুব আয়েশ করে

                              

                       আনারসিখোলা চা


কমলাটি...ডিটক্স হিসেবে আমার সর্বাপেক্ষা পছন্দ হল এই চা।কমলালেবুর চোকলা মানে খোসা  ভালো করে ধুয়ে জলে ফুটিয়ে নিলেই তৈরি আপনার অরেঞ্জটি।সাথে আপনি দুটো গোটা গোলমরিচও ফুটিয়ে নিতে পারেন। শীতকালে ঝুলবারান্দায় বসে আয়েস করে ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করতে করতে খেয়েই দেখুন না

                      

                 কমলাটি বা অরেঞ্জটি

শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

তিস্তা

                                



" বনমালী তুমি পরজনমে হইয়ো রাধা"
(৪)


ভেবেছি এই পর্যন্ত এসে আর কোনো আড়াল থাকবে না। ভেবেছি এই পর্যন্ত এসে আর কোনো প্রকাশও থাকবে না নতুন করে। অজস্র কাটাছেঁড়া সমেত আমরা দুজন দুজনকে স্রোতের গল্প শোনাবো। শোনাবো আয়না বর্জিত প্রসাধনের গল্প। আমাদের প্রতিকী লিঙ্গবদল। মৃত্যু অথবা পুনর্জন্ম।

অথচ কোথায় কী!
নক্ষত্র নিভে গেলে বুঝেছি সকলি অপচয়।

যাবতীয় খিদের কাছে পরাজিত তুমি, রপ্ত করেছো পঞ্চব্যঞ্জন। বিষ ও বাঁশির তফাৎ করতে শেখনি। সমর্পণের ভঙ্গিমায় আজ এইখানে, এই পর্যন্ত এসেছো! এও এক তাড়না। হিমেল সম্মোহন। জানি, ব্যর্থ শুরুয়াৎ। যে কোন সময় দু-আঙুলের টুসকিতে আমার সমস্ত আবেগ মুচড়ে দিয়ে চলে যাবে। তবু তোমার রূপের মহিমা আমাকে বিম্বিত করে লতিফা। ততোধিক বিস্মিত করে  তোমার এই অহরহ স্নানঘর। শ্বেতকরবীর হার অথবা হাসুলি। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কার জন্য এখনও তোমার এই আয়না-প্রিয়তা ! কে তোমাকে বাজিয়ে যায় ঝুম ঝুম ঝুম! এতো অশ্রুপাত এত আকুলতা এতো দিলখুশ কার, কার জন্য? কার স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা
বিয়ন্ত-রজনী তোমার এখনও উদগ্রীব!

মুখ ভেসে ওঠে
মুখ হারিয়ে যায়
মুখ তলিয়ে যায় গভীর অসুখে...

কাচের ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি, সাহেবা
খানিক কেটে তো যাবেই!

অদিতি ঘোষদস্তিদার

                        



বহিবারে দাও শকতি


 

প্রতিবছর ছেলেটা স্বাধীনতা দিবসের বেশ কিছুদিন আগে থাকতে স্বাধীন ভারতের পতাকা বিক্রি করে
দাঁড়ায় ব্যস্ত শহরের মোড়ে। হাতে থাকে একগুচ্ছ পতাকা
। গেরুয়াসবুজ আর সাদা রঙের মাঝখানে নীল অশোক চক্র!
সিগন্যাল লাল হলেই  দাঁড়ানো গাড়ির সামনে ছুটে যায়। 
 
কেউ কেনে

 কেউ কেনে না।

কেউ কেউ জ্ঞান দেয় এসব না করে অন্য কাজ করতে।

কেউ কেউ উদাস হয়ে বলে, "ধুস! কিসের স্বাধীনতা!"
কারুর কারুর মনে পড়ে যায়, "আরে! ১৫ই অগস্ট আসছে তো! কী বার যেন! দুদিন ডুব মারলে মন্দারমণিটা হয়ে যাবে!"
১৬ই আগস্ট বিক্রি না হওয়া বাকি পতাকাগুলো খুব যত্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে ছেলেটা তুলে রাখে ওদের দশ 
 ফুট বাই দশ ফুটের ঘরের টালির ছাউনির নিচের বাঁশের আড়ালে।
পরের বছর 
 ১৫ই অগস্টের আগে আগে সেগুলো বের করে আরো কিছু নতুন কিনে আবার দাঁড়ায় একই জায়গায়।
সারাবছর আরো নানা রকম কাজ করে পেটের 
 ধান্দায়।
কিন্তু বছরের এই সময়টা আর কিচ্ছু নয়!

এবছর এসেছে প্রলয় ঝড়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুমুল বৃষ্টি।

গাছ পড়ে ভাঙল টালির ভিটে। ভেসে যায় ঘরদুয়ার। মাভাইবোনেরা প্রাণপণে বাঁচাতে চায় যতটুকু পারে।
ছেলেটা তখন গাছের ডাল কেটে পাতার বোঝা সরিয়ে কী যেন খোঁজে পাগলের মত। 
   
ইলেক্ট্রিকের তার ছিঁড়ে পড় গাছের ডালে জড়িয়ে। ছেলেটার ভ্রূক্ষেপ নেই।

 মা চেঁচায়, "যাস নাযাস না! যা গেছে যাক!"

বোনটা বোঝে। মায়ের হাত ছাড়িয়ে সেও এগিয়ে যায় দাদার লক্ষ্যে।  

ছেলেমেয়েদুটো বেশ খানিক পরে ভিজে কাক  হয়ে বেরিয়ে আসে ধ্বংসস্তূপ থেকে। বুকের মধ্যে থেকে বের করে আনে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট।

মুখে তাদের গৌরবের হাসি।  

সুচেতা বিশ্বাস

                               


পাখির পালক 

অপর্ণার এখন কিছুই ভালো  লাগে না ۔۔۔۔কোনো রকম এ রান্নাটা রোজ করে ۔۔তাও ও তেল কম ۔۔ঝাল  কম ۔۔সারাদিনে  কত গ্লাস জল যে সে খায় ۔۔۔অনেকে বলে এটা নাকি ম্যানিয়া ۔۔۔রুমা অনেকদিন ধরে দেখছে অপর্ণা কে ۔۔সপ্তাহে একবার ডাক্তারের কাছে যায় ۔۔তখন রুমার সাথে দেখা হয়ে ۔۔অটো স্ট্যান্ডের গায়েই রুমাদের বাড়ি ۔۔রান্নাঘর থেকে দেখতে পেলেই  ছুটে আসে রুমা ۔۔"দিদি কেমন আছো " 
"ভালো লাগছে না গো শরীরটা ۔۔۔"
" কি হলো আবার ۔۔আগের সোমবার ই তো ডাক্তারের কাছে গেলে " 
" ওষুধ এ কাজ হয় নি ۔۔উল্টে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে " 
"তুমি এবার অন্য ডাক্তার দেখাও দিদি " 
" কত ডাক্তার তো দেখলাম "
‌রোজ ই একই রকম কথা ۔۔۔তাই চুপ করে যায় রুমা ۔۔পাশের বাড়ির  রুবি বৌদি ও দেখে অপর্ণা কে ۔۔ভালো জানাশোনা ও আছে ۔۔কিন্তু অপর্ণা কে দেখলে ই ঘরে ঢুকে যান ۔۔উনি ই তো বলেন "ওর ওটা ম্যানিয়া ۔"۔ মাঝে মাঝে রুমার মনে হয় পাশের বাড়ি র বৌদি ই ঠিক ۔۔সুন্দর সংসার ۔۔বাড়ি গাড়ি কি নেই অপর্ণার  ۔۔তা  ও মুখে হাসি নেই ۔۔একপাড়াতে আজ এগারো বছর একসাথে ۔۔সেই বিয়ের পর থেকে রুমা পাড়ার সবাই কে দেখছে ۔۔পরিবর্তন তো আসে সবার ই ۔۔এটাই জীবনের নিয়ম ۔۔۔অপর্ণার পরিবর্তন টা  একেবারেই অন্য রকম ۔۔۔রুমা একদিন ওর স্বামী কে জিজ্ঞাসা করেছিল . " তুমি তো ছোটোর থেকে দেখছো অপর্ণা দি কে ۔۔আগে ও এই রকম ছিলেন " 
‌" ঘরে থাকতো নাকি ۔۔দিনরাত টই টই  .  একটা দল ছিল ওদের  ۔۔ছেলেদের  কে স্কুলে দিতে যাবার নাম করে۔۔সুইমিং ক্লাস এর নাম করে  কোথায় কোথায় যে সব কটা যেত ۔۔পাড়া তে সবাই জানতো ۔۔মার্কেট, সিনেমাহল, ডিস্কো থেক۔۔সব জায়গায় দেখা যেত ۔۔বাড়ি  তেও এই নিয়ে খুব অশান্তি ছিল" 
‌এই টুকুই বলেছিলো সমীর ۔۔۔কৌতুহল টা  রয়েই গিয়েছিলো ۔۔পাশের বাড়ি র রুবি বৌদি বাকি টা বললো একদিন ۔۔"ছেলে রা বড়ো হলো ۔۔দল  ভাঙলো ۔۔দলের মধ্যে ওর ই  ছিল ভীষণ রেশারেশি ۔সব থেকে বেশি হিংসুটে ছিল۔ ۔۔আমার বড়দি ও তো ছিল ওই  দলে ۔۔দিদির কাছে শুনেছি যার যা দেখতো সেটাই ওর চাই ۔۔কারুর ভালো ও দেখতে পারতো না " 
‌রুমা সেদিন  ই বুঝেছিলো রুবি বৌদি ওই অপর্ণা দি কে এড়িয়ে যায় ۔۔কি এমন হলো যে উনি এমন হয়ে গেলেন ۔অতীতের ۔۔উশৃঙ্খল জীবন কি  ওকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায় ? কি এমন বিষাদ যে পুরো শরীরটা কে নষ্ট করে  দেয় ۔۔না পড়ে একটা ভালো শাড়ী না একটু সেজেগুজে থাকে ۔এ কেমন বিষাদ ? 
‌শাশুড়ি মায়ের কাছে শুনেছে অপর্ণা দির কিডনির প্রব্লেম ছিল ۔۔۔ভেলোর নিয়ে গিয়েছিলো ۔۔খরচের কোনো ত্রুটি রাখেন নি গৌরব দা ۔۔এর সঙ্গে বেশ একটা মজার ঘটনাও মা বলেছিলেন মা ۔۔" ওই যে শরীর টা খারাপ হলো ۔۔তার পর থেকে কোনো বন্ধু ফোন করলেই বলতো ওর শরীর টা আজ খুব খারাপ ۔۔প্রায় ই এই ভাবে ওর শরীর খারাপের কথা শুনে বন্ধুরা 
‌রাতের কিংবা দুপুরের সব রান্না করে দিয়ে যেত ۔۔আর ও ওই সুযোগে সেদিন 
‌টা রান্না করতে হবে না বলে সেজেগুজে বর ছেলে নিয়ে বেড়াতে যেত " 
‌এটা আপনি কি করে জানলেন মা " রুবির বড়দি যেদিন ওদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল ۔۔সেদিন ওই ই ওদের বাজার এ দেখছে ۔۔۔" 
‌রুমা অনেক কোথা ই  জানে ۔۔কানে আসে ۔۔কিন্তু অপর্ণার সাথে বসে কোনোদিন গল্প করে নি ۔۔মাঝে মাঝে অপর্ণাদির সাজপোশাক ও বড্ডো উগ্র লাগে রুমার ۔۔রবিবার প্রায় ই দুপুরে গৌরবদার সাথে বেরোয় এই পঞ্চাশেও টাইট জিন্স জিনস উপরে বাচ্চা মেয়েদের মত রংচঙে টপ ۔۔পাড়ার অনেক ই হাসাহাসি করে "۔۔ফিসফাস শোনা যায় " স্বামীর শাসন নেই " 
রুমার সবই শোনা কথা ۔۔শুনে শুনে মনের মধ্যে কল্পনা করে নিয়েছে কিন্তু সত্যি কি সব টা ঠিক ۔۔আর সবাই তো এক রকম হয় না ۔۔ আমাদের সমাজে কেউ একটু আলাদা হলেই সবার আগে আমরা মেয়েরা ই তাকে নিয়ে  বেশি সমালোচনা করি۔۔ ۔۔ যুগ যুগ ধরে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু ۔۔অপর্ণা কে দেখলেই রুমার মনের দ্বন্দ্ব তৈরী হয় ۔۔
" কোথায় গিয়েছিলে  অপর্ণা দি ?۔۔ এসো না একদিন ۔۔গল্প করবো۔۔ " 
সেই মিস্টি হাসি "  আসবো আসবো ۔۔۔ গাইনির কাছে গিয়েছিলাম ۔۔۔দূর কিছুই হয় নি ۔۔"
" কেন কোনো অসুবিধা হচ্ছে " 
" তলপেটের ডান দিকে একটু ব্যাথা۔۔কোনো ওষুধ ই দিলেন না ۔۔জানো ডাক্তার হাসতে হাসতে কি বললেন "অপর্ণা কে এত খুশি দেখে রুমার ও উৎসাহ বেড়ে গেলো۔۔ "
" কি বললেন গো "
" বললেন সব ওষুধ বন্ধ করে দে ۔۔একটা  বয় ফ্রেন্ড বানা ۔۔আর ওকে নিয়ে পার্ক এ ঘুরে বেড়া ۔۔"
দুজনেই হো হো করে  হাসতে লাগলো ۔۔রুমা মনে মনে ভাবছে সত্যি তো সব  রোগের ই ওষুধ আছে ۔۔মনের রোগের ওষুধ ক জন দিতে পারে ۔۔সে তো۔ পাখির পালকের মতন ۔۔ভোরের  শিশিরে র মতন۔ ۔۔শিউলি গন্ধের মতন ۔۔۔নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়۔۔




অনিকেশ দাশগুপ্ত

                   






সমাধি
 

ছড়ানো তাসের নামগুলি উচ্চারণ করতে-করতে
শেষমেশ তোমার অন্ধ-নাবিক চোখ 
দ্বিতীয়বার স্ফুরিত হবে

কন্ঠস্বর,দাঁড় টানার অদ্ভুত নীল নেপথ্যে
গেয়ে ওঠা সেই নৌকো-গান আর

রুপালি বাঁকের অশ্রু নিয়ে একঝাঁক স্লেজ যেন
মিশে যাচ্ছে দূরে,আরো দূরের তুষার-অরণ্যে,

নরম কবোষ্ণ জলে কার্নিভাল ও ক্যানারি পাখির
ঝলমলে মুহূর্তরা এভাবেই ডাকে

উনুন থেকে সদ্য নামানো রুটির গোল অন্ধকার
আরো বহুদিন বয়ে বেড়াব আমরা

আর টুপি খুলে নিরুদ্দেশে উড়িয়ে দেওয়া হবে 
                      স্মৃতির নভোচরটিকে






চিঠি

 
শেষ রাতে ঘুমের গায়ে সাদা আলোর ছিটে 
চোখ ধাঁধিয়ে দেয়,দরজার ছটপটানির অপার সীমানায়
মুষড়ে পড়ে সময়-পাখি, 
শৈশবকে উদ্ধার ক’রে বয়ে আনে এই যুদ্ধপ্রান্তরে

অক্ষরহীন নিঃশ্বাসে কে যেন চমকে ওঠে 
আমারই হারানো চটি পায়ে ব্যারিকেডের ওপার থেকে
কারা যে নিরন্তর ছুঁড়ে দেয় অন্ধকার!

চূড়ান্ত নগ্নতার মসলিন চৌকাঠ জেগে আছে
যেন অভিঘাত,যেন বেকুব শুদ্ধ বাতাস –
ফালা-ফালা করছে অক্ষয় আসমানী পর্দা  

ব্যস্ততার অমোঘ ভোল পাল্টে স্থিতি ও নিঃশ্বাসের
এক জন্মে সন্ধ্যার ঠোঙা উড়ে আসে
ধ্বংসের চিঠির মতন দূরে পড়ে থাকে তার বার্তা
 




আলাপ


ঘুরে-ফিরে আসে আমাদের বায়স-যৌবন
দৃষ্টি ও তুণীরের পরিকল্পনা –
শিকারের প্রত্যক্ষ দর্শন থেকে 
অভিজাত শিকড়ে ঢাকে অপূর্ণ চাঁদটিকে

কেমন সাদামাটা ব্যথায় পাশ ফিরে দীর্ঘ সুতোর মতন
আমারই আঙুলে দেখেছি পুতুল-নাচের সাযুজ্য 

ভারি হয়ে নেমে আসে ঘুমে তারপর
তর্কের আঠা ও দু’কশের বোবা নিরুদ্দেশ অভিভাবকেরা