বহিবারে দাও শকতি
প্রতিবছর ছেলেটা স্বাধীনতা দিবসের বেশ কিছুদিন আগে থাকতে স্বাধীন ভারতের পতাকা বিক্রি করে।
দাঁড়ায় ব্যস্ত শহরের মোড়ে। হাতে থাকে একগুচ্ছ পতাকা। গেরুয়া, সবুজ আর সাদা রঙের মাঝখানে নীল অশোক চক্র!
সিগন্যাল লাল হলেই দাঁড়ানো গাড়ির সামনে ছুটে যায়।
কেউ কেনে।
কেউ কেনে না।
কেউ কেউ জ্ঞান দেয় এসব না করে অন্য কাজ করতে।
কেউ কেউ উদাস হয়ে বলে, "ধুস! কিসের স্বাধীনতা!"
কারুর কারুর মনে পড়ে যায়, "আরে! ১৫ই অগস্ট আসছে তো! কী বার যেন! দুদিন ডুব মারলে মন্দারমণিটা হয়ে যাবে!"
১৬ই আগস্ট বিক্রি না হওয়া বাকি পতাকাগুলো খুব যত্ন করে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে ছেলেটা তুলে রাখে ওদের দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরের টালির ছাউনির নিচের বাঁশের আড়ালে।
পরের বছর ১৫ই অগস্টের আগে আগে সেগুলো বের করে, আরো কিছু নতুন কিনে আবার দাঁড়ায় একই জায়গায়।
সারাবছর আরো নানা রকম কাজ করে পেটের ধান্দায়।
কিন্তু বছরের এই সময়টা আর কিচ্ছু নয়!
এবছর এসেছে প্রলয় ঝড়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুমুল বৃষ্টি।
গাছ পড়ে ভাঙল টালির ভিটে। ভেসে যায় ঘরদুয়ার। মা, ভাইবোনেরা প্রাণপণে বাঁচাতে চায় যতটুকু পারে।
ছেলেটা তখন গাছের ডাল কেটে পাতার বোঝা সরিয়ে কী যেন খোঁজে পাগলের মত।
ইলেক্ট্রিকের তার ছিঁড়ে পড়ল গাছের ডালে জড়িয়ে। ছেলেটার ভ্রূক্ষেপ নেই।
মা চেঁচায়, "যাস না, যাস না! যা গেছে যাক!"
বোনটা বোঝে। মায়ের হাত ছাড়িয়ে সেও এগিয়ে যায় দাদার লক্ষ্যে।
ছেলেমেয়েদুটো বেশ খানিক পরে ভিজে কাক হয়ে বেরিয়ে আসে ধ্বংসস্তূপ থেকে। বুকের মধ্যে থেকে বের করে আনে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট।
মুখে তাদের গৌরবের হাসি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন