পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

সুচেতা বিশ্বাস

                               


পাখির পালক 

অপর্ণার এখন কিছুই ভালো  লাগে না ۔۔۔۔কোনো রকম এ রান্নাটা রোজ করে ۔۔তাও ও তেল কম ۔۔ঝাল  কম ۔۔সারাদিনে  কত গ্লাস জল যে সে খায় ۔۔۔অনেকে বলে এটা নাকি ম্যানিয়া ۔۔۔রুমা অনেকদিন ধরে দেখছে অপর্ণা কে ۔۔সপ্তাহে একবার ডাক্তারের কাছে যায় ۔۔তখন রুমার সাথে দেখা হয়ে ۔۔অটো স্ট্যান্ডের গায়েই রুমাদের বাড়ি ۔۔রান্নাঘর থেকে দেখতে পেলেই  ছুটে আসে রুমা ۔۔"দিদি কেমন আছো " 
"ভালো লাগছে না গো শরীরটা ۔۔۔"
" কি হলো আবার ۔۔আগের সোমবার ই তো ডাক্তারের কাছে গেলে " 
" ওষুধ এ কাজ হয় নি ۔۔উল্টে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে " 
"তুমি এবার অন্য ডাক্তার দেখাও দিদি " 
" কত ডাক্তার তো দেখলাম "
‌রোজ ই একই রকম কথা ۔۔۔তাই চুপ করে যায় রুমা ۔۔পাশের বাড়ির  রুবি বৌদি ও দেখে অপর্ণা কে ۔۔ভালো জানাশোনা ও আছে ۔۔কিন্তু অপর্ণা কে দেখলে ই ঘরে ঢুকে যান ۔۔উনি ই তো বলেন "ওর ওটা ম্যানিয়া ۔"۔ মাঝে মাঝে রুমার মনে হয় পাশের বাড়ি র বৌদি ই ঠিক ۔۔সুন্দর সংসার ۔۔বাড়ি গাড়ি কি নেই অপর্ণার  ۔۔তা  ও মুখে হাসি নেই ۔۔একপাড়াতে আজ এগারো বছর একসাথে ۔۔সেই বিয়ের পর থেকে রুমা পাড়ার সবাই কে দেখছে ۔۔পরিবর্তন তো আসে সবার ই ۔۔এটাই জীবনের নিয়ম ۔۔۔অপর্ণার পরিবর্তন টা  একেবারেই অন্য রকম ۔۔۔রুমা একদিন ওর স্বামী কে জিজ্ঞাসা করেছিল . " তুমি তো ছোটোর থেকে দেখছো অপর্ণা দি কে ۔۔আগে ও এই রকম ছিলেন " 
‌" ঘরে থাকতো নাকি ۔۔দিনরাত টই টই  .  একটা দল ছিল ওদের  ۔۔ছেলেদের  কে স্কুলে দিতে যাবার নাম করে۔۔সুইমিং ক্লাস এর নাম করে  কোথায় কোথায় যে সব কটা যেত ۔۔পাড়া তে সবাই জানতো ۔۔মার্কেট, সিনেমাহল, ডিস্কো থেক۔۔সব জায়গায় দেখা যেত ۔۔বাড়ি  তেও এই নিয়ে খুব অশান্তি ছিল" 
‌এই টুকুই বলেছিলো সমীর ۔۔۔কৌতুহল টা  রয়েই গিয়েছিলো ۔۔পাশের বাড়ি র রুবি বৌদি বাকি টা বললো একদিন ۔۔"ছেলে রা বড়ো হলো ۔۔দল  ভাঙলো ۔۔দলের মধ্যে ওর ই  ছিল ভীষণ রেশারেশি ۔সব থেকে বেশি হিংসুটে ছিল۔ ۔۔আমার বড়দি ও তো ছিল ওই  দলে ۔۔দিদির কাছে শুনেছি যার যা দেখতো সেটাই ওর চাই ۔۔কারুর ভালো ও দেখতে পারতো না " 
‌রুমা সেদিন  ই বুঝেছিলো রুবি বৌদি ওই অপর্ণা দি কে এড়িয়ে যায় ۔۔কি এমন হলো যে উনি এমন হয়ে গেলেন ۔অতীতের ۔۔উশৃঙ্খল জীবন কি  ওকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায় ? কি এমন বিষাদ যে পুরো শরীরটা কে নষ্ট করে  দেয় ۔۔না পড়ে একটা ভালো শাড়ী না একটু সেজেগুজে থাকে ۔এ কেমন বিষাদ ? 
‌শাশুড়ি মায়ের কাছে শুনেছে অপর্ণা দির কিডনির প্রব্লেম ছিল ۔۔۔ভেলোর নিয়ে গিয়েছিলো ۔۔খরচের কোনো ত্রুটি রাখেন নি গৌরব দা ۔۔এর সঙ্গে বেশ একটা মজার ঘটনাও মা বলেছিলেন মা ۔۔" ওই যে শরীর টা খারাপ হলো ۔۔তার পর থেকে কোনো বন্ধু ফোন করলেই বলতো ওর শরীর টা আজ খুব খারাপ ۔۔প্রায় ই এই ভাবে ওর শরীর খারাপের কথা শুনে বন্ধুরা 
‌রাতের কিংবা দুপুরের সব রান্না করে দিয়ে যেত ۔۔আর ও ওই সুযোগে সেদিন 
‌টা রান্না করতে হবে না বলে সেজেগুজে বর ছেলে নিয়ে বেড়াতে যেত " 
‌এটা আপনি কি করে জানলেন মা " রুবির বড়দি যেদিন ওদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল ۔۔সেদিন ওই ই ওদের বাজার এ দেখছে ۔۔۔" 
‌রুমা অনেক কোথা ই  জানে ۔۔কানে আসে ۔۔কিন্তু অপর্ণার সাথে বসে কোনোদিন গল্প করে নি ۔۔মাঝে মাঝে অপর্ণাদির সাজপোশাক ও বড্ডো উগ্র লাগে রুমার ۔۔রবিবার প্রায় ই দুপুরে গৌরবদার সাথে বেরোয় এই পঞ্চাশেও টাইট জিন্স জিনস উপরে বাচ্চা মেয়েদের মত রংচঙে টপ ۔۔পাড়ার অনেক ই হাসাহাসি করে "۔۔ফিসফাস শোনা যায় " স্বামীর শাসন নেই " 
রুমার সবই শোনা কথা ۔۔শুনে শুনে মনের মধ্যে কল্পনা করে নিয়েছে কিন্তু সত্যি কি সব টা ঠিক ۔۔আর সবাই তো এক রকম হয় না ۔۔ আমাদের সমাজে কেউ একটু আলাদা হলেই সবার আগে আমরা মেয়েরা ই তাকে নিয়ে  বেশি সমালোচনা করি۔۔ ۔۔ যুগ যুগ ধরে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু ۔۔অপর্ণা কে দেখলেই রুমার মনের দ্বন্দ্ব তৈরী হয় ۔۔
" কোথায় গিয়েছিলে  অপর্ণা দি ?۔۔ এসো না একদিন ۔۔গল্প করবো۔۔ " 
সেই মিস্টি হাসি "  আসবো আসবো ۔۔۔ গাইনির কাছে গিয়েছিলাম ۔۔۔দূর কিছুই হয় নি ۔۔"
" কেন কোনো অসুবিধা হচ্ছে " 
" তলপেটের ডান দিকে একটু ব্যাথা۔۔কোনো ওষুধ ই দিলেন না ۔۔জানো ডাক্তার হাসতে হাসতে কি বললেন "অপর্ণা কে এত খুশি দেখে রুমার ও উৎসাহ বেড়ে গেলো۔۔ "
" কি বললেন গো "
" বললেন সব ওষুধ বন্ধ করে দে ۔۔একটা  বয় ফ্রেন্ড বানা ۔۔আর ওকে নিয়ে পার্ক এ ঘুরে বেড়া ۔۔"
দুজনেই হো হো করে  হাসতে লাগলো ۔۔রুমা মনে মনে ভাবছে সত্যি তো সব  রোগের ই ওষুধ আছে ۔۔মনের রোগের ওষুধ ক জন দিতে পারে ۔۔সে তো۔ পাখির পালকের মতন ۔۔ভোরের  শিশিরে র মতন۔ ۔۔শিউলি গন্ধের মতন ۔۔۔নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়۔۔




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন