পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১

মীনাক্ষী ঘোষ

                            


কোল্হাপুর ডায়েরী ৫


রাতে নিজের বাংলোয় সকলকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়ে বাড়ির সামনে ড্রপ করে বৌদি বিদায় নিলেন।
মন্দিরের কাছাকাছি জায়গাটা দিয়ে যাবার সময়  মিমি  কোল্হাপুর শহরের পুরনো রূপটা যেন দেখতে পেল। মিমিদের ফ্ল্যাট যেখানে সেটা কোল্হাপুরের পশ এরিয়া। সেখানে কসমোপলিটান ভাবটাই বেশী। কিন্তু মহাদ্বার রোডের এদিকটায়  এলে কোল্হাপুরের আসল চেহারাটা প্রতিভাত হয়।পুরনো শহরের মতোই সরু সরু পথঘাট। পুরনো কেল্লার ভগ্নাবশেষ কেল্লার তোরণের মতো প্রবেশ ফটক মারাঠা ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।আর কোল্হাপুরকে বেষ্টন করে বয়ে চলেছে পঞ্চগঙ্গা নদী।
এই মহাদ্বার রোডেই বিখ্যাত চপ্পল গলি। ভারত বিখ্যাত কোলাপুরী চপ্পলের উৎপত্তিস্থল।   কোল্হাপুরি চপ্পল (ইংরেজি: Kolhapuri chappal) হল ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে প্রচলিত ও পরম্পরাগত হস্তশিল্পজাত একপ্রকার চামড়ার জুতো। স্থানীয়ভাবে উদ্ভিজ্জ বা প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে এই জুতোর চামড়া পাকা করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে কোলহাপুরি চপ্পল পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক নিয়ন্ত্রক জেনারেলের কাছ থেকে ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
ইতিহাস প্রাচীন এই শহরটার মূল সুরটি যেন ক্রমশ একটু একটু করে ধরা দিচ্ছে মিমির কাছে।
কোল্হাপুরে  মারাঠা সম্প্রদায়ের প্রাধান্য বেশী। মারাঠা হলো মূলত ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়। স্বয়ং শিবাজী মহারাজ ছিলেন মারাঠা কুলতিলক। ক্ষত্রিয়রা স্বভাবত
যুদ্ধপরায়ণ।কোল্হাপুরে এখনো মারাঠা গৃহে তলোয়ার দেখা যায়। এরা এমনিতে খুব নির্ঝঞ্ঝাট ও নির্বিবাদী। অকারণ কলহে এরা  পটু নয়। কিন্তু ক্রুদ্ধ হলে ওরা তলোয়ার বের করতে দ্বিধা করেনা।
দু'বছর পুণে থাকার সুবাদে মিমি  মারাঠি ভাষাটা একটু একটু বুঝতে পারে। কোল্হাপুরে মারাঠি বলার ধরণটা
একটু ভিন্ন। একটু গ্রাম্য টান থাকলেও আন্তরিকতার ভাবটা সুস্পষ্ট।
আজ সূর্য একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছে অফিস থেকে। আজ প্রথম দিন। জয়েনিংয়ের যাবতীয় ফর্মালিটিজ মিটিয়ে অন্যান্য কলিগদের সাথে আলাপ পরিচয় সেরে রওনা
হ য়ে পড়েছে। আজ অফিসেই সবার সাথে লাঞ্চ সেরেছে। আগামীকাল থেকে আশীষ এসে লাঞ্চ বক্স নিয়ে যাবে।
সূর্যর কাছে দারুণ একটা মজার কথা  শুনলো মিমি। সূর্যর প্ল্যান্টটা কাগাল পরগণায়। বাড়ি থেকে সড়কপথে দূরত্ব পঁচিশ কিলোমিটার।  মহারাষ্ট্রের শেষ সীমানা ওইটাই। সূর্য যেহেতু প্ল্যান্ট হেড, প্রোডাকশন ও মেইনটেনান্সের দায়িত্বভার ওর ওপরেই। ওর কেবিনটাও তাই শপ ফ্লোরের ভেতরেই। লাঞ্চের পরে কেবিন সংলগ্ন ওয়াশরুমে যেতেই মোবাইলে টিংটং করে মেসেজ বেজে উঠলো। ' ওয়েলকাম টু কর্নাটক'।বাহ  এতো ভারী মজার ব্যাপার। কেবিন মহারাষ্ট্রে আর ওয়াশরুম কর্নাটকে!এ যেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বর্গচ্ছেদ। যদিও এখানে কাঁটাতার অদৃশ্য তবু এই ভাগাভাগিতে বেশ মজাই লাগলো।
সন্ধ্যার একটু পরেই মিমি সপরিবারে রওনা দিলো মিঃ বোসের বাড়ীর উদ্দেশে।
ক্রমশঃ


ছবিঃ কোলাপুরী চপ্পল
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন