অঞ্জলি/
সুস্মিতা সাহা
''ও সোনাই, এই লাল পাড় নকশা কাটা শাড়িটার যে অনেক দাম সোনা। তুই তো সবে চাকরি পেয়েছিস, এখনি এতো খরচা করাটা কি ঠিক হবে?''
গটগট করে হাঁটতে থাকে সোনাই- শ্রীতমা মুখার্জি। সদ্য সদ্য চাকরি পেয়ে মাকে নিয়ে এসেছে পুজোর বাজার করতে।
''ও সোনাই, শোন না রে, আমি আর এই বয়সে রংচঙে শাড়ি পরে কি করবো বল তো? তার থেকে তোর ঠামুকে দে একটা তসরের শাড়ি। খুব খুশি হবেন। ''
'' আচ্ছা মা, ঠামুকে তো সবাই কতো সুন্দর সুন্দর শাড়ি দিচ্ছে। আর আমিও তো মাইনে পেয়ে প্রথমেই দাদু ও ঠামুকে গিফ্ট দিয়েছিলাম।
তোমাকে বললাম যে কিছু কিনে দি, তুমি রাজি হলে না। আজ আর কোন বারন শুনবো না। চলো তো ঐ রেস্টুরেন্টে বসে চাউমিন খাই।''
সোনাই সব ব্যাগ হাতে ঝুলিয়ে মাকে নিয়ে ঢুকে পড়ে এক ঝা চকচকে ঠান্ডা ঠান্ডা খাবারের জায়গায়।
এই রে, যাও বা এতক্ষণ হৈমন্তী ভাবছিল যে অষ্টমীর অঞ্জলি দেবে এই তাঁতের শাড়ি পরে - তা তো আর হবে না। চাউমিন তো আমিষ- অশুদ্ধ হয়ে যাবে শাড়ি। এমনিই তো আজ বাড়ি ফিরে কতো কটু কথা হয়তো বা শুনতে হবে তাকে।
শ্বশুর বাড়ির বহু দিনের বয়স্কা রাঁধুনি মঞ্জুদির ঠোঁট বাঁকানো হাসির সঙ্গে দুটো/একটা কটূক্তি কানে এসেছিল হৈমন্তীর কিন্তু ছোট্ট মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আর পেছন ফেরে নি।
কিন্তু এখন তো বাধ সাধছে হৈমন্তীর মনের দীর্ঘ দিনের সংস্কার। আমিষের ছোঁয়া লাগলে তো সেই শাড়ি পরে মা দুগগার কাছে যাওয়া যাবে না। কি করবে সে?
ধোঁয়া ওঠা গরম গরম চাউমিন তার প্লেটে তুলে দিচ্ছে সদ্য চাকুরি পাওয়া বাইশের মিষ্টি শ্রী। হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে কাঁটা চামচ। কি সুন্দর ঘ্রাণ খাবারের।
একটু একটু করে সন্ধ্যে নেমে এসেছে শহরের রাস্তায়। এমা, সন্ধ্যাবাতি দিতে হবে তো।
''চল রে চল সোনাই', হালকা ঠান্ডা হাওয়া বয় এ সময়ে। ''মা দুগগা, ক্ষমা কোরো এই মাটা-কে।''
না গো মা , চাউমিনের লোড নয়- এ যে সন্তানের হাসি মুখটা দেখার আনন্দ।
সবাই কতো না হ্যাটা করেছে স্বামী পরিত্যক্তা হৈমন্তীকে - একা লড়াই করে আজ মেয়েকে বড় করেছে সে। সেই মেয়ের মূখের দিকে তাকিয়ে আজ না হয় একটু নিয়ম ভাঙলেন।
শুধু এই মূহুর্তটি থাক এমনই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন