পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নির্মাল্য বিশ্বাস




নির্মাল্য বিশ্বাসকে দেওয়া নারায়ণ দেবনাথের সাক্ষাৎকার শুধুমাত্র সৃজনের জন্য ৷

)যতদূর শুনেছি শুকতারা পত্রিকার অলঙ্করণের কাজ করতে গিয়ে কমিকস তৈরীর ভাবনা মাথায় আসে কি ভাবে মাথায় এল যদি বলেন ?

হ্যাঁ , শুরুতেই শুকতারা পত্রিকার অলঙ্করণের কাজ করতাম একদিন সম্পাদক ক্ষীরোদ চন্দ্র মজুমদার ছোটদের নিয়ে কমিকস তৈরীর প্রস্তাব দিলেন I রাজি হয়ে গেলাম প্রকাশিত হল হাঁদা ভোঁদা  

) হাঁদা ভোঁদা চরিএ ভাবনা কি ভাবে মাথায় এল ? 

ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম তখন ওত বাড়িঘর ছিল না , রাস্তাঘাট ফাঁকা ছিল খেলার জন্য অনেক মাঠ , জমি জমা ছিল বন্ধুবান্ধবের কাছে সেই সব হৈ হৈ আর দস্যিপনা গুলোই মাথার মধ্যে ঘুরত সেই সব ঘটনাগুলোই হাঁদা ভোঁদার মধ্যে তুলে ধরলাম  


) বাঁটুল দি গ্রেট চরিত্রটা সৃষ্টি কি ভাবে করলেন ?

হাঁদা ভোঁদা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে I প্রতিমাসে কিশোররা শুকতারা পড়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকত সেইসময় সম্পাদক ক্ষীরোদ চন্দ্র মজুমদার হাঁদা ভোঁদার মত আরেকটা কমিকস চরিত্র সৃষ্টি করতে বললেন যেটা ছোটদের মনে জায়গা করে নিতে পারবে আমি কিছু না ভেবে রাজি হয়ে গেলাম কিন্তু বাড়ি ফিরে খুব চিন্তায় পড়লাম এমন চরিএ কোথা থেকে পাব চিন্তা করতে করতে " বাঁটুল দি গ্রেট " ভাবনাটা মাথায় এল সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চলছিল আমি সম্পাদক মহাশয়ের কথায় বাঁটুলকে যুদ্ধে নামিয়ে দিলাম l বাঁটুল যুদ্ধে যাচ্ছে , বিমান নামাচ্ছে, শক্র ধ্বংস করেছে এই সব দৃশ্যগুলো ছোটদের কাছে বাঁটুলকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তুলল  

) ছোটবেলায় শুকতারায় "বাহাদুর বেড়াল" নামে আর একটা কমিকস পড়তাম ওটার সম্পর্কে কিছু বলুন ?

শুকতারায় মাঝে কিছুদিন স্টাফদের নিয়ে সমস্যা চলছিল তাই কিছুদিন শুকতারা অফিস বন্ধ ছিল সেই সময় হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুলের সমস্ত প্রচ্ছদ ওদের অফিসে আটকে ছিল তখন সম্পাদকের অনুরোধে " বাহাদুর বিড়াল" চিত্রকল্প তৈরী করলাম বাইরের প্রেস থেকে তখন শুকতারা ছাপা হত  

) প্রচ্ছদে সেই সময় আর একটা রহস্য কাহিনী থাকত না ?

হ্যাঁ ওটার নাম গোয়েন্দা কৌশিক এখনও চলছে শুকতারায়

) আপনার অপর এক অসাধারণ সৃষ্টি নন্টে ফন্টে এই সৃষ্টির প্রেক্ষাপটটা একটু বলুন ?

কিশোরভারতী সম্পাদক দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একদিন বললেন খুব বিপদে পড়েছি যে ভাবেই হোক আপনাকে উদ্ধার করতে হবে জানাতে চাইলাম কি ব্যাপার উনি বললেন ওনার ছেলে দিলীপ চট্টোপাধ্যায় এক চিক্রনাট্য তৈরী করেছেন ড্রইংটা আমাকেই করতে হবে রাজী হয়ে গেলাম কিশোরভারতীতে আত্মপ্রকাশ করল পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়্যান কিছুদিন চলার পর দীনেশবাবু বললেন এবার একটু অন্যরকম চরিত্রভাবনা সৃষ্টি করুন যেটা কিশোর কিশোরী' মনে সাড়া জাগাতে পারবে তখনই অনেক চিন্তা ভাবনার পর নন্টেফণ্টে , কেল্টুদা চরিত্রটা মাথায় এল

) বাঁটুল দি গ্রেট ৫০ বছর পূর্তি হয়ে গেল আর নন্টে ফণ্টের বয়স কত হল ? 
হাঁদা ভোঁদা তো তার অনেক আগে ?

নন্টে ফণ্টে , বাঁটুল দি গ্রেট ৫০ পেরিয়ে ৫২ বছর হল I হাঁদা ভোঁদা সৃষ্টি প্রায় ৫৬ বছর হয়ে গেল

) হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফণ্টে , বাঁটুল দি গ্রেট সবগুলোই তো পরবর্তী কালে বই আকারে প্রকাশ হয়েছে তাই না ?

হ্যাঁ হাঁদা ভোঁদা , বাঁটুল দি গ্রেট, শুকতারা পত্রিকা' প্রকাশনা সংস্থা.দেবসাহিত্য কুঠির আর নন্টে ফণ্টে কিশোরভারতী প্রকাশনা থেকে বই আকারে বের হয় তবে সে গুলো অনেক পরে তার আগে লালমাটি প্রকাশনা সংস্থা কমিকস গুলো একত্রিত করে কমিকস সমগ্র সংকলন প্রকাশ করে  

) আনন্দবাজার পত্রিকার সাথে আপনি কিছুদিন যুক্ত ছিলেন না ? 

হ্যাঁ , সাহিত্যিক বিমল ঘোষ ( মৌমাছি ) আনন্দবাজারে কর্মরত ছিলেন উনি আমাকে বললেন রবীন্দ্রনাথের জীবনী নিয়ে একটা কমিকস রচনা করতে লেখাটা ওনার ছিল আমি চিত্রায়ণ করতাম পরবর্তীকালে বিবেকানন্দ , শিবাজী জীবন নিয়ে কমিকস সৃষ্টি করেছিলাম I বিমলবাবু ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার জন্য লেখা দিতে না পারায় আনন্দবাজারে আর কমিকস প্রকাশিত হয়নি  

১০ ) লেখালিখি , আঁকা ছাড়া আপনার কি কি ভালোলাগে ?

ফিল্ম দেখতে ভালোবাসি, তবে সব ধরনের ফিল্ম না অ্যাডভেঞ্চার মুভি দেখতে খুব পছন্দ করি  

১১) আপনার প্রিয় লেখক কে ?

রহস্যগল্প অ্যাডভেঞ্চার আমার বরাবর ভালোলাগে প্রেমেন্দ্র কুমার রায়ের " কুমার বিমল " চরিত্রটা আমার খুব ভাল লাগে শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় ব্যোমকেশ বক্সি তার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের কর্নেল খুব প্রিয় সাহিত্যিক আর গল্পকারদের মধ্যে প্রফুল্ল রায় লেখা পড়তে খুব ভাল লাগে  

১২ ) আপনি তো " বঙ্গবিভূষণ " "সাহিত্য একাডেমি" আর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় খেকে সাম্মানিক " ডি .লিট ( Doctor of lecture ) পেয়েছেন এই সরকারী সম্মান পেলেন অনেক দেরীতে I এই নিয়ে আপনার কোন আক্ষেপ ছিল বা আছে ?

২০১৩ সালে " বঙ্গবিভূষণ" ,"সাহিত্যএকাডেমি"এবং ২০১৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় "ডি .লিট" সম্মানে সম্মানিত করে দেরীতে পাওয়া নিয়ে কোন আক্ষেপ বা হতাশা নেই যেটা পেয়েছি সেটা অনেক আনন্দের

১৩ ) পুরস্কার পাবার পর আপনার অনুভূতি কেমন ?

খুশি তো হয়েছি অবশ্যই তবে উচ্ছ্বাসটা আর আগের মত নেই ৩৫ বছর আগে এই সম্মান পেলে উচ্ছ্বসিত হতাম এখন বয়সের কারণে ততটা হতে পারিনি


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন