নিও-রিয়ালিস্ম
______________________________________________________
শট - ১
দীপ্তি ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর কৃষ্ণচূড়া
গাছটার নীচে ভাঙা বেঞ্চিটাতে বসেছিল। কমল শটটার
ফাইনাল টেক ওকে করে বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে দীপ্তির পাশে এসে বসে বলল, কোথা থেকে যে ধরে আনে এদের, না পারে ডায়ালগ বলতে, না পারে ঠিকঠাক পজিশন নিতে।
-কেন, মেয়েটাকে তো দেখতে শুনতে ভালো।
-তাতে কি? শোন্ , ক্যামেরায় কাজ করতে গেলে আগে
জানতে হবে আলো কি ভাবে নিতে হয়। তারপর দেখতে হবে কামেরা কেমন ফ্রেম ধরছে। এস পি হলে একরকম,
মিড শটে আবার অন্যরকম। আরে বাবা বেসিকটা তো ঠিক রাখতে হবে। উতরে যাচ্ছে কেন জানিস?
নেহাত ঢপের সিরিয়াল তাই। পড়ত তেমন লোকের পাল্লায়, বুঝত।
-তাও তো এরা অভিনয় করছে। হিরোইনের রোল। আর আমার দেখ, চারটে
বছর হয়ে গেল, সেই এক্সট্রার রোল।
-ওসব ভাবিস না, অভিনয়টা মন দিয়ে
করে যা। সুযোগ একদিন আসবেই। ও শোন, রুপাদি সেদিন তোর কাজের প্রশংসা করছিল। আমায়
জিজ্ঞাসা করল, মেয়েটা কে। আমার মনে হয় বীণাদি একটা নতুন কাজ নামাবে। তারই কাস্টিং
চলছে।
-ও আমায় নেবে না। কে দেখেছে আমার
অভিনয়। কোথায় রুপাদি কি বলল আর তুমিও একেবারে বীণাদির সিনেমায় আমায় দেখে নিলে।
তোমারও না... যতসব... আমার এখন রোজ কাজ দরকার। মায়ের শরীর ভালো না। কাল বলছিল আর
চার বাড়ির বাসন মাজতে পারে না। বাসন মাজা, ঘর মোছা, দু বাড়ির জল আনা। পেরে ওঠে না
আর। দেখো মাসে অন্তত দিন পনেরো কাজ পেলে আমি মায়ের দুটো বাড়ি ছাড়িয়ে দিতে পারি।
এদিকে বাপ শুনছে না। বলছে যা পাচ্ছিস জমিয়ে রাখ, বিয়েতে কাজে আসবে। আর বিয়ে...
কমল সিগারেটটায় একটা লম্বা টান
মেরে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিতে দিতে বলল, এই হল তোদের নেগেটিভ মাইন্ড সেট।
দেখই না কি হয়। চল আমার শট রেডি, আলো হয়ে গেছে, তুই এখন কি করবি? আর বাকি আছে কাজ?
-হ্যাঁ, রাহুলদা বসতে বলেছে, একটা
শট রি-টেক করবে না কি। আমি আছি, তুমি সেরে নাও।
-সাড়ে নটা তো বাজল, আর কখন বাড়ি
যাবি? শীতের রাত। দেখি রাহুলকে বলে তোরটা যদি আগে নিয়ে নেয়।
-ছেড়ে দাও কমলদা। লোক সুবিধের নয়।
অন্য চোখে দেখবে। তুমি যাও, আমি আছি। আর তোমার যদি মিটে যায় তো আমায় তোমার বাইকে
করে খালপাড়টা পার করে দিয়ে এসো। ওখানে মদ জুয়ার ঠেক তৈরি হয়েছে কিছুদিন। যদিও
পাড়ার মেয়ে বলে ঘাঁটায় না, তবু, বোঝোই তো...
শট – ২ টেক -১
বারোটার পরে কমলের সেট কেন কোথাও কোন
শট থাকে না। নাকতলায় একটা এক কামরার ঘর নিয়েছে
কমল। মোটামুটি সাজানো গোছানো। সামনের পল্টনের দোকান থেকে খাবার আসে। যখন যা হয়। আজ সয়াবিনের তরকারি। কমল সেসব ভাবে না। সেটের আগুন থেকে মুক্তি তো। সে ভালো করে স্নান করার জল গরম করে। বারোটা বাজতে আর বেশী সময় নেই। এক্ষুনি আসবে সে খাটের পাশে। কমল স্নান সেরে খেয়ে নেয়। আজ জানতেই হবে… কে তুমি? কি চাও আমার কাছে? তুমি কে? কার আত্মা? সত্যজিৎ রায়? নাকি কুরসাওা? কি চাও? আমি সাধারণ যে… চেষ্টা করলেও চ্যানেল আমায় সুযোগ দেবে
না ওই ইন্তারলিউদ অবলঙ্গিটি… আমার কাট টু শট বহেমিয়ানিস্ম … কুয়াসার চাদরে নিওরিয়ালিস্ম… তোমরা ত্রুফো ফাসবিন্দারে মাতো, আমি তো এখনও খোয়াইয়ের পারে টলোমলো সূর্য দেখি।
শট – ২ টেক – ২
আজ বীণার কি হয়েছে কে জানে। এত অবিন্যস্ত, অগোছালো সে কোনদিনই ছিল না। এতগুলো জাতীয় আর আন্তর্জাতিক পুরস্কার
তার ঝুলিতে। এত গুছিয়ে কাজ করে এসেছে এতদিন। প্রতিটা স্ক্রিপ্ট দশটা সিকুয়েন্সে
ভেঙে, প্রতিটা টেক আগে থেকে সাজিয়ে পুরো প্ল্যান
করে এতদিন ফিল্ম বানিয়ে এসেছে। কিন্তু
আজ কয়েকদিন হল কোন কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছে না। এবারের সিনেমার প্লট সে অনেক ভেবে সাজিয়েছিল। নেওরিয়ালিস্মের ওপরে। প্রখর বাস্তব সামাজিক সমস্যাকে তুলে
ধরে। কিন্তু সবসময় মনে হচ্ছে গল্পটার হৃদয়টাই
যেন বাদ পড়ে যাচ্ছে। বলবো বলবো করেও আসল কথাটা যেন বলা হয়ে
ওঠা হচ্ছে না। সাউথ সিটির এই চব্বিশ তলার ফ্ল্যাটে
ব্যালকনির খোলা দরজা দিয়ে হুহু করে হাওয়া এসে স্ক্রিপ্টের পাতাগুলো এদিক সেদিক উড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে ঘরময়। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে সে হাল ছেড়ে মেঝের
ওপর হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়ল।
একটু কফি হলে ভালো হতো। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। মালতীও দিন সাতেকের ছুটি নিয়েছে। ওর ছেলের বিয়ে। বীণা খুব ভালো করে জানে যে সে সাতদিন
বলে দিন দশেক আসবে না। আজকাল আর টেম্পোরারি কাজের লোক পাওয়া
যায় না। এখানে তো একেবারেই নয়।
রুপার আসার কথা আছে। মূল চরিত্রে রুপাকেই নেবে ঠিক করেছে
সে। ও এখন যে বয়স আর মানসিক সন্ধিক্ষণে
আছে তাতে এই রোলটা খুব ভালো তুলতে পারবে। দীপকের সঙ্গে ওর বিবাহ বিচ্ছেদটা বড্ড
চোখে লাগে। আসলে দুজনেই ছিল যাকে বলে আইডিয়াল জীবনসঙ্গী। অন-স্ক্রিন বা
অফ-স্ক্রিন, দুজনকে সব জায়গাতেই ভারী মানাতো। একটা দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে বীণার।
সুমনের কথা হঠাৎ এক পলকের জন্য চোখের পাতা ছুঁয়ে যায়।
এই স্বার্থপর, নীতিবোধহীন, অন্তঃসারশূন্য,
অসুস্থ সমাজে দাঁড়িয়ে তার এই ছবিটা বড় প্রাসঙ্গিক। তবু কেন যে গল্পে প্রাণ আসছে না
কিছুতেই বুঝতে পারছে না বীণা।
শট -৩
-এই দীপ্তি, কি রে, হল টা কি তোর?
-দীপ্তি, শট ওকে, ওঠ এবার, কি রে
কথা শুনতে পাচ্ছিস না?
প্রীতমদার ডাকে হুঁশ ফেরে তার।
কোথায় যেন হারিয়ে গেছিল সে। মায়ের মৃত্যু, ননদের অপমানের কথা জেঠিমাকে বলতে বলতে
সে কখন যে ওই রাজ্যে ঢুকে পড়েছিল খেয়াল নেই। মনেই পড়ে নি সে অভিনয় করছে। আলো নিভে
গেছে। ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেটের অন্য কোণে, তবু সে দেখে যে সে ঠায় বসে আছে
মেঝেতে। স্বাভাবিক। কাজের মেয়ে কি আর চেয়ারে বসবে। মাটিতেই তো তার যায়গা।
-তোর আজ আর কোন সিন নেই রে, ভালো
কাজ করেছিস, কাল সকাল সাড়ে সাতটায় কল টাইম। চলে আসবি। আর প্রোডাকশন থেকে তোর এই
সপ্তাহের পেমেন্টটা তুলে নে। আমার বলা আছে।
খুব ধীর পায়ে উঠে পড়ে দীপ্তি। এখনও
যেন সেই চরিত্রের মধ্যে ডুবে আছে। কোন রকমে মাথা নেড়ে বলে, আচ্ছা প্রীতমদা।
বাইরে বেরিয়ে সূর্যের আলোটাকে বড়
চোখে লাগে তার। ভিতরের আলো আধারিতে চোখ সওয়া হয়ে গেছিলো। অনেকদিন পর আজ দিনের বেলা
তার প্যাক আপ হল। এক্সট্রার রোল, সে সব শেষে হয়। তাও তো এই সিরিয়ালে ছোট হলেও একটা
ভালো চরিত্র সে পেয়েছে। মেক আপ রুম থেকে পরমা আর স্নেহা বেরিয়ে ফ্লোরের দিকে চলে
গেল। তাকে ঘুরেও দেখল না। এই নিয়ে অবশ্য তার মাথা ব্যথা নেই। শুধু রোজ কাজ পেতে
হবে। স্বপ্ন সেও দেখত শুরুতে। ইদানীং
দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। বাপের কাজ এখন বিড়ির দোকানে হেল্পারি। যেদিন পি পি ক্যাপের
কারখানায় মেশিন চালাতে গিয়ে বুড়ো আঙুলটা উড়ে গেল সেদিন থেকেই দীপ্তি স্বপ্ন দেখা
বন্ধ করেছে। আজ অভিনয় তার স্বপ্ন নয়, তিনটে মানুষের পেটের দু মুঠো ভাত।
শট – ৪
-শিবু, এই শিবু, কি আলো করেছিস
হ্যাঁ? ইয়ার্কি মারছিস? জানিস সিরিয়ালটা এয়ারে আছে, এইভাবে সময় নষ্ট করলে
প্রোডাকশন ছেড়ে দেবে মনে করেছিস?
-কেন দাদা কি হয়েছে?
-আর ন্যাকামো করতে হবে না। রিয়াদির
জন্য কটা নেট মেরেছিস?
-দুটো দাদা।
-শালা, হাজারো বার বলেছি রিয়াদির
গায়ের রঙ ফেটে পড়ছে, মিনিমাম চারটে নেট দিয়ে আলো কাটবি নইলে স্ক্রিনে রঙ জ্বলে
যায়, কোন কিছু খেয়াল করিস না কেন?
-তুমি বাপু বড্ড খুঁতখুঁতে। একটা
তো এস পি যাবে, নিয়ে নাও না।
-চোপ শালা, তাড়াতাড়ি নেট দে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে রুপা ফ্লোর
পেরোতে পেরোতে কমল আর বিশুর কথাগুলো শুনতে পেল। হাসি খেলে গেল ঠোঁটের কোণে। ছেলেটা
সিরিয়াস। কাজটাও ভালো বোঝে। রুপা কাজ করে দেখেছে। কমলের সঙ্গে কাজ করার সুবিধে হল
কোন আর্টিস্ট কিসে স্বচ্ছন্দ সেটা খুব ভালো বোঝে বলে ছবির টেক্সচারটা ঠিক বার করে
আনতে পারে। এই সব ছেলে সিনেমার কাজ পেলে করে দেখিয়ে দেবে। কিন্তু কি আছে ওর কপালে
কে জানে। কোনোদিন এসে বলেনি, দিদি আমার জন্য একটু দেখো। ওর যত হম্বিতম্বি সব সেটে।
বাইরে একেবারে মুখচোরা।
সে বাইরে এসে দেখল দীপ্তি চুপচাপ
ওই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে বেঞ্চিটাতে বসে আছে। চোখাচুখি হতেই হেসে উঠে দাঁড়ালো।
-দিদি, ভালো আছেন?
-হ্যাঁ রে, তোর খবর বল, কাজটাজ
পাচ্ছিস তো ঠিকঠাক?
-এ কদিন তো চলছে। কিন্তু ইউনিয়নের
নতুন নিয়ম, সবাইকে কাজ ভাগ করে দিতে হবে। আবার তোমাদেরও তো শুনছি চ্যানেল নাকি
বলছে এক নায়িকা একসঙ্গে দুটো চ্যানেলে নাকি হিরোইন হতে পারবে না। কেন গো?
-ওদের ধারণা তাতে নাকি নতুন
সিরিয়ালের টি আর পি পড়ে যাবে। যাক আমার কথা বাদ দে। শোন সেদিন রাতে জলসায় একটা
সিরিয়াল দেখছিলাম। তুই তো ফাটিয়ে দিয়েছিস! ওইটুকু রোলের মধ্যে দিয়ে কি সব জিনিস
বার করেছিস রে!
-তুমি দেখেছো দিদি! তোমার ভালো
লেগেছে!
-না লাগলে এমনি এমনি বলতাম?
-থ্যাংক ইউ দিদি, জানো এই চার বছরে
এই নিয়ে দুবার কেউ বলল আমি কিছু পেরেছি। একজন হল পীযূষ দা। আহা বড় ভালো মানুষ ছিল
গো, যেমন অভিনয় তেমন গানের গলা। আমাকে খুব উৎসাহ দিত। জানো দিদি ওরা যদি ফ্রেমে
আমায় আর চল্লিশ সেকেন্ড দিত আমি কিন্তু আরও ভালো করতে পারতাম। কিন্তু...
-সে সময় তুই পাবি, দেখে নিস। শোন,
এখন কি শুট আছে তোর?
-না দিদি, আজকের মতো প্যাক আপ হয়ে
গেছে।
-তাহলে এক কাজ কর, চল আমার সঙ্গে।
-কোথায় গো?
-রেড লাইট এরিয়ায়। মরণদশা, আবার
প্রশ্ন করছে দেখো, চল বীণাদির বাড়ি যাব, কাজ আছে।
-তাই! তুমি গাড়িতে বস আমি পেমেন্টটা
তুলে নিয়ে এক্ষুনি আসছি।
শট – ৫
আজ রাতে খুব ভালো করে ব্যাপারটা
বুঝতে হবে। রোজ রোজ রাতে কে আসে ঘরে? কি বলতে চায় তাকে? কমল বাইক নিয়ে ফিরতে ফিরতে
সে কথাই ভাবছিল। আজ সারাটা দিন মন খুঁতখুঁত করে গেছে। প্রডিউসার কিছুতেই রি-টেক
করতে দেবে না। অথচ সে জানে শটগুলো সব এন জি ছিল। কিন্তু তার হাতে আর কতটুকু? ভালো
কাজের দাম কে দেয়? এদের সময় নেই, ঘোড়ায় জিন পরিয়ে এসেছে। সেদিন একটা উপন্যাস
পড়ছিল। এত মনে ধরেছে যে ভিতর ভিতর ফ্রেম তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিল সে। গল্পটা
নিয়ে স্ক্রিপ্টও লিখছিল। কিন্তু কিছুটা এগোতেই, কি লাভ, বলে খাতা সরিয়ে রেখেছে।
তাও কি ইচ্ছে হল, না, আজ একবার দেখবে রাতে দাঁড় করানো যায় কিনা গল্পটা। কমল দেখতে
পাচ্ছে সে একটা লং শট ক্লোজ করতে করতে প্যান করছে। দূর থেকে হাইওয়ে ধরে একটা
হোন্ডা সিটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। প্রায় ক্যামেরা যখন গাড়ির বনেট উচ্চতায় এসে পড়েছে,
গাড়িটা রাস্তা থেকে নেমে পাশের ধাবাটার সামনে এসে সজোরে ব্রেক কষল। সঙ্গে সঙ্গেই
কাট টু ফ্রেম, ধাবার মালিকটা হন্তদন্ত হয়ে কাপড়ে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে।
ব্যাকগ্রাউন্দে দেখা যাচ্ছে উনুনে কেটলির জল ফুটছে, মুখটা দিয়ে অল্প অল্প ধোঁয়া
বেরোচ্ছে। না না, এটা দেওয়া যাবে না। চাপা উত্তেজনা বোঝাতে এই শট বহুদিন আগে ঋত্বিক বাবু ব্যবহার
করেছিলেন মেঘে ঢাকা তারাতে। সঠিক লোকেদের সেটা ধরে ফেলতে অসুবিধে হবে না। তার চেয়ে
বরং অন্য কিছু ভাবতে হবে। ঠিক করল, বাড়ি ফিরে খাতা কলম নিয়ে নতুন করে ভাববে সে।
শট – ৫ টেক – ২
-এসেছিস রুপা, আয় আয়। সঙ্গে এটি
আবার কে রে?
-দিদি কেমন আছো গো?
-ভালো না রে।
-কেন গো, কি হল আবার?
-কিছুই ঠিকঠাক নেই, সব তালগোল
পাকিয়ে যাচ্ছে।
-সে তুমি যাই বল, ফিগারটা এমন
রেখেছ যে আমাদেরও লজ্জা হয় তোমার সামনে দাঁড়াতে। কি বল দীপ্তি? ও তোমাকে পরিচয় করে
দেওয়া হয় নি। এ হল দীপ্তি, অভিনয় করে সিরিয়ালে ছোট ছোট রোলে।
-তাই! বাহ, দাঁড়াও তো মেয়ে ওই
জানলাটার সামনে। না, না, আমার দিকে তাকিয়ে নয়, ওই আকাশের দিকে তাকাও তো।
-দিদি তুমি পারোও বটে, এই তো এলাম
আমরা...নে দীপ্তি, দিদি যেমনটি বলছে তেমন কর। ও দিদি তোমার কাজের মেয়েটা আছে? একটু
কফি খাবো।
-দাঁড়া বাপু, একটু সবুর কর। এই যে
মেয়ে, আরে ওই ভাবে নয়...
-দিদি আপনি যদি বুঝিয়ে না দেন কি
করতে হবে তাহলে ...
-আচ্ছা মনে করো তুমি যাকে জীবন
দিয়ে ভালবাসতে, আজ জানলে সে বহুদিন তোমায় ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু সেই জন্য তুমি বিচলিত নও। তোমার চিন্তা
কাল কি খাবে। এমন একটা সিচুএশনে তুমি কি করবে? কালকের জন্য প্রস্তুত হবে, নাকি তার
কথাই ভাববে?
-তার কথাই ভাববো আমি।
-তার মানে কালকের ব্যাপারটা
রিয়ালিটি নয়? তুমি সু-রিয়ালিস্মে বেঁচে থাকতে চাও? কালকে যে খেতে পাবে না?
-দিদি তা নয়। কালকের প্রস্তুতি আমি
কাল ভোরেও নিতে পারবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার সত্ত্বা, আমার চেতনা যে আমার
কাঙ্ক্ষিতকেই জড়িয়ে থাকবে। আমি বারবার নিজেকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবো, কি এমন ভুল
করেছিলাম যে যাকে আমার সবটুকু দিয়েছি, সে আজ এমন হেলায় আমায় ছেড়ে চলে যেতে পারলো?
আমি যে তাকে জড়িয়ে বাঁচতে
চেয়েছিলাম দিদি। সেই যদি চলে যায় তাহলে নতুন করে কি নিয়ে বাঁচব? আর খিদের জ্বালা?
তার জন্য শরীরটা তো পড়েই রইল, সেই ভাঙিয়ে চলে যাবে যদি একান্তই জীবন সংগ্রামে হেরে
যাই।
বীণার দুহাতের মাঝে ক্যামেরার
ভঙ্গি যেন স্তব্ধ হল। রুপার মুখে কোন ভাষা নেই। এ কি শুনছে সে? এ কোন মেয়ে? সে
চেয়ারে চুপ করে বসে পড়ল। বীণা দি আনমনে দূর আকাশের পানে চেয়ে, কিছু বা অবিনস্ত্য,
আলুথালু। নিস্তব্ধতা পেরেক ঠুকছে দেওয়াল ঘড়িতে। পল পল কেটে যাচ্ছে সময়।
দীপ্তিই মৌনতা ভাঙল। নিজেকে গুছিয়ে
হেসে বলল, দিদি, রাগ করলে?
বীণা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, এতদিন
কোথায় ছিলিস মুখপুড়ি? বহুদিন পর কেউ আমায় জুতো মারল, নিজেকে বড্ড বেশী হোতা মনে
করতাম। আয় আমার কাছে আয়। রুপা, এই দেখ আমার ল্যান্ডস্কেপ। আমার গল্পটার যে হৃদয়
খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আজ যেন একটু একটু করে তাকে আবিস্কার করছি। ও তুই কি যেন বললি?
কফি? তাই না? মালতী তো ছুটিতে...
দীপ্তি হেসে বলল, ও দিদি আমি
বানাই?
-তুমি? আচ্ছা দেখো কোথায় কি আছে।
-তার মানে তোমার রাতের খাবারটাও
তো...
-ও আমি আনিয়ে নেব।
-কেন দিদি, সবে তো সাতটা বাজে, আমি
করে দিয়ে যাই? দেখোই না এই গরীবদের সংসার কি ভাবে চলে। আর কোন সাহসের বশে তারা এমন
কথা বলে যে মনের মানুষ আগে তারপর তো সংসার। সিনেমায় যতই ভুখা পেটের কথা বলা হোক
আসলে বুকের আঁচরের ঘা যে কি দাগ রেখে যায় তার হদিস কি সবাই পায়? আমি বরং রান্নাঘরে
যাই।
বীণা অবাক চোখে দীপ্তির চলে যাওয়া
দেখে। তারপর রুপাকে বলে, এরা কারা? কই এতদিন তো সিনেমা বানিয়েছি, এদের তো কাছ থেকে
দেখিনি কখনও? বেঁচে থাকার তাগিদ বুঝেছি, তবু এই মূল্যবোধ তো কখনও ধমনীতে অনুভব করি
নি রে।
রুপা উঠে বীণা দির পাশে গিয়ে বসে।
পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলে, এত ভেবো না দিদি, আর একবার বস তোমার স্ক্রিপ্টটা
নিয়ে।
রান্নাঘর থেকে দীপ্তির গলার শব্দ,
দিদিভাই, রুটি আর পাঁচমিশালী তরকারি করি? ফ্রিজে তো সবই আছে গো...
শট – ৬ টেক - ১
দু পেগ খেয়ে একটা সিগারেট ধরাতেই
বুকের বাঁ দিকটায় একটা ব্যথা চেপে ধরে। কমল একবার ওষুধের বাক্সটা খুঁজে দেখে। আসলে
অনেকদিন পর দারু খাচ্ছে। দারু সে আজকাল আর খেতে চায় না। এত অস্পষ্ট দেখায় ছবিগুলো।
তবু কখনও কখনও কোন স্ক্রিপ্ট যখন সহজে হাতে ধরা দেয় না তখন মনে হয় একটু খেলে ক্ষতি
কি। আজ একটু আগে যেমন দেখল স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছে। সেটা প্রেম হোক, মান অভিমান
হোক, আবেগ হোক, তাদের হাতাহাতি না দেখিয়ে তাদের ভেলভেটের মাথার বালিশ ছিঁড়ে তুলো
উড়ছে ঘরময়। যা বোঝানোর তো হয়ে গেল। আজ ওই দোকানে তড়কা বানিয়েছে। কমল ভাবল, না
স্নান করে আসি। দেখি রোজ রাতে এরা কারা আসে আমায় জ্বালাতে।
-তুমি তো অনেক দিন আঁকছ জীবন।
-তাতে কি? আমি তো আমার ভাবনার
মধ্যেই থাকি, কই কখনও তো বেরিয়ে যাই না। হ্যাঁ বলতে পারো স্বপ্ন দেখি, কিন্তু
স্বপ্ন দেখা কি ভুলের?
-কে বলেছে ভুল? তবু স্বপ্ন মানেই
তো শেষ রাতের ঘাসে প্রথম শিশিরে লাজুক মুখ ডোবানো নয়। ভালবাসা তো আজও বেঁচে থাকে
আনাচে কানাচে।
-কে তুমি? আমায় ভালবাসা সেখাতে
এলে? আমি তো প্রেমে পড়িনি, তবু কেন?
-শোনো তুমি প্রেমে পড়েছ, বুঝতে
পারছ না, অবসেসড, লেখাটা তোমার মনে ধরেনি?
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, ধরেছে, তাবোলে ওটা
কি প্রেম?
-হ্যাঁ তো। কেন প্রেম মানেই কি নারীসঙ্গ?
-না, না, আমি কি সে কথা বলেছি?
কিন্তু তোমরা কারা? কেন আমায় রোজ রাতে বিরক্ত করো? দেখো আমি যে সাধারণ কর্মী...
-সেটাই তো বোঝাতে চাই, তোমার লজ্জা
করল না, ওই ক্রেন শটটা তুমি শালা সাদামাটা ভাবে উতরে দিলে
-কি করবো? বল আমাকে, কি করবো? কে
বুঝবে আমার এই ক্রাইসিস। শালা ভাগারের দলে বাস। কি আর নতুন করতে পারি, অথচ, কলকাতা
আমার লেন্সে দেখেছো? ভিক্টোরিয়া?
হাড়কাটা গলির রাতপরীদের ডাক। দেখেছো শুন্য
স্থানে চন্দ্রবিন্দু আঁকা হয়ে থাকে ওই মেয়েটার কপালে?
-তুমি প্রেমে পড়েছ ।
-না,
-শোনো, কখনও জ্যোৎস্না দেখেছো? কান
পেতেছ? নৈশব্দতায় মাঝ-বুক পেতে কোজাগরীর গান?
-কি চাও? কি চাও বল?
-তুমি স্বপ্ন দেখো, স্বপ্নে বাঁচো,
আর আমরা কি চাই বল? ফ্রেম, কাট, টেক টু, মন্তাজ, প্যাক আপ, এ শব্দগুলো যেন কবে শেষ
শুনেছি। তোমায় বিশ্বাস করলাম আমরা, শেষ বিশ্বাস।
শট – ৬ টেক ২
-তোর সঙ্গে অনেক কাজ আছে। তুই বরং কিছুদিন আমার এখানে থেকে যা
দীপ্তি।
-বাড়ি ফিরব না রাতে বীণা দি?
-না, ফিরবি না। আমি তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলবো দরকারে। শোন, অভিনয় করতে গেলে অনেক স্যাক্রিফাইস
করতে হয়। দুদিন তো হাতে পেলি, স্ক্রিপ্টটা পড়েছিস?
-হ্যাঁ দিদি।
-কি বুঝলি?
-কি আর নতুন করে বুঝবো দিদি, এ তো
আমাদের জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। চরিত্রের নামগুলোই যা পাল্টেছে। তবে হ্যাঁ
রুমার চরিত্রটা মনে দাগ কাটে। যেন মনে হয় কত কথা বলার ছিল কিন্তু সে বলে উঠতে
পারছে না। সন্তান এলে শরীরে যেমন মাতৃত্বের ছাপ ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে তেমনই রুমার না
বলা কথাগুলো ওর কাজের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাবে। ওর হাঁটাচলা, ওর চোখের ভাষায়, ওর
থমকে থাকা ঠোঁটের কোলে। জানো দিদি... না থাক...
-কি বলবি বল না।
-না না, কিছু না। তুমি বলছ যখন আমি
নিশ্চয়ই থাকব তোমার সঙ্গে।
-শোন দীপ্তি, কাল একটা স্ক্রিন টেস্ট
রাখছি। তোর ডেট নেই তো কাল?
-আছে গো দিদি, তবে কল টাইম দেখে
মনে হয় দিনে দিনে শেষ হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে, শেষ হলে ফোন করে নিস
আমায়। কোথায় আসতে হবে জানিয়ে দেবো।
-আচ্ছা, এবার বল রাতে কি খাবে?
-রোজ রোজ রান্না করবি নাকি? ওই
সময়টা স্ক্রিপ্ট পড়। ভাব, আরও ভাব।
-কেন গো দিদি আমার রান্না মুখে
লাগছে না তাই না?
-হতভাগী এত ভালো রান্না করিস, আমি
সেই জন্য বলিনি। বলেছিলাম যাতে বাজে সময় নষ্ট না হয়।
-না না, তুমি কাজ করো, আমি সেরে
নিচ্ছি দিদি।
শট – ৭
-আহ, ছাড়ো দিপু…
-কি হয়েছে তোমার আজ? শরীর জাগছে না।
-ছাড়ো বললাম তো…
-কেন?
-লাগছে ছাড়ো।
-এত ড্রাই তো তোমায় কোনোদিন পাই নি রুপা।
-সরো, ওঠ, আমার ভালো লাগছে না।
-হ্যাঁ, আর আমাকে ভালো লাগবে কেন, আজকাল বাজোরিয়ার ছেলেটা সব থেকে প্রিয়
তো। আমি তো পরতি নায়ক এখন। ওর সাথে পাঁচতারা হোটেলের রাতগুলো আজকাল
বড় মধুর তাই না? শুনলাম নতুন ছবিতে তোমায় নিয়েছে, লোকেশন ফেলেছে মালদ্বীপে।
-জাস্ট ফাক অফ ইউ বাস্টার্ড। লজ্জা করে না তোমার স্কাউন্দ্রেল?
-হ্যাঁ এখন তো বলবেই, একদিন বুকে জড়িয়ে নিয়ে কত কথা বলেছিলে, আজ সব ভুলে গেলে?
-শুধু শরীর শরীর শরীর, এর বাইরে কিছু বোঝো তুমি? কেন তোমার
ঘরের খানকিটা খিদে মেটাতে পারে না?
-ওই শালি, একটা কথা বললে গলা টিপে দেবো।
-দেখলে, এই হলে তোমরা… জাস্ট ফাক অফ ফ্রম মাই লাইফ, গেট আউট ইউ পপার, সিমপ্লি গেট আউট… উফ, আমাকে শেষ করে দিলো… আর এর জন্যই আমি…
-বীণা রয়, ইউ নো, দেয়ার ইজ এ
সাবষ্টেন্স ইন ইওর ফিল্ম। সাম আনক্যানি ফিলিং।
-হাহাহা, তাই নাকি সাহেব? কি আছে
আমার ছবিতে যা তোমাদের নেই?
-এ মন্তাজ আনভিজিটেড…
-রিয়ালি! হোপ ইউ আর নট সিডিউসিং
মে, হাহাহাহাহা...
শট -৮ টেক – ১
বীণার এটা চার নম্বর। সে সিগারেট
হাতে উঠে আসে রান্নাঘরে। দীপ্তি আপন মনে রান্না করছে। দরজাটা ধরে চুপ করে দাঁড়ায়
সে। দেখে কড়াইতে সর্ষের তেলটা বোতল থেকে না ঢেলে চামোচে করে একটু একটু নিয়ে প্যানে
দিলো। তারপর তেল গরম হতেই ফোড়ন ছেড়ে সবজিগুলো দিল।
এই তো আমার চরিত্ররা, এদের নিয়েই
তো আমার বই। হাহা, সে দীপ্তিই হোক বা রুপা কি
আসে যায় তাতে। তবে হ্যাঁ, এই স্ক্রিপ্টটা পাল্টাতে হবে অনেকটা যায়গায়। রিয়ালিস্মের
আমি কি বুঝি? চব্বিশ তলার খোলা হাওয়ায় আস্তাকুঁড়ের ছবি কি ফোটে? সেখানে যে সব সময়ই
বসন্ত, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি বীণা রায়, সাকসেস আমার পায়ের তলায়... ওই মেয়ে রান্না হল?
... স্ক্রিপ্টটা আর একবার পড়ে সিন সতেরোটা একবার অভিনয় করে দেখা দেখি। ওখানে তোর
পেটে অবাঞ্ছিত সন্তান, তোকে হাসপাতালে এবর্শনের নাম করে ফেলে রেখে গেছে লম্পটটা।
দেখা করে, কি হল, দেখা...
শট – ৮ টেক – ২
-শোন যখন দুটো চরিত্র কথা বলবে তখন
ক্যামেরা একেবারে নড়াবি না। স্টিল একটা ফ্রেম ধরে রাখবি।
-কেন? লোকে বুঝবে কি করে?
-লোক বলতে কে? তুই কি শ্বাশুরি
কাঁদছে বৌমা হাগছে বানাবি? তাহলে?
-কিন্তু কেন এই ফ্রেম? লোকে তো
বিরক্ত হবে।
-হতে দে না, যখন দেখবি চূড়ান্ত
বিরক্ত তখন প্যান করবি, দেখাবি বিজনেস।
-বুঝলাম, কিন্তু আমায় এগুলো কেন বল
তোমরা? কি করেছি তোমাদের?
-আমাদের অন্তরাত্মায় বিশ্বাস
জাগিয়েছিস, তুই পারবি... আর শোন ওই শটটা নিস না।
-কোনটা?
-ওই টপ শট। পাখা ঘুরছে সিলিঙে,
নীচে আলো কাটছে ক্যারেক্টারের মুখে... আমি
জানি তুই কি বলবি... দীপ জ্বেলে যাই তে ছিল তো? ভুল আঙ্গেল, অমন করিস না।
-আচ্ছা সব বুঝলাম, কিন্তু আমায় কেন,
আমি তো ... আমি তো... আমার হাতে তো...
-আমাদের বিশ্বাস আছে তোর ওপর, বাই
দা ওয়ে, আজকের কাজ খুব ভালো হয়েছে... সাবলাইম সিরিনিটি বুঝিস? শেষ দেখা গেছিলো
হিচককের দা রেয়ার উইন্ডোতে। আজ তোকে এই কমপ্লিমেন্ট দিলাম আমরা। শুধু মনে রাখ চোখ
কি বলছে তা নয় মন কি বলছে সেটাই চোখের ছবি...
শট – ৯
-ওঃ গড! কাট কাট কাট, ওই দীপ্তি,
এসব কি, হ্যাঁ? কিসব বলছিস? এগুলো সিনে ছিল? দীপ্তি এই দীপ্তি।
চমকে ওঠে মেয়েটা, ‘না মানে আমি
...’
-গেট আউট, জাস্ট গেট আউট, কি মনে
করেছে কি নিজেকে? একটা সুযোগ দিয়েছিলাম, তাবোলে অকারণে এত ফুটেজ!
-দাদা, ভুল হয়ে গেছে, আর হবে না।
-হবে না মানে? গত তিনদিন দেখছি তুই
মুখে আলো পড়লেই কোথায় হারিয়ে যাস, চরিত্রর মধ্যে আবার একটা নতুন চরিত্র মুখ বুজে
কথা বলে। তুই কি সিরিয়ালের আসল স্বাদটাই নষ্ট করে দিবি? এত সাহস তোর? শালি
এক্সট্রা...
আমি যে বীণা দির রুমা হয়ে গেছি,
কেউ বুঝলে না? ... মনের মধ্যে কে যেন বলে ওঠে তার।
শট -১০
-কেন এত মাথা গরম করছ বীণা দি? আরে
সৈকত নেই তো কি হয়েছে? ভালো কাজের প্রচুর লোক আছে তো।
-তুই চুপ কর। ওকে কে চিনতো? সেবার
ভেনিসে ছবি পুরস্কার পেল, সব আঙ্গেল আর ফ্রেম আমার, ও শুধু কাজ টুকু করেছে। তাই
বলে এত দেমাক? দেড় কোটি চাইছে? জানে এন এফ ডি সির বাজেট কত? ছোটলোক ছেলে, ইজ্জত রাখতে জানে না...
-দিদি আমি বলি? খুব ভালো কাজের
ছেলে আছে, একবার দেখে নেবে ওকে?
-চুপ কর তুই, দে ফ্রিজ থেকে একটু
সোডা দে। এই রুপা, তুই নিবি তো...
-হ্যাঁ দিদি, ওই একটা, দীপ্তি কার
কথা বলছিস?
-দিদি কমলদার কথা গো, একটা চান্স
যদি পায় করে দেখিয়ে দেবে।
-ধুস শালা, কত দেখলাম, সব আমার
নামের সাথে নিজেদের জড়িয়ে নিতে চায়।
-জানি দিদি, তবে এই ছেলেটা একটু
অন্য রকম, ক্যামেরার সঙ্গে কথা বলে...
-কি বললি? কথা বলে ক্যামেরার সাথে?
দে ফোন নাম্বার দে ...
শট – ১১ টেক ১
-কমল কোথায়?
-এইতো বাইক চালাচ্ছি
-উফ, তাড়াতাড়ি এসো
-আসছি ওয়েট...
-বুকের খাঁজে মাতন লেগেছে যে...
তাড়াতাড়ি এসো ডার্লিং...
-জ্যাম রাস্তায় তো, অপেক্ষা
করুন...
শট – ১১ টেক ২
-সিগারেটের গন্ধ আমার সহ্য হয় না।
এত ঘন ঘন খান কেন?
-এক একটা কাট শট জুড়তে জীবনে
সিগারেট লাগে যে...
-এবার উঠতে দিন, খুব ক্লান্ত লাগছে
বীণাদি...
- দি! হাহাহা, আজ একশো দিনের
সেলিব্রেশন, সারা ভারত ভেঙে পড়েছে, তোমার ক্যামেরায় জাদু... খুব তাড়াতাড়ি বার্লিন যাব আমরা।
-আর দীপ্তি?
-কে? কে দীপ্তি?
-যে এমন অভিনয় করল, যাকে দেখে রুপা
দি নিজে না করে দীপ্তিকেই রোলটা দিয়ে দিলো ওর মতো পারবে না বলে, তাকেই ভুলে গেলেন?
-হেই বেবি, কারা স্টার, কে দীপ্তি?
শোনো শোনো, ওর দেখানো নিওরিয়ালিস্মের পথ আমার স্ক্রিপ্ট বদলেছে, ব্যাস, এইটুকুই ওর
যথেষ্ট প্রাপ্য না কি? দে আর অব্লিভিওন, দে আর ডাইং পাস্ট, হু কেয়ারস?
-সত্যিই তো, আমি ক্যামেরা করলাম,
এতগুলো পুরস্কার...
-ওঃ শাট আপ ম্যান, শরীর দিয়েছি
নিজের প্রয়োজনে, তার মানে এই নয় তুমি হিরো বনে গেছ। কে তুমি ? ব্লাডি বুলসিট, বীণা
রায়ের সিনেমায় লোকে শুধু বীণা রায় কেই খোঁজে।
শট -১২
-লাইট, সাউন্দ, ক্যামেরা... দীপ্তি, ক্যামেরা
ক্লোজ হচ্ছে, তোমার বুকের ভাঁজ ছুঁয়ে তোমার না বলা কথারা সামনে
এসে দাঁড়িয়েছে, এবার আর্তনাদ করো, ভাঙবে, ভাঙ্গবে ভাঙ্গবে, রক্তে চোবানো হাতগুলো
আজ নীল মেরুতে বুদবুদ হয়ে মিশে গিয়ে নীলকণ্ঠ হবে...
-পারবো আমি? পারবো কমলদা?
-পারবে, পারবে, তোমাকে যে পারতেই হবে…
ওকে, সাইলেন্স প্লীজ...
ক্যামেরা রোল...রোলিং, সাউণ্ড...
রোলিং, ক্ল্যাপস্টিক... নিও-রিয়ালিস্ম... সিন টু... টেক ওয়ান...দীপ্তি, অ্যাকশন...