পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২২ জুন, ২০১৯

সম্বৃতা দাশরায়

মোদের গরব মোদের আশা 
 # 
 
"আ মরি বাংলা ভাষা' -  মধুর আমার মাতৃভাষা ।
  একরত্তি শিশু মায়ের কোলে আদরের উষ্ণতায় গানের কলি শুনতে শুনতে ঘুমে ঢলে পড়ার ভাষা । টলোমলো পায়ে  হাঁটতে শেখা  শিশুর আধো আধো বোল , মায়ের সঙ্গে এতোলবেতোল  কথার ফুলঝুরি  , বাবার কাছে রবিঠাকুরের কবিতা , সহজপাঠের ছোট খোকার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ভাষা । ঠাকুরদাদার ঝুলিভরা রূপকথার বুদ্ধুভূতুম, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, লালকমল নীলকমল এই ভাষাতেই তো কথা বলে । অঘ্রানের ভোরে শিশিরভেজা ঘাসফুলে গঙাফড়িংয়ের পিছু ধাওয়া করতেই করতেই কানে আসত ঢেঁকির পাড়  , নবান্নের গান। দিদিমার হেঁসেলে নতুন চালের পায়েসের  সুবাস নেওয়া  প্রাণভরে।                       
        খোলা উঠোন পেরিয়ে দৌড় দৌড় দৌড় নদীর ধারে। অশথতলার বাঁধানো  বেদিতে বসে বসে দেখি রোদের গায়ে কি সুন্দর ছায়ার জাফরি । মাঝনদীতে একটা দুটো নৌকো থেকে ভেসে আসে ভাটিয়ালি সুর।খোলা আকাশের নীচে  ছড়িয়ে পড়া  সেই গান  শুনে   বড় মনকেমন করে । আহা ! ওদের কি এত দুঃখ?কেন অমন করুণ গায় ওরা?  ছোট্ট মনটায় কত প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে।
  সকাল বেলায় যুগল বৈরাগী আসবে।করতাল বাজিয়ে তার কৃষ্ণনাম শোনানো চাইই ।ভাঙা ভাঙা খসখসে গলার গানে ঘুম ভাঙে রোজ। দাঁড়ে বসে দোল খায় হিরেমন টিয়া , বলে টুটুল পড়তে বস ,বেলা গেল। সেও তো বাংলায় কথা কয়। 
    ছোট্ট টুটুল লাইব্রেরি যায় , মায়ের হাত ধরে ।উঁচু উঁচু  আলমারিতে রাশি রাশি বই !!   টুটুল বিহ্বল - "এটা কি বইয়ের দেশ মা ?" মা আস্তে আস্তে  বন্ধুত্ব করিয়ে দেন বুড়ো আংলা , ক্ষীরের পুতুল, কঙ্কাবতীর সঙ্গে। ব্যস টুটুলকে আর পায় কে! আজ  পড়ন্তবেলাতে  এসেও  সেই  বন্ধুত্ব  জমজমাট ।ফেলে আসা দিনগুলো  নেড়েঘেঁটে দেখতে গিয়ে  শ্যামবাজারের পুরনো বাড়ির ছাদে একরাশ ভেজা চুল মেলে বসা বড় পিসিমাকে খুঁজে পায়।  পাকা চুল তুলে দেওয়ার কড়ারে গল্প শোনে টুটুল
--" তারপর কি হল " ?
--"তারপর কত সংগ্রাম ,কত রক্তক্ষয় , কত কচি  কচি ছেলের মায়ের কান্না । তবু হাল ছাড়ে নি ওরা ,ঝাঁপিয়ে পড়েছে নতুন উদ্যমে।"-
বলতে বলতে পিসিমার  মুখে ছায়া ঘনায়।  ছাতের আলসে ছাড়িয়ে চোখ চলে যায় সেইই কোন সূদূরে। টুটুলের গলার কাছটায় কিরকম ব্যথা দলা পাকায় ,ঐ হার না মানা  ছেলেগুলোর জন্যই হয়তো বা।
-- ওরা  বাংলা ভাষার জন্য এত যুদ্ধ করেছে দিদিমণি? 
পিসিমার মুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে --"হ্যাঁ সোনা। ওরা  যে ভীষণ ভালোবাসত ওদের মাতৃভাষাকে। তাইই তো জীবনপণ করেছিল আর জিতিয়ে দিয়েছিল তাকে। 
অবোধ টুটুল বলে --"আমিও তো বাসি ভালো , আমার মাতৃভাষাকে।
তারপর স্কুলে শেখা নতুন গানটা গেয়ে ওঠে  'মোদের গরব  মোদের আশা ,
আ মরি বাংলা ভাষা।'
পশ্চিমের জানালায় আটকে থাকা সূর্যের লাল  রঙের দিকে চেয়ে থাকে টুটুল ।কাল নতুন ভোর একুশে ফেব্রুয়ারি ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন