পৃষ্ঠাসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৮ মে, ২০২২

সৌমী আচার্য্য

                                 


শ্রাবণের ধারার মত


পর্ব -৭

ঝাউবনের মাঝে মা মেয়েতে দীর্ঘসময় চুপ করে বসে আছে। দূরে সমুদ্রে দু তিনটে জেলিনৌকা। টকটকে লাল ছোট পাল তুলে মনের আনন্দে ঢেউ ভাঙছে যেটা তার দিকে তাকিয়ে ঊশ্রী বলল, 'মা ঐ নৌকাটা আমি। আর দূরের বড়োটা তুমি।' দেবপ্রিয়া মৃদু হাসল। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 'হ‍্যাঁ রে, এইসব ছেলেমানুষী তোর বন্ধুদের আছে?' 

-কেন থাকবে না! আমরা তো ছোটোই।

-তাই বুঝি! 

-একদম। আচ্ছা মা তোমার উপন‍্যাসের সোহাগ তো আমাদের বয়েসী তাই না!

-মুনিয়া আমার উপন‍্যাসের চরিত্র নিয়ে কথা বলবে না।

-কেন তুমি এত রিজিড বলোতো! তোমার মাথায় যে কী ঘুরছে জানিনা বাপু । বলোনা প্লিজ আদিত‍্য কী দেখল বাড়ি ফিরে? বলোনা।

-না একদম না, কিছুতেই না।

ঊশ্রী অভিমানে উঠে চলে গেল। ঝাউবন পেরিয়ে বালির উপর হেঁটে সমুদ্রের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। দেবপ্রিয়া উঠে দাঁড়ায়। মেয়েকে নজরে রেখে দূর দিয়ে হাঁটে। যতই অভিমান করুক কিছুতেই নিজের লেখার উপর কারো প্রভাব পড়তে দিতে ও রাজি নয়। আর ঊশ্রী রীতিমতো নিজের প্রভাব খাটায়। বিন্দুবালা আর সৌম‍্যাদিত‍্যের সম্পর্কের মাঝে সোহাগ যে কাঁটা হয়ে উঠছে বুঝতে পেরে কান্নাকাটি পর্যন্ত করেছে। 

-কেন তুমি সোহাগকে খল নায়িকা বানিয়ে দিচ্ছ মা! প্লিজ ওর এমন ভালোবাসা ভরা মনটা বিষিয়ে দিও না। ওমা! শোনো না এমন কিছু করো না যাতে সৌম‍্যাদিত‍্য আর আদিত‍্য দুজনেই জব্দ হয়।

দেবপ্রিয়া কোনো কথা না বলে উঠে গিয়েছিল মেয়ের সামনে থেকে। চরিত্রগুলোর উপর সে নিজেই কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে রাজি নয়। আর এই মেয়ে সব পাল্টে দিতে চায়। পুরুষের উপর ওর এত রাগের  কারণ বোঝে তবু এড়িয়ে যায়। সবচে অবাক লাগে গত দু তিন বছরে যন্ত্রণার একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। সব সময় পজেটিভ মানসিকতা মেয়েটার। দেবপ্রিয়া যেন দেখতে পায় ওর মায়ের এক টুকরো রয়ে গেছে মেয়ের ভেতর। তবে আজ এই ঝাউবনে বসে প্রথম কথাটাই বলেছিল, 'আচ্ছা মা একটা মেয়ের পুরুষ সঙ্গী কেন লাগে? নিরাপত্তার জন‍্য নাকি সেক্সের জন‍্য? না মানে আমি বলতে চাইছি এই দুটো কারণ ছাড়া বিয়ে করার আর কোনো কারণ আছে কী?' চমকে গিয়েছিল দেবপ্রিয়া। মেয়েটা ঠিক কী ভাবছে জীবন নিয়ে। সমুদ্রের ঢেউ পায়ে এসে ভাঙছে ওর।স্কার্টটা বাঁহাতে সামাণ‍্য উপরে তুলে অল্প দৌড়াচ্ছে ঊশ্রী যেন ভাসছে। দেবপ্রিয়ার চোখটা জ্বালা করে উঠল।

--------------------------------------------------------------
ধর্ণামঞ্চ থেকে বক্তৃতা শেষ করে মহেশ  নেমে আসতেই ত্রিচি এগিয়ে এল। হাতের মোবাইলটা এগিয়ে দিল মহেশের দিকে। একটা কফি রঙা লিপস্টিক আর সাদা মুক্তোর দুল। মুহূর্তে একটু দুলে উঠল মহেশ। ধর্না মঞ্চে ইংরেজিতেই চলছে ভাষণ। ত্রিচি কঠিন মুখে বলল, 'অনুজবাবু, নাম ভাঁড়িয়ে পরিচয় গোপন করার অপরাধেই আপনাকে পুলিশে দেওয়া যায় কিন্তু তারচে অনেক বেশি জরুরি অন‍্য কিছু। গাড়িতে উঠুন। কথা হবে।' মহেশ মোবাইলটা ফিরিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল, 'আমার নাম অনুজ রায় এবং মহেশ আমার ডাকনাম। মহেশ নামেই এই অঞ্চলে আমি পরিচিত। এতে পুলিশে ধরার মত অন‍্যায় আপনি দেখতেও পেলেও আমি পাচ্ছি না। চলি।' ত্রিচির শান্ত সুন্দর মুখে হিংস্রতা খেলা গেল। 

-ছবিটা গতকালকের মহেশবাবু। বুঝতেই পারছেন আমরা কতটা মরিয়া। আপনি এসব আন্দোলন বন্ধ করুন। পুরুলিয়ায় আপনার জন‍্য আমাদের বড় প্রোজেক্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে নাক গলাতে এলে আমরা বোধহয় আর সভ‍্যতা ধরে রাখতে পারব না।

মহেশ ওরফে অনুজ নির্বিকার ভাবে পেছন ফিরে হাঁটতে যাবে এমন সময় ত্রিচি আর ধৈর্য রাখতে পারে না।

-আপনার স্ত্রী মেয়ের ছিন্নভিন্ন লাশের ছবি আজ সন্ধ‍্যেতেই আপনার মোবাইলে চলে যাবে মহেশবাবু। আপনি এমন ভাবেই গাছপালা পশুপাখি বাঁচাতে থাকুন।

মহেশের মুখ কঠিন হয়ে ওঠে। মোবাইলটা কানে লাগিয়ে বলে, 'মিস্টার.কুট্টি আশাকরি এইটুকুই যথেষ্ট মিস্ ত্রিচিকে এই মুহূর্তে গ্রেফতার করার জন‍্য। আর ধন‍্যবাদ আমি কল করেও কথা বলিনি তবু যে আপনি কিছু একটা আন্দাজ করে ফোনটা অন রেখেছিলেন তার জন‍্য। এবার আপনার যা করণীয় করুন।' ত্রিচির হতভম্ব ভাব কাটার আগেই কর্ণাটক পুলিশ চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে ত্রিচি ও তার সাঙ্গপাঙ্গর গাড়ি। মহেশ কাছেও যায় না কিছুই বলে না। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে ত্রিচির হিংস্র ফুঁসতে থাকা মুখটা দেখতে দেখতে ফোন করে। রিং হয়ে যাচ্ছে ধরছে না। বিরক্ত হয়। আবার কল করে এবার ফোনটা রিসিভ হয়। অপর প্রান্তের হ‍্যালো শুনে বোঝে কাঙ্খিত ব‍্যক্তি নয়। আরেক প্রস্থ বিরক্তি দাঁতে চেপে নেয়।

-আমি অনুজ রায় কথা বলছি। দেবপ্রিয়ার সাথে কথা বলতে চাই। বিষয়টা জরুরি, প্লিজ।

(ক্রমশ:)





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন