কোল্হাপুর ডায়েরী ৯
হোটেলে ঢুকতে ঢুকতেই মিমি দেখতে পেল লাউঞ্জে তিনটে টেবিলকেই পাশাপাশি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। লাঞ্চের প্রস্তুতি। মিমিকে দেখে বোসদা বললেন, লাঞ্চের অর্ডার কিন্তু দিয়ে দিয়েছি।মেনু কিন্তু আমরাই সিলেক্ট করেছি। মিমি সলজ্জ হেসে ঘাড় কাত করলো। - 'না দাদা,অসুবিধের কিচ্ছু নেই!চলবে চলবে। '
এ পাশে তাকিয়ে দেখলো বোস বৌদি
তার পাশের চেয়ারটা ফাঁকা রেখেছেন। মিমিকে ইশারায় ডাকলেন পাশে এসে বসবার জন্য। যেন স্নেহময়ী বড় দিদি
ছোট বোনের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন! মিত্র বৌদি বললেন, মিমি রূপা তোমার জায়গাটা আগেই সিলেক্ট করে রেখেছে। আমাদের নো চান্স!
এই স্নেহ এই মমতা মিমির প্রবাসজীবনের এক বড় সম্পদ।
লাঞ্চের পরে ঠিক হোলো রোদ একটু পড়ে এলে ফোর্টের বাকি অংশটা ঘুরে দেখা হবে সকলে মিলে।
এর মধ্যে হোটেলের ম্যানেজার এসে একবার ঘুরে গেলেন।
বোসদা বিশ্বাসদা সকলে যে পূর্বপরিচিত এবং সকলের সাথেই যথেষ্ট পরিমাণে হৃদ্যতা রয়েছে কথাবার্তার মাধ্যমে
মিমি বেশ বুঝতে পারলো।
সকলেই বেশ আড্ডার মুডে রয়েছে। এত অল্প সময়ে সব আলোচনায় যোগ দেওয়া সম্ভব ও নয় অনেক বিষয়বস্তুই যদিও তার এবং সূর্যর কাছে অজানা তবু খুনসটিগুলো দিব্যি উপভোগ করছিলো সূর্য আর মিমি দুজনেই।
ভটচাজ বৌদি বললেন,
-জানো মিমি' পান্হালা শব্দের অর্থ কি? পান্হালা শব্দর মানে হোলো নাগেদের বাসস্থান।পান্হালার আসল নাম পান্হাল গড়। এছাড়াও এই ফোর্টটার নাম পান্হালা কারণ এর গঠনটাও খানিকটা সর্পাকৃতি এর ভেতরে এত সর্পিল গলিঘুঁজি রয়েছে যে পান্হালা নাম সার্থক। বিশ্বাস বৌদিও এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিলেন ওদের কথা। ভটচাজবৌদি
থামতেই উনি পাশ থেকে বলে উঠলেন, আর জানোতো মিমি পান্হালাতে একটা গুহা আছে এটাকে মহর্ষি পরাশরের গুহা বলা হয়। মনে করা হয় ব্যাসদেবের পিতা মহর্ষি পরাশর এখানে বাস করতেন।1730 খ্রীষ্টাব্দে লেখা কোল্হাপুর পুরাণ বা করবীরে এই পান্হালার উল্লেখ আছে। পুরনো লিপিতে এর নাম পদ্মনাল বা পন্নগালয়। পন্নগ মানে হলো সাপ। মহর্ষি পরাশর যে গুহায় বাস করতেন সেটা বোধহয় নাগেদের বাসস্থান ও ছিল বোধহয় মিমি বিস্মিত ও অভিভূত হচ্ছিলো এদের কথায়। সেটা লক্ষ্য করে বিশ্বাসবৌদি বললেন, আসলে কি জানোতো, এই শহরটাকে এত ভালবেসে ফেলেছি যে এর সম্পর্কে যত পৌরাণিক কাহিনী আছে সেগুলো ও জানবার আগ্রহে যতটা পেরেছি পড়তে চেষ্টা করেছি। আরে আমি ও হিষ্ট্রির ছাত্রী একটু কৌতূহল তো থাকবেই বলো! দু বছর বাংলার বাইরে এসে মিমি কেবল জীবনধারণের তাগিদে দৌড়েই গেছে, মনের খিদের যে পুষ্টি দরকার আজ যেন মনে হলো এখানে এই কোল্হাপুরে এসে তার কিছু আস্বাদ সে গ্রহণ করতে পারবে।
দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মে মাসের মাঝামাঝি তবু পান্হালার বাতাসে হাল্কা হিমেল হাওয়ার পরশ। প্রায় চারটে নাগাদ মিমিরা আবার যে যার নিজস্ব বাহনে। আশপাশটুকু ঘুরে দেখে আজকের মতো প্রত্যাবর্তন।
সারাদিনের ধকলে সকলেই কমবেশী পরিশ্রান্ত।একদিনে সবটা ঘুরে দেখা সম্ভব ও নয়। পরে আবার নাহয় আসা যাবে কোন একসময়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে পশ্চিম দিগন্তে নেমে আসছে রক্তিম সূর্য।দিনান্তের ক্লান্ত রবি পাহাড়ী পথের কিনারে কিনারে ছড়িয়ে দিয়েছে শেষ রশ্মি আভাটুকু। নিবিড় অরণ্যানীর বুক চিরে আসন্ন সন্ধ্যার পূর্বাভাস। সেদিকে তাকিয়ে মিমির মন যেন তাকে এই পথের বাঁকে অজানা কোন দিকে যাবার সঙ্কেত ঘোষণা করে বলে গেল'হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনখানে।'
এই কথাই তো টেনে নিয়ে যায় অজানাকে জানার অচেনাকে চেনার হাতছানি দিয়ে। এই তো পরিক্রমা। এ পরিক্রমা সারা জীবনভর।
পাহাড়ী পথ ধীরে ধীরে নেমে আসছে সমতলে।এক অদ্ভুত ভাল লাগার রেশ নিয়ে মিমি ফিরলো তার নতুন বাসস্থানে।
ক্রমশঃ
হোটেলে ঢুকতে ঢুকতেই মিমি দেখতে পেল লাউঞ্জে তিনটে টেবিলকেই পাশাপাশি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। লাঞ্চের প্রস্তুতি। মিমিকে দেখে বোসদা বললেন, লাঞ্চের অর্ডার কিন্তু দিয়ে দিয়েছি।মেনু কিন্তু আমরাই সিলেক্ট করেছি। মিমি সলজ্জ হেসে ঘাড় কাত করলো। - 'না দাদা,অসুবিধের কিচ্ছু নেই!চলবে চলবে। '
এ পাশে তাকিয়ে দেখলো বোস বৌদি
তার পাশের চেয়ারটা ফাঁকা রেখেছেন। মিমিকে ইশারায় ডাকলেন পাশে এসে বসবার জন্য। যেন স্নেহময়ী বড় দিদি
ছোট বোনের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন! মিত্র বৌদি বললেন, মিমি রূপা তোমার জায়গাটা আগেই সিলেক্ট করে রেখেছে। আমাদের নো চান্স!
এই স্নেহ এই মমতা মিমির প্রবাসজীবনের এক বড় সম্পদ।
লাঞ্চের পরে ঠিক হোলো রোদ একটু পড়ে এলে ফোর্টের বাকি অংশটা ঘুরে দেখা হবে সকলে মিলে।
এর মধ্যে হোটেলের ম্যানেজার এসে একবার ঘুরে গেলেন।
বোসদা বিশ্বাসদা সকলে যে পূর্বপরিচিত এবং সকলের সাথেই যথেষ্ট পরিমাণে হৃদ্যতা রয়েছে কথাবার্তার মাধ্যমে
মিমি বেশ বুঝতে পারলো।
সকলেই বেশ আড্ডার মুডে রয়েছে। এত অল্প সময়ে সব আলোচনায় যোগ দেওয়া সম্ভব ও নয় অনেক বিষয়বস্তুই যদিও তার এবং সূর্যর কাছে অজানা তবু খুনসটিগুলো দিব্যি উপভোগ করছিলো সূর্য আর মিমি দুজনেই।
ভটচাজ বৌদি বললেন,
-জানো মিমি' পান্হালা শব্দের অর্থ কি? পান্হালা শব্দর মানে হোলো নাগেদের বাসস্থান।পান্হালার আসল নাম পান্হাল গড়। এছাড়াও এই ফোর্টটার নাম পান্হালা কারণ এর গঠনটাও খানিকটা সর্পাকৃতি এর ভেতরে এত সর্পিল গলিঘুঁজি রয়েছে যে পান্হালা নাম সার্থক। বিশ্বাস বৌদিও এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিলেন ওদের কথা। ভটচাজবৌদি
থামতেই উনি পাশ থেকে বলে উঠলেন, আর জানোতো মিমি পান্হালাতে একটা গুহা আছে এটাকে মহর্ষি পরাশরের গুহা বলা হয়। মনে করা হয় ব্যাসদেবের পিতা মহর্ষি পরাশর এখানে বাস করতেন।1730 খ্রীষ্টাব্দে লেখা কোল্হাপুর পুরাণ বা করবীরে এই পান্হালার উল্লেখ আছে। পুরনো লিপিতে এর নাম পদ্মনাল বা পন্নগালয়। পন্নগ মানে হলো সাপ। মহর্ষি পরাশর যে গুহায় বাস করতেন সেটা বোধহয় নাগেদের বাসস্থান ও ছিল বোধহয় মিমি বিস্মিত ও অভিভূত হচ্ছিলো এদের কথায়। সেটা লক্ষ্য করে বিশ্বাসবৌদি বললেন, আসলে কি জানোতো, এই শহরটাকে এত ভালবেসে ফেলেছি যে এর সম্পর্কে যত পৌরাণিক কাহিনী আছে সেগুলো ও জানবার আগ্রহে যতটা পেরেছি পড়তে চেষ্টা করেছি। আরে আমি ও হিষ্ট্রির ছাত্রী একটু কৌতূহল তো থাকবেই বলো! দু বছর বাংলার বাইরে এসে মিমি কেবল জীবনধারণের তাগিদে দৌড়েই গেছে, মনের খিদের যে পুষ্টি দরকার আজ যেন মনে হলো এখানে এই কোল্হাপুরে এসে তার কিছু আস্বাদ সে গ্রহণ করতে পারবে।
দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মে মাসের মাঝামাঝি তবু পান্হালার বাতাসে হাল্কা হিমেল হাওয়ার পরশ। প্রায় চারটে নাগাদ মিমিরা আবার যে যার নিজস্ব বাহনে। আশপাশটুকু ঘুরে দেখে আজকের মতো প্রত্যাবর্তন।
সারাদিনের ধকলে সকলেই কমবেশী পরিশ্রান্ত।একদিনে সবটা ঘুরে দেখা সম্ভব ও নয়। পরে আবার নাহয় আসা যাবে কোন একসময়। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে পশ্চিম দিগন্তে নেমে আসছে রক্তিম সূর্য।দিনান্তের ক্লান্ত রবি পাহাড়ী পথের কিনারে কিনারে ছড়িয়ে দিয়েছে শেষ রশ্মি আভাটুকু। নিবিড় অরণ্যানীর বুক চিরে আসন্ন সন্ধ্যার পূর্বাভাস। সেদিকে তাকিয়ে মিমির মন যেন তাকে এই পথের বাঁকে অজানা কোন দিকে যাবার সঙ্কেত ঘোষণা করে বলে গেল'হেথা নয় হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনখানে।'
এই কথাই তো টেনে নিয়ে যায় অজানাকে জানার অচেনাকে চেনার হাতছানি দিয়ে। এই তো পরিক্রমা। এ পরিক্রমা সারা জীবনভর।
পাহাড়ী পথ ধীরে ধীরে নেমে আসছে সমতলে।এক অদ্ভুত ভাল লাগার রেশ নিয়ে মিমি ফিরলো তার নতুন বাসস্থানে।
ক্রমশঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন